Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিষিদ্ধ লোবান || Syed Shamsul Haque » Page 12

নিষিদ্ধ লোবান || Syed Shamsul Haque

মেজর

ঘুম থেকে উঠে আসে স্থানীয় ছাউনির অধিনায়ক মেজর। উর্দি পরেই শুয়েছিল, কোমরে বেল্ট আঁটতে আঁটতে সমুখে এসে দাঁড়ায়। বিলকিস আর সিরাজের দিকে ঈষৎ কুঞ্চিত চোখে তাকিয়ে থাকে সে।

যারা তাদের ধরে এনেছে, দূরে দাঁড়িয়ে থাকে তারা উৎসুক চোখে। বার বার দৃষ্টিপাত করে মেজরের দিকে। কারো কারো মনে মেজরের সর্বশক্তিমান দেহ কাঠামো, দৃষ্টির স্থির তীক্ষ্ণতা ঈর্ষার উদ্রেক করে।

মেজর চোখ ফিরিয়ে ছোঁকরাগুলোকে একবার দেখে নেয়। তারপর ক্লান্ত একটা হাত তুলে তাদের চলে যেতে ইশারা করে। তারা আশাহত হয় এবং সংক্ষিপ্তকাল ইতস্তত করে বেরিয়ে যায়।

জলেশ্বরী হাই স্কুলের এই ঘরটা ক্লাশ নাইন বি সেকশনের ঘর, এখন একেবারে অপরিচিত মনে হয় সিরাজের।

মেজর একটা চেয়ারে বসে, সমুখে দুপা ছড়িয়ে দিয়ে, যেন তার কোনো তাড়া নেই, ডান হাতের তর্জনী নাচিয়ে ইশারা করে।

দরোজার একজন সৈনিক বেঁটে চওড়া বন্দুক নিয়ে পাহারা দেয়। বিলকিস এক পা এগিয়ে আসতেই মেজর তর্জনী তোলে। দাঁড়িয়ে পড়ে বিলকিস। মেজর সিরাজকে নীরবে নির্দেশ করে। সিরাজ এগিয়ে আসে এক পা। থামে। মেজর আবার তর্জনীর ইশারা করে। তখন সিরাজ আরো কাছে আসে।

দূরত্বটা মনঃপূত হলে মেজর সিরাজের চোখের দিকে স্থির কঠিন দৃষ্টিপাত করে এবং একই সঙ্গে ঠোঁটে বিপরীত মৃদু হাসি সৃষ্টি করে নিচু গলায় জিগ্যেস করে, হু ইজ শি?

সিরাজ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

উর্দুতে আবার সেই একই প্রশ্ন উচ্চারিত হয়। এবার প্রশ্ন করে সে বিলকিসের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কান ফেলে রাখে সিরাজের উত্তর শোনার জন্যে।

বিলকিস। উত্তর দেয়, আমি ওর বোন।

আপাদমস্তক দেখে নেয় বিলকিসকে, তারপর প্রতিধ্বনি করে, বহেন?

হ্যাঁ।

হাঁ

ভাই-বোন?

হ্যাঁ।

আপন ভাই-বোন?

হ্যাঁ।

তফাত অনেক। মাঝখানে আরো ভাই-বোন আছে? তোমাদের মা-বোন নিশ্চয়ই আরো কিছু বিশ্বাসঘাতকের জন্ম দিয়েছে। দেয় নি?

চুপ করে থাকে দুজনেই।

ঠিক আছে, জবাব দিতে হবে না। আমরা জানি পশুর মতো বাঙালিরা সন্তান উৎপাদন করে। বিশ্বাসঘাতকের জন্ম দেয়। তবে, বিশ্বাসঘাতক হলেও কখনো কখনো তারা সুশ্ৰী হয়।

মেজর উঠে দাঁড়িয়ে কাছে আসে বিলকিসের। কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থেকে দুজনকে ঘিরে ধীর চক্কর দিয়ে আবার সমুখে স্থির হয়।

বাজারে গিয়েছিলে?

নীরবতা।

লাশ নিতে?

নীরবতা।

হুকুম শোন নি।

নীরবতা।

কবর দিতে চেয়েছিলে? কাল কয়েকটিকে কবর দিয়েছে কারা?

বিলকিস ও সিরাজ দুজনেই সচকিত হয়।

মেজর এবার কেবল বিলকিসকেই প্ৰদক্ষিণ করে সমুখে ফিরে আসে।

জানোয়ার খুঁড়ে তুলেছে।

ধীরে ধীরে বিলকিসের ভেতরটা কঠিন হয়ে আসে।

মেজর হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে, জান না, কুকুরের কখনো কবর হয় না?

হাতের ছড়ি দিয়ে সিরাজের পেটে খোঁচা দিয়ে মেজর তাকে বিলকিসের পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়। তারপর চেয়ারে ফিরে গিয়ে দুজনকে এক সঙ্গে সে আবার দেখতে থাকে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress