Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঢাকা রহস্য উন্মোচিত || Sujan Dasgupta » Page 5

ঢাকা রহস্য উন্মোচিত || Sujan Dasgupta

আজ সকাল থেকে একেনবাবু আবার বারান্দার গাছগুলো নিয়ে লেগেছেন। আমাকে অনেকক্ষণ বোঝাবার চেষ্টা করেছেন একটা বড় আয়না কিনে সেটা যদি বারান্দার রেলিং-এর সঙ্গে একটা ব্র্যাকেট আটকে তার অন্য প্রান্তে লাগানো যায়, তাহলে সূর্যের আলো তাতে রিফ্লেক্ট হয়ে ওঁর দুটো টবে অন্তত: পড়বে। ওঁর দুটো টবই হচ্ছে সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল। অন্যগুলোতে যেসব গাছ আছে তারা ছায়াতেও বাঁচবে, যদিও ফুল ভালো হবে না।
আমি ঠাট্টা করে বললাম, “আপনি ঠিক চেক করে দেখেছেন দুটো টব আলো পাবে কিনা।”
“হ্যাঁ স্যার, থিওরি অফ ফিফ্লেকশনতো সহজ অঙ্ক। কঠিন ব্যাপার হল আপনাদের সম্মতি পাওয়া।”
“সেটা পাবেনও না, প্রমথ বলল, আয়না ভেঙ্গে নিচে কারোর মাথায় পড়লে খুনের দায়ে জেলে যাবে কে, আপনি না আমরা?”
“পড়ে যাবে কেন স্যার ব্র্যাকেটে নাটবোল্ট দিয়ে টাইট করে লাগানো থাকলে।”
“আপনি এক কাজ করুন, প্রমথ বলল, সবকটা টব মামুদকে দিয়ে দিন। ওদের কম্পিটেণ্ট মালী আছে, বিদেশী গাছ বাঁচিয়ে অভ্যস্ত। ওরা আপনার গাছকে অনেক ভালো দেখভাল করবে।”
“আপনি স্যার, সত্যি!” একেনবাবু ওঁর এই ব্রিলিয়াণ্ট আইডিয়াটা এভাবে উড়িয়ে দেওয়া হল বলে একটু ক্ষুণ্ণই হলেন।
আমার খারাপ লাগলো। বললাম, “দোকানেতো গ্রো লাইট বিক্রি করে দেখেছি। তার একটা কিনে লাগান না।”
“ওগুলো খুব এফেক্টিভ নয় স্যার। কোথায় সূর্যের আলো আর কোথায় গ্রো ল্যাম্প।”
“আরে মশাই নেই মামার থেকেতো কানা মামা ভালো।”
“তা ঠিক।”
“ঠিক আছে আপনি যখন এতো ঘ্যানঘ্যান কাছেন, ইলেকট্রিসিটি না হয় আমরা শেয়ার করবো। তবে এও আপনাকে বলছি, এর থেকে অনেক সস্তা হত যদি আপনি সপ্তাহ অন্তর কিছু ফুল বাড়িতে কিনে আনতেন। এই মাটি জলে বারান্দা কাদা করতেন না, ফুলও বাড়িতে থাকতো এবং তার ভ্যারাইটিও অনেক বেশি হত।”
“কিন্তু নিজের হাতে বাগান করার আনন্দটাতো থাকতো না।”
“সেটাতো শুধু আপনি উপভোগ করছেন। আমরা সাফার করছি। এক্ষেত্রে সবাই উপভোগ করতাম। আপনার ম্যাডাম ফ্র্যান্সিস্কাও।”

একেনবাবুর ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন। ঠিক এই সময়ে ফ্র্যান্সিস্কা এসে হাজির। একেনবাবুর কীর্তিকলাপ দেখে সে মুগ্ধ।
“মাই গড, কি চমৎকার গাছগুলো হয়েছে ডিটেকটিভ। আমি শিওর কদিন বাদেই বড় বড় ফুল হবে।”
“আই অ্যাম ট্রাইং ম্যাডাম,” একেনবাবু পরম উৎসাহিত হয়ে বললেন।
“আমাদের অনেক নেগেটিভ ফিডব্যাক সত্যেও,” প্রমথ গম্ভীর ভাবে বলল।
“তোমরা এতো নেগেটিভ কেন, নেচারকে নার্চার করছেন মাই ডিয়ার ডিটেকটিভ।” ফ্র্যান্সিস্কা একেনবাবুকে খুব পছন্দ করে। স্নেহভরে ‘মাই ডিটেকটিভ’ বলে ডাকে। একেনবাবুও ফ্র্যান্সিস্কাকে দেখলে মনে বেশ বল পান। এবং আমাদের বিরুদ্ধে যা যা কম্প্লেইন আছে সব নির্ভয়ে ব্যক্ত করেন। তারজন্য ফ্র্যান্সিস্কার মিষ্টি তিরস্কার আমাদের সহ্য করতে হয়। এটাই রুটিন।
“একটু সূর্যের আলো জোগাড় করার চেষ্টা করছিলাম ম্যাডাম, কিন্তু ওঁরা আপত্তি করছেন।”
“কেন?” ফ্রান্সিস্কা অনুযোগভরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকালো।
“তুমিই জিজ্ঞেস করো না আইডিয়াটা কি?”
একেনবাবু বিশদ করে আয়নার কথাটা বললেন।
“দ্যাট্‌স ব্রিলিয়াণ্ট,” সস্নেহে ফ্র্যান্সিস্কা বলল। “সিটি কোডে না আটকালে নিশ্চয় করা যেতো।”
এইখানেই আমাদের সঙ্গে ফ্র্যান্সিস্কার তফাৎ। বারণ করবে, কিন্তু এমন ভাবে করবে যে মনে হয় বারণ করছে না।
“কিন্তু ডিটেকটিভ আমাকে তোমার বলতে হবে তুমি কি ফার্টিলাইজার দিচ্ছ। ইমপেশেণ্ট গাছগুলো সত্যি কি হেল্‌দি লাগছে!”
“মিরাকল গ্রো-র একটা স্পেশাল ব্র্যান্ড কিনেছি ম্যাডাম। দেখলাম ওটাই বলছে এই গাছের পক্ষে সবচেয়ে ভালো।”
“তুমি এক কাজ করো ডিটেকটিভ, আমার অ্যাপার্টমেণ্টের বারান্দায় আলো আসে। তোমার যে গাছগুলোতে আলো দরকার সেগুলো ওখানে রাখতে পারো। আমার শুধু দুয়েকটা ছোট পট আছে। তোমার কয়েকটা পট ওখানে রাখতে কোনও অসুবিধাই নেই।”
“থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম। থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। প্রমথবাবুতো এগুলোকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে বলছিলেন।”
“ঢাকা, ইউ মিন বাংলাদেশের ঢাকা?”
“হ্যাঁ, ম্যাডাম।”
ফ্রান্সিস্কা প্রমথর দিকে ভর্ৎসনার দৃষ্টি দিয়ে বলল, “ইউ আর রিয়েলি সো নটি!”
প্রমথ কাঁধ ঝাঁকালো।
“আজকে মেনু কি স্যার ?”
ফ্র্যান্সিস্কা এলেই এই টেকনিকটা একেনবাবু ব্যবহার করেন। ফ্র্যান্সিস্কা রান্না করতে ভালোবাসে। আরও ভালোবাসে খাওয়াতে। কিন্তু ফ্র্যান্সিস্কার রান্না করার ব্যাপারটা খুব ইলাবোরেট। আমাদের সমস্ত পট্‌স আর প্যান্‌স তাতে লেগে যায়। তারপর সেগুলো ধুতে ধুতে আমার আর প্রমথর প্রাণান্ত।। একেনবাবু অবশ্য ওঁর সার্ভিস ভলেণ্টিয়ার করেন। কিন্তু সেটা নেওয়া মানে আরও বাড়তি কাজ। এখানে ওখানে নোংরা লেগে থাকবে। সেগুলো স্পট করে করে আবার ধোয়া। ফ্র্যান্সেস্কা রান্না করলে খাওয়াটাও যেমন তেমন ভাবে করা যাবে না। সুন্দর করে টেবিল সাজিয়ে, প্লেসম্যাটের উপর প্লেট, গ্লাস, ন্যাপকিন কাঁটাচামচ ইত্যাদি রেখে মোমবাতি জ্বালিয়ে স্যালাড, ব্রেড ও ওয়াইন সহযোগে সেই রান্না খেতে হবে। সমস্ত ব্যাপারটা একটা প্রডাকশন। সেটা শর্ট কাট করা মানে ওকে কষ্ট দেওয়া। কে চায় কোনো সুন্দরীর কষ্টের কারণ হতে। তাছাড়া মেয়েটা রান্না করে চমৎকার, আর তারচেয়েও চমৎকার ওর হৃদয়টা। প্রমথর ভাগ্যি যে এরকম একটা মেয়ে ওর প্রেমে পড়েছে। কিন্তু কাপ-ডিশ পট্‌স প্যান ধোয়ার রূঢ় বাস্তবটাও উপেক্ষা করা যায় না। তাই আবার খাবার ধুয়ো তুলেছেন দেখে প্রমথ ধমকে বলল, “আপনি এতো হ্যাংলা কেন মশাই, আবার পোঁ ধরলেন।”
ফ্র্যান্সিস্কা এখন বাংলা বেশ শিখে গেছে। সহজ সহজ কথাগুলো ধরতে পারে। তাছাড়া যে রেটে আমরা ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি, তাতে বাংলা না জানলেও মূল বক্তব্য মোটামুটি ভালোই বোঝে। কিন্তু ‘হ্যাংলা’ আর ‘পোঁ’ শব্দটা ও ধরতে পারলো না। জিজ্ঞেস করল, “‘হ্যাংলা’ কি?”
“ওটা ট্র্যানস্লেট করা যায় না,” আমি বললাম।
“আর ‘পোঁ’?
“ওটাও কঠিন,” প্রমথ বলল।
একেনবাবু বললেন, “আসলে ম্যাডাম, আমি খাবারের কথা তুলেছিলাম বলে, ওঁরা রাগ করছেন, আপনাকে আবার রান্না করতে হবে বলে।”
“ওমা, এতে রাগের কি আছে। আমারতো ভালো লাগে রান্না করে সবাইকে খাওয়াতে।”
“আর আপনার রান্নাও একেবারে এক্সেলেণ্ট ম্যাডাম।”
“আচ্ছা নেমকহারামতো আপনি মশাই। প্রতিদিনতো বেশ ভালোই সাঁটান আমার রান্না।”
“কিযে বলেন স্যার। একজনকে ভালো বলা মানে কি আরেকজন খারাপ বলা। আপনার রান্নার প্রশংসা আমি সবজায়গাতেই করি।”
“ইউ আর সো কম্পিটিটিভ,” বলে প্রমথর মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে ফ্র্যান্সিস্কা রান্নাঘরের দিকে গেল। একেনবাবুও গেলেন ওর পেছন পেছন।
“মাঝে মাঝে একেনবাবুকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করে,” আমার কানে কানে সেটা জানিয়ে প্রমথও গেল কিচেনটাকে একেনবাবু আর ফ্রান্সিস্কার যুগ্ম আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে।
তবে ভগবান আছেন। একেনবাবুর একটা ফোন – ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের কাছ থেকে।
“মাই গড —- আপনি শিওর স্যার —- গ্রেট নিউজ। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ।”

ফোনটা নামাতেই আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি ব্যাপার ?”
“মামুদ সাহেবের বাবার ব্যাপারটা নিয়ে।”
“ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট এর মধ্যে জড়ালেন কি করে?”
“উনি বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলকে খুব ভালো চেনেন স্যার। আমি কতগুলো জিনিস জানতে চেয়েছিলাম। উনি বাংলাদেশ কনসালের থ্রু-তে ঢাকা পুলিশকে দিয়ে কাজটা করিয়েছেন।”
“কি কাজ?” প্রমথর প্রশ্ন। কখন প্রমথ আর ফ্র্যান্সেস্কা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে দেখি নি।
“বলছি স্যার।”
ফ্র্যান্সিস্কা জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার ডিটেকটিভ, আমাকেতো কিছুই বল নি?”
“বলছি ম্যাডাম, বলছি। কিন্তু তার আগে, মামুদকে একটু খবর দেওয়া দরকার।”
“আমি ফোন করছি,” প্রমথ বলল, “আর সেই সঙ্গে পিৎজারও অর্ডার করি। ফ্র্যান্সিস্কা তাহলে রান্না করতে গিয়ে গল্পটা মিস করবে না।”
এক ঢিলে চমৎকার দুটো পাখি মারলো প্রমথ।
কয়েকমিনিটের মধ্যেই নিচ থেকে তারেক এলো। মামুদকে কোম্পানির কাজে দুদিনের জন্য শিকাগো যেতে হয়েছে। প্রমথ বলল, মামুদের জন্য অপেক্ষা না করে যা জানলেন আমাদের বলুন। ওকে না হয় আবার বলবেন।
এরমধ্যেই প্রমথ সংক্ষেপে ফ্র্যান্সিস্কাকে মামুদের বাবার মৃত্যুর ব্যাপারটা বলে দিয়েছে। সেও একেনবাবুকে বলল, “ডিটেকটিভ, সবকিছু না শুনে তোমাকে ছাড়বো না।”

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *