Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভবিষ্য পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 6

ভবিষ্য পুরাণ || Prithviraj Sen

কর্ণাটকের রাজকন্যা পদ্মাবতীর কাহিনি শুনিয়ে এবং প্রশ্নের উত্তর পেয়ে বিক্রমাদিত্যের ওপর খুশি হয়ে বেতাল বলল–আমি আর একটি কাহিনি বলছি, শুনুন মহারাজ।

বহু পূর্বে যমুনার তীরে ধর্মস্থল নামে এক নগর ছিল। সেখানকার রাজার নাম গুণাধিপ। পরম ধার্মিক তিনি।

তার রাজ্যে হরিশৰ্মা নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। ব্রাহ্মণীর নাম সুশীলা। তাদের সত্যশীল নামে এক ছেলে এবং মধুমতী নামে এক মেয়ে ছিল। কাশীরাজের ছেলে কেশর ছিল মহাগুণী সত্যশীল-এর বন্ধু।

অতীব সুন্দরী মধুমতী। ব্রাহ্মণ সুযোগ্য পাত্রের সন্ধান করতে লাগলেন। কারণ মধুমতীর বিয়ে দিতে হবে। বারো বছর বয়স হল। সত্যশীলের ইচ্ছা কেশবের সঙ্গে তার বোনের বিয়ে দেবেন। ব্রাহ্মণ হরিশৰ্মা অমত করলেন না। মধুমতী কেশরের অচেনা নয় তাই রাজী হয়ে গেল। একটা দিন ও ঠিক করা হল বিয়ের।

হরিশর্মার মেয়ের পরিচয় অনেকেই জানে। সে সুন্দরী। তার বিয়ের কথা শুনে দুই ব্রাহ্মণ যুবক মধুমতাঁকে বিয়ে করতে এলেন। তাঁরাও প্রত্যেকে রূপবান। একজনের নাম বামন এবং অপরজনের নাম ত্রিবিক্রম।

সত্যশীল তার বন্ধু কেশবকে আনতে গেছে। কাকে কন্যাদান করবেন হরিশৰ্মা, এই ভেবে মহাচিন্তায় পড়লেন।

হরিশর্মা বুঝতে পারছেন না এখন তিনি কি করবেন। তিনি ব্রাহ্মণ যুবকদের বললেন–সত্যশীল আসুক কেশবকে নিয়ে। তোমরা এখানে থাক। তারপর যাকে বেশি গুণী বলে মনে হবে, তার সঙ্গেই আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেব। সেই রাতেই ঘটে গেল মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা।

রাতে বিছানায় শুয়ে মধুমতী হঠাৎ চিৎকার করে উঠল। তার পায়ে কিছু কামড়ে দিয়েছে। দেখতে দেখতে বিষে নীল হয়ে উঠল তার দেহ। কারোর আর বুঝতে বাকী থাকল না যে, কোন বিষধর সাপ কামড়ে দিয়েছে। বামন আর ত্রিবিক্রম ছুটে গেল এক ওঝার কাছে। ওঝা এসে অনেক ঝাড়ফুঁক করল, কিন্তু কোনো ফল হল না। মধুমতী পরলোকে চলে গেল। বামন আর ত্রিবিক্রমের খুব মন খারাপ।

মৃতদেহটি পোড়ান হল। সত্যশীলের কাছে বিয়ের প্রস্তাব শোনামাত্রই কেশব মনে মনে মধুমতাঁকে বিয়ে করে ফেলেছে। কিন্তু সে এসে যা শুনল, তাতে শোকে কাতর হয়ে পড়ল–যেন তার স্ত্রীই মারা গেছে।

তিনজনেই শোকে কাতর। যেখানে মধুমতাঁকে পোড়ান হয়েছে, সেখান থেকে ছাই নিয়ে সারা গায়ে মেখে শ্মশানেই বসে থাকল বামন।

শ্মশান থেকে মধুমতীর অস্থি সংগ্রহ করে মাদুলীর মত করে গলায় বেঁধে নানা স্থানে ঘুরে বেড়াতে লাগল কেশব। আর ত্রিবিক্রম মনের দুঃখে সন্ন্যাসী হয়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষে করে বেড়াতে লাগল। ত্রিবিক্রম ঘুরতে ঘুরতে একদিন সরযূ নদীর তীরে এক নগরে এসে উপস্থিত হল। এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে সেদিন ভিক্ষে করতে এল। ব্রাহ্মণের নাম রাম শর্মা। তিনি শিবভক্ত। সন্ন্যাসী অতিথিকে পেয়ে তিনি খুব খুশি হলেন। ব্রাহ্মণী ও সন্ন্যাসীর জন্য ভালো ভালো খাবার তৈরী করলেন।

সেই সময় হঠাৎ খবর এল ব্রাহ্মণের একমাত্র বালক পুত্র বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতে হঠাৎ মারা গেছে। ব্রাহ্মণী শোকে আকুল হয়ে মৃত পুত্রের কাছে ছুটে গিয়ে তার উপর আছাড় খেয়ে পড়লেন।

রাম শর্মা শিব পূজা শেষ করে গৃহে ফিরে এই মর্মান্তিক খবর শুনে কোনো দুঃখ করলেন না। স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে মন্ত্রবিদ্যাবলে পুত্রকে বাঁচিয়ে তুললেন। সঞ্জীবনী মন্ত্র তার জানা ছিল। তারপর সন্ন্যাসীর সেবা করলেন সমাদরে।

সন্ন্যাসী ত্রিবিক্রম সেই রাতে সেই ব্রাহ্মণের বাড়িতে রয়ে গেল। রাতেরবেলা রাম শর্মার চরণ জড়িয়ে ধরে ত্রিবিক্রম তার সব কথা খুলে বলল। এই সন্ন্যাসীর বেশ সেই মধুমতীর জন্যই।

ত্রিবিক্রমের প্রতি রাম শর্মার করুণা হল, তিনি তাকে সঞ্জীবনী মন্ত্র দান করলেন। ত্রিবিক্রম মনের আনন্দে হরিশর্মার বাড়িতে ফিরে এসে তাকে সব কথা জানাল। কিন্তু অস্থি ছাড়া তো এই মন্ত্র কাজ করবে না। অস্থি পাবে কোথা? তখন সত্যশীল বলল যে, তার বন্ধু কেশব মধুমতীর হাড় গলায় বেঁধে পাগলের মতো নানা স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তারপর কেশবের সন্ধান পেয়ে তার কাছ থেকে মধুমতীর অস্থি নিয়ে ত্রিবিক্রম তার শেখা সঞ্জীবনী মন্ত্র প্রয়োগ করল। দেখতে দেখতে সেই অস্থি থেকে একটি ক্ষুদ্রাকৃতি বালিকা দেহের সৃষ্টি হল। অল্পক্ষণের মধ্যেই মধুমতী তার পূর্বরূপ ধারণ করল। প্রাণ ফিরে পেল। এখন তিন জন দাবিদার এই মধুমতীর।

এই কাহিনি শেষ করে রাজ্য বিক্রমাদিত্যকে বেতাল বলল–এই তিনজনের মধ্যে মধুমতীর কার সঙ্গে বিয়ে হওযার উচিত।

রাজা বিক্রমাদিত্য হেসে বললেন–মধুমতীর বিয়ে হওয়ার উচিত বামনের সঙ্গে।

বেতাল জিজ্ঞাসা করল–কেন? বামন তো কিছু করেনি। মধুমতাঁকে বাঁচিয়ে তুলবার জন্য কেশব অস্থি সংগ্রহ করে রেখেছিল, আর ত্রিবিক্রম তার উপর সঞ্জীবনী মন্ত্র প্রয়োগ করেছিল। তা না হলে মধুমতী কেমন করে বাঁচত? তাহলে মধুমতাঁকে বামন কেন পাবে?

এই কথার উত্তরে বিক্রমাদিত্য বললেন–কেশব মধুমতীর অস্থি সংগ্রহ করে পুত্রের কাজ করেছে। সঞ্জীবনী মন্ত্রের দ্বারা তার জীবন দান করে ত্রিবিক্রম পিতার কাজ করেছে। কোনও নারীর পিতা বা পুত্রের সঙ্গে বিয়ে হতে পারে না। বামন মধুমতীর দেহের ছাই মেখে স্বামীর কাজ করেছে।

বিক্রমাদিত্যের উত্তর শুনে বেতাল খুব খুশি হলো।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *