Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিপদ – মিসির আলি || Humayun Ahmed » Page 5

বিপদ – মিসির আলি || Humayun Ahmed

মিসির আলি বড় একটা খাতায় বিড়ালের ব্যাপারটা লিখেছেন। খাতাটা নিয়ে আফসার সাহেবের বাসায় যাবেন। যাবার আগে লেখাটা আরেক বার দেখে নিচ্ছেন। মিসির আলি লিখছেন :

১. আফসার সাহেব একজন বুদ্ধিমান মানুষ, তবে গম্ভীর প্রকৃতির। ঠাট্টা-তামাশা পছন্দ করেন না। সবকিছু খুব সিরিয়াসভাবে নেন। কাজেই তিনি যখন বলেন বিড়ালের কথা বুঝতে পারছেন, তখন ধরে নেওয়া স্বাভাবিক যে, তিনি ঠাট্টা-তামাশা করছেন না। একজন বুদ্ধিমান মানুষ কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ বলা শুরু করবেন না যে, তিনি বিড়ালের কথা বুঝতে পারছেন। এটা বলায় তাঁর কোনো লাভ হচ্ছে না।– বরং সামাজিকভাবে তিনি হাসির পাত্রে পরিণত হচ্ছেন। আমিও ধরেই নিচ্ছি। তিনি বিড়ালের কথা বুঝতে পারছেন। এটা ধরে নিয়ে অন্য যুক্তিগুলি পরীক্ষা করছি।

২ ক্যাসেট প্লেয়ারে বিড়ালের কথা টেপ করা ছিল। তাঁকে শোনানো হল। তিনি কিছু বুঝতে পারলেন না। এতে দুটি জিনিস প্রমাণিত হচ্ছে—ক তিনি সত্যি কথা বলছেন। মিথ্যা করে বলতে পারতেন যে, কথা বুঝতে পারছেন। মিথ্যা বললেও আমাদের তা ধরার ক্ষমতা ছিল না। খ বিড়াল হয়তো টেলিপ্যাথিক নিয়মে কথা বলে! যদি তার কথা হয় টেলিপ্যাথিক, তবে ক্যাসেট প্লেয়ারে ধরে রাখা বিড়ালের কথা হবে। অর্থহীন। টেলিপ্যাথিক কথা বলার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ বিড়ালের ভোকাল কর্ড মিয়াও ছাড়া অন্য কোনো শব্দ করতে পারে না। একটিমাত্র শব্দে দীর্ঘ বাক্য তৈরি করা বা কথোপকথন চালানো অসম্ভব।

৩. আফসার সাহেব রাস্তায় হাঁটার সময় কিছু বিড়ালের দেখা পেতেন। তিনি তাদের কোনো কথা বুঝতে পারেন নি। বিড়ালের কথা যদি টেলিপ্যাথিক হয়, তাহলে তাদের কথাও বোঝা উচিত ছিল। আফসার সাহেবকে আমি একটি বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম। তাদেরও দুটি বিড়াল ছিল। আফসার সাহেব সেই দুটি বিড়ালের কথাও বুঝতে পারেন নি।

তাহলে ব্যাপার এই দাঁড়াচ্ছে—আমরা যেখান থেকে শুরু করেছিলাম আবার সেখানেই ফিরে গিয়েছি। এককথায়, আমরা এখন সহজ সিদ্ধান্তে চলে আসছে পারি ৪ আফসার সাহেব বিড়ালের কথা বুঝতে পারেন না। তিনি মনগড়া কথা বলছেন।

কিন্তু ইচ্ছা করলে এই সহজ সিদ্ধান্তে আমরা না-ও যেতে পারি। আমার সিদ্ধান্ত এ-রকম–আফসার সাহেব বিড়ালের কথা বুঝতে পারেন তবে সেই বিড়ালকে হতে হবে মা-বিড়াল এবং তার কিছু বাচ্চা থাকতে হবে। মা- বিড়াল বাচ্চাদের ট্রেনিং দেবার জন্যে ক্রমাগত তাদের নানান জিনিস শেখাবে। এই শেখানোর ব্যাপারটা সে করবে-টেলিপ্যাথিকেলি। বাচ্চারাও একইভাবে মার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। শিক্ষার প্রাথমিক অংশ শেষ হবার পরপর বিড়ালদের এই ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। আফসার সাহেবের মস্তিষ্কের একটি অংশ কোনো এক বিচিত্র কারণে বিড়ালের টেলিপ্যাথিক কথোপকথন ধরতে পারছে। আমার ধারণা, ছোট-ছোট শিশু আছে এমন যে-কোনো বিড়ালের কথাই তিনি বুঝতে পারবেন।

এই অস্বাভাবিক ক্ষমতার সঙ্গে মানুষের পরিচয় নেই বলেই মানুষ এই ক্ষমতা দেখবে ভয়ে এবং বিস্ময়ে। মানুষ এটা সহজে গ্রহণ করতে পারবে না। শেষটায় এই ক্ষমতা আফসার সাহেবকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মানুষ কখনোই অস্বাভাবিক কিছু সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। কোনো মানুষ যদি কপালে তৃতীয় একটি চোখ নিয়ে জন্মায়, তাহলে আমাদের সমাজ তাকে ডাস্ট্রবিনে ছুঁড়ে দেবে। তৃতীয় চোখের জন্যে সেই মানুষটিকে কঠিন মূল্য দিতে হবে, যদিও সেই তৃতীয় চোখের কারণে মানুষটির পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বেড়েছে। তার লাভই হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যাপারটা সেভাবে দেখবে না। মানুষকে উদার ভাবা হলেও মানুষ মোটেই উদার নয়। সে সব সময় দেখে তার গোষ্ঠীস্বর্থ। কাজেই আফসার সাহেবের সামনে খুব খারাপ দিন।

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *