Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নাইরে বেলা || Sabitri Das

নাইরে বেলা || Sabitri Das

নাইরে বেলা

অফিস থেকে ফিরে মুখ-হাত ধুয়ে বারান্দায় বসে চা-খাওয়াটা নীতার বরাবরের অভ্যাস । এই সময়টুকু একান্তই ওর নিজস্ব।
বারান্দার ঠাণ্ডা হাওয়ায় সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ঘণ্টা খানেক বারান্দায় বসাটুকুই তার বিলাসিতাই বলো আর যাই বলো!সকাল থেকে ধকল তো আর বড়ো কম যায় না।
এখন তো অফিস থেকে ফিরে চা টুকু খেতে না খেতেই সন্ধ্যা! সূর্য ডুবতে তর নেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে। ছোটোদিনের বেলা কী সাধে বলে! বাইরের কোন কাজটাই বা করা যাচ্ছে এখন!
মা যাবার পর থেকে বড়ো একা লাগে।
এক একদিন তো রাতের খাবারটা পর্যন্ত খেতেও ইচ্ছা করে না নীতার।
সত্য কে মেনে নিতেই হয়। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়।
বাবা মারা যাবার পর চাকরিটা পেতে সেই যে সংসারের জোয়ালটা ঘাড়ে চেপে বসল, নামাবার অবসর হলো না আর!
সুশান্তর সঙ্গে বিয়ের দিনক্ষণ পাকা হওয়ার মুখেই বাবার হার্ট-অ্যাট্যাক। সে সময়টা কি টানাপোড়েনই না গেছে! অনেক করেছে সুশান্ত।এ সংসারে তার ঋণ বড়ো কম নয়!
হার্ট অ্যাট্যাকের চারদিনের মাথায় বাবার চলে- যাওয়াটা নীতার পুরো জীবনটাকেই বদলে দিলো একেবারে। বোন দুটো তখনো স্কুলে পড়ছে। নীতাই তখন সংসারের বল-ভরসা,তাই নীতার বিয়েটা হোক মা চাইলেন না। বোনদের পড়া-শোনা ,বিয়ে সম্পন্ন হলো যখন , মা বললেন-” এতদিনে আর লোক হাসিয়ে কাজ নেই বাপু! ”
বড়ো একা লাগে এখন ! বোনদের বিয়ের পরও সুশান্ত কতদিন বিয়ের কথা বলেছে।এখন আর বলে না! সেসব দিনের কথা মনে হলে বুক ঠেলে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে চায়। বড়ো স্বার্থপর মনে হয় নিজেকে! সুশান্ত কী এখনো তার অপেক্ষায় আছে ,কে জানে!
হেমন্তের বেলা। বড়ো স্পর্শকাতর দিনগুলো ! জীর্ণতায় ঢলে পড়ার পালা। ঝুপ করে কখন যে সন্ধ্যা নেমে আসবে বলা যায় না। সুশান্তর চাকরীর শেষ বছর।সুশান্ত বড়ো একা হয়ে যাবে এরপর।

নিজের মনেই হেসে ওঠে নীতা, একা কে নয়,সবাই তো একা! বাস্তবিক একা।
অদৃশ্য নিয়ন্তার লেখা চিত্রনাট্য অনুযায়ী কেবলই অভিনয় করতে করতে জীবন ক্রমে এগিয়ে চলে তার গন্তব্যের দিকে।
মানুষ যে একা ,একান্তই একা! বহুজন পরিবেষ্টিত জীবনের মাঝে সুখ আর দুঃখের হাসি কান্নার রঙ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে জীবনের পরতে পরতে, বিশেষ কয়েকজনের উপস্থিতির কারণে এই সত্য প্রকট হয় না,হতে পারে না।
কখনো কখনো যে একাকীত্ব বোধ অনুভূত হয় সেই বোধটুকু তার সাময়িক, কেননা তার একাকীত্ব বোধের কারণটির সমাধান হলেই সে এই একাকীত্ব বোধ কাটিয়ে ওঠে।

মানুষের জীবনে যখন কোনো একটা সত্ত্বা প্রবল হয়ে ওঠে ,ছাপিয়ে যায় অন্য সকল কিছুকে ,তখন তাকে অবরুদ্ধ করে প্রবল বেগে অস্বীকৃতি র আঁধারে নিক্ষেপ করতে হয়।মানুষ বড় অসহায়,নীরব বেদনায় অন্তরীণ হয় জীবন বোধ।আত্মার আকুতি কে অস্বীকার করে স্বীকৃতি দিতে হয় সংজ্ঞাত সম্পর্ক কে।ব্যথা বিষে নীলকন্ঠ হয়ে সেই মানুষই প্রকৃতপক্ষে একা হয়ে যায়।
তবুও একা হয়েও যেন একা নয়! শেষ গন্তব্যে একাই যাওয়া তবুও তো কয়েকজনের উপস্থিতির প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে ওঠে।

বড়ো অবিচার করেছিল নীতা।বুকের ভেতর কেবলই যে বেজে চলেছে –
“আর নাই রে বেলা, নামলো ছায়া ধরণীতে।
এখন চল রে ঘাটে কলসখানি ভরে নিতে। “

মনটা বড়ো অস্থির হয়ে উঠেছে । কী করবে নীতা! কাল সারাটারাত জেগে কাটিয়েছে। সকাল থেকেই অস্থিরতা বাড়ছে বই কমছে না। যা করার অতি দ্রুতই করতে হবে, বেলা ফুরিয়ে আসার আগেই। হেমন্তের জীর্ণ বেলা ঢলে পড়লো বলে, সন্ধ্যা নামতে আর দেরি কোথায়!
দিনান্তের শীতঘুম নেমে আসার আগেই সে যাবে,যাবে সুশান্তর কাছে। কিছুই আর দেবার নাই এই নিঃস্ব -রিক্ত জীবনে তবুও যাবে! নাই বা হলো কিছু পাওয়া ভালোবাসাটুকুই না হয় রইলো তাদের রুক্ষ জীবনে গ্রীষ্মের ছায়া হয়ে। গিয়ে বলবে- ‘জীবনের ঘড়ি বড়ো তাড়াতাড়ি চলছে, এসো গন্তব্যে যাওয়ার আগেই কটাদিন অন্তত একসাথে কাটাই! পরস্পরের ভালোবাসাই না হয় পাথেয় হোক আমাদের শেষ বেলায়।’ দ্রুত পা চালায়, সন্ধ্যা নামার আগেই পৌঁছাতে হবে তাকে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *