Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হাউসবোটে নিখোঁজ || Sujan Dasgupta » Page 3

হাউসবোটে নিখোঁজ || Sujan Dasgupta

পরের দিন সারা দিনই কাটল আমেরিকান সেন্টারে একটা কাজে। সেখান থেকে বেরোলাম প্রায় সাতটা নাগাদ। সেন্টারের ভিতরে মোবাইল ফোন নিতে দেয় না। বেরিয়ে দেখি অনিমেষের তিন তিনটে মিসড কল। নিশ্চয় আবার অনেক হেনস্তা হয়েছে পুলিশের কাছে। বাড়ি ফিরে ফোন করব। এরমধ্যে একেনবাবুর সঙ্গেও একটু কথা বলতে হবে, কতটা এগিয়েছেন জানার জন্যে। অনিমেষের একটা কথা ওয়াজ ট্রাবলিং মি। একজন কেউ ভাস্বতাঁকে পাবার জন্য পাগল। সে-ই কি রাত্রে এসে ভাস্বতাঁকে অ্যাবডাক্ট করেছে? অসম্ভব নয়। তবে বাইরের কারোর পক্ষে কোনও রকম সাহায্য ছাড়া এভাবে নিঃশব্দে কাউকে অপহরণ করা সম্ভব নয়। প্রশ্ন, বিজয়বাবু কেবিন থেকে বেরবার আগে মন্টু কি পেছনের ডেকে গিয়েছিল? সে কি ভাস্বতীর অদৃশ্য হওয়ার সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত? পেছনের ডেক থেকে হ্যারিকেনটাই বা কোথায় গেল? পুরো ব্যাপারটাই একটা রহস্য।

বাড়িতে ঢুকে কম্পিউটার খুলে দেখি, একেনবাবুও স্কাইপে আমাকে ধরার চেষ্টা করেছেন। স্কাইপে পেলাম না, কিন্তু ফোনে ধরতে পারলাম। একেনবাবু এর মধ্যেই মলয় রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

“ছেলেটা ভালো, একেনবাবু বললেন, “ওকে ঠিক প্লেস করতে পারছিলাম না, কিন্তু আমার অফিসে কিছুদিন ছিল। নতুন কিছু ডেভালপমেন্ট হয়েছে শুনলাম। কিন্তু বাইরের কেউ সঙ্গে ছিল, তাই আর কিছু বলতে পারল না। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে, আজ রাতে বা কাল সকালে যদি মলয়ের বাড়িতে যান, আপনাকে বলে দেবে।”

“আমাকে?” কথাটা বুঝলাম না, আমাকে কেন, আপনি নিজেও তো ফোন করে জেনে নিতে পারেন?”

“ওর স্কাইপ নেই।”

তখনই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হল। একেনবাবু হাড় কেপ্পন। এই কাজটা করে দিচ্ছেন আমার সুবাদে। কিন্তু এর জন্য টেলিফোনে কানাকাড়িও খরচ করবেন না। তবে নিজের থেকে যে মলয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তাতেই আমি চমৎকৃত।

“আমাকে উনি বলবেন তো?” চিন্তা ছিল আমি একজন অপরিচিত লোক।

“হ্যাঁ স্যার, নিশ্চয়। বললাম তো, আমার সঙ্গে কথা হয়ে গেছে।”

মলয়ের ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিলেন। লাকিলি মলয় রায়ের বাড়ি নাকতলাতে, আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে হাঁটা পথে মাত্র মিনিট পাঁচেক।

একেনবাবুর কথা মতো ফোন করলাম। মলয় রায়ই ফোনটা ধরলেন। নাম বলতেই বললেন, “ও আপনি স্যারের বন্ধু। আমার সঙ্গে আজকেই কথা হয়েছে। আমি বাড়িতেই আছি। চাইলে আজই আসতে পারেন।”

এরকম অভ্যর্থনা পাব বুঝিনি। বললাম, “আধঘণ্টার মধ্যেই আসছি।”

মলয় রায়ের চেহারা একেনবাবুর ঠিক উল্টো। একেনবাবু টিংটিঙে রোগা, বেঁটেখাটো, আন-ইম্প্রেসিভ চেহারার একটি লোক। পোশাক-পরিচ্ছদও তথৈবচ। মলয় রায় সুপুরুষ, প্রায় ছ’ফুট লম্বা। চওড়া কব্জি, এক্সারসাইজ-করা ফিট বডি। পুলিশ হবারই উপযুক্ত চেহারা।

একেনবাবু নিশ্চয় খুব ফলাও করে আমার কথা বলেছেন। যথেষ্ট আপ্যায়ন করলেন। স্ত্রীকেও ডাকলেন, “আমার স্ত্রী মল্লিকা।”

খুবই মিষ্টি চেহারা। নমস্কার করলাম।

“এঁর কথাই স্যার বলছিলেন আজ। ডঃ দে, আমেরিকায় প্রফেসরি করেন।”

“আপনি বেড়াতে এসেছেন?” মল্লিকা নমস্কার করে জিজ্ঞেস করলেন।

“ঠিক বেড়াতে নয়, এক বছরের ছুটি নিয়ে এখানে রিসার্চ করছি।”

“আমাদের একটু চা খাওয়াও না?”

“তা তো খাওয়াবোই। মিষ্টি খান তো?”

“শুধু চাই যথেষ্ট, না হলেও চলবে।”

“তা হয় নাকি!” বলে উনি ভিতরে গেলেন।

আমি মলয় রায়কে বললাম, “একেনবাবু বললেন, কিছু নাকি নতুন ডেভালপমেন্ট হয়েছে?”

“তা হয়েছে। কিন্তু একটা কথা বলুন তো, এই অনিমেষ আপনার কী রকম বন্ধু?”

“ওর সম্পর্কে যা জানি বললাম।”

“কিছু মনে করবেন না, ভদ্রলোক কিন্তু হ্যাঁবিচুয়াল লায়ার। একটু সতর্ক থাকবেন।”

আমি অবাক হয়ে তাকালাম।

“আজ সকালে ডেকেছিলাম। বললাম ঠিক ন’টার সময়ে আসবেন। আমাদের অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার সাহেবও কেসটাতে ইন্টারেস্ট নিচ্ছেন, তিনি থাকবেন। এলেন দশ মিনিট বাদে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, দেরি করলেন যে?”

অম্লান বদনে বললেন, ‘ঠিক টাইমেই তো এসেছি।’

কথাটা শুনে আমি অবাক। ‘ক’টা বাজে আপনার ঘড়িতে?’

ঘড়ির দিকে প্রায় না তাকিয়েই বললেন, ‘ন’টা।’

পরিষ্কার দেখতে পেলাম ওঁর হাতঘড়িতে নটা বেজে দশ।

তখন একটু ধমক দিয়েই বললাম, আপনার ঘড়ি তো বলছে নটা দশ!

এবার দেখলাম থতমত খেয়েছেন। তাও বোঝাবার চেষ্টা করলেন, “ওটা দশ মিনিট ফাস্ট।“

আমি বলতে বাধ্য হলাম, “দেখুন এটা সিরিয়াস ইনভেস্টিগেশন, থানায় এসে এরকম রহস্য করার চেষ্টা করলে ফল ভুগতে হবে।”

“টাইমের ব্যাপারে ও একটু ঢিলেঢালা,” আমি বললাম। কিন্তু এটা ঠিক নয়, আপনাদের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে এইভাবে লেট করে যাওয়াটা।”

“ভদ্রলোক একটু ওভার-স্মার্ট! যাইহোক, স্যারকে বলবেন, দুটো ইন্টারেস্টিং খবর আছে। কিন্তু এটা আপনি আর স্যার ছাড়া কেউ যেন না জানে। আপনার বন্ধু তো নয়ই।”

আমি বললাম, “আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আমি একেনবাবুর অনেক কাজেই সাহায্য করি।”

“সেটা স্যার বলেছেন, আপনাকে বলাও যা ওঁকে সোজাসুজি বলাও তাই। তাও আমি টেকিং এ রিস্ক। হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম, নাম্বার ওয়ান হল, ভাস্বতীর ঘড়িটা মন্টুর কাছে থেকে উদ্ধার করেছি।”

“মন্টুর কাছ থেকে?”।

“হ্যাঁ। মন্টুর বয়ান অনুযায়ী ভাস্বতী ওটা ওকে দিয়েছিল। ভাস্বতী পেছনে একা বসেছিল, আর খুব ভালো দিদিমণি বলে মন্টু ওর দেখভালটা বেশিই করছিল। ভাস্বতী যখন যা চাইছিল এনে দিচ্ছিল। ভাস্বতী ওর সঙ্গে অনেক গল্পও করেছে। মন্টুর এক বোন আছে শুনে ভাস্বতী নাকি ঘড়িটা খুলে মন্টুকে দেয়। মন্টু নাকি নিতে চায়নি, ভাস্বতীই জোর করে দিয়েছিল।”

“আপনি বিশ্বাস করেন?”

মলয় রায় মুচকি হাসলেন।

“সেকেন্ড ইনফরমেশন হল, ভাস্বতী ওয়াজ প্ল্যানিং টু ইলোপ।”

“ইলোপ! এটা কোত্থেকে জানলেন?”

“ওর স্কুলের এক বন্ধুর কাছ থেকে। শুক্রবার, অর্থাৎ বোটে ওঠার আগের দিন ভাস্বতী বন্ধুটিকে জানিয়েছিল।”

“মাই গড, কার সঙ্গে পালাবার প্ল্যান করেছিল?”

“বন্ধু সেটা জানে না। আর এই প্ল্যানটা বোধহয় হঠাৎ করে করা, আগে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি।”

“মাত্র সতেরো বছর বয়স মেয়েটার… ওর তো ভালো বোধ-বুদ্ধিও হয়নি।”

“যেটুকু জেনেছি, মেয়েটা স্বপ্নের রাজত্বে থাকত। তবে সত্যি সত্যিই ইলোপের কোনও প্ল্যান ছিল কিনা, সেটা আর জানাও যাবে না।” মলয়বাবু একটু চুপ করে থেকে বললেন, “শি ইজ ডেড, ভাস্বতী আর বেঁচে নেই।”

আমি নির্বাক।

মলয়বাবু বলে চললেন, “ওর বডিটা ভেসে যাচ্ছিল। একটা মাঝি দেখতে পেয়ে খবর দেয়। লোকাল পুলিশ বডিটা উদ্ধার করেছে। ভাস্বতীর চেহারা আর জামাকাপড়ের যে বর্ণনা পেয়েছি, তার সঙ্গে ম্যাচ করছে। আমি শিওর বডিটা ভাস্বতীর, কিন্তু ফর্মাল আইডেন্টিফিকেশন এখনও হয় নি। ওর বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়েছে।”

ইতিমধ্যে চা, নিমকি আর দু’রকমের সন্দেশ এসে গেল। কিন্তু এসব শোনার পর কিছু আর খেতে ইচ্ছে করছিল না।

বললাম, “শুধু যদি চা খাই কিছু মনে করবেন?”

মল্লিকা বুদ্ধিমতী। আমার মুখচোখ দেখে মনের অবস্থাটা বুঝতে পারলেন।

“কিচ্ছু মনে করব না, আপনারা কথা বলুন,” বলে চলে গেলেন।

“আপনার কি মনে হচ্ছে মিস্টার রায়, এটা মার্ডার? ওই মন্টু ছেলেটা ইনভলভড? ঘড়ির লোভে কাজটা করেছে?”

উত্তর না দিয়ে, “আসছি” বলে মলয় রায় ভিতরে চলে গেলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে এলেন একটা ফটো নিয়ে। ভাস্বতী, শীলা আর দীপাবউদির ফটো, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।

“এটা ভাস্বতীর বাবার তোলা, হাউসবোটে। ভাস্বতাঁকে দেখুন।”

প্রশ্নের তাৎপর্যটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। বেশ সেজেগুজে বেড়াতে গিয়েছিল এইটুকুই চোখে পড়ল।

“মেয়েটার গলার হার আর দুলটা দেখছেন?”

“হ্যাঁ।”

“সেটটা খুব সস্তা নয়, দাম এক লাখ না হলেও কাছাকাছি। ঘড়ির দাম বড়জোর দু তিনশো টাকা। ওটার জন্য কেউ খুন করবে না। করলে করবে সেটটার জন্যে।”

“সেটটা কি মিসিং?”

“হ্যাঁ, কিন্তু মন্টুর কাছে পাওয়া যায়নি।”

“মন্টু তো এরমধ্যে সেটটাকে পাচার করে ফেলতে পারে?”

“তা পারে। হি ইজ আওয়ার প্রাইম সাসপেক্ট, বিশেষ করে যদি প্রমাণ হয় ভাস্বতী খুন হয়েছে। তবে কিনা আমাদের কাছে এভরি ওয়ান ইজ এ সাসপেক্ট, ইনক্লিউডিং আপনার বন্ধু।”

Pages: 1 2 3 4 5

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress