Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মহাজাগতিক বিস্ফোরণ || Soumen Chakraborty

মহাজাগতিক বিস্ফোরণ || Soumen Chakraborty

মহাজাগতিক বিস্ফোরণ

ব্যস্ত জনপদে হঠাৎ তীব্র শব্দ। সুতীব্র আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাবার উপক্রম। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে বোমার স্প্লিন্টার। এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দেহাংশ। একবিংশ শতাব্দীর এই ক্ষমতার লড়াইয়ের যুগে আমরা ইতিউতি এরকম ঘটনার সাক্ষী অনেকেই হয়েছি। বিস্ফোরণ শেষে চারিদিকে দৌড়াদৌড়ির পর হঠাৎ ওই স্থানে শ্মশানের নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। অথচ এই বিস্ফোরণ সেই যুগ যুগান্তর থেকে মহাকাশে সংগঠিত হয়ে আসছে সুপারনোভা বিস্ফোরণ রূপে। যার প্রভাব ও বিস্তৃতির কথা আমাদের কল্পনারও অতীত। আবার বিস্ফোরণ শেষে সেখানেও বিরাজ করে শান্ত শীতল নীহারিকার স্নিগ্ধ উপস্থিতি।

কবিগুরু বলেছেন-
“ক্ষমা করো, ধৈর্য ধরো
হউক সুন্দরতর বিদায়ের ক্ষণ,
মৃত্যু নয়, ধ্বংস নয়-
নহে বিচ্ছেদের ভয়
শুধু সমাপণ। “

সত্যি এ যেন অমিত শক্তির অপার ক্ষয় ও শান্ত সমাপণ। তারা থেকে সুপারনোভা এবং সবশেষে নীহারিকায় শান্ত পরিসমাপ্তি। যে সব মহাদানব তারাদের ভর সূর্যের ভরের অনেক বেশী (প্রায় দশ থেকে বিশ গুণ বা তারও বেশী) , সেইসব তারাদের কই মাছের প্রাণ। অতি সহজে তারা মৃত্যুর কাছে হার মানেনা। তাদের কাছে সময়ের হিসেবে মৃত্যু কিন্তু অন্যান্য তারাদের থেকে দ্রুত আসে। তথাপি সেই তারাগুলো প্রচন্ড শক্তিবলে নিজেদের ভিতরে ক্রমশ বিবর্তন ঘটিয়ে তবেই মৃত্যুর কাছে পরাজয় স্বীকার করে। এইসব তারাদের ক্ষেত্রে কয়েক দফা সংকোচনের ফলে হিলিয়াম দহন শুরু হলেও, সেখানেই তার দহন পর্ব থেমে থাকে না। বিশাল ভর বিশিষ্ট তারাটির প্রবল অভ্যন্তরীণ অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে এর মধ্যে সংকোচন চলতেই থাকে। আর এই সংকোচনের ফলে বিশাল ভরের তারাটির কেন্দ্রীয় তাপমাত্রা প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পায়। এবং কেন্দ্রে প্রবল তাপের তাড়নায় কার্বন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এরপর ক্রমান্বয়ে ভারী মৌল যেমন নাইট্রোজেন, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকন, সালফার ইত্যাদি তৈরি হতে থাকে। একসময় সংকোচনের ফলে তারাটির কেন্দ্রে ৫৬ ভরবিশিষ্ট লোহার মতো মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি হতে শুরু করে। সৈয়দ সময় তারাটি থেকে যে প্রচন্ড শক্তির প্রবাহ বিকিরিত হয়, তার প্রভাব তারাটির উপর মারাত্মক ভাবে পড়ে। এবং সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অবর্ণনীয় অবস্থার সম্মুখীন হয়। ঠিক এভাবেই তারাটির কেন্দ্র ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরফলে বিপুল পরিমাণ শক্তি মূলত নিউট্রিনো রূপে প্রচন্ডভাবে তীব্র গতিবেগে তারাটির কেন্দ্র থেকে নির্গত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে তারাটির বহিরাবরণ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তারাটি বিস্তারিত হয় এবং তার সমস্ত লড়াই শেষ হয়ে, সে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। একেই নাম দেওয়া হয়েছে সুপারনোভা বিস্ফোরণ। সুপারনোভা আসলে বিস্ফোরণরত বৃহদাকার তারা ছাড়া আর কিছু নয়।

সুপারনোভা নামের বুৎপত্তিগত অর্থ খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যায়- এটি মূলত লাতিন শব্দ। লাতিন ভাষায় নোভা শব্দের অর্থ নতুন। নোভা বলতে এমন তারাদেরকে বুঝায় যাদেরকে অতি উজ্জ্বল দেখায়। নোভার সাথে সুপার নামীয় উপসর্গটি যোগ হয় সুপারনোভা হয়েছে যা একই সাথে নোভা এবং সুপারনোভার পার্থক্যটি চিহ্নিত করে দিচ্ছে। সুপারনোভা বলতেও ক্রমশ উজ্জ্বলতর হচ্ছে এমন তারাকে বুঝায়, কিন্তু এক্ষেত্রে তারার উজ্জ্বলতার কারণ এবং প্রক্রিয়া একেবারে ভিন্ন। এবং তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।মেরিয়াম-ওয়েবস্টার্‌স কলেজিয়েট অভিধান থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে সুপারনোভা শব্দটি ১৯২৬ সালে প্রথম ব্যবহৃত হয়। সুপারনোভার বাংলা করা হয়েছে অতিনবতারা।

তারা যখন সুপারনোভা হয়ে ওঠে তখন তার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেতে পেতে ক্রমে তা শিখরে পৌঁছে যায়। একসময় এর ঔজ্জ্বল্য প্রায় এক কোটি সূর্যের ঔজ্জ্বল্যের সমান হয়ে যায়। আগরবাতি জ্বলতে জ্বলতে শেষে যেমন দপ করে জ্বলে ওঠে, এটি ঠিক তেমনি অবস্থা। তবে এই অবস্থা চিরস্থায়ী হয়না। এভাবেই ধীরে ধীরে হঠাৎ সে তার ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলে। কয়েকশো বছর বাদে ওই স্থানে তারাটির ধ্বংসাবশেষ হালকা মেঘের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যেটাকে আমরা সচরাচর ‘নীহারিকা’ বলে থাকি। নীহারিকা আসলে তারার ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছু নয়। বৃষমন্ডলে কর্কট নীহারিকা এছাড়া রিং নীহারিকা, ঈগল নীহারিকা ইত্যাদি বিশেষ কয়েকটি নীহারিকার উদাহরণ। এরা অতীতের মহা বিস্ফোরণের সাক্ষী হিসাবে এখনও মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এদের থেকে এখনও নানারকম বিকিরণ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। যা গবেষণার উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণও বটে।

এবার আসা যাক এই সম্পর্কে ইতিহাসের কিছু ঘটনায়। ১০৫৪ খৃস্টাব্দের মাঝামাঝি কোনো এক রাতের ঘটনা। চীনা জ্যোতির্বিদগণ দেখলেন ট্যুরাস নক্ষত্রপুঞ্জের একটি তারায় হঠাৎ করে যেন আগুন ধরে গেল। তার আভায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আশপাশের আকাশ। কিন্তু জ্যোতির্বিদরা বুঝতে পারেননি আসলে ঘটনাটা কি। তারা এর নাম দেন ‘অতিথি তারকা’। ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ করলেন একটি অশুভ ঘটনার পূর্ব লক্ষণ হিসেবে। তারপর ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যে ঘটনাটির কথা লিখে গেলেন বইয়ের পাতায়। ১০৫৪ সালের ৪ জুলাই ঘটনাটি ঘটে। ১৫৭২ সালে ডেনমার্কের জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে্ ক্যাসিওপিয়া তারামণ্ডলে একটি সুপারনোভা আবিষ্কার করেন। তাঁর নামানুসারে এটিকে ‘টাইকো সুপারনোভা’ নাম দেওয়া হয়। এর ঔজ্জ্বল্য এমন ছিল যে দিনের বেলাতেও একে দেখা যেত।

তারপর হাজার বছর পেরিয়ে গেছে। পৃথিবী জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষে উপনীত হয়েছে। আবারও সেই একই ঘটনা। ১৯৮৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির রাত। কানাডার জ্যোতির্বিদ আয়ান শিন্টন চিলির উত্তরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি মানমন্দিরের টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে করতে অজানা আনন্দে তিনি পুলকিত হয়ে ওঠেন। উত্তর গোলার্ধ বরাবর “বৃহৎ ম্যাগিলানিক ক্লাউড” এর মাঝে আবির্ভূত হয়েছে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। এমনকি খোলা চোখেও তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আবিস্কার হয় আর এক সুপারনোভা। নাম দেওয়া হয় ‘সুপারনোভা ১৯৮৭এ’।

সুপারনোভা একটি বিরল ঘটনা, আকাশগঙ্গার মতো ছায়াপথে প্রতি ৫০ বছরে সর্বোচ্চ একবার এটি ঘটতে দেখা যায়। তাই অতিনবতারা গবেষণার জন্য অনেকগুলো ছায়াপথকে একসাথে খুব সূক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যখন সেগুলো আবিষ্কৃত হয় ততক্ষনে বিস্ফোরণ প্রক্রিয়া চলতে শুরু করে। সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতায় পৌঁছানোর পূর্বেই প্রতিটি সুপারনোভা আবিষ্কার করা খুব প্রয়োজন। পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তুলনায় শৌখিন জ্যোতির্বিদদের সংখ্যা অনেক বেশি। শৌখিনরাই তাই সুপারনোভা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বেশি অবদান রেখেছে। ভবিষ্যতে নতুন প্রকৌশলে নতুন নতুন সুপারনোভা আবিস্কৃত হবে ও সেই নিয়ে গবেষণা আমাদের বিশ্বজগৎ নিয়ে নতুন ধারণা দেবে, এই আশা করি।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *