Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক (১৯৮১) || Sunil Gangopadhyay » Page 4

পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক (১৯৮১) || Sunil Gangopadhyay

সন্তু চোখে দূরবিন লাগিয়ে প্রথমে কিছুই দেখতে পেল না। শুধু আবছা! আবছা অন্ধকার।

এখানকার আকাশ প্ৰায় কখনওই পরিষ্কার থাকে না। সব সময় মেঘলা-মেঘলা, তবু তারই ফাঁক দিয়ে মাঝে-মাঝে চাঁদের আলো এসে পড়ে।

সন্তু খুব মনোযোগ দিয়ে দেখবার চেষ্টা করল। কই, কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না। দু জায়গায় বরফে জ্যোৎস্না ঠিকরে ঝকঝকি করছে। আর কিছু দূরে কালাপাথর নামে সেই ছোট পাহাড়টা। সেটা একেবারে মিশমিশে অন্ধকার।

কাকাবাবু ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন, দেখতে পেয়েছিস?

না তো!

একদম সোজা নয়, একটু ডান দিকে।

সন্তু ডান দিক বাঁদিক সব দিকেই দূরবিনটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল। কোথাও কিছু নেই। কাকাবাবু কী দেখার কথা বলছেন? এই বরফের দেশে একটা পাখি পর্যন্ত নেই!

এখনও দেখতে পাসনি?

না, কাকাবাবু!

কাকাবাবু এবার সন্তুর কাছ থেকে দূরবিনটা নিয়ে নিজের চোখে লাগলেন। তারপর বিড়বিড় করে বললেন, সত্যিই তো এখন আর দেখতে পাচ্ছি না! অথচ একটু আগে স্পষ্ট দেখলাম যেন! তাহলে কি অনেকক্ষণ একদৃষ্টি তাকিয়ে থাকবার জন্য আমার চোখের ভুল হল।

কাকাবাবু, ওখানে কী থাকতে পারে?

সেটা ভাল করে না দেখলে বুঝব কী করে?

আরও কিছুক্ষণ চোখে দূরবিন এঁটে বসে রইলেন কাকাবাবু। তারপর এক সময় হতাশভাবে বললেন, না, আজ আর কিছু দেখা যাবে না! চল, এবার শুয়ে পড়ি।

সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে সন্তু তাড়াতাড়ি কোট-ফোঁট খুলে ফেলে ক্লিপিং ব্যাগের মধ্যে ঢুকে গেল। কাকাবাবু নামলেন ধীরে-সুস্থে, কিন্তু তক্ষুনি শুয়ে পড়লেন না। একটা কালো রঙের খাতার পাতা উল্টে-পাণ্টে কী যেন দেখতে লাগলেন।

সন্তু ভাবল, কাকাবাবুর কি শীতও করে না? খানিকক্ষণ ক্লিপিং ব্যাগের বাইরে থেকেই তো সন্তুর কাঁপুনি ধরে গেছে।

বিলিতি আলোটা এমন উজ্জ্বল যে, চোখে লাগে। ওটাকে আবার কমানো বাড়ানো যায়। আলোটা খানিকটা কমে যেতেই সন্তু বুঝতে পারল, কাকাবাবু এবার শুয়ে পড়েছেন।

কাকাবাবু একটা শব্দ করলেন, আঃ!

এই আঃ শুনেই বোঝা যায়, আজকের মতন কাকাবাবুর সব কাজ শেষ। এই শব্দটা করার ঠিক আধঘণ্টা বাদে কাকাবাবু ঘুমিয়ে পড়েন।

একবার ঘুম ভেঙে যাওয়ার জন্য সন্তুর আর সহজে ঘুম আসছে না। বিছানায় শুয়ে ঘুম না এলে এপাশ-ওপাশ ফিরে ছটফট করা যায়। কিন্তু স্লিীপিং ব্যাগের মধ্যে সহজে পাশ ফেরার উপায় নেই।

সন্তু জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু, আমরা কি সত্যিই এভারেস্টের দিকে যাব?

কাকাবাবু গম্ভীরভাবে বললেন, দরকার হলে যেতে হবে নিশ্চয়ই।

সন্তু ভাবল, দরকার আবার কী? দরকারের জন্য কেউ এভারেস্টের চুড়ায় উঠতে যায় নাকি? কাকাবাবুর অনেক কথারই মানে বোঝা যায় না।

আমরা এভারেস্ট উঠতে পারব, কাকাবাবু?

কোন পারব না? ইচ্ছে থাকলেই পারা যায়।

কাকাবাবু খোঁড়া এবং কোনও খোঁড়া লোক অতি উঁচু পাহাড়ে উঠতে পারে, এই কথাটা সব সময় সন্তুর মাথার মধ্যে ঘোরে। কিন্তু একথাটা তো কাকাবাবুকে মুখ ফুটে বলা যায় না। কাকাবাবুর ধারণা, তীব্র ইচ্ছে আর মনের জোর থাকলে মানুষ সব কাজই পারে।

ক্ৰাচ নিয়ে পাহাড়ি রাস্তায় কাকাবাবু চলাফেরা করতে পারেন। ঠিকই। কাশ্মীরে ঘুরেছেন, এখানেও তো সিয়াংবোঁচি থেকে এতটা পাহাড়ি চড়াই উতরাই হেঁটে এসেছেন। দু-একবার অবশ্য পা পিছলে পড়েছেন, তাতে কিন্তু একটুও দমেননি।

কিন্তু এভারেস্টে ওঠা তো অন্য ব্যাপার। সন্তু ছবিতে দেখেছে যে, এভারেস্ট-অভিযাত্রীরা কোমরে দড়ি বেঁধে আর হাতে লোহার গাইতির মতন একটা জিনিস নিয়ে খাড়া পাহাড় বেয়ে বেয়ে ওঠে, অনেকটা টিকটিকির মতন।

কাকাবাবু কি সেরকম পারবেন? যতই মনের জোর থাক, কোনও খোঁড়া মানুষের পক্ষে কি তা সম্ভব! শুধু মনের জোর নয়, কাকাবাবুর গায়েও খুব জোর আছে, কিন্তু তাঁর একটা পা যে অকেজো। একটা দুর্ঘটনায় কাকাবাবুর ঐ পা-টা নষ্ট হয়ে গেছে।

সন্তুর আর একটা কথাও মনে পড়ল। কলকাতায় তাদের বাড়িতে তেনজিং নোরগে এসেছিলেন। অনেকক্ষণ গোপনে কী সব কথাবার্তার পর বিদায় নেবার সময় তেনজিং কাকাবাবুর হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলেছিলেন, গুড লাক। আই উইশ ইউ সাকসেস, মিঃ রায়চৌধুরী। আপনি পারবেন-। একথা সন্তু নিজের কানে শুনেছে। কাকাবাবুকে খোঁড়া দেখেও তেনজিং কেন বলেছিলেন, আপনি পারবেন? এভারেস্টে ওঠা কি এতই সহজ?

এই সব ভাবতে ভাবতে সন্তু যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে, তা সে টেরই পায়নি।

পরদিন ঘুম ভেঙে দেখল, কাকাবাবু আগেই উঠে পড়েছেন। ঘুম থেকে উঠেই কাকাবাবুর পড়াশুনো করার অভ্যোস। তা তিনি যখন যেখানেই থাকুন না কেন। আজও তিনি পড়তে শুরু করেছেন সেই কালো রঙের খাতাটা খুলে। কিছু কিছু লিখছেনও মাঝে-মাঝে।

গম্বুজের লোহার দরজাটায় দুমদুম করে শব্দ হল।

কাকাবাবু বললেন, সন্তু উঠেছিস? দরজাটা খুলে দে তো!

স্লিপিং ব্যাগ থেকে বেরিয়ে, তাড়াতাড়ি ওভারকোটি গায়ে চাপিয়ে তারপর সন্তু দরজাটা খুলল।

বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মিংমা। তার হাতে একটা ফ্লাস্ক। সে ভিতরে ঢুকে পড়ে বলল, দরজাটা বন্ধ করা দেও, সন্তু সাব।

সন্তু দরজা বন্ধ করে দেবার আগেই কয়েক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এতগুলো গরম জামা ভেদ করেও তাতে হাড় পর্যন্ত কেঁপে যায়।

মিংমা দুটো প্লাস্টিকের গেলাসে চা ঢািলল ফ্লাস্ক থেকে। ঐ গেলাসগুলো খুব গরম হয়ে যায়। কলকাতায় বসে ঐ রকম গেলাসে চা খাওয়ার খুব অসুবিধে, কিন্তু এখানে ঐ গরম গেলাস দু হাতে চেপে ধরেও খুব আরাম।

কাকাবাবু বললেন, তুমিও এক গেলাস চা নাও, মিংমা! তারপর বলো, আজ হাওয়া কী রকম?

উবু হয়ে বসে মিংমা বলল, আজ হাওয়া বহুত কম হ্যায়, সাব! স্কাই বিলকুল ক্লিয়ার! ওয়েদার ফারসন্টু কিলাস?

কাকাবাবু বললেন, বাঃ।

মিংমা উৎসাহ পেয়ে বলল, সাব, আজ তাঁবু গুটাব? আজ সামনে যাওয়া হবে?

কাকাবাবু বললেন, নাঃ! আরও কয়েকটা দিন থাকতে হবে এখানে?

মিংমা আর সন্তু দুজনেই তাকাল দুজনের চোখের দিকে। দুজনের মনেই এক প্রশ্ন, এখানে থাকতে হবে কেন?

কাকাবাবু বললেন, আর একটু চা দাও, আছে?

বেলা বাড়ার পর যখন রোদ উঠল, তখন সন্তু বেরিয়ে এল গম্বুজের বাইরে। মিংমা ছাড়া যে আর একজন শেরপা আছে, তার নাম নোরবু। সে একটু গভীর ধরনের, মিংমার মতন অত হাসিখুশি নয়। তবে সে বেশ ভাল পুতুল বানাতে পারে। এখানে তো কয়েকদিন ধরে কোনও কাজ নেই, সে তাঁবুর বাইরে বসে ছুরি দিয়ে কাঠের টুকরো কেটে কেটে নানান রকম পুতুল বানায়। সন্তুকে সে একটা ভালুক-পুতুল উপহার দিয়েছে।

মালবাহকরা সকাল থেকেই রান্নাবান্নায় মেতে যায়। আর তো কোনও কাজ নেই, সারাদিন ধরে খাওয়াটাই একমাত্র কাজ। মালবাহকরা রান্না করছে। আর কাছেই বসে নোরবু একটা পুতুল বানাচ্ছে।

সন্তু তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। পুতুলটা প্ৰায় তৈরি হয়ে এসেছে। কিন্তু এটা কিসের পুতুল? কী-রকম যেন অদ্ভুত দেখতে। অনেকটা বাঁদরের মতন, কিন্তু পিঠটা বাঁকা আর হাত দুটো এত লম্বা যে, প্ৰায় পায়ের পাতা পর্যন্ত।

সন্তু জিজ্ঞেস করল, নোরবু ভাই, এটা কী?

নোরবু মুখ না তুলে বলল, টিজুতি।

সন্তু বুঝতে পারল না। সে আবার জিজ্ঞেস করল, টিজুতি? সেটা আবার কী?

নোরবু বলল, টিজুতি হ্যায়! টিজুতি!

গম্ভীর স্বভাবের নোরবুর কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আর কিছু জানা যাবে না।

সে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। খানিকটা দূরে মিংমা এক-একা দাঁড়িয়ে মাউথ অগনি বাজাচ্ছে। সে মাউথ অগনি বাজিয়ে সময় কাটায়।

সে মিংমার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, মিংমা-ভাই, টিজুতি মানে কী?

বাজনা থামিয়ে মিংমা হেসে জিজ্ঞেস করল, কেন, হঠাৎ টিজুতির কথা পুছছ কেন?

নোরবু ভাই একটা পুতুল বানাচ্ছে। বলল, সেটা টিজুতি।

মিংমা বলল, ছোট বাচ্চা, তোমার থেকেও থোড়াসা ছোেটা, উসকো বোলতা টিজুতি। আর উসসে বড়া, এই হামারা মাফিক, তার নাম মিটি! আউর বহুত বড়া, আমার থেকেও অনেক বড় তার নাম ইয়েটি!

সন্তুর বুকের মধ্যে হৃৎপিণ্ডটা যেন লাফিয়ে উঠল। ইয়েটি মানে কি ইয়েতি? তা হলে কাকাবাবুইয়েতির খোঁজে। এখানে এসেছেন? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই! রেঞ্জ দূরবিন দিয়ে আর কী দেখবেন? কাচের বাক্সের জিনিসটা তা হলে নিশ্চয়ই ইয়েতির দাঁত!

সন্তুর মনে পড়ল, অনেকদিন আগে সে টিনটিন ইন টিবেট বলে একটা বই পড়েছিল। সে টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চার-বইগুলোর খুব ভক্ত। টিনটিন ইন টিবেট বইটাতে টিনটিন ইয়েতির সন্ধান পেয়েছিল। কিন্তু সে তো তিব্বতে।

তারপরই তার আবার মনে পড়ল, টিনটিন তো সেই গল্পে পাটনা থেকে নেপালে এসে তারপর তিকবিতের দিকে গিয়েছিল। এমনও তো হতে পারে যে, ঠিক এই জায়গাটাতেই এসেছিল। টিনটিন?

সে উত্তেজিতভাবে মিংমার হাত চেপে ধরে বলল, মিংমা-ভাই, তুমি ইয়েতি দেখেছি?

মিংমা দু কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, নাঃ!

সন্তু একটু নিরাশ হয়ে বলল, দেখোনি? তা হলে জানলে কী করে যে ওরা তিনরকম হয়? টিজুতি, মিট আর ইয়েতি?

মিংমা বলল, সব লোগ এইস বোলতা?

তুমি না দেখলেও আর কেউ দেখেনি? আর কোনও শেরপা কিংবা তোমাদের গাঁয়ের কোনও লোক?

না, সন্তু সাব! কেউ দেখেনি। দু-একঠো আদমি বুঠ বলে। লেকিন কোনও শেরপা দেখেনি। আমার বাবার এক বহুত বুঢ়ঢা। চাচা ছিল, সেই নাকি দেখেছিল, কিন্তু সে-চাচা বহুদিন হল মরে গেছে।

নোরবু ভাইও দেখেনি? তা হলে ও টিজুতির পুতুল বানাচ্ছে কী করে?

মিংমা হা-হা করে হেসে উঠল। সন্তু বিরক্ত হল একটু। এতে হাসির কী আছে–কোনও জিনিস না দেখলে কেউ তাঁর পুতুল বানাতে পারে?

মিংমা বলল, বহুত লোক আগে টিজুতিকা পুতুল বানিয়েছে, নোরবুও সেই দেখে বানাচ্ছে!

সন্তু বলল, আগে যারা বানিয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ দেখেছে। নিশ্চয়ই! কেউ না দেখলে এমনি-এমনি মন থেকে কেউ ওরকম অদ্ভুত মূর্তি বানায়?

মিংমা বলল, সন্তু সাব, কিতনা আদমি তো কাৰ্তিক, গণেশ, লছমী মাইজির মূর্তি বানায়, তারা কি সেই সব দেবদেবীদের আখসে দেখেছে! গণেশাজীর যে হাত্তির মতন মাথা, ঐসা মাফিক কই কভি দেখা!

কথাগুলো সন্তুর ঠিক পছন্দ হল না। আগেকার দিনে ঠাকুর-দেবতারা পৃথিবীতে নেমে আসতেন! তখন নিশ্চয়ই অনেকে দেখেছে। তখন তারা মূর্তি গড়েছে, তাই দেখে-দেখে এখনকার লোকরা বানাচ্ছে।

কাকাবাবু যদি ইয়েতি আবিষ্কার করতে পারেন, তা হলে দারুণ ব্যাপার হবে। পৃথিবীতে এর আগে কেউ জ্যান্ত বা মরা কোনও ইয়েতির ছবি তুলতে পারেনি। সন্তুর কাছে ক্যামেরা আছে, সন্তু যদি কোনওক্রমে একটা ইয়েতির ছবি তুলতে পারে!

সন্তু মিংমাকে জিজ্ঞেস করল, এখান থেকে তিব্বত কত দূরে বলতে পারো? এদিক দিয়ে তিববত যাওয়া যায়?

মিংমা বলল, হাঁ, কেন যাওয়া যাবে না? তুমলোক যিস রাস্তাসে আয়া, সেদিকে নামচোবাজার আছে জানো? টাউন-মতন জায়গা!

সন্তু বলল, হ্যাঁ, জানি। নামচেবাজার তো সিয়াংবোচির আগে।

ওহি নামচোবাজারসে যদি বাঁয়া দিকে যাও, তারপর থামিচক বলে এক গাঁও পড়বে। সেই গাঁও পার হয়ে যাও, উসকে বাদ বড়-বড় সব পাহাড়, সবাসে বড়া পাহাড় কাংটেগা। কেন কংটেগা নাম জানো? কাংটেগা মানে হল সফেদ ঘোড়া। ঠিক সাদা ঘোড়ার মতন দেখায় সে পাহাড়। ওহি দিকে আছে। নাংপো পাস। সেই নাংপো পাস দিয়ে চলে যাও, বাস, টিবেট পঁহুছে যাবে!

সন্তু প্ৰায় লাফিয়ে উঠল। তা হলে তো টিনটিনের গল্পের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। নেপালের মধ্য দিয়েই তো টিনটিন আর ক্যাপটেন হ্যাডক গিয়েছিল তিববতে।

মিংমাকে আর কিছু না-বলে সন্তু ছুটি দিল গম্বুজের দিকে। একটুখানি যেতে-না-যেতেই ধড়াস করে আছড়ে খেল।

মিংমা এসে তার হাত ধরে তুলে একটু বকুনি দিয়ে বলল, সন্তু সাব, কিতনা বার বোলা, বরফের ওপর দিয়ে একদম ছুটবে না! কভি নেহি! আইস্তে-আইস্তে চলতে হয়?

সন্তু একটু লজ্জা পেয়ে গেছে। তবে একটা সুবিধে, এই বরফের ওপর জোরে আছড়ে খেলেও গায়ে বেশি লাগে না।

কিন্তু সন্তু উৎসাহের চোটে আর স্থির থাকতে পারছে না। সাবধানে লম্বা লম্বা পা ফেলে সে গম্বুজটার দিকে চলল।

কাকাবাবু পোশাক-টোশাক পরে তৈরি হয়ে তখন বাইরে বেরুবার উদ্যোগ করছেন। সন্তু ভেতরে ঢুকে দারুণ উত্তেজিতভাবে বলল, কাকাবাবু, এবার আমরা ইয়েতির খোঁজে এসেছি, তাই না?

কাকাবাবু সন্তুর মুখের দিকে একটুক্ষণ চেয়ে রইলেন। তারপর মুচকি হেসে শান্ত গলায় বললেন, ইয়েতি বলে কিছু আছে নাকি?

সন্তুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ইয়েতি বলে কিছু নেই? কাকাবাবু ইয়েতির খোঁজে আসেননি?

আঙুল তুলে সে কাচের বাক্সটার দিকে দেখিয়ে বলল, তা হলে দাঁতের মতন ওটা কী?

কাকাবাবু বললেন, ঐ দাঁতটা সম্পর্কে তোর খুব কৌতূহল আছে, তাই না? আচ্ছা, আমি ঘুরে আসি একটু। ফিরে এসে তোকে ঐ দাঁতটার ইতিহাস শোনাব।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *