Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কনকাঞ্জলী || Jharna Das

কনকাঞ্জলী || Jharna Das

কনকাঞ্জলী

আজ পল্লবীর বিয়ে । খুব সুন্দর করে ওকে সাজানো হয়েছে।কনের সাজে পল্লবী বসে আছে। বাড়িতে কত লোকজনের সমাগম।সবাই একবার করে এসে ওকে দেখে যাচ্ছে আর হাতে একটা করে উপহারের প্যাকেট ধরিয়ে দিচ্ছে।
পল্লবীর হাসতে ইচ্ছা করছে না তবু ওকে হাসতে হচ্ছে।
সবাই কত ব্যস্ত !মা,বাবা,দাদা,দিদি,,জামাইবাবু,মামা,মাসি সবাই ব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি করছে। আর পল্লবী বেনারসী, একগাদা সোনার গয়না পরে বসে আছে। একটু পরেই বর এসে যাবে, বরযাত্রীর লোকজনেরা এসে যাবে। আর কয়েক ঘন্টা….. মাত্র কয়েক ঘণ্টা! তারপর সবাই পর হয়ে যাবে। তারপর ওকে চলে যেতে হবে অচেনা একটা বাড়িতে, অচেনা সব মানুষদের সঙ্গে থাকতে হবে সারাজীবন।
কিন্তু পল্লবী চায়নি এই বিয়েটা করতে! ও চেয়েছিল আগে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবে তারপর বিয়ে করবে। বাড়ির লোকেরা ওকে সেই সুযোগ টুকু দিল না । ওর ইচ্ছা,ওর মতামতের কোনো মূল্যই দিল না কেউ। তাদের মতামতটাই জোর করে চাপিয়ে দিল পল্লবীর ওপর। একবার প্রতিবাদ করেছিল কিন্তু কোনো ফল হয়নি।ওর মা বলেছিল”বিয়ে করবি না তো কি করবি, আইবুড়ো থেকে আমার ছেলের সংসারে আগুন লাগাবি..!”এতবড় একটা কথা মায়ের মুখে শোনার পর পল্লবী একেবারে বোবা হয়ে গেছে। মুখে কোনো কথা বলতে পারছে না, কাঁদতে ইচ্ছা করলেও কাঁদতে পারছে না। বুকের মধ্যে প্রচন্ড অভিমান নিয়ে বিয়েটা করতে রাজি হয়ে যায়।মা বাবার মাথা থেকে বোঝাটা তো নেমে যাবে!
বিয়ে হয়ে গেল পল্লবীর। পরের দিন পল্লবীর বিদায়ের পালা।সবাই কাঁদছে পল্লবীও কাঁদছে কিন্তু এ কান্না বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে যেতে হচ্ছে বলে না! এ কান্না অভিমানের কান্না। ওকে একবারও সুযোগ দেওয়া হলো নিজের পরিচয় গড়ার। সারাজীবনের জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য সংসার নামক সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হলো।
কনকাঞ্জলী নেওয়ার সময় মা পিছনে আঁচল পেতে দাঁড়িয়ে আছে।হাতে একটা থালায় করে চাল দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হলো আর বলা হলো চালের থালাটা মায়ের আঁচলে দিয়ে বলতে “মা, তোমার সব ঋণ শোধ করলাম!” সত্যিই কি ঋণ শোধ করা যায়! হ্যাঁ পল্লবী এই কথা গুলো বলেছে,নিয়ম জেনেই বলেছে আর মনে মনে বলেছে ” সারাজীবনের মত আমাকে পঙ্গু করে দিয়ে কনকাঞ্জলী নামক প্রহসনের কি দরকার ?
মা বাবার ঋণ তো কখনও শোধ করা যায় না।যদি নিজের একটা পরিচয় গড়তে দিতে তোমরা তাহলে হয়তো অসময়ে পাশে এসে দাঁড়াবার সাহস করতে পারতাম।সে সুযোগ টুকু তোমরা আমাকে দিলে না !”
যুগ যুগ ধরে চলে আসা কনকাঞ্জলী নামক প্রহসনের কি কখনও শেষ হবে না! মেয়েরা কি কোনোদিন পারবে না মা বাবার জন্য কিছু করতে সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায়! ঋণ শোধের নামে এই প্রহসন চিরতরে বন্ধ হোক। তবেই যদি পল্লবীর মতো মেয়েরা সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে নিজের যোগ্যতায়, নিজের চেষ্টায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress