দুর্গার জাত
ঘুম থেকে উঠে সকালে, চায়ে চুমুক দিতে দিতে, মেসেঞ্জারে বন্ধুদের গুডমর্নিং জানানো মালতির একটা অভ্যাস। আজও সেরকম করতে গিয়ে, একটা মেসেজ পড়ে সকালের নরম মনটা একেবারে নোংরা-অপবিত্র হয়ে উঠল।
একজন লিখেছে, অনেকের একাউন্ট হ্যাক হচ্ছে, কেউ যদি আমার নামে আপনাকে কোন রকম অশ্লীল কোন ছবি বা কথা লিখে পাঠায় তাহলে বিশ্বাস কোরো না। এমনটা তোমাকে নিয়েও অন্য কেউ কাউকে পাঠাতে পারে, তুমি দেখতে পাবে না, তুমি তা জানতেও পারবে না। কিন্তু অন্যরা সকলে দেখে ভাবতে পারে, তুমিই পাঠিয়েছো।
দিন দিন কোন দিকে যাচ্ছি আমরা, মালতি ভাবল। প্রায় প্রতিদিনই দেশ জুড়ে ধর্ষণের সংবাদ।
তারপর এই মেসেঞ্জারেও যদি অশ্লীলতা শুরু হয়!
মোবাইল বন্ধ করে সংসারের কাজে মন দিতে চাইল সে । কিন্তু বিক্ষুব্দ মনটা কিছুতেই সে শান্ত করতে পারছিল না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বারবারই
মেসেঞ্জারের কথাটা তার মনে পড়ে যাচ্ছিল।
সত্যিই যদি তার নামে কেউ অশ্লীল কথা লিখে অন্যকে পাটায় , কিংবা কোন অশ্লীল ছবি পোষ্ট করে তার বন্ধুদের? মালতি আর ভাবতে পারছিল না। তার স্বামী যদি এসব কথা জানতে পারে, তাহলে চিরতরে ফেসবুক আর মেসেঞ্জার করা বন্ধ হয়ে যাবে।
সব কাজকর্ম সেরে খাওয়া-দাওয়ার পর দুপুরে ঘন্টাখানেক না ঘুমালে সে পারে না। আজও সে সেরকম ঘুমালো।
কিন্ত, ঘুমের মধ্যে দেখল, তার নিজের নোংরা অশ্লীল ছবি( নেকেড পিকচার) কারা যেন সারা দেওয়াল জুড়ে সেঁটে দিয়ে গেছে।
অস্বস্থি নিয়ে ঘুম ভাঙল তার। দেখল, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। পাশের বাড়ির শাঁখের আওয়াজ কানে এল তার। সে বিছানা ছেড়ে উঠে, হাত মুখ ধুয়ে নিজেও সন্ধ্যা দিল। কিন্তু তাতেও মনটা পবিত্র হলো না যেন। সকালের সেই মেসেজ, তারপর দুপুরের স্বপ্ন সব মিলে মিশে মনের ভিতরটা অপবিত্র করে তুলেছে তার।
মালতি ভাবল, আর সে ফেসবুক মেসেঞ্জার করবে না কোনদিন। হঠাৎ তার মনে পড়ল, ফেসবুক বন্ধু শিবনাথের কথা। মেসেঞ্জারে তাকে সব কথা খুলে লিখল।
সব পড়ে শিবনাথ লিখল ‘ডোন্ট অরি’। সব রিউমার। দেখ, ওই লোকটাই হয়তো তোমাকে অশ্লীল কোন আবেদন জানাতে চাইছে। বলেই সে কি তার হাসি – হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ…..
মালতি তাকে লিখল, ভারী অসভ্য তো আপনি!
মনটা তার অনেকটা হাল্কা হল, শিবনাথের সাবলীল হাসির আওয়াজ শুনে।
মনে মনে বলল তাকে , আমি কি ডরাই সখা, কামুক অসুরে?
আমরা সব দুর্গার জাত। কার ভয়ে ফেসবুক করা বন্ধ করব?