ঘরেতে লক্ষ্মী এলো
“আহ রথীন,এই তো ঠেকে এলি,আরেকটু আড্ডা দেই,বোস।”
‘নারে ভাই,উঠি-ভর সন্ধ্যায় পোয়াতি বউমা একা ঘরে আছে।সন্ধ্যা দেবো ,সময়ে একটু ঔষধ,টিফিন যদি না দেই অসুস্থ বৌমাকে, এই বুড়ো বয়সে পাপ হবে ভাই’বলে উঠে দাঁড়ালো তাদের বন্ধু রথীন।
‘রঞ্জন বলল কিন্তু বন্ধুরে তোরও তো বয়স বাড়ছে এতো চাপ নিস না ‘।
‘না না চাপ নয়,একটু শরীর চালনা আখেরে আমারই লাভ তাছাড়া ছেলেটা হাড়ভাঙা খাটুনি সেরে ফেরে সেই রাত এগারটা।যতদিন পারি সংসারটাকে ঢাল হয়ে না হয় রক্ষা করি”-বলে পরিতৃপ্তির হাসি হাসলো সত্তর ঊর্ধ বৃদ্ধ তাদের শুভাকাঙ্খি বন্ধুটি।
বাল্যবন্ধু প্রভাত বললো “তুই নমস্যরে ,গিন্নি মারা গেলো এক বছরও হয়নি।এতখানি মনের জোরে যেভাবে সংসার বুকে আগলে,বৌমার খেয়াল রাখিস, প্রণাম তোকে।”
চার পাঁচ জন বয়স্ক বন্ধু শীত হোক কি গ্রীষ্ম বা বর্ষা রেল পাড়ের এই বট তলায় চা দোকানের লাগোয়া বেদীটায় বসে ঘন্টা খানেক নানা আড্ডা গল্প গুজবে জীবনে বেঁচে থাকার রসদ টুকু সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরে।এই চেনা ছবির খুব একটা অদলবদল হয়নি বিগত তিন দশকেও।লকডাউন তাদের মুষড়ে দিলেও পরস্পরকে তারা ফোনে যোগাযোগ রাখতো।প্রায়শই শোনা যায় একাকিত্ব ঘর বন্দি জীবন বাড়ির অনেক পৌঢ় সদস্য-সদস্যা দের প্রাণ কেড়েছে তবু এনাদের বাঁচার ইচ্ছেটা অনেকখানি বাড়িয়েছে সুস্থ বন্ধুত্ব যোগাযোগ।’
‘আমার নাতনি হয়েছে’- আনন্দে সবাইকে ফোনে জানিয়েছে রথীন।খুশিতে বলেই চলেছে ”জানিস,বাচ্চাটার একদম গিন্নির মুখ বসানো’।
চার বন্ধু হঠাৎ রথীনের বাড়িতে নাতনি দেখতে হাজির।বহুদিন পর একজোট হয়ে বৈকালিক আড্ডায় তারা গদগদ ।সকলকে দেখে রথীন গর্বে বললো ‘দেখ দেখ আমার ঘর আলো করে যেন সাক্ষাৎ লক্ষ্মীমা হাজির”।