Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

পর্ব- ৫

ভীষ্ম শান্তনুর প্রথম সন্তান হওয়া সত্বেও তিনি রাজা নন। তিনি ব্রহ্মচারী, অথচ গৃহস্থের মতো ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুরকে পুত্রস্নেহে পালন করেছেন। কোনদিন কোনো দুর্বল মুহুর্তে কি ভীষ্মের নিজের জন্য করুণা হয়নি? তিনি বলবান, বীর্যবান, বুদ্ধিমান হওয়া সত্বেও তাকে ব্রহ্মচর্য্য পালন করতে হচ্ছে। সে সব একান্তই মনের অন্তঃস্থলের কথা, যা জঠরের মধ্যে পাক খেয়ে জঠরেই নিমজ্জিত থাকে। বাইরে বের হ’বার আগেই মহামতি তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন।

যে কথা হচ্ছিল- জ্যেষ্ঠপুত্র ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ হওয়ায় এবং বিদুর দাসীপুত্র হওয়ায় পাণ্ডুকেই ভীষ্ম যথাসময়ে রাজ্য অভিষেক করান। গান্ধার রাজকন্যা গান্ধারীকে হস্তিনাপুর নিয়ে এসে তার সাথে ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ দেন। পাণ্ডুকে কুন্তীভোজের কন্যা কুন্তীর সাথে, এবং মদ্ররাজকন্যা মাদ্রীর সাথে পাণ্ডুর দ্বিতীয় বিবাহ দেন। ধৃতরাষ্ট্রের শতপুত্রকে আমরা ‘কৌরব’ বলে জানি। আর পাণ্ডুর পাঁচ পুত্রকে আমরা ‘পঞ্চপাণ্ডব’ নামে চিনি। এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। অনেক ছলনা, কপটতা, পাণ্ডবদের জতুগৃহে পুড়িয়ে মারার চক্রান্ত, বনবাস, অজ্ঞাতবাস অনেককিছু ঘটে গেছে। এখন এসেছে সেই চরম মুহূর্ত, যে মুহূর্তটাকে ভীষ্ম, দ্রোণ, নারদ, কৃষ্ণ সকলেই এড়িয়ে যাওয়ার অনেক প্রয়াস করেও বিফল হয়েছেন।

স্থান ‘কুরুক্ষেত্র প্রাঙ্গণ’। দুই পক্ষই রণসজ্জায় সজ্জিত। ভীষ্ম মনে মনে পাণ্ডুপুত্রদের জয় কামনা করলেন। তিনি আজ বড় অসহায়, কারণ তিনি দাঁড়িয়ে আছেন কৌরবপক্ষে। এই যুদ্ধে তাঁকে তাঁর প্রিয় পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে হবে। দুরাচারী দুর্যোধন আর তার অন্ধ পিতা ধৃতরাষ্ট্রের পক্ষে থেকে তিনি পিতাকে দেওয়া বাক্য এবং কুরুবংশের অন্নের মূল্য চুকিয়ে যাচ্ছেন। কুরুবংশের ধ্বজা ঊর্ধ্বগামী রাখার চেষ্টা করে চলেছেন। তিনি এই ধর্মযুদ্ধে অধর্মের পক্ষ নিলেন! ভীষ্ম নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজেকেই ধিক্কার জানাতে লাগলেন। যুধিষ্ঠির শত্রুসেনাদের ভিতর দিয়ে একেবারে নিরস্ত্র হয়ে ভীষ্মের কাছে আসলেন, এবং তিনি ভীষ্মের পায়ে প্রণাম করে বললেন,
– ‘পিতামহ আমি আপনার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবো, আপনি আমাকে অনুমতি দিন, এবং আশীর্বাদ করুন।’

ভীষ্ম বললেন,- ‘ধর্মরাজ আমি তোমার এ’হেন আচরণে অত্যন্ত প্রীত হয়েছি। তুমি যুদ্ধ করো, তোমার জয় নিশ্চিত, কারণ তুমি ধর্মের সাথে আছো। মানুষ অর্থের দাস, কিন্ত অর্থ কারো দাস নয়। কৌরবগণ অর্থ দিয়ে আমাকে বেঁধে রেখেছে, তাই ক্লীবের ন্যায় তোমাকে বলছি- আমি পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করতে পারি না। এ ভিন্ন তুমি আমার কাছে কি চাও বলো। আমার শুভকামনা সবসময় তোমাদের সাথে আছে। স্বয়ং বাসুদেব কৃষ্ণ যাদের পক্ষে রয়েছেন তাদের জয় পূর্বেই ঘোষণা হয়ে গেছে। তুমি নির্দ্বিধায় যুদ্ধ করে যাও।’

যুধিষ্ঠির বললেন- ‘হে পরম পূজনীয় পিতামহ, আপনি কৌরবদের জন্য যুদ্ধ করুন, কিন্তু পাণ্ডবদের হিতার্থেও মন্ত্রণা দিন- এই আমার প্রার্থনা।’
ভীষ্ম বললেন- ‘আমি তোমার শত্রুদের পক্ষে যুদ্ধ করব, তুমি আমার কাছে কি প্রকার সাহায্য চাও বলো?’
যুধিষ্ঠির বললেন,- ‘পিতামহ, আপনি অপরাজেয়, যদি আপনি সত্যিই চান এই যুদ্ধে পাণ্ডব জয়লাভ করুক, তবে বলুন আপনাকে কি উপায়ে জয় করব? আপনাকে যুদ্ধে জয় করতে পারে এমন কোনো মহারথী ভূ-ভারতে নেই।’
ভীষ্ম বললেন- ‘হে পাণ্ডুপুত্র তুমি ঠিকই বলেছ, আমাকে পরাজিত করতে পারে এমন যোদ্ধা এখানে দেখতে পাচ্ছি না। তাছাড়া এখন আমার মৃত্যুকালও উপস্থিত হয়নি। তুমি পরে আবার আমার কাছে এসো। এখন তুমি নির্দ্বিধায় যুদ্ধ করো।’

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *