Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উল্কা-রহস্য || Sunil Gangopadhyay » Page 9

উল্কা-রহস্য || Sunil Gangopadhyay

পদ্মনাভন ব্যায়ামের ভঙ্গিতে হাত দুটো ছুঁড়তে-ছুঁড়তে বললেন, ওফ, সারা গায়ে ব্যথা হয়ে গেছে।

ভাঙা বাড়িগুলোর বাইরে ফাঁকা জায়গায় বালির ওপর বসেছেন কাকাবাবু। সন্তু আর অম্বর তাঁর দুপাশে। এখন জ্যোৎস্না অনেক স্পষ্ট। সমুদ্রের ঢেউয়ের মাথায় দুলছে অনেক ফসফরাসের মালা। ঢেউগুলো ভেঙে পড়ছে ওদের খুব কাছে এসে, মালাগুলো টুকরো-টুকরো হয়ে যাচ্ছে জোনাকির মতন।

পদ্মনাভন আবার বললেন, এবার ভেবেছিলাম আর আশা নেই। আর কয়েক মিনিট দেরি হলেই ঘুমের ইঞ্জেকশান দিয়ে আমাদের সমুদ্রে ফেলে দিত। তুমি একেবারে ঠিক সময়ে কী করে এলে, রায়চৌধুরী?

কাকাবাবু বললেন, আর-একটু আগে আসতে পারতাম। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে তর্ক করতে খানিকটা সময় চলে গেল। এমন সব অদ্ভুত নিয়মকানুন ওদের। এই জায়গাটা ওড়িশার বাইরে, অন্ধ্রপ্রদেশে। আমি ওড়িশার গোপালপুর থেকে একটা পুলিশের গাড়ি আর তিনজন পুলিশ সঙ্গে এনেছি। তারা এদিকে এসে বলে যে, অন্ধ্রের পুলিশকে আগে খবর দেওয়া দরকার। আমি বললাম, পরে খবর দেবে! ওরা বলল, আগে খবর না দিলে সেটা বেআইনি হবে। বুঝে দ্যাখো ব্যাপার! খবর দিতে-দিতে যদি আসামি পালিয়ে যায়? কিংবা আরও সাঙ্ঘাতিক কিছু ঘটে যায়। তখন আমি পুলিশদের বললাম, ঠিক আছে, তোমরা অন্ত্রের পুলিশদের খবর দাও, ততক্ষণ আমি একাই এগোচ্ছি।

দূরে দাঁড়িয়ে আছে দুখানা পুলিশের জিপ। রাজীব শর্মা আর তার দলবলকে বেঁধে পুলিশরা একখানা গাড়িতে ভরছে। কুমার সিং-এর গা থেকে। সাপটাকে তুলে এনে অম্বর আবার সেটাকে রেখে দিয়েছে বেতের বাক্সটাতে।

পদ্মনাভন জিজ্ঞেস করলেন, মাধব রাও-কে তুমি কোথায় পেলে? মাধব রাও যে এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে, সেটা আমি জানতাম না! ছি ছি ছি, ওর মতন লোকও খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে!

কাকাবাবু বললেন, ওই মাধব রাও এক রিটায়ার্ড জজ সেজে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার চোখে ধুলো দিতে পারেনি।

সন্তু বলল, কাকাবাবু, তুমি ওঁকে কী করে সন্দেহ করলে? আমার তো সব সময়েই মনে হয়েছে, উনি নিরীহ ভালমানুষ!

অম্বর বলল, আমিও তো তাই ভেবেছি।

কাকাবাবু সন্তুর দিকে তাকিয়ে বললেন, রিটায়ার্ড জজ পি. কে. দত্ত আর পীতাম্বর পাহাড়ী—এই দুজনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আসামে। আবার তিনদিন পরেই এই দুজনকে দেখা গেল গোপালপুরে। এটা সন্দেহজনক নয়? মনে হয় না, এই দুজনেই এক দলের?

অম্বর প্রায় ব্যথা পাওয়ার সুরে বলল, সে কী, কাকাবাবু? আমাকে সন্দেহ করেছিলেন? আমি তো আপনার ভক্ত।

কাকাবাবু বললেন, তবু, একটি বাঙালির ছেলে আসামের জঙ্গলে বিষাক্ত সাপ ধরে বেড়াচ্ছে, এটা বিশ্বাস করা শক্ত নয়?

অম্বর বলল, এখন দেখলেন তো, আমার সঙ্গে সবসময় একটা সাপ থাকে? বন্দুক-পিস্তলের চেয়েও এটা বেশি কাজে লাগে! এখানে এলাম আপনাদের দেখা পাওয়ার জন্য, আর আপনারা আমাকে এড়িয়ে-এড়িয়ে চলতে লাগলেন। আমি ঠিক করেছিলুম, আপনাদের একটা অ্যাডভেঞ্চারে আমি সঙ্গী হব। দেখলেন তো, ঠিক হয়ে গেলুম! আমি আপনাকে সব সময় ফলো করেছি। ফলো করতে করতে এখানে পৌঁছে গেছি!

কাকাবাবু বললেন, থ্যাঙ্ক ইউ, অম্বর। থ্যাঙ্ক ইউ! তোমাকে সন্দেহ করাটা আমার ভুল হয়েছে। রিটায়ার্ড বিচারকমশাইকে কখন সন্দেহ করলাম জানো? তার একটা কথায় আমার খটকা লেগেছিল। শিলচরে ও ডাক্তার ভার্গবের কাছে বলল, পাহাড়ের খাদে আমাকে আর সন্তুকে হাত আর মুখ বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। সন্তুর হাত-মুখ বাঁধা ছিলই না। আমার যে মুখ বাঁধা ছিল, সেটা ও জানল কী করে? অম্বর আসবার আগেই আমার মুখের বাঁধন খুলে গিয়েছিল। আমি অম্বরকে কিছু বলিনি, অম্বরও জজসাহেবকে কিছু বলেনি। তা হলে? আমাদের যে হাত-মুখ বেঁধেই ফেলে দেওয়া হবে, সেই প্ল্যানটাই ও জানত আগে থেকে? তা ছাড়া, শিলচরে গিয়ে ও ডাক্তার ভাবের কাছে থাকার জন্য আমাদের জোর করছিল। ওখানে আমাদের আটকে রাখাই ছিল ওর মতলব।

পদ্মনাভন বললেন, মাধব রাও রিটায়ার্ড জজ না ছাই। ও তো একজন জুনিয়ার সায়েন্টিস্ট!

কাকাবাবু বললেন, সেটাও আমি জানলাম এখানে এসে। জজসাহেবরা রিটায়ার করলেও লোকে তাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা করে। কেউ তাদের ক্রিমিন্যাল বলে সন্দেহ করে না। পুলিশও খাতির করে তাদের। সেইজন্য বুদ্ধি করে ও রিটায়ার্ড জজ সেজেছিল। দত্ত পদবীটা বাঙালিদের হয়, অসমিয়াদের হয়, পাঞ্জাবিদেরও হয়।

অম্বর ফস করে বলল, ঠিক বলেছেন। ফিল্মস্টার ছিল সুনীল দত্ত, সে তো পাঞ্জাবি!

কাকাবাবু বললেন, আমি কলকাতায় ফোন করে হাইকোর্টের সমস্ত জজদের একটা লিস্ট চাইলাম। তখন জানা গেল যে, পি. কে. দত্ত নামে কোনও জজ এদিকে নেই। পাঞ্জাবে একজন ছিলেন, সদ্য রিটায়ার করেছেন। তখন ফোন করলাম পাঞ্জাবের অমৃতসরে। সেখান থেকে খবর পেলাম, রিটায়ার্ড জজ পি. কে, দত্ত অত্যন্ত অসুস্থ, তিনি আছেন হাসপাতালে। তখন সব ফাঁস হয়ে গেল।

পদ্মনাভন জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ওর পিছুপিছু এখানে চলে এলে?

কাকাবাবু বললেন, তোমাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে, তা জানা যাচ্ছে। তখন আমি ঠিক করলাম এই নকল জজসাহেবটা যদি ষড়যন্ত্রের মধ্যে থাকে, তা হলে ও কোনও-না-কোনও সময়ে তোমার কাছে যাবেই। সুতরাং ওকে ফলো করলে তোমার হদিস পাওয়া যেতে পারে। আজ রাত্তিরে ও একটা গাড়ি নিয়ে বেরোতেই আমি কয়েকটা পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ওর পিছু ধাওয়া করলাম। রাস্তা দারুণ খারাপ, গাড়ি চলেছে খুব আস্তে-আস্তে, তাই আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হয়েছে, যাতে ও টের না পায়

অম্বর হেসে বলল, ভাগ্যিস রাস্তা খারাপ ছিল! তাই আমি সাইকেলে আপনাদের সঙ্গে-সঙ্গে ঠিক এসে পড়েছি। কাকাবাবু, আপনি নকল জজকে ফলো করেছেন, সে টের পায়নি। আর আমিও যে আপনাকে ফলো করছি, তা আপনিও টের পাননি!

কাকাবাবু বললেন, সত্যি, তোমার এলেম আছে।

পদ্মনাভন বললেন, মাধব রাও এই খুনিদের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল! দ্যাখো রায়চৌধুরী, রাজীব শর্মার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছিল, সে দোষ করেছিল বলে তাকে আমি গালাগালি দিয়েছিলাম, এজন্য আমার ওপর তার রাগ আছে। এর আগেও সে দু-একবার আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে! কিন্তু মাধব রাও! আমি কখনও তার কোনও ক্ষতি করিনি। এক সময় সে আমার সঙ্গে কাজ করেছে, তারপর নিজেই ছেড়ে চলে গেছে। বিশ্বাস করো, আমি ওর সঙ্গে কোনওদিন খারাপ ব্যবহার করিনি! তবু আমার ওপর ওর অসম্ভব হিংসে ছিল। আমার খ্যাতি হচ্ছে, ওর কেন ততটা হচ্ছে না। শুধু এই হিংসেতেই মানুষ এমন পাগল হয়ে যায়? আমাকে খুন করতেও ওর আপত্তি নেই!

কাকাবাবু বললেন, শুধু তোমাকে কেন? ও তো সন্তু আর আমাকেও খুন করতে চেয়েছিল। রাজীব শর্মার সঙ্গে ও হাত মিলিয়েছে। তারপর রাজীব ভার নিয়েছে তোমাকে সরাবার, আর মাধব রাও ভার নিয়েছে আসামে আমাদের সরিয়ে দেওয়ার। লোকটা কিন্তু এমনিতে খুব ভিতু। এখানে গাড়ি থেকে নামবার পর যেই আমি ওর মাথার পেছনে রিভলভার ঠেকালাম, ও ভয় পেয়ে হাউমাউ করে উঠল। স্বীকার করে ফেলল সব। আবার বলে কী, আমাকে আর সন্তুকে একেবারে খুন করার ইচ্ছে ওর ছিল না। সেইজন্য হাফলঙের পাহাড়ে এমন একটা খাদের ধরে নিয়ে আমাদের ঠেলে ফেলার ব্যবস্থা করেছিল, যেখানে অনেক ঝোপঝাড়, গাছপালা আছে। যাতে আমরা মরে না গিয়ে আহত হয়ে বেশ কিছুদিন শুয়ে থাকব, তাতেই ওর কাজ হয়ে যাবে!

পদ্মনাভন বললেন, রাস্কেল! পাহাড় থেকে ঠেলে দিলে কে আহত হবে, আর কে মরবে, তার কি কোনও ঠিক আছে? পড়ার সময়েই তো অনেকে হার্ট ফেইল করে মরে যেতে পারে।

কাকাবাবু বললেন, আচ্ছা পদ্মনাভন, একটা ব্যাপার আমি এখনও বুঝিনি। জেলের কাছ থেকে উল্কা-পাথরটা কেনার পরও তুমি গোপালপুরের বাংলোয় অতদিন রয়ে গেলে কেন? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাঙ্গালোরে ফিরে যাওয়া উচিত ছিল না। শুধু-শুধু কেন বসে রইলে?

পদ্মনাভন বললেন, তোমার জন্য! কাকাবাবু অবাক হয়ে বললেন, আমার জন্য? তার মানে?

পদ্মনাভন বললেন, ডাকবাংলোতে এসেই জানলাম, পাশের ঘরটা তোমার নামে বুক হয়ে আছে! তখনই আমি ঠিক করলাম, বাঃ চমৎকার! রায়চৌধুরী এসে পড়লে আমার আর কোনও সমস্যা থাকবে না। তাই আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম তোমার জন্য। কিন্তু তুমি এলেই না! আমি বাংলোর লোকদের বলে রেখেছিলাম, ওই ঘর যেন আর কাউকে দেওয়া না হয়!

কাকাবাবু বললেন, সেইজন্যই আমাদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে আসামে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তোমার সমস্যাটা কী ছিল?

পদ্মনাভন বললেন, পাথরটা আমি কেনার পরেই রাজীব শর্মাকে দেখতে পেলাম! রাজীবের এমনই দৃভাগ্য, ও আমার ঠিক এক ঘন্টা পরে পৌঁছেছে।

হলে আমার থেকেও বেশি দাম দিয়ে ও পার্থরটা কিনে নিত। আমি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে পাথরটা কেনার পর সবাই ভাবল, ওটা খুবই দামি জিনিস।

কাকাবাবু বললেন, খুব স্বাভাবিক। তোমার মতন একজন বৈজ্ঞানিক অত টাকা দিয়ে তো একটা পাথর কিনবে না! সবাই ভাববে, নিশ্চয়ই ওর মধ্যে অন্য কিছু আছে।

পদ্মনাভন বললেন, রাজীব শর্মা ওটা পাওয়ার জন্য খেপে গেল। আমার কাছে অন্য লোক পাঠাল, দশ হাজার টাকা দিয়ে ওটা কিনতে চেয়ে। আমি রাজি হইনি। রাজীব আমার পুরনো শত্রু। ব্যবসা করে এখন অনেক টাকা হয়েছে ওর, হাতে অনেক দলবল আছে। পাথরটা নিয়ে আমি গোপালপুর থেকে বেরোবার চেষ্টা করলেই ও জোর করে কেড়ে নেবে। আমাকে মেরে দিতেও পারে। এর আগে ও আমার ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেছে!

কাকাবাবু বললেন, তুমি পুলিশের সাহায্য নিলে না কেন?

পদ্মনাভন বললেন, আমি পুলিশের ওপর ভরসা করি না। পুলিশের চেয়েও তোমার ক্ষমতার ওপর আমার বিশ্বাস অনেক বেশি। দ্যাখো, আমি ভুল করিনি। শেষ পর্যন্ত তুমিই তো এসে আমাকে বাঁচালে।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, পাথরটার শেষ পর্যন্ত কী হল? লুকিয়ে রাখতে পেরেছিলে?

পদ্মনাভন মুচকি হেসে বললেন, হ্যাঁ। কার্পেটের নীচে।

কাকাবাবু ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, কার্পেটের নীচে?

কয়েক পলক পদ্মনাভনের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি হো-হো করে হেসে উঠে বললেন, ও, বুঝেছি!

সন্তু ব্যস্তভাবে বলল, কী হল? কী হল? আমি বুঝতে পারছি না তো! অতবড় একটা পাথর কার্পেটের নীচে কী করে লুকনো যাবে? কার্পেটটা উঁচু হয়ে থাকবে না? তা ছাড়া ওরা কার্পেট নিশ্চয়ই উলটে দেখেছে!

পদ্মনাভন বললেন, শোনো ইয়াংম্যান। আমি মিথ্যে কথা বলি না। আমি ওদের বলেছিলাম, পাথরটা নেই। এই তিনটেই সত্যি। তবু ওরা বোঝেনি!

অম্বর বলল, যা বাবা! এ যে একটা ধাঁধা!

কাকাবাবু বললেন, একটু বুদ্ধি খাটালে ধাঁধারও উত্তর পাওয়া যায়। সবারই বুদ্ধি থাকে। কিন্তু সবাই সেটা ব্যবহার করতে জানে না। কার্পেটের নীচে কী থাকে? ধুলো! পদ্মনাভন ওই উল্কা-পাথরটাকে গুঁড়িয়ে ধুলো করে কার্পেটের নীচে রেখে দিয়েছে। তাই কেউ বুঝতে পারেনি!

পদ্মনাভন বললেন, পাথরটার এমনিতে তো কোনও দাম নেই আমার কাছে। উল্কা-পাথরের মধ্যে নতুন কোনও মেটাল পাওয়া যায় কিনা, তাই নিয়ে সারা পৃথিবীতে গবেষণা হয়। এই পাথরটা একটু অন্যরকম দেখতে, ভেতরটা সবুজ, অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে। এটার মধ্যে যদি এমন কোনও মেটাল পাওয়া খায়, যা পৃথিবীতে নেই, তা হলেই এক বিরাট ব্যাপার হবে, সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে যাবে। সেইজন্য আমি ঘরে বসেই কয়েকটা পরীক্ষা করলাম।

সন্তু জিজ্ঞেস করল, যন্ত্রপাতি পেলেন কোথায়?

পদ্মনাভন বললেন, এর জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি লাগে না। প্রথমে আমি একটা ছোট ছুরি দিয়ে চেঁছে দেখলাম, কেন ওটা অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে। পাথরটা বেশ কয়েকদিন সমুদ্রের জলে ড়ুবে ছিল। ওর গায়ে ফসফরাস লেগে গেছে। তোমরা সবাই জানো, অন্ধকারে ফসফরাস জ্বলজলে হয়ে যায়। ছুরি দিয়ে চাঁছতেই সেটা উঠে গেল। এবার দেখা দরকার, সেটা শুধুই পাথর, না তার মধ্যে কোনও ধাতু মিশে আছে। তাই একটা হাতুড়ি দিয়ে আমি সেটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলাম।

সন্তু জিজ্ঞেস করল, তাতে জিনিসটা নষ্ট হয়ে গেল না?

পদ্মনাভন বললেন, পাথর হিসেবে নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু ধাতু থাকলে গুঁড়ো করলেও ক্ষতি নেই। লোহার, গুঁড়োকে আবার লোহার পিণ্ড করা যায় না? গুঁড়ো করার সুবিধে এই, আমার সুটকেসের মধ্যে ধুলো হিসেবে ছড়িয়ে দিয়ে নিয়ে যেতে পারব, কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। এরপর ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখব।

কাকাবাবু বললেন, পদ্মনাভন, তোমার দোষ এই, তুমি সব সময় বিপদের ঝুঁকি নিতে ভালবাস। আমার মতে, প্রথম দিনই পুলিশের সাহায্য নিয়ে তোমার ফিরে যাওয়া উচিত ছিল।

পদ্মনাভন বললেন, বিপদকে এড়াতে চাইলেই কি আর বিপদ এড়ানো যায়? তুমি বলতে চাও, এখান থেকে ব্যাঙ্গালোর পর্যন্ত পুলিশ আমাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যেত? মাঝখানে পাহারাদার পুলিশ ঘুমিয়ে থাকত, আর রাজীব শমার ভাড়াটে গুণ্ডারা গুলি করে আমায় মেরে পাথরটা নিয়ে পালাত! তবে রায়চৌধুরী, একটা কথা বলে রাখছি। যদি এই পাথরটা থেকে সত্যিই বড় কিছু আবিষ্কার করা যায়, তা হলে তোমার নামটাও তার সঙ্গে যুক্ত হবে। আমি যদি মরে যেতাম, তা হলে তো কিছুই হত না। কার্পেটের তলায় ধুলোর কথাও কেউ জানত না।

কাকাবাবু বললেন, না, না, না, আমার নামটাম দরকার নেই। আমার কথা লোকে যত কম জানে, ততই ভাল। এমনিতেই আমার শত্রুর অভাব নেই!

অম্বর বলল, কাকাবাবু, এর পর থেকে অন্য অ্যাডভেঞ্চারেও আমাকে সঙ্গে নেবেন তো?

কাকাবাবু বললেন, আর আমি কোনও অ্যাডভেঞ্চার-ট্যাডভেঞ্চারে যাচ্ছি না। এর পর আবার আমরা আসামে যাব। সেখানে অম্বর তোমার সাপধরা দেখব। তা ছাড়া জাটিংগা-পাখির রহস্যটা ভেদ করতে হবে না? কী বল, সন্তু?

সন্তু মাথা নাড়ল।

পদ্মনাভন কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, পাখির রহস্য? সেটা কী ব্যাপার?

কাকাবাবু বললেন, সে একটা অন্য গল্প। তোমাকে পরে বলব। এখন চলো, গোপালপুরে ফেরা যাক।

রাজীব শর্মার মোটর বোটের চালককে আগেই বন্দী করা হয়েছে। গাড়ির রাস্তা খুব খারাপ বলে কাকাবাবু ঠিক করে রেখেছিলেন, মোটর বোটেই। ফিরবেন। কাকাবাবুই চালাতে জানেন।

তীরের কাছে সাদা রঙের বোটটা একটা রাজহংসীর মতন দুলে-দুলে ভাসছে। সবাই মিলে উঠল সেই বোটে। কাকাবাবু এঞ্জিনে স্টার্ট দিলেন।

ডেকের ওপর দাঁড়িয়ে অম্বর বলল, সন্তু, আমি যদি একটা গান ধরি, তোমার আপত্তি আছে? আমি নিজে গান বানাই, নিজেই সুর দিই। শুনবে?

ঢেউয়ের গর্জন ছাপিয়েও চিৎকার করে সে গাইতে লাগল :

গোপালপুরে উল্কা পড়ল একখানা
তাই নিয়ে ভাই কত কাণ্ড-কারখানা..

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9
Pages ( 9 of 9 ): « পূর্ববর্তী1 ... 78 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress