Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হে অদৃশ্য সকল দেখার শ্রেষ্ঠ || Sunil Gangopadhyay

হে অদৃশ্য সকল দেখার শ্রেষ্ঠ || Sunil Gangopadhyay

১.
হে প্রিয়, হে নির্বাক কুসুম, এবে উন্মোচিত হও
হে তমস, বিদ্যুল্লতায় ঘেরা, মরুবাহন
হে অদৃশ্য, সকল দেখার শ্রেষ্ঠ, কাঙাল ভুবন
যে সমুদ্রে ওঠে না তরঙ্গমালা, নিয়ত জাগ্রত
যে স্বপ্নের ভিতরে সহস্ৰকান্তি দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস
হে প্রিয়, হে বাঙ্ময় নির্মাণ, দেখা দাও, দেখা দাও!
.
২.
চলেছে দিন, দিনের পিঠে দিন, যেমন মরুর অভিযাত্রী
খাচ্ছি দাচ্ছি শুচ্ছি বসছি দুয়োর খুলে ঘূর্ণিমাতন দেখছি
ফুলের অভিঘাতেও হঠাৎ ফুলশয্যায় জ্বলে আগুন ফুলকি
কেউ দুদিকে কান টানছে, মাথার মধ্যে অন্য মাথা ঘুরছে
সবাই খুব জব্দ করে, চতুর্দিকে জব্দ হচ্ছে ছিনতাই
কে কতটা আয়না ঘেঁষা, তা দিয়েই তো বিস্তৃত সাম্রাজ্য
যেমন অকস্মাৎ সকালে এলো অন্য নামের তারবার্তা
হাত কাঁপছে, বুক কাঁপছে, ঠোঁটে তবু এরল ফ্লিনের হাস্য
অলীক অলীক সবই অলীক, দিনের বেলা কে যে কাকে চিনছে
চলেছে দিন, দিনের পিঠে দিন, যেমন মরুর অভিযাত্রী…
.
৩.
আসুন, বসুন, চা খান
না খাবেন তত উচ্ছন্নে যান
কোন দিকে বাথরুমটা ভাই, এই যে ডান দিকে আলোর বোতাম
জিপ ফাস্নার আটকে গেছে রোমে, আমি যদি বেদুইন হতাম!
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, তাও যেন ছায়া আসছে পিছুপিছু।
সব দিকেই তো সব কিছু ফক্কা, তবু তো পাওয়া যাবে কিছুমিছু।
পান থেকে আর চুন খসে না, কিন্তু সিগারেটের ছাই ফেললে কার্পেটে
তুমি অমনি আধনম্বরী বেঁটে!
কোথায় এসেছে কিছুই জানো না, কেন এসেছে তা জানো?
ম্যাজিক হাভেলি, চতুর্দিকে গুহামুখ সাজানো
কেউ কারুকে দেখছে না, বসেছে হুল্লোড়ের আসর
এখানে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ, এখানে তোমার বিবাহ-বাসর
কোনো রকমে রাস্তায় বেরিয়ে যার দিকে খুশি করুণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে
ভিখিরিকে কুড়ি পয়সা পুলিশকে দাও হাঁকিয়ে
এই সব কিছুরই শোধ তোলার আছে একটা দিব্যস্থান
যে খোঁজ পাবার সে ঠিকই জানে, সে সেখানে একলা মাস্তান।
.
৪.
মাঝরাত্তিরের পরেও অনেকটা ঘুরে গেছে ঘড়ির কাঁটা
তবু কেন জেগে উঠলাম?
বাল্য বিবাহের মতন প্রথম প্রহরেই ঘুম এসেছিল
কেউ তো ঘুমকে শাসন করেনি, তবু কেন এই অভ্যুত্থান
ভূতে পাওয়ার মতন কেউ আমাকে টেবিলের সামনে বসায়
খোলায় কবিতার খাতা
কোন্ ভূত, কোন্ ভূত, আমার কাঁধে সিন্ধুবাদ নাবিক
একটুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আমার হাসি পায়
মদন মিত্তিরের দেওয়া পুরনো ডায়েরিটাকে আমি চুম্বন করি
এতগুলি সাদা পাতা, তোমরা পরবর্তী প্রজন্মের দিকে যাও
অগণন ক্রুদ্ধ, সুন্দর, মগ্ন, লাজুক তরুণ-তরুণীরা খেলা করছে সিন্ধুপারে
দূরত্বের আলোছায়া কী মধুর
কলম খোলা, আমি চুপ করে বসে আছি, আঃ কী প্রগাঢ় বিচ্ছিন্নতা
ছিন্ন পৃষ্ঠাগুলি অলঙ্কার ও উপমা হয়ে উড়ছে বাতাসে
বাইরে ঝিমঝিম করছে রাত, আমার নিজস্ব রাত
আমার শৈশব ঘড়ি টিকটিক করে বলছে, জেগে থাকো, জেগে থাকো
যেন আরও কিছু বলে, আমি ভাষা বুঝতে পারি না
আমারই আয়ুর ভাষা এত নৈর্ব্যক্তিক।
.
৫.
জাগো হো ঘোড়সওয়ার, নীল ঘোড়সওয়ার

দিনের বেলায় তুমি পাথর পথের ধারে, রাত্তিরের রাজা
কিংবা রাত্তিরের রানী, বুকে হাত দিয়ে কেউ বলুক তো
ঠিক ঠিক চিনি
আমি রাত্তিরের দিকে, রাত্তিরের প্রবল আঙ্গিকে
আমার নিজস্ব কিছু পাগলামিরা ভূমি পায়, চাষবাস করে
শরীরেও আসে যায়, যতটুকু খোলা থাকে নিসর্গ পর্দায়
বৃষ্টি খায় আকাশের ছায়া
রুপালি আলোর মতো বৃষ্টি এসে ফিসফিসিয়ে ডাকে
চাঁদ গলা জল আসে, সাতাশ বছর মনে পড়ে
পাহাড় পেরিয়ে আসা সেই রাত, দ্রিমি দ্রিমি মাদলের ধ্বনি
মনে হয়, এই বুঝি অসীমের গীতিনাট্য, কসমিক হারমোনি
জলপ্রপাতের পাশে একা শুয়ে থাকা
নগরে ব্যারাকে কিংবা পানশালায়। কদাচিৎ কয়েদখানায়
সব কিছু ভালোবাসা, মায়ার আঙুল ছোঁয়া ভালোবাসাময়
প্রতিটি দিনান্ত, আমি চেয়েছি নারীর কাছে দয়া
মনে আছে, দয়া নয়, দিয়েছিলে অশ্বক্ষুরধ্বনি
তোমার সুষমা তুমি কিছুই জানো না। তুমি সবকিছু জানো
রাত্রিকে বাজাও তুমি, সামান্য ও ভুরুভঙ্গে বয়ে যায় শিউলির গন্ধমাখা
নদী
অনন্তের তরীখানি থেমে যায় এই কিনারায়
এরই মধ্যে যদি ঘুম আসে
এরই মধ্যে হাতের আঙুল যদি ঘুমে ছুঁয়ে দেয়

জাগো হো ঘোড়সওয়ার, নীল ঘোড়সওয়ার…
.
৬.
‘কাল রাতের বেলায় গান এলো মোর মনে’
তখন আপনি ছিলেন আমার সঙ্গে, সবগুলি গুনগুন সঙ্গীতের স্রষ্টা
পুজা থেকে বিরহ, প্রকৃতি থেকে আরও দুঃখভরা গান
এ দুঃখ আমার নয়, যিনি লিখেছেন, তিনিও কি এত দুঃখী
কিংবা প্রত্যেক কবির মতন তিনিও বৈপরীত্যের বরপুত্র, সব প্রশ্নের
উত্তর ঘুলিয়ে দেবার সম্রাট?

জীবন চরিতে তাঁকে সত্যিই খোঁজা যায় না
কাল রাতের বেলায় এত গান, সর্বাঙ্গ জড়ানো গান
সেইসব সুখের মীড় ছবির রঙের মতো গড়িয়ে যায়, আয়তনে মেশে
যেন মাতিস্‌-এর আঁকা গান, ঝর্নায় অনেকক্ষণ ধারাস্নান
চোখ জড়িয়ে আসে
তারপর এক ঝলক স্বপ্ন দেখি আলখাল্লা পরিহিত তাঁকে
এ মূর্তি প্রভাত মুখুজ্যের গড়া নয়, বইয়ের র‍্যাকের পাশে ঠেস দিয়ে
থুতনিতে আঙুল, বড় ব্যাকুল ও কৌতূহলী, খুবই মহান ও সামান্য
আমার কোনো প্রশ্ন মনে আসে না
কান্নায় আমার গলা বুজে যায়, আমি ফুঁপিয়ে উঠি
একটু পরেই দেখি ঘামে ভিজে গেছে বিছানার চাদর
বাইরে প্যাঁচার ডাক শিহরিত রাত, থমথমে পৃথিবী
কুয়াশার মতন ছড়িয়ে পড়ে আমার বিস্ময়
রবীন্দ্রনাথকে দেখে হঠাৎ আমার কান্না এলো কেন, আমারও
কান্না জমে ছিল?
আঃ, বেঁচে থাকা এত আনন্দের!
.
৭.
উনুন নিবে গেছে, ঘুমিয়ে আছে ওরা, ঘুমো
উদরে থাক খিদে, কপালে দেবো আমি চুমো
সারা গা ধুলো মাখা, শিশুরা শুয়ে আছে চাঁদে
তারার কুচি মাখা জড়িয়ে মড়িয়ে আহ্লাদে
আতুর, বিরহীরা, লক্ষ্মীছাড়া যত যারা
অকূল পাথারের জাহাজে ভাসে দিশেহারা
দুখিনী জননীটি ঘুমিয়ে খুকি হয়ে আছে
এখন বসুমতী রেখেছে তাকে খুব কাছে
ঘুমোও ষড়রিপু, ঘুমোও অবিচার, ক্রোধ
আমার জেগে থাকা দিনের সব কিছু শোধ!
.

হে প্রিয়, হে নির্বাক কুসুম, এবে উন্মোচিত হও
হে তমস, বিদ্যুল্লতায় ঘেরা, মরুৎ বাহন
হে অদৃশ্য, সকল দেখার শ্রেষ্ঠ, কাঙাল ভুবন
দেখো কত একা আছি, বাতিস্তম্ভে জাগ্রত প্রহরী
নেই আভরণ, নেই না-পাওয়ার কোনো অভিমান
হে প্রিয়, হে বাঙ্ময় নির্মাণ, দেখা দাও, দেখা দাও!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress