সতেরো মিনিট রয়েছে মাত্র
ব্যোমকেশ হাতের ঘড়ি দেখিয়া বলিল, ‘সতেরো মিনিট রয়েছে মাত্র। অতএব চটপট আমার কৈফিয়ৎ দাখিল করে স্টেশন অভিমুখে যাত্রা করব।’
বাহুল্য। ব্যোমকেশই যে এই অঘটন সম্ভব করিয়াছে তাহাও কি জানি কেমন করিয়া চারিদিকে রাষ্ট্র হইয়া গিয়াছিল। শশাঙ্কবাবু প্রীতি ও সন্তোষের ভাব চেষ্টা করিয়াও আর রাখিতে পারিতেছিলেন না। তাই আমরা আর অযথা বিলম্ব না করিয়া কলিকাতায় ফিরিয়া যাওয়াই মনস্থ করিয়াছিলাম।
কৈলাসবাবু তাঁহার পূর্বতন বাসায় ফিরিয়া আসিয়াছিলেন। তাঁহার শয়নকক্ষে বিদায়ের পূর্বে আমরা সমবেত হইয়াছিলাম। শশাঙ্কবাবু্, বরদাবাবু্, অমূল্যবাবু উপস্থিত ছিলেন; কৈলাসবাবু শয্যায় অর্ধশয়ান থাকিয়া মুখে অনভ্যস্ত প্ৰসন্নতা আনিবার চেষ্টা করিতেছিলেন। পুত্রের উপর মিথ্যা সন্দেহ করিয়া তিনি যে অনুতপ্ত হইয়াছেন তাহা স্পষ্টই প্রতীয়মান হইতেছিল।
তিনি হঠাৎ বলিয়া উঠিলেন, ‘এখন বুঝতে পারছি। ভূত নয় পিশাচ নয়—শৈলেনবাবু। উঃ-লোকটা কি ধড়িবাজ! মনে আছে-একবার এই ঘরে বসে ‘ঐ-ঐ’ করে চেচিয়ে উঠেছিল? আগাগোড়া ধাপ্লাবাজি। কিছুই দেখেনি-শুধু আমাদের চোখে ধুলো দেবার চেষ্টা। সে নিজেই যে ভুত এটা যাতে আমরা কোন মতেই না বুঝতে পারি। যা হোক, ব্যোমকেশবাবু্, এবার কৈফিয়ৎ পেশ করুন-আপনি বুঝলেন কি করে?
সকলে উৎসুক নেত্ৰে ব্যোমকেশের পানে চাহিয়া রহিলেন।
ব্যোমকেশ একটু হাসিয়া আরম্ভ করিল, ‘বারদাবাবু্, আপনি কিছু মনে করবেন না, প্রেতিযোনি সম্বন্ধে আমার মনটা গোড়া থেকেই নাস্তিক হয়ে ছিল। ভূত পিশাচ আছে কিনা এ প্রশ্ন আমি তুলছি না; কিন্তু যিনি কৈলাসবাবুকে দেখা দিচ্ছেন তিনি যে ভূত-প্ৰেত নন-জলজ্যান্ত মানুষ-এ সন্দেহ আমার শুরুতেই হয়েছিল। আমি নেহাৎ বস্তুতান্ত্রিক মানুষ, নিরেট বস্তু নিয়েই আমায় কারবার করতে হয়; তাই অতীন্দ্ৰিয় জিনিসকে আমি সচরাচর হিসেবের বাইরে রাখি।
‘এখন মনে করুন, যদি ঐ ভূতটা সত্যিই মানুষ হয়, তবে সে কে এবং কেন এমন কাজ করছে—এ প্রশ্নটা স্বতঃই মনে আসে। একটা লোক খামক ভুত সেজে বাড়ির লোককে ভয় দেখাচ্ছে কেন? এর একমাত্র উত্তর, সে বাড়ির লোককে বাড়িছাড়া করতে চায়। ভেবে দেখুন, এ ছাড়া আর অন্য কোন সদুত্তর থাকতে পারে না।
‘বেশ। এখন প্রশ্ন উঠছে-কেন বাড়িছাড়া করতে চায়? নিশ্চয় তার কোন স্বাৰ্থ আছে। কি সে স্বাৰ্থ?
আপনারা সকলেই জানেন, বৈকুণ্ঠবাবুর মৃত্যুর পর তাঁর মূল্যবান হীরা জহরত কিছুই পাওয়া যায়নি। পুলিস সন্দেহ করে যে তিনি একটা কাঠের হাতবাক্সে তাঁর অমূল্য সম্পত্তি রাখতেন এবং তাঁর হত্যাকারী সেগুলো নিয়ে গিয়েছে। আমি কিন্তু এটা এত সহজে বিশ্বাস করতে পারিনি। ‘ব্যয়কুণ্ঠ বৈকুণ্ঠবাবুর চরিত্র যতদূর বুঝতে পেরেছি। তাতে মনে হয় তিনি মূল্যবান হীরে-মুক্তো কাঠের বাক্সে ফেলে রাখবার লোক ছিলেন না। কোথায় যে তিনি সেগুলোকে রাখতেন। তাই কেউ জানে না। অথচ এই ঘরেই সেগুলো থাকত।—প্ৰশ্ন–কোথায় থাকত?
‘কিন্তু এ প্রশ্নটা এখন চাপা থাক। এই ভৌতিক উৎপাতের একমাত্র যুক্তিসঙ্গত কারণ এই হতে পারে যে, বৈকুণ্ঠবাবুর হত্যাকারী তাঁর জহরতগুলো নিয়ে যাবার সুযোগ পায়নি, অথচ কোথায় সেগুলো আছে তা সে জানে। তাই সে এ বাড়ির নূতন বাসিন্দাদের তাড়াবার চেষ্টা করছে; যাতে সে নিরুপদ্রবে। জিনিসগুলো সরাতে পারে।
‘সুতরাং বুঝতে পারা যাচ্ছে যে ভুতই বৈকুণ্ঠবাবুর হত্যাকারী। ‘বৈকুণ্ঠবাবুর মেয়েকে প্রশ্ন করে আমার দুটো বিষয়ে খটুকী লেগেছিল। প্রথম, তিনি সে-রত্রে কোন শব্দ শুনতে পাননি। এটা আমার অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। তিনি এই ঘরের নীচের ঘরেই শুতেন, অথচ তাঁর বাপকে গলা টিপে মারবার সময় যে ভীষণ ধস্তাধস্তি হয়েছিল তার শব্দ কিছুই শুনতে পাননি। আততায়ী বৈকুণ্ঠবাবুর গলা টিপে কোথায় তিনি হীরে জহরত রাখেন সে-খবর বার করে নিয়েছিল–অর্থাৎ তাঁদের মধ্যে বাক্য-বিনিময় হয়েছিল। হয়তো বৈকুণ্ঠবাবু চীৎকারও করেছিলেন—অথচ তাঁর মেয়ে কিছুই শুনতে পাননি। এ কি সম্ভব?
‘দ্বিতীয় কথা, বাপের আত্মার সদগতির জন্য তিনি গয়ায় পিণ্ড দিতে অনিচ্ছুক। আসল কথা তিনি জানেন তাঁর বাপ প্রেতিযোনি প্রাপ্ত হয়নি, তাই তিনি নিশ্চিন্ত আছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রেতিযোনি যে কে তাও সম্ভবত তিনি জানেন। নচেৎ একজন অল্পশিক্ষিত স্ত্রীলোক জেনেশুনে বাপের পারলৌকিক ক্রিয়া করবে না-এ বিশ্বাসযোগ্য নয়।
‘বৈকুণ্ঠবাবুর মেয়ে সম্বন্ধে অনেকগুলো সম্ভাবনার অবকাশ রয়েছে-সবগুলো তলিয়ে দেখার দরকার নেই। তার মধ্যে প্রধান এই যে, তিনি জানেন কে হত্যা করেছে এবং তাকে আড়াল করবার চেষ্টা করছেন। স্ত্রীলোকের এমন কে আত্মীয় থাকতে পারে যে বাপের চেয়েও প্রিয়? উত্তর নিষ্প্রয়োজন। বৈকুণ্ঠবাবুর মেয়ে যে সুচরিত্রা সে খবর আমি প্রথম দিনই পেয়েছিলুম। সুতরাং স্বামী ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।
‘বৈকুণ্ঠবাবুর জামাই যে হত্যাকারী তার আর একটা ইঙ্গিত গোড়াগুড়ি পেয়েছিলুম। প্ৰেতাত্মাটা পনেরো হাত লম্বা্্, দোতলার জানোলা দিয়ে অবলীলাক্রমে উঁকি মারে। সহজ মানুষের পক্ষে এটা কি করে সম্ভব হয়? মইও ব্যবহার করে না-মই ঘাড়ে করে অত শীঘ্ৰ অস্তধান সম্ভব নয়। তবে? এর উত্তর-রণ-পা। নাম শুনেছেন নিশ্চয়। দুটো লম্বা লাঠি্্, তার ওপর চড়ে সেকালে ডাকাতেরা বিশ-ত্রিশ ক্রোশ দূরে ডাকাতি করে আবার রাতারাতি ফিরে আসত। বর্তমান কালে সার্কাসে রণ-পা চড়ে অনেক খেলোয়াড় খেলা দেখায়। রীতিমত অভ্যাস না থাকলে কেউ রণ-পা চড়ে ঘুরে বেড়াতে পারে না। কাজেই হত্যাকারী যে সার্কাস-সম্পর্কিত লোক হতে পারে। এ অনুমান নিতান্ত অশ্রদ্ধেয় নয়। বৈকুণ্ঠবাবুর বয়াটে জামাই সাকসিন্দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, নিশ্চয় ভাল খেলোয়াড়-সুতরাং অনুমানটা আপনা থেকেই দৃঢ় হয়ে ওঠে।
‘কিন্তু সবাই জানে জামাই দেশে নেই—আট বছর নিরুদেশ। সে হঠাৎ এসে জুটল কোথা থেকে?
‘সেদিন এই বাড়ির আঁস্তাকুড়ে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে একটা কাগজের টুকরো কুড়িয়ে পেয়েছিলুম। অনেকদিনের জীর্ণ একটা সার্কাসের ইস্তাহার, তাতে আবার সিংহের ছবি তখনো সম্পূর্ণ মুছে যায়নি। তার উল্টো পিঠে হাতের অক্ষরে কয়েকটা বাংলা শব্দ লেখা ছিল। মনে হয় যেন কেউ চিঠির কাগজের অভাবে এই ইস্তাহারের পিঠে চিঠি লিখেছে। চিঠির কথাগুলো অসংলগ্ন, তবু তা থেকে একটা অর্থ উদ্ধার করা যায় যে স্বামী অর্থাভাবে পড়ে স্ত্রীর কাছে টাকা চাইছে। অজিত, তুমি যে শব্দটা ‘স্বাধী’ পড়েছিলে সেটা প্রকৃতপক্ষে ‘স্বামী।
‘বোঝা যাচ্ছে, স্বামী সুদূর প্রবাস থেকে অথৰ্ণভাবে মরীয়া হয়ে স্ত্রীকে চিঠি লিখেছিল। বলা ‘বাহুল্য, অর্থ সাহায্য সে পায়নি। বৈকুণ্ঠবাবু একটা লক্ষ্মীছাড়া পত্নীত্যাগী জামাইকে টাকা দেবেন। একথা বিশ্বাস্য নয়।
এই গেল বছরখানেক আগেকার ঘটনা। দু’বছরের মধ্যে এ শহরে কোনো সার্কাস পার্টি আমেনি; অতএব বুঝতে হবে যে প্রবাস থেকেই স্বামী এই চিঠি লিখেছিলেন এবং তখনো তিনি সাধুৰ্গসের দলে ছিলেন—সাদা কাগজের অভাবে ইস্তােহারের পিঠে চিঠি লিখেছিলেন।
‘কয়েকমাস পরে স্বামী একদা মুঙ্গেরে এসে হাজির হলেন। ইতিমধ্যে কোথা থেকে টাকা যোগাড় করেছিলেন জানি না; তিনি এসে স্বাস্থ্যান্বেষী ভদ্রলোকের মত বাস করতে লাগলেন। মুঙ্গেরে কেউ তাঁকে চেনে না।–তাঁর বাড়ি যশোরে আর বিয়ে হয়েছিল নবদ্বীপে।–তাই বৈকুণ্ঠবাবুর জামাই বলে ধরা পড়বার ভয় তাঁর ছিল না।
‘বৈকুণ্ঠবাবু বোধ হয় জামাইয়ের আগমনবোতা শেষ পর্যন্ত জানতেই পারেননি, তিনি বেশ নিশ্চিন্ত ছিলেন। জামাইটি কিন্তু আড়ালে থেকে শ্বশুর সম্বন্ধে সমস্ত খোঁজখবর নিয়ে তৈরি হলেন; শ্বশুর যখন স্বেচ্ছায় কিছু দেবেন না। তখন জোর করেই তাঁর উত্তরাধিকারী হবার সঙ্কল্প করলেন।
‘তারপর সেই রাত্রে তিনি রণ-পায়ে চড়ে শ্বশুরবাড়ি গেলেন, জানোলা দিয়ে একেবারে শ্বশুরমশায়ের শোবার ঘরে অবতীর্ণ হলেন। এই আকস্মিক আবিভাবে শ্বশুর বড়ই বিব্রত হয়ে পড়লেন, জামাই কিন্তু নাছোড়বান্দা। কথায় বলে জামাতা দশম গ্ৰহ। বাবাজী প্রথমে শ্বশুরের গলা টিপে তাঁর হীরা জহরতের গুপ্তস্থান জেনে নিলেন, তারপর তাঁকে নিপাত করে ফেললেন। তিনি বেঁচে থাকলে অনেক ঝঙ্কাট, তাই তাঁকে শেষ করে ফেলবার জন্যেই তৈরি হয়ে এসেছিলেন।
‘কিন্তু নিশ্চিন্তভাবে হীরা জহরতগুলো আত্মসাৎ করবার ফুরসৎ হল না। ইতিমধ্যে নীচে স্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল, তিনি এসে দোর ঠেলাঠেলি করছিলেন।
‘তাড়াতাড়ি জামাইবাবু একটিমাত্র জহরত বার করে নিয়ে সে-রাত্রির মত প্ৰস্থান করলেন। বাকিগুলো যথাস্থানেই রয়ে গেল।
‘বৈকুণ্ঠবাবু জহরতগুলি রাখতেন বড় অদ্ভুত জায়গায় অর্থাৎ ঘরের দেয়ালে। দেয়ালের চুন-সুরকি খুঁড়ে সামান্য গর্ত করে, তাতেই মণিটা রেখে, আবার চুন দিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতেন। তাঁর পানের বাটায় যথেষ্ট চুন থাকত, কোন হাঙ্গামা ছিল না। বার করবার প্রয়োজন হলে কানথুস্কির সাহায্যে চুন খুঁড়ে বার করে নিতেন।
‘জামাইবাবু একটি জহরত দেয়াল থেকে বার করে নিয়ে যাবার আগে গর্তটা তাড়াতাড়ি চুন দিয়ে ভর্তি করে দিলেন। কিন্তু তাড়াতাড়িতে কাজ ভাল হয় না, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের ছাপ চুনের ওপর আঁকা রয়ে গেল।
বৈকুণ্ঠবাবু তাঁর মণি-মুক্তা কোথায় রাখেন, এ প্রশ্নটা প্রথমে আমাকেও ভাবিয়ে তুলেছিল। তারপর সেদিন এঘরে পায়চারি করতে করতে যখন ঐ আঙুলের টিপ চোখে পড়ল, তখন এক মুহুর্তে সমস্ত বুঝতে পারলুম। এই ঘরের দেয়ালে যত্রতত্র চুনের প্রলেপের আড়ালে আড়াই লক্ষ টাকার জহরত লুকোনো কাছে। এমনভাবে লুকোনো আছে যে খুব ভাল করে দেয়ালে পরীক্ষা না করলে কেউ ধরতে পারবে না। শশাঙ্ক, তোমাকে মেহনৎ করে এই পঞ্চাশটি জহরত বার করতে হবে। আমার আর সময় নেই, নইলে আমিই বার করে দিতুম। তবু পেন্সিল দিয়ে দেয়ালে ঢারা দিয়ে রেখেছি, তোমার কোনো কষ্ট হবে না।
‘যাক। তাহলে আমরা জানতে পারলুম যে, জামাই বৈকুণ্ঠবাবুকে খুন করে একটা জহরত নিয়ে গেছে। এবং অন্যগুলো হস্তগত করবার চেষ্টা করছে। কিন্তু জামাই লোকটা কে? নিশ্চয় সে এই শহরেই থাকে এবং সম্ভবত আমাদের পরিচিত। তার আঙুলের ছাপ আমরা পেয়েছি বটে। কিন্তু কেবলমাত্ৰ আঙুলের ছাপ দেখে শহরসুদ্ধ লোকের ভিতর থেকে একজনকে খুঁজে বার করা যায় না। তবে উপায়?
‘সেদিন প্ল্যাঞ্চেট টেবিলে সুযোগ পেলুম। টেবিলে ভূতের আবির্ভাব হল। আমি বুঝলুম আমাদেরই মধ্যে একজন টেবিল নাড়ছেন এবং তিনি হত্যাকারী; ভূতের কথাগুলোই তার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ। একটু ছুতো করে আমি আপনাদের সকলের হতে পরীক্ষা করে দেখলুম। শৈলেনবাবুর সঙ্গে আঙুলের দাগ মিলে গেল ।
‘সুতরাং শৈলেনবন্ধুই যে হত্যাকারী তাতে আর সন্দেহ রইল না । আপনাদেরও বোধহয় আর সন্দেহ নেই। বরদাবাবুর শিষ্য হয়ে শৈলেনবাবুর কাজ হাসিল করবার খুব সুবিধা হয়েছিল। লোকটি বাইরে বেশ নিরীহ আর মিষ্টভাষী, কিন্তু ভিতরে ভিতরে বাঘের মত ক্রুর আর নিষ্ঠুর। দয়া মায়ার স্থান ওর হৃদয়ে নেই।’
ব্যোমকেশ চুপ করিল। সকলে কিছুক্ষণ নির্বাক হইয়া রহিলেন । তারপর অমূল্যবাবু প্ৰকাণ্ড একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বলিয়া উঠিলেন, ‘আঃ—বাঁচলুম। ব্যোমকেশবাবু, আর কিছু না হোক বরদার ভূতের হাত থেকে আপনি আমাদের উদ্ধার করেছেন। যে রকম করে তুলেছিল–আর একটু হলে আমিও ভুতে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলাম আর কি; আপনি বরদার ভূতের রোজা, আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।’
সকলে হাসিলেন। বরদাবাবু বিড়বিড় করিয়া গলার মধ্যে কি বুলিলেন; শুনিয়া অমূল্যবাবু বলিলেন, ‘ওটা কি বললে ? সংস্কৃত বুলি আওড়াচ্ছ মনে হল।’
বরদাবাবু বলিলেন, ‘মৌক্তিকং ন গজে গজে। একটা হাতির মাথায় গজমুক্তা পাওয়া গেল না বলে গজমুক্তা নেই একথা সিদ্ধ হয় না।’
অমূল্যবাবু বলিলেন, ‘গজের মাথায় কি আছে কখনো তল্লাস করিনি, কিন্তু তোমার মাথায় যা আছে শুধু আমরা সবাই জানি ।’
ব্যোমকেশ উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, সতেরো মিনিট উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এবার তাহলে উঠলুম–নমস্কার । তারাশঙ্করবাবুর কাছে আগেই বিদায় নিয়ে এসেছি।–মহাপ্ৰাণ লোক । তাঁকে আব্বার আমার শ্রদ্ধাপূর্ণ নমস্কার জানাবেন; এস অজিত।’