Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আপন পর || Mrinmoy Samadder

আপন পর || Mrinmoy Samadder

সুবোধবাবুর দুই সন্তান। রাজিব আর শ্রীময়ী। তবে রাজিবের নিজের মায়ের পেটের বোন নয় শ্রীময়ী। শ্রীময়ী সুবোধবাবুর প্রথম পক্ষের মেয়ে। শ্রীময়ীর মা মারা যাবার পর রাজিবের মা সাথীকে বিয়ে করেন সুবোধবাবু। সুবোধবাবুর বিরাট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি। বাড়িটাই মোটামুটি এক বিঘার ওপর জায়গা নিয়ে। একই বাড়িতে দুই ভাই বোন থাকে। তবে ভাইবোনের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। খুবই রেষারেষি এই দুই ভাইবোনের মধ্যে। তবে দুজনেই পডাশুনায় ভালো। সুবোধবাবু দু’জনকেই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়িয়েছেন। শ্রীময়ী স্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে। শ্রীময়ী উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় সাতানব্বই শতাংশ নিয়ে পাস করেছে।
সেই দেখে রাজিবেরও জেদ চেপে যায়। এবং উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য তৈরি হতে থাকে। সবাই ভাবছিল রাজীব ও নব্বই শতাংশের ওপর এই পাবে।
সুবোধবাবুর নিজস্ব ব্যবসা। খুবই ভালো চলে সেই ব্যবসা। কিন্তু হঠাৎই ওনার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় এবং মাসখানেকের মধ্যে ওনার মৃত্যু হয়। সাথী সেসময় খুবই শুশ্রূষা করেন স্বামীকে। কিন্তু বাঁচাতে পারেন না। এই মৃত্যুটা কয়েকটা সত্যকে সামনে নিয়ে আসে।
মাসখানেক কি মাসদেড়েক কেটে যাবার পর সাথী সুবোধবাবুর ব্যবসাটা দেখতে শুরু করলেন। রাজিব ওর নিজের পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সাথী ওদিকে সুবোধবাবুর সম্পত্তি দেখাশোনা করতে লাগলেন এবং তলে তলে উকিলের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। ধীরে ধীরে সুবোধবাবুর প্রায় সমস্ত সম্পত্তিই রাজীবের নামে করে নিচ্ছিলেন।
প্রথমদিকে শ্রীময়ী অতটা গা করেনি। পরে যখন বুঝতে পারলো তখন অনেকটা সম্পত্তি হস্তান্তর হয়ে গেছে। শ্রীময়ী বুঝতে পারল ওর সৎমা ওকে ঠকাচ্ছে। ও তখন পাল্টা আর একজন উকিলের সাথে যোগাযোগ করল।
উকিলের পরামর্শ মত শ্রীময়ী আদালতের শরণাপন্ন হলো। আদালতে মামলা উঠলো। শ্রীময়ী প্রায় প্রতিদিনই আদালতে হাজিরা দিতে থাকলো। আদালতে মামলা চলছিল আর ওদিকে শ্রীময়ী নিজের পড়াশোনা চালাতে লাগলো। অবশেষে শ্রীময়ীর কলেজ শেষ হলো। আর ওদিকে রাজিব প্রায় ছিয়ানব্বই শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করল।
শ্রীময়ী মামলা করবার পর থেকে সাথী আর ওকে দু’চোখে দেখতে পারত না এবং খেতেও দিত না। শ্রীময়ী একটা ঘরেই নিজেকে বন্দী করে নিল।
বছর চার পাঁচেক কেটে গেছে আদালত আর বাড়ি করতে করতে। এমন সময় আদালত শ্রীময়ীর পক্ষে রায় দিলেন যে সুবোধবাবুর মৃত্যুর সময় যা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ছিল তা দুই ভাইবোনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে এবং যা হস্তান্তর হয়েছিল সেগুলো সব বেআইনি এবং ওই হস্তান্তর গ্রহণযোগ্য হবে না। আদালতের নিয়োজিত লোক এসে একদিন দুই ভাইবোনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়ে গেল সম্পত্তি।
কিন্তু সাথী এই ধাক্কা সহ্য করতে পারলেন না। অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। তখন রাজিব নিজের মায়ের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কিন্তু শ্রীময়ী তা পারল না। ও সাথীকে নিজের ঘরে নিয়ে এল এবং শুশ্রূষা করতে লাগলো। মাস ছয়েক যমে মানুষে টানাটানির পর সাথী উঠে বসলো বিছানায় আর শ্রীময়ীকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো আমি তোর মা হয়ে উঠতে পারলাম নারে। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আজ থেকে তুই আমার একমাত্র সন্তান। আজ নিজের সন্তানের থেকে এই দুর্ব্যবহার পেয়ে বুঝতে পারলাম যে কে আমার আপন আর কে পর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *