Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গাজন – চড়ক পূজা || Manisha Palmal

গাজন – চড়ক পূজা || Manisha Palmal

গাজন – চড়ক পূজা

পৌরাণিক মতে দ্বারকাধীশ কৃষ্ণের সঙ্গে শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত বান রাজার যুদ্ধ হয়। জন্য শিবকে তুষ্ট করতে বাণরাজা নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে ভক্তিমূলক নাচ গান শুরু করেন। এ থেকেই নাকি সূচনা হয় চড়ক পূজার। অর্থাৎ শিবকে তুষ্ট করার জন্য বাণরাজা নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে শিবের আরাধনা করেন। চড়কে পূজিত কাঠের মূর্তি নীল এবং যে অস্ত্র দ্বারা তার পৃষ্ঠদেশ বৃদ্ধ করা হয় তা বান নামে পরিচিত। নিম বা বেলকাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি হয় দেল ।এর উপরিভাগ শঙ্খ চক্র গদা ও পদ্য চিহ্ন অঙ্কিত। লালসালু দিয়ে মুড়ে দেলকে গৃহস্থের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অঞ্চলভেদে দেল কে নীল, নীলাপাট, পাটঠাকুর ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।
নীল পূজার রাতের অনুষ্ঠান হল হাজরা ছাড়া। পাঠভোক্তা ও দু-তিনজন সহযোগী তেত্রিশ কোটি দেবতাদের আমন্ত্রণের উদ্দেশ্যে শ্মশানে যান। লৌকিক মতে নীলের দিন নীলকন্ঠ শিবের সঙ্গে নীলাবতী পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল।
কবে থেকে চড়ক পুজো শুরু হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু জানা যায় না। তবে মোটামুটি ভাবে বলা যায়, চৌদ্দশো পঁচাশি খ্রিস্টাব্দে সুন্দরা নন্দ ঠাকুর নামে এক রাজা এই চড়কের প্রচলন করেন। তবে এই সন্ন্যাস বা গাজনে অংশ নিতেন মূলত সমাজের নিম্নবর্গের এবং শ্রমজীবী মানুষেরা।

চৈত্র সংক্রান্তি।বছর শেষের দিন…..বাংলামতে। এইদিন গ্রামবাংলায় ”শিবের গাজন” ,,এক লোকপ্রিয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সারা চৈত্র মাস ধরে গাজন সন্ন্যাসী দের…”বাবা তারকনাথের চরণে সেবা লাগে…..মহাদেব…”ধ্বনি গ্রাম বাংলা মুখরিত করে রাখে। সাধারণ গৃহী মানুষ, আধ্যাত্মিকতার আবেশে এক মাসের জন্য সন্ন্যাস নেয়। এদের বলে ”ভোক্তা” বা ”গাজন সন্ন্যাসী”। এঁরা এই একমাস সংযম পালন করেন সন্ন্যাসীর মতো । ভিক্ষা করে সেই ভিক্ষান্ন দিনে এক বার গ্রহন করেন।
চড়ক সংক্রান্তির আগের দিন হয় নীলপুজো। এইদিন সন্ধ্যায় হয় ,,”কাছি পোড়া ”’ ও ”আগুনপাট”॥কাঠকয়লার আগুনের ওপর খালিপায়ে হাঁটা হলো আগুনপাট। আর জ্বলন্ত অগ্নি কুণ্ডের ওপর পা বেধেঁ উল্টো করে ঝোলা হলো ‘কাছিপোড়া ”॥ ওই আগুনে ধুনোর অঞ্জলি দেওয়া হয় । এছাড়া ও বিভিণ্ণ কৃচছসাধন করাও গাজনের অঙ্গ….যেমন বান ফোঁড়া ., চরকি পাক ,বঁটিঝাঁপ। মানুষের কি অদ্ভূত ধর্ম বিশ্বাস!

আমার দেখা গাজনের এক অদ্ভুত দৃশ্যের কথা বলি…..হাতের মাংসপেশী ফুঁড়ে নারকেল দড়ি দিয়ে ‘মানবমালা” তৈরি হয়েছে। প্রায় ১৫।১৬জন মানুষ।
দুহাতের মাংসপেশী ফুঁড়ে মানবমালা গাঁথা॥ ঢাকের তালে বিভোর হয়ে নেচে চলেছে।দুহাত দিয়ে রক্তস্রোত বইছে….. ‘কোন ভ্রুক্ষেপ নেই…….।কি গভীর বিশ্বাস! দর্শকেরা ভয়ে, বিস্ময়ে শিউরে উঠছে……..ওদের কোন হেল্ দেল নেই॥ মনের আনন্দে বিভোর হয়ে নেচে চলেছে মন্দির প্রদক্ষিন
করে॥ এই দিন গভীররাতে গাজনভোক্তারা এক গোপন পুজো করে ॥নিশুতি রাতে গাজনভোক্তারা শ্মশানে যায় এয়োতির চিতাভষ্ম সংগ্রহ করতে॥
কথিত আছে ওই দিন শ্মশানে সধবা রমনীর চিতা জ্বলবেই॥ জানি না এর সত্যতা॥ মানুষের বিশ্বাস॥
চড়ক সংক্রান্তির পরদিন পয়লা বৈশাখ…..এই সন্ন্যাসীরা ভোরবেলায় পৈতা বিসর্জন দিয়ে আবার গৃহী হন॥ এই দিন পান্ত।ভাত,কলমীশাক ও মৌরলামাছ খেয়ে আবার সংসারী হন……নটরাজের জপমালার কালচক্র ঘুরে চলে………আবার আবর্তন………..আবার অপেক্ষা ………..একবছরের॥

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress