সারা বছর বসে থাকি এই মেলাটি আসবে বলে।
এই মেলাটির অলি গলির ভিড়ের মধ্যে
নতুন বইয়ের গন্ধে ঘ্রাণে, ধুলোবালির ধুসর হাওয়ায়,
হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এই মেলাটি আসবে বলে
আকাশপারের উতল হাওয়ায় ইচ্ছে মতো ঘুড়ি ওড়াই।
বছর বছর এই মেলাটি আসে বলেই স্যাঁতসেঁতে এক ঘরের কোণেও
খুব গোপনে ভীষণ সুখে, স্বপ্নসহ বেঁচে থাকি।
আমার তো আর পুজো-আচ্চা, ঈদ-বড়োদিন নেই,
আমার একটি মেলাই আছে, প্রাণের মেলা,
এই একটি মেলায় মানুষ দেখি কাছের মানুষ,
সাত-নদী-জল সাঁতরে তবু একটুখানি ছুঁতে আসে।
এই মেলাটিই ধর্মকর্ম, ধূপের কাঠি, ধানদুব্বো।
এই একটি পরব, একটি সুখ-ই, নিজের জন্য তুলে রাখি।
শিল্প-মেলায় আগ্রহ নেই, জুয়োর মাঠ, ব্যবসা পাতি,
সন্ধে হলে উৎসবে নেই, ককটেলে নেই।
এই একটি মেলাই একমাত্র।
এই মেলাটিই শৈশব দেয়, কৈশোর দেয়,
ব্রহ্মপুত্র পাড়ের সেসব এঁটেল মাটির আনন্দ দেয়।
এই মেলাটির সারা গায়ে মাতৃভাষা,
মাথার ওপর স্নেহসিক্ত মায়ের আঁচল।
এই মেলাকেই অন্য অর্থে জীবন বলি।
এটিও তুমি কেড়ে নিলে?
স্বদেশহারা স্বজনহারা
সামান্য এই সর্বহারার সবটুকু সুখ
বুকের ওপর হামলে পড়ে আঁচড়ে কামড়ে
এক থাবাতে ছিনিয়ে নিতে পারলে তুমি ভারতবর্ষ?
দাঁত বসিয়ে কামড় মেরে ছিঁড়েই নিলে যা-ছিল-সব?
হৃদয় বলতে কিছুই কি নেই ভারতবর্ষ?
হৃদয় তবে কোথায় থাকে ভারতবর্ষ?