পাহাড়ের গভীরে: বেঁচে থাকার গল্প
প্রথম অধ্যায়: অজানা অরণ্যে
একটা বিশাল পাহাড়। আকাশছোঁয়া উচ্চতা। চারদিকে ঘন জঙ্গল, যেখানে সূর্যের আলো পর্যন্ত পৌঁছায় না। পাতা আর শ্যাওলার গন্ধ মিশে আছে বাতাসে। ঝুলন্ত লতা আর পাখিদের অদ্ভুত ডাক যেন এই অরণ্যকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। পাহাড়ের পায়ের কাছে বয়ে চলেছে একটি সরু নদী, যার জল শান্ত হলেও গভীর এবং রহস্যে ঘেরা। নদীর পাশে একটি গভীর পুকুর, যেখানে চাঁদের আলো পড়লে মনে হয় যেন সোনা ঝলসে উঠছে।
এই নির্জন জঙ্গলের মাঝেই আছে একটুকরো ছোটো ক্ষেত আর তার পাশেই একটি পুরনো কুঁড়েঘর। এই ঘরে বাস করে তিনটি পরিবার। কুঁড়েঘরের চালা আর দেওয়াল দেখে মনে হয় যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে, অথচ এখানেই বছরের পর বছর কাটিয়েছে পল্লব, রাজীব, আর রামলোচনের পরিবার।
দ্বিতীয় অধ্যায়: পাহাড়বাসী
পল্লব, রাজীব আর রামলোচনের জীবন একদম সহজ নয়। প্রকৃতিই তাদের একমাত্র ভরসা। পল্লবের পরিবার সেই ছোট্ট ক্ষেত চাষ করে কোনো রকমে খাবারের যোগান দেয়। রাজীব বন থেকে ফলমূল আর শিকারের মাধ্যমে পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করে। রামলোচন নদীর ওপর নির্ভরশীল—নৌকায় করে কাঠ আর বনজ সামগ্রী গ্রামে পাঠিয়ে যা পায়, তাই দিয়ে সংসার চলে।
তাদের জীবনে বাইরের পৃথিবীর খুব কম যোগাযোগ। কিন্তু তাদের মাঝে গভীর বন্ধুত্ব, যা প্রতিকূল পরিবেশেও তাদের টিকিয়ে রেখেছে।
তৃতীয় অধ্যায়: ঝড়ের দিন
একদিন আচমকা আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল। প্রচণ্ড ঝড় আর বৃষ্টি শুরু হলো। নদী উত্তাল হয়ে উঠল, আর জঙ্গলে যেন অন্ধকার নেমে এলো। সেই রাতেই পল্লবের ছোট ছেলে রণজয়ের প্রচণ্ড জ্বর হলো। ওষুধপত্রের অভাবে পল্লবের স্ত্রী রত্না অসহায়ভাবে কেঁদে উঠলেন।
“এখন কী হবে? এত দূরে ডাক্তার কোথায় পাবো?” পল্লব দিশেহারা হয়ে গেলেন।
রাজীব আর রামলোচন একত্রে সিদ্ধান্ত নিল, “কেউ না কেউ এই মুহূর্তে গ্রামে যাবে।” নদী তখন উত্তাল, কিন্তু রাজীব ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় চেপে রওনা দিল।
চতুর্থ অধ্যায়: বেঁচে থাকার লড়াই
তিনদিন পর রাজীব ফিরে এলো। তার হাতে কিছু ওষুধ আর শুকনো খাবার। ততদিনে রণজয়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। রাজীবের আনা ওষুধ আর খাবারের জোরে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে লাগল রণজয়।
সেই মুহূর্তে তিন পরিবার বুঝল, প্রকৃতির বিপদ যতই বড় হোক না কেন, একে অপরের প্রতি বিশ্বাস আর সাহায্যই তাদের বেঁচে থাকার মূল মন্ত্র।
পঞ্চম অধ্যায়: নতুন শুরু
ঝড়ের ক্ষতি ছিল বিপুল। পল্লবের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেল, নদীর পাড় ভেঙে রামলোচনের নৌকা ডুবে গেল। রাজীবের ফলমূল জোগাড়ের জায়গাগুলোও বিধ্বস্ত। তিনজন একসঙ্গে বসে ভাবতে লাগল, “এভাবে আর চলতে পারে না। আমাদের অন্য কিছু করতে হবে।”
তারা নতুন একটা পরিকল্পনা করল। পাহাড়ের এক কোণে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় ফসল ফলানোর চেষ্টা শুরু হলো। রাজীব শিকারের বদলে মাছ ধরা শুরু করল। রামলোচন বনের কাঠের বদলে নানান বনজ পণ্য বিক্রির ব্যবসা করল।
ষষ্ঠ অধ্যায়: পাহাড়ের গর্ব
কয়েক বছর পর তিনটি পরিবারের জীবন বদলে গেল। কুঁড়েঘরের জায়গায় তৈরি হলো শক্ত মাটির বাড়ি। ফসলের ক্ষেতগুলো এখন সবুজে ভরা। রণজয়ও এখন বড় হয়ে পড়াশোনা করছে।
পাহাড়ের সেই অন্ধকার কোণটি যেন ধীরে ধীরে আলোকিত হয়ে উঠল। বাইরের মানুষও তাদের পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস দেখে বিস্মিত। এই পরিবারগুলো প্রমাণ করল, প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব যদি একতাই থাকে।