Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কাকাবাবু ও বজ্র লামা || Sunil Gangopadhyay » Page 7

কাকাবাবু ও বজ্র লামা || Sunil Gangopadhyay

বিজনবাড়ি থানায় এসে তিন-চারজন কনস্টেবল আর একজন সাব ইনসপেক্টরকে পাওয়া গেল শুধু। অফিসার-ইন-চার্জ অ্যালবার্ট গুরুং-এর আজ ছুটি। তিনি লিটুল রঙ্গিত নদীতে মাছ ধরতে গেছেন।

ও-সির সঙ্গেই কথা বলা দরকার, তাই কাকাবাবু ক্যাপটেন নরবুকে বললেন, চলল, নদীর ধারে।

একটা ঝুপসি গাছের তলায় তিন-চারজন সঙ্গী ও অনেক খাবারদাবার নিয়ে বেশ সাজিয়ে বসেছেন দারোগাবাবু। নদীর জলে দুখানা ছিপ ফেলা। আজ আকাশে মেঘের চিহ্ন নেই, সুন্দর ঝকমকে দিন। বাতাসে সামান্য ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা ভাব।

পুলিশের লোকদের দেখলেই চেনা যায়। পাঁচজন লোকের মধ্যে কোন যে অ্যালবার্ট গুরুং তা আর বলে দিতে হল না। রীতিমত পালোয়ানদের মতন তাঁর চেহারা, দাড়ি-গোঁফ কিছু নেই, খাকি প্যান্ট ও একটা হালকা সাদা রঙের জ্যাকেট পরে তিনি একটা শতরঞ্চির ওপর আধ-শোয়া হয়ে আছেন।

তাঁর পাশে একজন লাল সোয়েটার-পরা লোক একমনে সিগারেট টানতে টানতে চেয়ে আছে জলের দিকে। তার দিকে এক পলক তাকিয়েই কাকাবাবু চমকে উঠলেন। চা বাগানের মালিক ফিলিপ তামাং!

অ্যালবার্ট গুরুং কাকাবাবু ও ক্যাপটেন নরবুকে আসতে দেখে ভুরু কুঁচকে বিরক্তভাবে তাকালেন।

কাকাবাবু কাছে এসে যথাসম্ভব বিনীতভাবে বললেন, নমস্কার। অসময়ে এসে আপনাকে বিরক্ত করছি, এজন্য দুঃখিত। আপনি ছুটির দিনে মাছ ধরতে এসেছেন, এসময় আপনাকে ডিসটার্ব করা উচিত নয়, কিন্তু আমার দরকারটা খুব জরুরি।

ফিলিপ তামাং কাকাবাবুকে দেখে তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে, চোখ বড় বড় করে বললেন, আরে, মিঃ রায়চৌধুরী? শেষ পর্যন্ত এদিকে এলেন তা হলে?

কী সৌভাগ্য আমাদের। আসুন, আসুন, বসুন।

তারপর তিনি দারোগাকে বললেন, ইনি মিঃ রাজা রায়চৌধুরী। বিখ্যাত লোক। নাম শুনেছ নিশ্চয়ই?

অ্যালবার্ট গুরুং দুদিকে মাথা নেড়ে বললেন, না, শুনিনি? ফিলিপ তামাং তবু মহা উৎসাহের সঙ্গে বললেন, খুব বিখ্যাত লোক, অনেক অ্যাডভেঞ্চার করেছেন। সারা পৃথিবী ঘুরেছেন, দিল্লির অনেক বড় বড় লোকের সঙ্গে এঁর চেনা আছে।

দারোগা অ্যালবার্টের ভুরু কোঁচকানিটা মিলিয়ে গেল। তিনি বললেন, নমস্কার, বসুন।

কাকাবাবু ফিলিপ তামাংকে পছন্দ করেন না, কিন্তু এই সময় লোকটি উপস্থিত থাকায় কিছুটা সুবিধে হল। কাকাবাবু নিজের মুখে নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে পারতেন না, দারোগা অ্যালবার্টও তাঁকে প্রথমে পাত্তা দিতে চাননি।

কাকাবাবু পাশে হাত দেখিয়ে বললেন, ইনি ক্যাপটেন নরবু, এক্স মিলিটারি ম্যান। আমার বন্ধু।

অ্যালবার্ট গুরুং বললেন, আপনারা স্যান্ডউইচ খাবেন? ফ্লাঙ্কে চা-ও আছে।

কাকাবাবু বা ক্যাপটেন নরবু আপত্তি করলেন না। দুজনেরই খিদে পেয়েছে।

ওঁদের চা ও খাবার দেবার পর অ্যালবার্ট গুরুং জিজ্ঞেস করলেন, এবার বলুন, কী ব্যাপার!

কাকাবাবু বললেন, আমি একটা ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাইতে এসেছি। আমার এক ভাইপো, তার আঠেরো বছর বয়েস, তাকে জোর করে একটা মনাস্টারিতে আটকে রেখেছে।

ফিলিপ তামাং বলল, আপনার সেই ভাইপো সন্তুকে? দ্যাট ওয়ান্ডার বয়? দারুণ বুদ্ধিমান! তাকে আটকে রাখল কী করে?

দারোগা অ্যালবার্ট হাত তুলে ফিলিপকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আগে আমাকে সবটা শুনতে দাও! ছেলেটিকে আটকে রেখেছে মানে কি? জোর করে ধরে নিয়ে গেছে?

কাকাবাবু বললেন, না, সেখানে আমরা নিজেরাই গিয়েছিলাম।

দারোগা অ্যালবার্ট বললেন, কোন্ মনাস্টারি? এখানে তো বেশ কয়েকটা আছে?

ক্যাপটেন নরবু বললেন, পিগু মনাস্টারি। জঙ্গলের মধ্যে। ডিংলা ঝরনার ধারে।

দারোগা অ্যালবার্ট চোখ কপালে তুলে বললেন, ওরে বাবা, সেখানে তো কেউ যায় না। কোনও বাইরের লোককে সেখানে ঢুকতেও দেওয়া হয় না! আপনারা গেলেন কী করে?

ক্যাপটেন নরবু বললেন, বর্জ লামা নিজে আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন?

দারোগা অ্যালবার্ট এবার শিস দিয়ে উঠে বললেন, আপনারা বজ্র লামার পাল্লায় পড়েছিলেন? সে যে সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার! তারপর তারপর?

ফিলিপ তামাং জিজ্ঞেস করলেন, সেই মঠে তো তিনশো বছর বয়েসী দুজন লামা আছেন শুনেছি। তাঁদের দেখেছেন?

ক্যাপটেন নরবু বললেন, দুজনকে না, একজনকে দেখেছি। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। প্রাচীন লামা এক জ্যোতির্ময় পুরুষ, তাঁর সর্বাঙ্গ দিয়ে আলো বেরোয়। তিনি চোখ মেলে তাকালে অন্ধকারের মধ্যে বিদ্যুৎ চমকায়। সমস্ত ঘরটা মিষ্টি গন্ধে ভরে যায়। আর কী অপরূপ তাঁর রূপ। একদিকে শিশু, অন্যদিকে মহা বৃদ্ধ। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত।

কাকাবাবু বললেন, সব ম্যাজিক!

অ্যালবার্ট গুরুং আর ফিলিপ তামাং দুজনেই কাকাবাবুর দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, ম্যাজিক মানে?

কাকাবাবু বললেন, অন্ধকারের মধ্যে বিদ্যুৎ-চমক আর নানারকম আলোর খেলা, সবই ইলেকট্রিক আলোর কায়দা?

ক্যাপটেন নরবু খানিকটা আহতভাবে বললেন, এটা তুমি কী বলছ রাজা? জঙ্গলের মধ্যে ইলেকট্রিক আসবে কোথা থেকে। ওখানে তো বিদ্যুতের লাইনই যায়নি। মনাস্টারিতে শুধু মোমবাতি জ্বলছিল, মনে নেই?

কাকাবাবু বললেন, ইলেকট্রিকের কানেকশান না থাকলেও গভীর জঙ্গলের মধ্যে ইলেকট্রিকের আলো জ্বালা যায়। সিনেমার শুটিংগুলো হয় কীভাবে? জেনারেটরে আলো জ্বলে।

দারোগা অ্যালবার্ট বললেন, জেনারেটর?

কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ। একসময় আমি গোঁগোঁ যান্ত্রিক আওয়াজ শুনেছি। জেনারেটরের ওপর অনেকগুলো কম্বল চাপা দিলে আওয়াজটা কম হয়। কিন্তু একেবারে লুকনো যায় না! নরবু, তোমাকে সকালেই বলেছি না, মড়ার মাথার খুলি থেকে যদি আলো বেরুতে নিজের চোখেও দ্যাখো, তা হলেও বিশ্বাস করবে না। নিশ্চয়ই সেটা কোনও কারসাজি!

ক্যাপটেন নরবু বললেন, আর ধূপকাঠি থেকে যে ফুলঝুরির মতন রঙিন আলোর ফুলকি বেরুতে লাগল, সেটাও ইলেকট্রিক?

কাকাবাবু বললেন, ফুলঝুরির মতন রঙিন আলোর ফুলকি বেরুতে দেখলে বোঝা উচিত, সেটা ফুলঝুরিই, অন্য কিছু না। খুব সাধারণ ব্যাপার। কিছু ধূপকাঠির ওপর দিকে শুধু ধূপের মশলা আর মাঝখান থেকে ফুলঝুরির মশলা দিয়ে তৈরি করলেই সেই ধূপকাঠি কিছুক্ষণ ধোঁয়া দেবার পর ফুলঝুরি হয়ে যাবে।

ক্যাপটেন নরবু বললেন, রাজা, আমি তোমার সব কথা মানতে পারছি না। আমি প্রাচীন লামাকে দেখেছি, তিনি সত্যিই এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ, কোনও সাধারণ মানুষের ওরকম চেহারা বা রূপ হতেই পারে না। তুমি বলতে চাও, সবটাই ম্যাজিক আর কারসাজি?

কাকাবাবু বললেন, প্রাচীন লামা সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। তিনি কালজয়ী মহাপুরুষ হতেও পারেন। আর-একবার ভাল করে তাঁকে দেখতে হবে। কিন্তু বজ্র লামা যে আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেবার জন্য নানা রকম আলোর ভেলকি দেখাচ্ছিলেন, তাতে আমার কোনও সন্দেহই নেই!

ফিলিপ তামাং বললেন, বাঙালিবাবুরা অনেক কিছুই অবিশ্বাস করেন। আমি দেখেছি তো অনেক। কিন্তু বজ্র লামার যে নানা রকম অলৌকিক ক্ষমতা আছে, তা অনেকেই মানে। তিনি একবার ছুঁয়েই অনেক মানুষের রোগ সারিয়ে দেন।

ক্যাপটেন নরবু নতুন করে উৎসাহ পেয়ে বললেন, নিশ্চয়ই! নিশ্চয়ই! এই সন্তুরই তো সাঙ্ঘাতিক অসুখ হয়েছিল, বজ্র লামা তাকে চোখের নিমেষে সারিয়ে দিলেন। কী রাজা রায়চৌধুরী, সেটা কি তুমি অস্বীকার করতে পারো?

কাকাবাবু ধীর স্বরে বললেন, না, সেটা অস্বীকার করছি না। তবে লোককে হিপনোটাইজ করাকে ঠিক অলৌকিক ক্ষমতা বলে আমি মানতে রাজি নই। এই ক্ষমতা কেউ কেউ আয়ত্ত করে। শুধু সাধু-সন্ন্যাসী নয়, কোনও-কোনও ডাক্তারও এটা পারে। মেসমার নামে একজন ডাক্তার এইভাবে রুগিদের চিকিৎসা করতেন, তা জানো না বোধ হয়। সেইজন্যই এই পদ্ধতির নাম মেসমেরিজম।

ক্যাপটেন বললেন, সম্মাহন করে কোনও রোগ পার্মানেন্টলি সারিয়ে দেওয়া যায়?

কাকাবাবু বললেন, তা যায় না। কিন্তু রুগির মনে বিশ্বাস জন্মিয়ে দেওয়া যায় যে, সে একদম সেরে গেছে। সেই বিশ্বাসটাই বড় কথা। দার্জিলিং-এ বীরেন্দ্র সিং নামে একজন লোককে দেখে আমার এই কথা মনে হয়েছিল। মানুষের হাতের মধ্যে বুড়ো আঙুলটাই আসল। অন্য কোনও প্রাণী বুড়ো আঙুলের ব্যবহার জানে না, তাই তারা কোনও জিনিস হাত দিয়ে ধরতে পারে না। একটা বাঁদর কেন হাত দিয়ে লাঠি ধরতে পারে না? কেন লাঠি দিয়ে অন্যকে মারতে পারে না। কারণ ওরা এখনও বুড়ো আঙুলের ব্যবহার শেখেনি। বীরেন্দ্র সিং-এর এক হাতে শুধু বুড়ো আঙুল আছে, অন্য আঙুল নেই। সেই হাতে একটা গ্লাভস পরে নিলে তারপর বুড়ো আঙুলের সাহায্যে একটা গেলাস কিংবা লাঠি ধরা অসম্ভব কিছু নয়। বজ্র লামা ওই বীরেন্দ্র সিংকে হিপনোটাইজ করে এই বিশ্বাসটাই জন্মে দিয়েছেন। সেটা খারাপ কিছু না?

ক্যাপটেন নরবু বললেন, কিন্তু সন্তুর অত জ্বর ছিল, চোখের নিমেষে কমিয়ে দিলেন বজ্র লামা, আমরা ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলাম, সেটাও সম্মোহন?

কাকাবাবু বললেন, চোখের নিমেষে কমাননি। কিছুটা সময় লেগেছে। সেইজন্যই অত সব মন্ত্র পড়ছিলেন। বিজ্ঞানের মধ্যেও অনেক ম্যাজিক আছে, তুমি ক্রোসিন বলে একটা ওষুধের নাম শুনেছ? তোমার একশো চার-পাঁচ ডিগ্রি জ্বর হলেও ক্রোসিন ট্যাবলেট দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বর একেবারে কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আজকাল সাধু-সন্ন্যাসীরাও এইসব ওষুধ ব্যবহার করতে শিখে গেছে। অনেক সময় ট্যাবলেটগুলো গুঁড়ো করে অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে নেয়। তবে সন্তুর মাথাব্যথাটা বজ্র লামা সম্মোহনে ভুলিয়ে রেখেছেন।

দারোগা অ্যালবার্ট অস্থিরভাবে বললেন, আপনারা তর্ক করছেন, আমার সব ব্যাপারটা গুলিয়ে যাচ্ছে। আসল ব্যাপারটা কী? আপনাদের সঙ্গে একটি ছেলে ছিল, তাকে আটকে রাখা হয়েছে?

কাকাবাবু কিছু বলার আগেই ক্যাপটেন নরবু ফস করে বলে দিলেন, সে। নিজেই আসতে চাইছে না। আজ সকালে তাকে কত সাধাসাধি করা হল, সে

আসতে চাইল না।

দারোগা অ্যালবার্ট হেসে বললেন, সে নিজেই আসতে চাইছে না? তা হলে সেও বোধ হয় লামা হতে চায়? তবে আর তাকে জোর করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে কী হবে?

কাকাবাবু গম্ভীরভাবে বললেন, আমার ভাইপোকে সম্মোহিত করা হয়েছে। তার কথাবার্তা স্বাভাবিক নয়, তার চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক নয়। এইভাবে তাকে আটকে রাখা বেআইনি। আমি আপনার সাহায্য চাইছি, পুলিশফোর্স নিয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করতে হবে। সে ওখানে বেশিক্ষণ থাকলে তার ব্রেনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

দারোগা অ্যালবার্ট বললেন, কিন্তু এব্যাপারে তো আপনাকে সাহায্য করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কোনও ধর্মস্থানে কি হুট করে পুলিশ পাঠানো যায়? সেটা খুব গোলমেলে ব্যাপার?

ক্যাপটেন নরবু বললেন, আমি সেইজন্যই সাজেস্ট করছিলাম, ছেলেটি ওখানে দু তিনদিন থাকুক। তারপর ওর নিজেরই শখ মিটে যাবে। বজ্র লামা ওর কোনও ক্ষতি করবেন না।

কাকাবাবু এক ধমক দিয়ে বললেন, তুমি চুপ করো, নরবু। বজ্র লামা তোমাকেও খানিকটা সম্মোহন করেছেন, তাই তুমি ওঁর হয়ে কথা বলছ।

দারোগা অ্যালবার্ট বললেন, বজ্র লামা আপনার ভাইপোকে আর ক্যাপটেন নরবুকে হিপনোটাইজ করেছেন, আর আপনাকে করতে পারেননি?

কাকাবাবু বললেন, আমাকে সম্মোহন করা সোজা নয়। কারণ, আমি নিজেও ওই ব্যাপারটা এক সময় আয়ত্ত করেছিলাম। উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়েই সেটা বুঝেছিলেন, তাই সরাসরি আমার দিকে বেশি তাকাচ্ছিলেন না। অন্ধকার ঘরে ইলেকট্রিক শক লাগিয়ে আমাকে অজ্ঞান করে দিয়েছিলেন। তার শোধ আমি একদিন নেবই! আমার ভাইপোকে আজই। উদ্ধার করতে হবে। মিঃ অ্যালবার্ট, আপনি আমাকে সাহায্য করবেন না?

অ্যালবার্ট বললেন, কী করে সাহায্য করব, বলুন! আপনিই বললেন, তার বয়েস আঠারো বছর। সে নিজে আসতে চাইছে না। এই অবস্থায় আমি একটা মনাস্টারির মধ্যে কি পুলিশ ঢোকাতে পারি? দুঃখিত, আমার কিছু করবার নেই। এ ব্যাপারে!

কাকাবাবু এবার কোটের পকেট থেকে রাষ্ট্রপতির চিঠিটা বার করে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটা পড়ে দেখুন।

দারোগা অ্যালবার্ট এবার সোজা হয়ে উঠে বসে সসম্মানে রাষ্ট্রপতির চিঠিখানা। পড়লেন। তারপর ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, মাননীয় রাষ্ট্রপতি একটা কাজের জন্য আপনাকে অনুরোধ করেছেন, সেটা বুঝলাম। আপনি একজন ইম্পটন্টি মানুষ। কিন্তু এতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি কোনও নির্দেশ নেই।

কাকাবাবু বললেন, রাষ্ট্রপতির হয়ে যে কাজ করছে, তাকে সাহায্য করা পুলিশের কর্তব্য নয়?

দারোগা অ্যালবার্ট বললেন, আর কী কী সাহায্য চান বলুন? শুনুন, মিঃ রায়চৌধুরী, আপনাকে আমি বুঝিয়ে বলছি। তিব্বতিরা অধিকাংশই খুব ভাল লোক। খুবই ধর্মপ্রাণ ও শান্তিপ্রিয়। এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটা মনাস্টারি আছে, কোথাও কোনও গণ্ডগোল হয় না। স্থানীয় লোকদের সঙ্গেও তাঁদের সম্পর্ক ভাল। কোনও মনাস্টারিতেই পুলিশ নিয়ে যাবার অর্ডার আমাদের নেই। আমাদের এখানে সবাই ভক্তি-শ্রদ্ধা করে। একমাত্র বজ্র লামাকে সবাই। ভয় পায়। শুনেছি, তাঁর নাকি নানা রকম অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। পিণ্ড মনাস্টারিতে বাইরের লোকদের ঢুকতে দেওয়া হয় না, সেটাও ওঁদের নিজস্ব ব্যাপার। বজ্র লামা সেখানে নাকি তিনশো বছরের বৃদ্ধ এক লামাকে লুকিয়ে রেখেছেন। কেন লুকিয়ে রেখেছেন, তা তিনি জানেন। মাঝে-মাঝে তিনি দিল্লিতেও যাতায়াত করেন। শুনেছি, এই নভেম্বর মাসে তিনি বড় বড় লামাদের এক সম্মেলন ডাকছেন এখানে। তখন দলাই লামাকেও নাকি নেমন্তন্ন করে আনবেন। নিশ্চয়ই বিরাট কিছু হবে। তা হলেই বুঝতে পারছেন। এরকম একজন বড়দরের লোকের বিরুদ্ধে হুট করে আপনার কথায় কোনও অ্যাকশন নিতে পারি?

ফিলিপ তামাং এতক্ষণ পর বললেন, বজ্র লামাকে এখানে সবাই ভয় পায়। পুলিশরাও ভয় পায়। এর আগেও শোনা গেছে যে, দু-একটি অল্প বয়েসী ছেলেকে উনি মনাস্টারিতে নিয়ে গেছেন, তারা আর বাইরে আসেনি। এটা গুজবও হতে পারে। তবে এটা ঠিক, উনি ছোট ছেলেদের পছন্দ করেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে উনি ছোট ছেলেদের সঙ্গে ভাব করেন, এরকম অনেকে দেখেছে। উনি নাকি একজন বৌদ্ধ অবতারকে খুঁজছেন?

ক্যাপটেন নরবু বললেন, হ্যাঁ, সেটা আমরাও জানি।

কাকাবাবু বললেন, বস্ত্র লামা সবাইকে এরকম ভয় পাইয়ে রেখেছেন কেন? এটা কি কোনও ধর্মগুরুকে মানায়?

ফিলিপ তামাং বললেন, ওঁর খুব ক্ষমতার লোভ। সবাই ওঁর কথা মানবে, সবাই ওঁকে দেখলেই মাথা নিচু করবে, এটাতেই ওঁর আনন্দ। টাকা-পয়সার নেশার চেয়েও ক্ষমতার নেশা যে অনেক বেশি হয়, তা নিশ্চয়ই জানেন। সারা পৃথিবীতেই তোত কিছু কিছু মানুষ ক্ষমতার নেশায় পাগল হয়ে গিয়ে কত লোকের ওপর অত্যাচার করে, তাই না? তিন শো বছরের এক বৃদ্ধ লামাকে এই বজ্র লামা কোনও মতলবে লুকিয়ে রেখেছেন, কেউ তাঁকে দেখতে পায় না। এটা সত্যি না গুজব, তা তদন্ত করে দেখা উচিত নয়? পুলিশ এ-নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না। সেইজন্যই আমি দার্জিলিং থেকে দু-একজন বড়বড় লোককে এদিকটায় আনতে চেয়েছিলাম!

দারোগা অ্যালবার্ট হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন, মাছ! মাছ!

একটা ছিপ ধরে তিনি টান মারলেন। অমনি একটা মাঝারি সাইজের মাছ ছটফটিয়ে উঠে এল।

তিনি খুশির সঙ্গে বললেন, বাঃ, রঙ্গিত নদীতে এখন ট্রাউট মাছ পাওয়া যাচ্ছে। চমৎকার!

ক্যাপটেন নরবু বললেন, আমিও তা হলে এখানে ছিপ নিয়ে আসব তো?

দারোগা অ্যালবার্ট কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি কি তা হলে এখন বিশ্রাম নেবেন? আপনার জন্য বাংলো ঠিক করে দেব?

কাকাবাবু কড়া চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, মিঃ অ্যালবার্ট গুরুং, আমি রাষ্ট্রপতির দূত হিসেবে আপনাকে অনুরোধ করছি, আমার ভাইপোকে উদ্ধার করার জন্য আপনি আমার সঙ্গে পুলিশ বাহিনী নিয়ে চলুন। যদি আপনি আমার এই অনুরোধ না মানেন, তা হলে আমি সরকারের কাছে আপনার নামে রিপোর্ট করতে বাধ্য হব। তার ফল ভাল হবে না।

দারোগা অ্যালবার্ট বললেন, কী মুশকিল, আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন কেন? মিঃ রায়চৌধুরী, আমি একটা সামান্য থানার দারোগা। ট্রাউট মাছ নয়, চুনো পুঁটি। আমি কি নিজের দায়িত্বে একটা মনাস্টারিতে জোর করে ঢুকতে পারি? পরে যদি এই নিয়ে গোলমাল হয়? আমার ওপরওয়ালার অর্ডার দরকার। দার্জিলিং-এর ডি আই জি না বললে আমি এরকম অ্যাকশান নিতে পারি না। অসম্ভব!

কাকাবাবু বললেন, তা হলে ওপরওয়ালার কাছ থেকে এক্ষুনি অর্ডার আনবার ব্যবস্থা করুন। দরকার হলে আমিও টেলিফোনে কথা বলতে পারি। পুলিশের ওপরমহলের কর্তারা সবাই আমাকে চেনে।

দারোগা অ্যালবার্ট বললেন, তিন দিন ধরে এদিককার সব ফোন খারাপ। দার্জিলিং-এর সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করার কোনও উপায় নেই। একমাত্র কোনও লোক পাঠানো যেতে পারে।

কাকাবাবু বললেন, লোক পাঠান। আমি চিঠি লিখে সব জানিয়ে দিচ্ছি। তাতে আপনার দায়িত্ব অনেক কমে যাবে।

দারোগা অ্যালবার্ট বললেন, দার্জিলিং-এর দিকে ধস নেমে রাস্তা খারাপ। তা ছাড়া আমি যতদূর জানি, ডি আই জি সাহেব আজ সকালেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কালিম্পং থেকে কলকাতায় গেছেন। সুতরাং এখান থেকে লোক পাঠালেও সে কখন অর্ডার নিয়ে ফিরবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যাই হোক, তবু একজনকে পাঠানো যেতে পারে।

ক্যাপটেন নরবু বললেন, আমি বলেছিলাম না, রাজা, দু-তিন দিন অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই!

কাকাবাবু অসহায়ভাবে এদিক-ওদিক তাকালেন।

দু-তিন দিন সমস্ত নষ্ট হবে? ততক্ষণ সন্তু ওই জায়গায় বন্দী হয়ে থাকবে? ফিলিপ তামাং এবার হাতের জ্বলন্ত সিগারেট নদীর জলে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, মিঃ রায়চৌধুরী, একটু আড়ালে আসুন তো। আপনার সঙ্গে আমার একটা প্রাইভেট কথা আছে।

কাকাবাবু প্রথমে একটু অবাক হলেন। কিন্তু আপত্তি করলেন না। তিনি ফিলিপ তামাং-এর সঙ্গে চলে গেলেন খানিকটা দূরে।

সেখানে একটা বড় পাথরের চাঁই, তাকে ঘিরে উঠেছে কিছু লতানে ফুল গাছ। নদীর জলেও এখানে কয়েকটা বড় বড় পাথর পড়ে আছে, সেইজন্য জলস্রোতে ঝরঝর শব্দ হচ্ছে।

ফিলিপ তামাং বললেন, মিঃ রায়চৌধুরী, পুলিশ আপনাকে সাহায্য করবে না। আপনার ভাইপোকে দু-তিন দিনের জন্যও ওই জায়গায় আটকে থাকতে দেওয়া ঠিক হবে না। ওর কোনও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। একে তার আগেই উদ্ধার করতে হবে। এব্যাপারে আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই।

কাকাবাবু কয়েক পলক ফিলিপ তামাং-এর দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে-আস্তে বললেন, আপনি সাহায্য করবেন? কীভাবে?

ফিলিপ তামাং বললেন, পুলিশ সাহায্য করবে না। কিন্তু আমরা গোপনে ওই মনাস্টারিতে ঢুকব। রাত্তিরবেলা। এখানকার নেপালি আর লেপচারা ওই মনাস্টারিতে ঢুকতে ভয় পায়। কিন্তু আমার একজন বিশ্বাসী অনুচর আছে। তার দারুণ সাহস। সেই জগমোহন আর আমি যাব, আপনি সঙ্গে থাকবেন।

কাকাবাবু বললেন, বজ্র লামা সহজে সন্তুকে ছাড়বে বলে মনে হয় না। নিশ্চয়ই পাহারা দিয়ে রাখবে। রাত্তিরবেলা ওখানে ঢুকতে গেলে বিপদের ঝুঁকি

আছে। আপনি শুধু শুধু সেই ঝুঁকি নেবেন কেন?

ফিলিপ তামাং হেসে বললেন, আমি বিপদ গ্রাহ্য করি না। আপনার সঙ্গে একটা অভিযানে যাব, এটাই তো আমার পরম সৌভাগ্য।

কাকাবাবু তবু অবিশ্বাসের সুরে বললেন, শুধু এইজন্য?

ফিলিপ তামাং বললেন, নিশ্চয়ই! এটা কি কম কথা! তা ছাড়া আপনার ওই বুদ্ধিমান ভাইপোটিকে দেখে আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। তার কোনও ক্ষতি হোক, আমি চাই না। আরও একটা কারণ আছে। ওই বজ্র লামার ওপরে আমার রাগ আছে। ওকে একবার শিক্ষা দিতে চাই। আমার হাঁটুতে একটা ব্যথা আছে জানেন তো? অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, তবু সারেনি। শেষ পর্যন্ত ওই বজ্র লামার কাছে গিয়েছিলাম, উনি আমার চিকিৎসা করতে রাজি হননি।

কেন?

কোনও কারণ না দেখিয়েই উনি ভাগিয়ে দিয়েছিলেন। তবে আমার ধারণা, আমি ক্রিশ্চান বলে উনি রাজি হননি। আপনি জানেন কি, উনি চিকিৎসার জন্য টাকা পয়সা নেন না বটে, কিন্তু যাদের উনি সারিয়ে দেন, তাদের প্রত্যেককে আট দশ দিন অন্তর অন্তর এসে ওই বজ্র লামাকে প্রণাম করে যেতে হয়।

হুঁ! সন্তু তো সেরকম প্রণাম করতে আসত না। সেইজন্যই কি উনি সন্তুকে নিজের কাছে রেখে দিতে চান?

আজকাল নতুন করে কেউ লামা হতে চায় না সহজে। ছেলেরা লেখাপড়া শিখে চাকরি করতে চায়। তাই উনি ছোট-ঘোট ছেলেদের জোর করে ধরে নিয়ে যান শুনেছি। সন্তুকে এর পর উনি যদি কোনও গোপন জায়গায় সরিয়ে ফেলেন, তা হলে আপনি আর তার খোঁজ পাবেন না।

কাকাবাবু একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর আস্তে-আস্তে বললেন, এখানকার পুলিশ সাহায্য করতে চায় না শুনেই আমি ঠিক করেছিলাম, আজ রাতে আমি একাই ওই মনাস্টারিতে আবার যাব। আপনি যদি সঙ্গে যেতে চান তো ভাল কথা!

ফিলিপ তামাং খুশি হয়ে বললেন, তা হলে এক কাজ করা যাক, এখন আপনি আমার চা বাগানে চলুন। খানিকক্ষণ বাংলোতে বিশ্রাম নেবেন। এর মধ্যে আমি লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছি বজ্র লামা এখন কোথায় আছেন। জঙ্গলের মনাস্টারিতে সবাইকে যেতে দেয় না বলে তিনি মাঝে-মাঝেই মানেভঞ্জনের কাছে ছোট মঠটাতে এসে থাকেন, সেখানেই ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেন।

কাকাবাবু বললেন, জঙ্গলের মনাস্টারি থেকে আজ তাঁরও চলে আসার কথা একবার বলেছিলেন।

ফিলিপ তামাং বললেন, তা হলে তো সুবিধেই হবে। আমরা যাব শেষ রাত্তিরের দিকে। ওই সময় সবাই গাঢ়ভাবে ঘুমোয়।

ওঁরা দুজন আবার মাছ ধরার দলটির কাছে আসতেই ক্যাপটেন নরবু বললেন, রাজা, আমি কী ঠিক করলাম জানো? এখানকার থানার লোক দার্জিলিং যাবে, সেখান থেকে পুলিশের বড়কতার পারমিশন নিয়ে আসবে, তাতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তার চেয়ে তুমি আর আমি বরং দার্জিলিং চলে যাই এক্ষুনি। তুমি বললে কাজটা সোজা হবে। আমরাই দার্জিলিং থেকে পুলিশ-ফোর্স নিয়ে আসতে পারব। কালকের মধ্যে নিশ্চয়ই ফিরতে পারব।

কাকাবাবু শুনে বললেন, ঠিক বলেছ। খুব ভাল আইডিয়া। আমরাই যাব। চলো, আর দেরি করে লাভ নেই।

ফিলিপ তামাং হকচকিয়ে কাকাবাবুর মুখের দিকে তাকালেন। কাকাবাবু তাঁকে কিছু বললেন না।

তিনি দারোগা অ্যালবার্টকে একটা শুকনো নমস্কার করে বললেন, আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না। আমরাই দার্জিলিং যাচ্ছি। আপনি মাছ ধরুন।

দারোগা অ্যালবার্ট কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, ও কে!

কাকাবাবুরা ফিরে এলেন ক্যাপটেন নরবুর জিপের কাছে। কাছেই ফিলিপ তামাং-এরও জিপ রয়েছে একটা।

কাকাবাবু পকেট থেকে নোটবুক ও কলম বার করে বললেন, ক্যাপটেন নরবু, দার্জিলিং-এ আমি যাব না। তোমাকে একা যেতে হবে। আমি চিঠি লিখে দিচ্ছি। তুমি পুলিশের ডি আই জি কিংবা এস পির সঙ্গে দেখা করবে। তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখান থেকে পুলিশ-ফোর্স নিয়ে আসবে। সম্ভব হলে আজ শেষ রাত্তিরের মধ্যেই। সোজা চলে আসবে ওই জঙ্গলের মনাস্টারির কাছে।

ক্যাপটেন নরবু বললেন, তুমি যাবে না? তুমি এখানে একা থেকে কী করবে?

কাকাবাবু বললেন, তোমাকে মিথ্যে কথা বলে লাভ নেই। আমি আজ রাতেই আবার ওই মনাস্টারিতে ফিরে যেতে চাই। ফিলিপ তামাং আমাকে সাহায্য করবেন বলেছেন।

ক্যাপটেন নরবু চোখ বড় বড় করে বললেন, ওখানে তুমি আবার যাবে? ওই বাঘের গুহায়? বত্র লামার অনুমতি ছাড়া ওখানে কেউ যেতে পারে না। দরজার কাছে মশাল নিয়ে দুজন লোক পাহারা দেয় দ্যাখখানি? ঢুকবে কী করে?

কাকাবাবু বললেন, সে একটা কিছু উপায় বার করতেই হবে!

ক্যাপটেন নরবু বললেন, ভেতরে ঢুকলেও নিস্তার নেই। একবার একটা চোর ঢুকেছিল, তার চোখ খুবলে নেওয়া হয়েছিল, সারা গায়ে নখের ফালা ফালা দাগ, একথা বলিনি তোমাকে? আর একবার আর একটা লোককে পাওয়া গিয়েছিল ঝরনার ধারে, তারও চোখ দুটো ওপড়ানো, গলাটা মুচড়ে ভেঙে দেওয়া। পুলিশ কারুকে ধরতে পারেনি। ওটা কোনও মানুষের কাজ নয়। বজ্র লামা ভূত-প্রেত-দানবদের বশ মানাতে পারেন। এটা অবিশ্বাস কোরো না। কোনও দানব ছাড়া মানুষের গলা মুচড়ে ওইরকমভাবে কেউ ভাঙতে পারবে না!

কাকাবাবু বললেন, আমি কখনও ভূত-প্রেত-দানব দেখিনি। একবার দেখার খুব ইচ্ছে আছে। তারপর মরি তো মরব!

ক্যাপটেন নরবু ব্যাকুলভাবে বললেন, যাই বলল রাজা, তোমাকে ফেলে রেখে আমি একা যেতে পারব না। ওই মনাস্টারিতে আমি তোমাকে আর যেতেও দেব না!

কাকাবাবু খস খস করে নোটবুকের পাতায় একটা চিঠি লিখলেন। তারপর পাতাটা ছিঁড়ে ক্যাপটেন নরবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, নরবু, এর আগে দু-একবার আমি তোমার কিছু উপকার করেছি। তুমি তার প্রতিদান দিতে চেয়েছিলে। এখন আমি সেটা চাইছি। তুমি এই চিঠিটা নিয়ে এক্ষুনি দার্জিলিং রওনা হয়ে যাও। তোমাকে একাই যেতে হবে। এতেই আমার খুব উপকার হবে। দেরি কোরো না, এগিয়ে পড়ো…

ক্যাপটেন নরবু তখনও দাঁড়িয়ে রইলেন। কাকাবাবু তাঁর দিকে আঙুল তুলে বললেন, যাও! প্লিজ..

তারপর কাকাবাবু উঠে পড়লেন ফিলিপ তামাং-এর জিপে!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *