Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মিসির আলি আপনি কোথায় || Humayun Ahmed

মিসির আলি আপনি কোথায় || Humayun Ahmed

মিসির আলি অবাক হয়ে কুয়াশা দেখছেন।

কুয়াশা দেখে অবাক বা বিস্মিত হওয়া যায় না। তিনি হচ্ছেন। কারণ কুয়াশা এক জায়গায় স্থির হয়ে নেই। সে জায়গা বদল করছে। তার সামনে মাঝারি সাইজের আমগাছ। কুয়াশায় গাছ ঢাকা। ডালপালা পাতা কিছু দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ কুয়াশা সরে গেল। আমগাছ দেখা গেল। সেই কুয়াশাই ভর করল পাশের একটা গাছকে, যে গাছ তিনি চেনেন না।

বাতাস কুয়াশা সরিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিচ্ছে এই যুক্তি মেনে নেয়া যাচ্ছে না। বাতাস বইলে তিনি টের পেতেন শীতের বাতাস শরীরে কাঁপন ধরায়।

এই কুয়াশার ইংরেজি কি Fog নাকি Mist? শহরের কুয়াশা এবং গ্রামের কুয়াশা কি আলাদা? শহরের ধূলি ময়লার গায়ে চেপে যে কুয়াশা নামে তাকে কি বলে Smog?

মিসির আলি বেতের মোড়ায় চাদর গায়ে দিয়ে বসে আছেন। তাঁর পায়ে উলের মোজা। শিশিৱে মোজা ভিজে যাচ্ছে। হাতে Louis Untermeyer নামের এক ভদ্রলোকের বই নাম Poems. বইয়ের পাতাও শিশিরে ভিজে উঠছে। তিনি কইলাটি নামের এক গণ্ডগ্রামে গত দুদিন ধরে বাস করছেন। এখন বসে আছেন দোতলা এক হলুদ রঙের পাকা বাড়ির সামনে। বাড়ি কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সূৰ্য উঠলে প্রথমেই তাঁর গায়ে রোদ পড়বে। সূৰ্য উঠছে না।

তাঁর চা খেতে ইচ্ছে করছে, তাঁকে চা দেয়া হচ্ছে না। তাঁর জন্য খেজুরের রস আনতে লোক গিয়েছে। কইলাটি হাইস্কুলের হেডমাস্টার তরিকুল ইসলাম এমএ বিটি বলেছেন-খেজুরের রস এক গ্লাস খাবার পর চা দেয়া হবে। তার আগে না। খেজুরের রস নাকি খালি পেটে খেতে হয়।

তরিকুল ইসলাম এই মুহূর্তে মিসির আলির আশপাশে নেই। বাড়িতে ভাপাপিঠা রান্না হচ্ছে। তিনি পিঠার খবরদারি করছেন। পিঠা জোড়া লাগছে না। ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। এই নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে রাগারগি করছেন। গতকাল দুধপিঠা হয়েছিল। দুধ কী কারণে ছানা ছানা হয়ে গেল, মেহমানের সামনে বেইজ্জাতি ব্যাপার। ঢাকার মেহমানকে একদিনও ভালো মতো পিঠা খাওয়ানো যায় নি, এরচে দুঃখের ব্যাপার কী হতে পারে?

গ্রামের মানুষদের মধ্যে সবচে বেশি কথা বলে নাপিতরা। তারপরেই স্কুল শিক্ষকরা। তরিকুল ইসলাম কথা বলায় শিক্ষকদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন। তিনি সারাক্ষণই কথা বলেন। কেউ তার কথা শুনিছে কি শুনছে না, তা নিয়ে মাথা ঘামান না। এখন তিনি কথা বলে যাচ্ছেন স্ত্রীর সঙ্গে। তার স্ত্রী সালেহা মাথায় ঘোমটা দিয়ে পিঠা বানাচ্ছেন। তিনি চুলার আগুনের পাশে হাত মেলে কথার তুফান মেইল চালাচ্ছেন–

সালেহা! তুমি বাংলাদেশের গ্রামের একজন সিনিয়ার মহিলা। তুমি পিঠা বানাতে পার না এটা কত বড় দুঃখের কথা তা কি জান? এটা হল ক্লাস থ্রির পরীক্ষায় ফেল করার মতো। শহরের একজন বিশিষ্ট মেহমান তাকে আমি পিঠা খাওয়াতে পারব না? কী আপশোস! আরেক হারামজাদাকে খেজুরের রস আনতে পাঠালাম তার খোজ নাই। সে মনে হয় খেজুরগাছে চড়ে বসে আছে। কাঁটার ভয়ে নামতে পাবছে না। এদের সকল বিকাল থাপড়ানো দরকার। বদমাইশের ঝাড়। কামের মধ্যে নাই, আকামে আছে।”

মিসির আলি হতাশ চোখে তাঁর হাতের জাম্বো সাইজের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছেন। এত বড় গ্লাস যে এখনো বাংলাদেশে আছে তা তিনি জানতেন না। পুরো এক জগা পানি এই গ্লাসে ধরবে তারপরেও গ্লাস ভরবে না, এ বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই।

তরিকুল ইসলাম বললেন, এক চুমুকে খান। অতি সুস্বাদু। অমৃত সম।। ফুঁ দিয়ে ফেনা সরান, তারপর চুমুক দেন। অবিশ্যি ফেনারও আলাদা স্বাদ আছে।

মিসির আলি ফুঁ দিয়ে ফেনা সরিয়ে চুমুক দিলেন। তাঁর শরীর গুলিয়ে উঠল। অতিরিক্ত মিষ্টি। বাসি ফুলের গন্ধের মতো গন্ধ। গ্লাসে দ্বিতীয় চুমুক দেবার প্রশ্নই ওঠে না।

তরিকুল ইসলাম হাসিমুখে বললেন, খেতে কেমন বলুন। অমৃত না? রস আগুনে জ্বাল দিয়ে ঘন করে বিকেলে এক প্লাস দেব। দেখবেন কী অবস্থা। খেজুর গুড়ের গন্ধ ছাড়বে, মোহিত হয়ে যাবেন। গ্লাস নিয়ে বসে আছেন কেন, চুমুক দিন।

মিসির আলি দ্বিতীয় চুমুক দিলেন। এই বস্তু যে তাঁর পক্ষে খাওয়া সম্ভব না, তা তিনি কীভাবে বলবেন বুঝতে পারছেন না। ‘না’ বলতে পারা মস্ত বড় গুণ। মিসির আলি এই গুণ থেকে বঞ্চিত। তিনি কারোর মুখের উপরই না বলতে পারেন।

তরিকুল ইসলাম বললেন, রসটা এক চুমুকে নামিয়ে দেন। আমি চা নিয়ে আসছি। গরম গরম চা খান। ঠাণ্ডার পর গরম চার তুলনা হয় না। নাশতা দিতে একটু দেরি হবে। পিঠা তৈরিতে সামান্য সমস্যা হচ্ছে। যাই চা নিয়ে আসছি।

মিসির আলি ভদ্ৰলোকের দিকে তাকিয়ে আছেন। কুয়াশার ভেতর মানুষটা অদৃশ্য হওয়া মাত্র মিসির আলি হাতেীয় গ্লাসের রস উলটে দিলেন। তার ঢাকায় ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে। ছায়া ঢাকা ঘুঘু ডাকা গ্রাম তেমন পছন্দ হচ্ছে না। শহরবাসী হওয়ার এই এক সমস্যা। ভোরবেলা চায়ের কাপের সঙ্গে পত্রিকা লাগে। ভালো বাথরুম লাগে। রাতে বই পড়ার জন্য টেবিল ল্যাম্পের আলো লাগে।

তরিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে শহরের অনেক সুযোগ-সুবিধাই আছে। আধুনিক ধাঁচের দোতলা পাকা বাড়ি। পল্লীবিদ্যুৎ না থাকলেও সোলার প্যানেলে ইলেকট্রসিটি তৈরি হয়। সেই ইলেকট্রসিটিতে পাখা চলে, বাতি জ্বলে এবং টিভি চলে। এমন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার এনার্জি দেখে মিসির আলি অবাক হয়েছিলেন। তরিকুল ইসলামের কথায় অবাক ভাব দূর হল।

এইসব আমার ছেলের করা। সে ইনঞ্জিনিয়ায়। জার্মানির এক ফার্মে কাজ করে। বাড়িঘর সব তার বানানো। তবে আপনার কাছে হাতজোড় করছি ছেলের কী নাম জিজ্ঞেস করবেন না। গত এপ্রিল মাসের সাত তারিখ থেকে এই বাড়িতে তার নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তার নাম উচ্চারণ করবে তার মুখ দর্শন করব না।

মিসির আলি বললেন, ছেলে এপ্রিল মাসের সাত তারিখ বিদেশী বিয়ে করেছে এই জন্য?

তরিকুল ইসলাম অবাক হয়ে বললেন, আপনার অসম্ভব বুদ্ধি। ঠিকই ধরেছেন। ইহুদি এক মেয়েকে বিয়ে করেছে। কত বড় স্পর্ধা। দেশে থাকলে বাটা কোম্পানির জুতা দিয়ে পিটাতাম। আপশোঁস দেশে নাই। তার দেশে ফেরার উপায়ও নাই। আমি চিঠি লিখে জানিয়েছি-যেদিন সে আসবে সেদিন আমি এবং আমার স্ত্রী কাঁঠাল গাছে দড়ি ঝুলিয়ে ফাঁস নেব।

মিসির আলিকে থাকার জন্য দোতলার বড় একটা ঘর দেয়া হয়েছে। ঘরের লাগোয়া দক্ষিণমুখী বারান্দা। বারান্দায় ইজিচেয়ার পাতা। বারান্দা থেকে দূরের নদী দেখা যায়। নদীর নাম রায়না। বারান্দা ঘেঁধে বিশাল এক কদম গাছ। গাছ ভর্তি বলের মতো ফুল। কদম বর্ষার ফুল। শীতকালে কদম গাছে শত শত ফুল ফুটবে ভাবাই যায় না। মিসির আলির ধারণা, গাছটার জিনে কোনো গণ্ডগোল হয়েছে। যে কারণে তার সময়ের টাইমটেবিল এলেমেলো হয়ে গেছে। অনেক পশু-পাখির ক্ষেত্রেই এরকম হয়। মিসির আলি যখন ঢাকার জিগাতলায় থাকতেন, তখন একটা কোকিল বৈশাখ-চৈত্র মাসে ডাকত। কোকিল৷ হিমালয় অঞ্চলের পাখি। বসন্তকালে দুডাকাডাকি করে গরমের সময় তার হিমালয় অঞ্চলে চলে যাবার কথা। সে থেকে গিয়েছে এবং তার অবস্থান জানানোর জন্য গরমকালে ডাকাডাকি করছে।

এই কদম গাছটাও হয়তো টাইমটেবিল নষ্ট হওয়া গাছ। অবিশ্যি এমনও হতে পারে যে এই কদম অন্য কোনো ভ্যারাইটির। আজকাল সামার ভ্যারাইটির টমেটো গাছ পাওয়া যাচ্ছে। টমেটো গরমকালে ফলে।

মিসির আলি রোজই ভাবেন হেডমাস্টার সাহেবকে কদম গাছ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। মনে থাকে না।

হেডমাস্টার সাহেবের সঙ্গে মিসির আলির কোনো পূর্ব পরিচয় নেই। তাঁর প্রিয় শহর ছেড়ে গ্রামের এই বাড়িতে থাকতে আসার কারণ এক পাতার একটা চিঠি। চিঠিটা তার ছাত্রের লেখা।

শ্রেদ্ধেয় স্যার,
আমার সালাম নিন। আমি আপনার সরাসরি ছাত্র। আপনি আপনার কোনো ছাত্রের নামই মনে রাখেন না। কাজেই নিজের পরিচয় দেয়া অর্থহীন। তারপরেও নাম বলছি। আমার নাম ফারুক। একটা সরকারি কলেজে সাইকোলজি পড়াই।
আপনি সারা জীবন অতিপ্রাকৃতের সন্ধান করেছেন। অবিশ্বাস্য সব ঘটনার বিশ্বাসযাগ্যো লৌকিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং আমাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন লজিক ব্যবহারে।
অন্যদের কথা জানি না, আমি চেষ্টা করেছি এবং এখনো করছি।
আমি আপনাকে ব্যাখ্যার অতীত কিছু ব্যাপারের সঙ্গে পরিচয় করাতে চাচ্ছি। হাতজোড় করছি কইলাটি ধর্মর একটা গ্রামের হেডমাস্টার তরিকুল ইসলাম সাহেবের বাড়িতে কয়েকটা দিন কাটাতে। উনি আমার শ্বশুর। সরল ধরনের মানুষ। কিন্তু খুবই ভালোমানুষ। তিনি কথা বেশি বলেন, এটা একটা বড় সমস্যা। আপনার মতো মানুষের কাছে এই সমস্যা কোনো সমস্যাই না। ঐ বাড়ির সমস্ত ঘটনা একটি তরুণীকে কেন্দ্র করে। তার নাম আয়না। আয়না আমার স্ত্রী। আমরা এখন আর একসঙ্গে বাস করছি না। আলাদা থাকছি। তবে আমাদের মধ্যে কোনো ডিভোর্স হয় নি। হবার কোনো সম্ভাবনাও নেই। স্যার আপনি কি যাবেন? অল্প কিছু দিন থাকবেন। গ্রাম কইলাটি। পো: অ রোয়াইলবাড়ি। থানা কেন্দুয়া। জেলা নেত্রকোনা।
বিনীত
আহমেদ ফারুক।

কইলাটিতে দুদিন পার হয়েছে। আজ তৃতীয় দিনের শুরু। মিসির আলি কোনো অতিপ্রাকৃতের সন্ধান পান নি। কুয়াশায় ঢাকা গ্রাম। সন্ধ্যা হতেই মশার গুনগুন। গারো পাহাড় থেকে উড়ে আসা শীতের বাতাস। গরম মোজা, কানটুপি এবং ভারী চাদরও সেই হাওয়া আটকাতে পারে না। ঘুমুতে যাবার আগে আগে তরিকুল ইসলাম গরম পানি ভর্তি দুটা বোতল লেপের নিচে রেখে যান। তাতে ঠাণ্ডা লেপের ভেতর ঢোকার প্রক্রিয়া খানিকটা সহনীয় হয়।

তরিকুল ইসলাম যত্নের কোনো ত্রুটি করছেন না। রোজ রাতে ঘি চপচপ পােলাও খেতে হচ্ছে। মিসির আলি কয়েকবারই জানিয়েছেন পোলাও খাদ্যটি তার অপছন্দের। তিনি ডালভাত দলের মানুষ। তরিকুল ইসলাম চোখ কপালে তুলে বলেছেন, আপনি আমার জামাইয়ের শিক্ষক। আপনাকে ডালভাত খাওয়াব এটা কী বললেন?

ভাই আমি পোলাও খেতে পারি না। আমার পেটে সহ্য হয় না। ডাক্তারের নিষেধ আছে।

ডাক্তারের নিষেধ থাকলে কিছু করার নেই। পোলাওয়ের চালের ভাত করব। তবে সঙ্গে পোলাও থাকবে। শোভা হিসেবে থাকবে। চায়ের চামচে এক চামচ হলেও খাবেন।

মিসির আলি চায়ের চামচে এক চামচ করে পোলাও খেয়ে ভাত খাচ্ছেন। আদরকেও যে কেউ অত্যাচারে পরিণত করতে পারে, মিসির আলির এই অভিজ্ঞতা ছিল না।

সূর্য উঠেছে। সূর্যের প্রথম আলো গায়ে মাখতে ভালো লাগছে। তরিকুল ইসলাম চা দিয়ে গেছেন। এই চায়ের কাপও গ্লাসের মতো জাম্বো সাইজ। ঘন লিকারের দুধ চা। খেতে ভালো। চিনির পরিমাণ ঠিক আছে। ঐটা বিস্ময়কর ব্যাপার। গ্রামের মানুষরা চায়ে বেশি চিনি খেতে পছন্দ করে। চায়ের উপর ভাসন্ত সর থাকাকে তারা উত্তম চায়ের অনুষঙ্গ বিবেচনা করে।

তরিকুল ইসলাম বললেন, আরাম করে চা খান। নাশতার দেরি হবে ভাইসাব। নতুন চালের গুড়ি করা হচ্ছে। সেই চালের গুড়িতে পিঠা হবে। আগেরগুলো ফেলে দিতে হয়েছে।

মিসির আলি বললেন, আমার যে পিঠা খেতেই হবে তা কিন্তু না। আলু ভাজি দিয়ে পাতলা দুটা রুটিই আমার জন্য যথেষ্ট।

তরিকুল ইসলাম বললেন, ভাই সাহেব। আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? আপনি আমার জামাইয়ের শিক্ষক। আপনাকে খাওয়াব আলু ভাজি রুটি? এরচে আমার গালে একটা থাপ্নড় মারেন।

মিসির আলি বললেন, ঠিক আছে। যা খাওয়াতে চান খাওয়ান।

দুপুরে চিতল মাছ খাওয়াব। বিলের চিতল। শীতকাল তো তেলে ভর্তি। আমার ছোটখালাকে খবর দিয়েছি। তিনি এসে রোধে দিয়ে যাবেন। আমার স্ত্রী রান্নাবান্নায় বড়ই আনাড়ি। একবার তের কেজির একটি বোয়াল মাছ এনেছিলাম এক পিস মুখে দিতে পারি নাই। এমন লবণ দিয়েছিল খেতে গিয়ে মনে হল নোনা ইলিশ।

আপনার মেয়ে রাধতে পারে না?

আয়নার কথা বলছেন? ওর তো ভাই মাথার ঠিক নাই! ও রাধবে কী? দুই তিন দিন একনাগাড়ে দরজা বন্ধ করে পড়ে থাকে। কিছু খায় না। পানিও না। তারপর দরজা খুলে বের হয়। খুব স্বাভাবিক।

গত দুদিন কি সে দরজা বন্ধ করে ছিল? হ্যা। তিন দিন ধরেই দরজা বন্ধ। হিসেব মতো আঞ্জ দরজা খোলার কথা। দরজা খুললেই আপনার কথা বলব।

মিসির আলির সামান্য খটকা লাগল। একটি মেয়ে তিন দিন দরজা বন্ধ করে আছে তার বাবা-মার এই কারণেই অস্থির থাকার কথা। তরিকুল ইসলামের বা তার স্ত্রীর চোখেমুখে কোনো অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে না। তঁরা দুজনই মেহমানের যত্ন নিয়ে অস্থির। এমনকি হতে পারে-মেয়ের পাগলামি দেখে দেখে তারা অভ্যস্ত। কোনো বাবা-মা”ই সন্তানের অস্বাভাবিকতায় অভ্যস্ত হবেন না।

মিসির আলি খানিকটা অস্বস্তির সঙ্গে বললেন, হেডমাস্টার সাহেব! মেয়েটা কি আপনার নিজের না পালক কন্যা?

তরিকুল ইসলাম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ভাই আপনার বুদ্ধি মারাত্মকেরও উপরে। মেয়েটা যে আমার নিজের না এই খবর কেউ জানে না। আমার জামাইও জানে না। জানানো উচিত ছিল, জানাই নাই। পালক কন্যা কেউ বিয়ে করে না। এমন ভালো পাত্ৰ হাতছাড়া হয়ে যাবে এই ভয়েই জানাই নি।

গ্রামের লোকদের তো জানার কথা।

কেউ জানে না। কেন জানে না সেটা একটা ইতিহাস। পরে আপনাকে বলব। ভাই সাহেব আমি পিঠার আয়োজন দেখি, আপনি চা খান।

হলুদ রঙের লম্বা লেজওয়ালা একটা পাখি ওড়াউড়ি করে শীত কাটাচ্ছে। পক্ষী সমাজে কেউ একা থাকে না। সবারই সঙ্গী থাকে। এই পাখিটা এক কেন? তার সঙ্গী কি কাছেই কোথাও বসে আছে। মিসির আলি হলুদ পাখির সঙ্গী খুঁজতে ঘাড় ফেরাতেই এক তরুণীকে দেখলেন। সে এসে মিসির আলির পা ছুঁয়ে কদমবুসি। করল। নরম গলায় বলল, স্যার আমি আয়না।

মেয়েটির পরনে সাধারণ একটু সুতি শাড়ি। প্রচণ্ড শীতে খালি পা। গায়ে চাদর নেই। মিসির আলি কিছু সময় মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মেয়েটিকে এই পৃথিবীর মেয়ে বলে মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে অন্য কোনো ভুবনের। পৃথিবীর কোনো মেয়ে এত রূপ নিয়ে জন্মায় না।

মিসির আলি বললেন, আয়না কেমন আছ?

ভালো আছি চাচা।

আমি তোমার স্বামীর একসময়কার শিক্ষক।

চাচা আমি জানি। অনেক আগেই আপনার সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন ছিল। আটকা পড়ে গিয়েছিলাম।

কোথায় আটকা পড়ে গিয়েছিলো?

আয়না হাসল, জবাব দিল না।

খালি পায়ে হাঁটছ। শীত লাগছে না?

শীত লাগছে। বাইরে এত ঠাণ্ডা বুঝতে পারি নি।

ঘরে যাও। পায়ে স্যান্ডেল, পর ৷ পায়ে চাদর দাও।

জি আচ্ছা চাচা। পরে আপনার সঙ্গে কথা হবে।

আয়না চলে যাচ্ছে। মিসির আলি তাকিয়ে আছেন। তিনি চোখ ফেরাতে পারছেন না। শীতের কুয়াশা ঢাকা সকাল। লম্বা লেজের হলুদ পাখি। কিন্নরীর মতো এক তরুণী। সব মিলিয়ে মিসির আলির মনে ঘোরের মতো তৈরি হল।

সকালের নাশতা তৈরি হয়েছে। শুধু ভাপা পিঠা না। পরোটা আছে। পরোটার সঙ্গে ঝাল মুরগির মাংস এবং ছিটা পিঠা। মিসির আলি সকালে মিষ্টি খেতে পারেন না। বাধ্য হয়ে অঁাকে পিঠা খেতে হচ্ছে। এত আয়োজন করে পিঠা তৈরি হয়েছে। খাবেন। না বলাটা অন্যায় হবে। মিসির আলির নিজেকে জাপানি জাপানি মনে হচ্ছে। জাপানির না বলতে পারে না। এমনই লাজুক জাতি। তবে সম্প্রতি একটা বই জাপান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইয়ের শিরোনাম-জাপানিরা এখন না বলা শিখেছে। বইটা জোগাড় করে পড়তে পারলে ভালো হতো।

ভাই সাহেব! পিঠা কেমন হয়েছে?

ভালো হয়েছে। অসাধারণ।

আপনার খাওয়া দেখে তো সে রকম মনে হচ্ছে না। একটা পিঠা নিয়ে বসে আছেন। মিনিমাম তিনটা পিঠা শেষ করার পর পরোটা মাংস ৷

মিসির আলি খাদ্য আলোচনার মোড় ঘুরাবার জন্য বললেন, আপনার মেয়ে আয়নার সঙ্গে ভোরবেলায় দেখা হয়েছে। অতি রূপবতী মেয়ে।

তরিকুল ইসলাম বিক্ষিত গলায় বললেন, রূপবতী?

আমি এমন রূপবতী মেয়ে দেখি নি। গায়ের রঙ দুধে আলতায়।

মেয়েটা তো কালো।

কালো?

জি বেশ কালো।

তা হলে অন্য কাউকেই দেখেছি। কিংবা চোখে ভুল দেখেছি। কারণ মেয়েটা বলেছে সে আয়না।

কেউ কি আপনার সঙ্গে ফাজলামি করেছে? ফাজলামি কে করবে? ফাজলামি করার মতো মেয়ে তো এই গ্রামে নাই। আচ্ছা আমি দেখি আয়না ঘর থেকে বের হয়েছে কি না। বের হলো নিয়ে আসছি।

তরিকুল ইসলাম আয়নাকে নিয়ে ফিরলেন। কালো একটা মেয়ে। সাধারণ চেহারা! নাক মোটা। গালের হনু সামান্য উঁচু হয়ে আছে।

তরিকুল ইসলাম বললেন, তোর জামাইয়ের শিক্ষক। কদমবুসি কর।

আয়না স্পষ্ট গলায় বলল, একবার কদমবুসি করেছি। বাবা। সকালে স্যারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আর তোমরা স্যারকে এক গাদা পিঠা দিয়ে বসিয়ে রেখেছি কেন? স্যার নাশাতায় মিষ্টি খেতে পারেন না। মাংস পরোটা দাও। এখন থেকে স্যারের খাবারদাবারের সব দায়িত্ব আমার।

আয়না পরোটা এবং মাংসের বাটি নিয়ে মিসির আলির সামনে দাঁড়াল। মিসির আলি আচমকা ধাক্কার মতো খেলেন। ভোরবেলায় দেখা সেই মেয়ে। গায়ের রূপ জোছনার মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বড় বড় কালো চোখ। সেই চোখে পাপড়ির ছায়া। অভিমানী পাতলা ঠোঁট। মিসির আলি চোখ নামিয়ে নিলেন। দীর্ঘ সময় ভ্রান্তির দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না।

সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি কি রক্ত মাংসের মানুষ?

নাকি মায়া?

বাস্তব জগতের পুরোটাই মায়া। একটাই সমস্যা মায়া ধরার কোনো পথ নেই। আইনষ্টাইনের কথা। অতি বাস্তববাদী বিজ্ঞানীর পরাবাস্তব উক্তি।

আয়না বলল, স্যার পরোটা দেই?

মিসির আলি বললেন, দাও।

তরিকুল ইসলাম বললেন, তোর স্যার বলছিলেন তোর মতো রূপসী মেয়ে তিনি নাকি দেখেন নাই।

আয়না বলল, স্যার আমাকে আদর করে বলেছেন। আদর করে আমরা ভালো ভালো কথা বুলি।

তরিকুল ইসলামের স্ত্রী সালেহা বললেন, কেউ কেউ স্যারের মতো বলেন। ভিন গ্রামের এক ফকিরনী এসে তোকে দেখে রাজরানী রাজরানী বলে কত হইচই শুরু করল। মনে নাই?

আয়না বলল, বেশি ভিক্ষা পাওয়ার জন্য বলেছে মা। ফকিরনীরা খুব চালাক হয়। কী বললে কে খুশি হবে সেটা জানে!

মিসির আলি নিঃশব্দে নাশতা শেষ করলেন। চলে গেলেন নিজের ঘরের সামনের বাক্সান্দায়। চা-চঁটা আলাদা খাবেন। তার নিজের মাথা খানিকটা এলোমেলো লাগছে। এলোমেলো ভাবটা দূর করতে হবে। আয়না এল চা নিয়ে। তার সামনে বসল। মিসির আলি তাকালেন আয়নার দিকে। তাকে সাধারণ দেখাচ্ছে। গায়ের রঙ কালো। চাপা নাক। মোটা ঠোঁট। থুতনিতে আঁচিলের মতো আছে। থুতনির আঁচিল আগে লক্ষ করেন নি।

কোনো অর্থেই এই মেয়েকে রূপবতী বলা যাবে না। তা হলে সমস্যাটা ঠিক কোন জায়গায়? দেখার ভুল? আলোছায়ার কোনো খেলা? প্রকৃতি নানান খেলা খেলে। আলোছায়ার খেলা তার একটি। তবে প্রকৃতি প্রশ্নের উর্ধ্বে না। তাকেও প্রশ্নের জবাব দিতে হয়।

স্যার কি চিন্তা করছেন?

মিসির আলি হেসে বললেন, তেমন কিছু চিন্তা করছি না।

স্যার, আমার নামটা সুন্দর না? আয়না।

খুব সুন্দর নাম।

এই নাম কেন রাখা হয়েছে জানেন? ছোটবেলায় আমার খুব আয়নপ্রীতি ছিল। সারাক্ষণ আয়নায় নিজেকে দেখতাম। মনে করুন। আমি খুব কান্নাকাটি করছি। আমার হাতে একটা আয়না ধরিয়ে দিলেই আমি চুপ।।

মিসির আলি বললেন, আয়নপ্রীতি কি এখন নেই?

না। এখন আছে আয়নাভীতি। আমার ঘএর আয়না কালো পর্দায় ঢাকা। কতদিন যে আয়নায় নিজের মুখ দেখি না।

মিসির আলি বললেন, মনে হচ্ছে আয়না নাম তোমাকে পরে দেয়া হয়েছে। তোমার আসল নাম কী?

কুলসুম।

তোমার স্বামী তোমাকে কী নামে ডাকে? কুলসুম না আয়না?

সে কুলসুম নামের ল টা ফেলে দিয়ে কুসুম ডাকে। তবে বিয়ের কাবিননামায় আমার নাম কুলসুম থাকলেও আমি সিগনেচার করেছি ‘আয়না’ নাম।

আয়না তোমার খুব পছন্দের নাম?

জি।

তোমার রূপ সম্পর্কে তোমার কী ধারণা? তুমি অতি রূপবতীদের একজন, না সাধারণ বাঙালি তরুণীদের একজন?

আয়না এই প্রশ্নের জবাব দিল না। হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছে প্রশ্ন শুনে সে মজা পাচ্ছে।

মিসির আলি বললেন, প্রশ্নটার জবাব দাও।

দিতেই হবে?

দিতে না চাইলে দেবে না। তোমার রূপ সম্পর্কে তোমার স্বামীর কী ধারণা?

আয়না নিচু গলায় বলল, বাসররাতে সে আমাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিল। ভোরবেলায় হতভম্ব। এখনো সে মাঝে মাঝে মুগ্ধ হয়। মাঝে মাঝে হতভম্ব হয়।

তাতে তুমি মজা পাও?

পাই।

এই মুহুর্তে আমি একটা সংখ্যা ভাবছি। সংখ্যাটা কত?

আট।

একটা পাখির কথা ভাবছি। পাখিটার নাম কী?

স্যার আপনি দুটা পাখির কথা ভাবছেন। একটা ঘুঘু আর একটা কোকিল। একটা কোকিল। গরমের সময় ডাকত। সে পাখিটা কেন হিমালয়ে যাচ্ছে না সেটা চিন্তা করছেন। এখন আবার অন্য একটা পাখির কথা ভাবছেন। হলুদ পাখি লম্বা লেজ। একা থাকে।

তুমি কি সবার চিন্তা বুঝতে পার?

পারি। কিন্তু বুঝার চেষ্টা করি না। মানুষের বেশিরভাগ চিন্তাই কুৎসিত।

মিসির আলি বললেন, আমি তোমার ব্যাপারটা বুঝতে চাই তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?

আয়না বলল, স্যার সাহায্য করব। আমি নিজেও বুঝতে চাই। আপনার ছাত্রও বুঝতে চেষ্টা করেছিল। সে আমার বিষয়ে অনেক কিছু খাতায় লিখে রেখেছে। খাতাটা আমার কাছে। আপনি পড়তে চাইলে আপনাকে দেব। পড়তে চান?

চাই। তুমি নিজে কি তোমার বিষয়ে কিছু লিখেছি। ডায়েরি জাতীয় লেখা?

লিখেছি, তবে আপনাকে পড়তে দেব না।

তোমার স্বামীকে পড়তে দিয়েছিলে?

না। স্যার, আপনার আরেক কাপ চা খেতে ইচ্ছা করছে। চা নিয়ে আসি? চায়ের সঙ্গে সিগারেট ধরাতে ইচ্ছা করছে। সিগারেট তো তো আপনার সঙ্গে নেই। সিগারেট আনিয়ে দেই?

দাও।

কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট আনব?

মিসির আলি ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট আনাবে তা তুমি জান। কেন জিজ্ঞেস করছ?

আয়না। হাসিমুখে উঠে গেল। মিসির আলি তাকিয়ে আছেন নদীর দিকে। নদীর নাম রায়না। একসময় নাকি প্ৰমত্তা ছিল। স্টিমার যাওয়া আসা করত। এখন মরতে বসেছে। মৃত্যু সবার জন্যই ভয়ংকর।

নদীর নাম রায়না।

সে কোথাও যায় না।

সমুদ্রকে পায় না।

মিসির আলি নড়েচড়ে বসলেন। তার মাথায় ছড়া পাঠ হচ্ছে। পাঠ করছে আয়না নামের মেয়েটি। এর মানে কী? জীবনে প্রথম মিসির আলি হতাশ এবং পরাজিত বোধ করলেন।

The old man and the sea বইটিতে আৰ্নেস্ট হেমিংওয়ে একটা বিখ্যাত লাইন লিখেছিলেন Man can be destroyed but not defeated. লাইনটা ভুল। মানুষকে অসংখ্যাবার পরাজিত হতে হয়। এটাই মানুষের নিয়তি। পরাজিত হয় না পশুরা। এটাও বোধ হয় ঠিক না। পশুরাও পরাজিত হয়। সিংহ এবং বাঘের যুদ্ধে একজনকে লেজ গুটিয়ে পালাতে হয়।

স্যার, আপনার চা। সিগারেট।

আয়না চেয়ারে বসতে যাচ্ছিল। মিসির আলি বললেন, আয়না তুমি এখন যাও। আমি কিছুক্ষণ একা থাকব।

আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?

না।

আপনার ছাত্র সব সময় বলত আপনার মতো বুদ্ধিমান মানুষ সে জীবনে দেখে নি। আপনাকে আমার দেখার শখ ছিল।

স্বায়ন পরে তোমার সঙ্গে কথা বলব। এখন না।

স্যার, চা শেষ করে আপনি নদীর পাড় ঘেঁষে হাঁটতে যান, আপনার ভালো লাগবে। একটা পুরোনো বটগাছ আছে। সেখানে বসার জায়গা আছে। আমি ফ্রাস্ক ভর্তি কয়ে চা দিয়ে দেব।

থ্যাংক য়্যু। এখন যাও।

স্যার, যাচ্ছি। একটা কথা বলে যাই? পরাজিত হবার মধ্যেও কিন্তু আনন্দ আছে স্যার!

পরাজয়ের আবার আনন্দ কী?

অবশ্যই পরাজয়ের আলাদা আনন্দ আছে। আনন্দ আছে বলেই প্রকৃতি আমাদের জন্য পরাজয়ের ব্যবস্থা রেখেছে। মৃত্যু একটা পরাজয়। সেখানেও আনন্দ আছে। সমাপ্তির আনন্দ।

তুমি পড়াশোনা কতদূর করেছ?

বিএ পাস করেছি। আপনার ছাত্রের খুব ইচ্ছা ছিল আমি এমএ পাস করি। আমার ইচ্ছা হয় নি। স্যার যাই? আপনি সিগারেট ঠোঁটে নিন। আমি ধরিয়ে দেব।

মিসির আলি সিগারেট নিলেন। আয়না ধরিয়ে দিল। আয়নার চোখ আনন্দে ঝলমল করছে।

হলুদ রঙের লম্বা লেজের পাখিটা বারান্দার রেলিংয়ে বসেছে। রেলিংয়ে পাখিটা বসানোর পেছনে কি আয়না মেয়েটার কোনো হাত আছে? কাক এবং চড়ুই ছাড়া আর কোনো পাখি তো মানুষের এত কাছে আসে না। বনের এই অচেনা পাখি এত কাছে এসেছে কেন?

আয়না।

জি স্যার।

এখন কী ভাবছি বল। আয়না কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, বলতে পারছি না স্যার। খুবই অবাক হচ্ছি।

মিসির আলি বললেন, তুমি যাতে আমার মাথার ভেতর ঢুকে পড়তে না পার, তার একটা কৌশল বের করেছি। কৌশলটি কাজ করেছে।

আয়না বলল, কৌশলটা কী?

মিসির আলি বললেন, কৌশল তোমাকে জানানো ঠিক না। তারপরেও জানাচ্ছি। আমার হাতের কবিতার বইটার নাম উল্টো করে স্বাক্সবার পড়ছিলাম-বইটার নাম Poems. আমি উল্টো করে পড়ছি Smeop, Smeop.

ব্ৰেইনে অর্থহীন শব্দ ধারবার বলে জট পাকিয়েছি। মনে হয় এটাই কাজ করেছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8
Pages ( 1 of 8 ): 1 23 ... 8পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *