তোমরা পুরানো বন্ধু। তোমরা আগের মতো আছ।
আগের মতোই স্থির শান্ত স্বাভাবিক।
দেখে ভাল লাগে।
প্রাচীন প্রথার প্রতি আনুগত্যবশত তোমরা
এখনও প্রত্যহ দেখা দাও,
কুশল জিজ্ঞারা করো আজও।
দেখে ভাল লাগে।
তোমরা এখনও সুস্থ অনুগত আলোকিত আছ।
তোমরা পুরনো বন্ধু। অমিতাভ স্নেহাংশু অমল।
তোমরা এখনও
সুস্থির দাঁড়িয়ে আছ আপনি জমিতে।
সাঁইত্রিশ বছর তোমরা আপন জমিতে
দাঁড়িয়ে রয়েছ সুস্থ মাননীয় বৃক্ষের মতন।
দেখে ভাল লাগে।
আমি নিজে সুস্থ নই, সূর্যালোকে সুন্দর অথবা।
আমি নিজে সুস্থ নই, আলোকিত সুন্দর অথবা।
আমি এক সুদূর বিদেশে,
অতি দূর অনাত্মীয় আঁধার বিদেশে
বৃথাই ঘুরেছি
দীর্ঘ দশ বছর, অমল।
অমল, তুমি তো রৌদ্র হতে চেয়েছিলে;
স্নেহাংশু, তোমার লক্ষ্য আকাশের অব্যয় নীলিমা;
তুমি অমিতাভ, তুমি জলের তরঙ্গ ভালবাসো।
আমি দীর্ঘ এক যুগ রোদ্দুরের ভিতরে যাইনি।
আকাশ দেখিনি।
সমুদ্র দেখিনি।
কী করে আকাশ তার মুখ দেখে সমুদ্রে–দেখিনি।
আমি এক আঁধার বিদেশে
চোখের সমস্ত আলো, বুকের সাহস,
দেহের সমস্ত স্বাস্থ্য তিলে-তিলে বিসর্জন দিয়ে,
দিনকে রাত্রির থেকে পৃথক জা-জেনে
দিন কাটিয়েছে।
আঁধার বিদেশ থেকে কখনও ফেরে না কেউ। আমি
আবার ফিরেছি।
ফ্যাকাশে চামড়া, চোখে মৃত মানুষের দৃষ্টি নিয়ে
ফিরেছি আবার আমি অমিতাভ, স্নেহাংশু, অমল।
এবং দেখেছি তোমাদের।
তোমার পুরানো বন্ধু। তোমরা আগের মতো আছ।
দেখে ভাল লাগে।
তোমরা এখনও সুস্থ অনুগত আলোকিত আছ।
দেখে ভাল লাগে।
আমিও আবার স্থির সুস্থ স্বাভাবিক হতে চাই।
আতি আমি ফিরেছি আবার
অমিতাভ, স্লেহাংশু, অমল।
তাই তোমাদের কাছে আবার এসেছি।
তিনটি জীবন্ত চেনা মানুষের কাছে
এসে দাঁড়িয়েছি।
উপরে আকাশ, নীচে অনন্ত সুন্দর জলরাশি,
পিছনে পাহাড়,
শোণিতে দৃশ্যের আলো জ্বলে।
আমি এইখানে এই বান-ডাকা রৌদ্রের বিভায়
অবিকল মাননীয় বৃক্ষের মতন
দু’ দণ্ড দাঁড়াব।
স্বাস্থ্য ফিরাবার জন্য এখন খানিক পথ্য প্রয়োজন হবে।
আমি এইখানে এই সমুদ্রবেলায়
অফুরন্ত নীলিমার নীচে
প্রত্যহ এখন যদি একগ্লাস টাট্কা রোদ খেয়ে যেতে পারি,
তবে আমি সুস্থ হয়ে যাব।