Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অন্বেষণ || Sankar Brahma

অন্বেষণ || Sankar Brahma

অন্বেষণ

সে ছিল আমার একমাত্র পুত্র সন্তান। সে যে এমন কিছু করতে পারে, তা আমি কখনও ভাবতে পারিনি ।
ফিসফিস করে কথা বলে ওর মা আর ঠাকুমা, ঘরের মধ্যে চলাফেরা করে। আর আমি ঘরে ঢুকলেই চুপ করে যায়। চোখ তুলে আমার দিকে তাকায় না পর্যন্ত। আমাকে এড়িয়ে চলতে চায়। অপরাধী সাব্যস্ত করে, আমাকে যেন শাস্তি দিতে চায়। আর তার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ওরা আমাকে সব বিষয়ে এড়িয়ে চলা দিয়ে শুরু করেছে ।
এ এক ধরণের নীবর শাস্তি ছাড়া, আর কী হতে পারে ! মনে মনে ভাবি আমি। কিন্তু আমার দোষ কি?
আমি কি খুব কড়া ধাঁতের মানুষ ছিলাম? মােটেই তা নয়। কিন্তু তা হয়তো আমাকে হতে হয়েছিল , ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
সে তার মা আর ঠাকুমার কোন কথায়ই কোন গুরুত্বই দিত না, তাই বাধ্য হয়ে আমাকে কঠোর হতে হয়েছিল। অথচ এমনটা যে ঘটবে তা আমি কখনও তা স্বপ্নেও কল্পনা পারিনি ।

ও ছিল খুব আমুদে প্রকৃতির , ভাবপ্রবণ, এবং একান্ত নরম স্বভাবের। কথা বলত কম।
এখন যারা চুপচাপ আছে, ওর মা-ঠাকুমা, ওরাই সব বিষয়ে ওকে লাই দিয়ে, মাথায় তুলে ওকে নষ্ট করেছিল।
বয়স যখন ওর চোদ্দ হলো, তখন থেকেই আমি ওর শিক্ষার ভার নিলাম । ভর্তি করে দিলাম ভাল স্কুলে। ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য, ওকে তৈরী করতে আমি বদ্ধপরিকর হয়ে পড়লাম, মানে তখন থেকে তার চেষ্টা শুরু করলাম ।
আমি তখন তাকে এটা বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলাম যে, অযথা মা ঠাকুমার কাছে কান্নাকাটি করলেই সে খেয়াল খুশি মতো বাড়ি থেকে যা চাইবে, তা পাবে না।
যখন পনেরোয় পড়ল , তখন আমি তাকে বোঝালাম যে, কিভাবে কষ্ট করে আমাকে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, সংসারটা সচল রাখতে হয়েছে এই মন্দার বাজারে।
দু’বেলা দাঁতে দাঁত চেপে কাজ করতে হচ্ছে তাদের সকলের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে। ক্লান্তি এলে, অনায়াসে তা সর্দির মতাে ঝেরে ফেলে দিয়েছি শরীর থেকে। সংসারের সকলের সুখ-শান্তির কথা ভেবে, আখের মতো নিজেকে কলে নিঙড়ে কিভাবে রস ঢেলে দিয়ে সংসারের চাকা সচল রেখেছি।
সে জীবনে একজন সফল মানুষ হয়ে উঠুক, সেই ভেবেই তো আমার যত পরিশ্রম, সে’কথা তাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম।
এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজের মধ্যে থেকেও, সে যাতে উপযুক্ত মানুষ হয়ে উঠতে পারে , তার জন্য।
সে কি বুঝেছিল, জানি না। আমি ভেবেছিলাম, এই সব কথা শুনে, সে তার বাবাকে নিয়ে গর্ব করবে। ভবিষ্যতে সে উন্নতিতে, তার বাবাকেও ছাড়িয়ে যাবে ।
স্কুলের পড়াশুনা তার কাছে খুব একটা কঠিন ব্যাপার ছিল না। পড়াশুনায় তার মেধা ছিল। কিন্তু মনস্কামনা ছিল না। সেই ব্যাপারে সে কোন আগ্রহ বোধ করত না ।
ইচ্ছে করলেই সে ক্লাসের সকলের মধ্যে ভাল ফল ( রেজাল্ট) করতে পারত। কিন্তু সেই রকম কোন ইচ্ছের প্রকাশ তার ভিতর আমি কখনও দেখতে পাইনি।
স্কুলের পড়াশুনা ছাড়া, বাকী আর অন্য সব বিষযে তার মনযোগ ছিল।
ফুল, প্রজাপতি, লজ্জাবতী লতা কিংবা রূপকথার বই তাকে ভীষণ আকর্ষণ করত ।
তার আকর্ষণ ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচে। স্কুলের পড়াশুনা বাদ দিয়ে, সে দিনের পর দিন সে’সব নিয়ে মেতে থাকত । তা ছাড়া সারাদিন সে মেতে থাকত মোবাইলে গেম নিয়ে। তা দেখে আমার মনে হতো, এটা যেন তার একটা মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে। আমি তাই বাধ্য হয়ে নেটের লাইন বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তখন সে আবার পড়াশুনা শুরু করলো। তাও মাত্র কয়েকদিনের জন্য।
তারপর একদিন দেখি সে বাজাতে শুরু করলো একটি বাঁশের বাঁশি। যেটা ওর ঠাকুমা ওকে কিনে দিয়েছিল রথের মেলা থেকে। কিছুদিন সেটা নিয়ে কাটল বেশ।
তারপর একদিন দেখি সে খাতায় কবিতা লিখতে শুরু করেছে পদ্য ছন্দে। কিছুদিন কাটল তা নিয়ে। তারই ফাঁকে আমার চাপে, পড়াশুনায় করত মাঝে মাঝে। তারপর একদিন দেখি রঙ পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করেছে। একা একা নদীর ধারে বেড়াতে যেত বিকেলবেলা।
এরপর একদিন কোথা থেকে একটা পুরনো অ্যাকোরিয়াম জোগাড় করে এনে তাতে মাছ পুষতে শুরু করল। সেটাও খুব বেশী দিনের জন্য স্থায়ী হলো না।
আবার না খেয়ে টিফিনের পয়সা জমাতে শুরু করল, একটা সস্তার দূরবীন কিনবে বলে।
কখনও কিছু পয়সা চেয়ে নিতো ওর মায়ের কাছ থেকে। দূরবীন কেনার পর কিছুদিন সে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে নক্ষত্র দেখত। তাও বেশী দিনের জন্য নয়, অল্প কিছুদিনের জন্য মাত্র।
কোনটাই দীর্ঘ দিনের জন্য স্থায়ী হয়নি তার জীবনে। স্থির কোন কেন্দ্রে মন ছিল না তার। ক্ষণিক সুখের মোহে, এটা সেটা আকড়ে ধরত আর তা নিয়ে মেতে থাকত কিছুদিনের জন্য।
আমি জানি, অনেক ছেলেই এভাবে তাদের পছন্দ (হবি) পরিবর্তন করে। কিন্তু তারা সবাই পড়াশুনা বজায় রেখে এ’সব করে থাকে। আর সে এ’সব করত পড়াশুনায় অবহেলা করে। তার বয়স যখন এ’ভাবে পনেরাে পেরিয়ে ষোলোয় পড়ল। তবুও সে মনােনিবেশ করতে পারল না তার স্কুল-পাঠ্য-বইয়ে।
তারপর তার চোখ পড়ল মেয়েদের দিকে, এবং সেই প্রথম তার নামে বাড়িতে নালিশ এলো । সতেরাে বছরের কিশাের, বাড়ন্ত গড়নের জন্য ওকে দেখে মনে হতো ওর বয়স আরও বেশী। লম্বা ভারিক্কি গড়ন ছিল ওর । বয়সে তরুণ হলেও, দেখতে তাকে লাগত ঠিক যুবকের মতো।
তখন তার হাত-খরচের টাকা কমিয়ে দিলাম আমি। অকারণ বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।
একদিন তাকে ডেকে বােঝালাম, এভাবে চললে পরে তুমি পরীক্ষায় পাশ করতে পারবে না। এরপর আমি তাকে একটা দৈনন্দিন রুটিন তৈরী করে দিলাম পড়াশুনা করার জন্য। আর তাকে বললাম, এই তােমার শেষ সুযােগ। তুমি যদি এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করতে না পার, তবে আমাকে বাধ্য হয়ে, তােমাকে তাড়িয়ে দিতে হবে , এ বাড়ি থেকে। শুনে সে শিশুর মতো কেঁদে ফেললো। আমি জানি এটা ছিল তার কাছে দারুণ আতঙ্কের, চরম শাস্তির ব্যাপার।
তবে, কার্যতঃ আমি এটা করতাম কি না ঠিক জানি না। সে যাই হােক, সে এতে খুব ভয় পেয়েছিল, তা আমি অস্বীকার করি না।
আমি কি বাবা হিসাবে, তাকে এ’টুকু সতর্ক করারও অধিকারী নই, তার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তােলার জন্য? এ’সব না বললে, তাকে আমি কিভাবে বাগে আনতাম ? কিভাবে তাকে একজন সফল সার্থক মানুষ করে গড়ে তুলতাম ? কি করে তাকে জীবন সংগ্রামের জন্য তৈরী করে তুলতে পারতাম?
আমি কি একবারের জন্যও বুঝতে পেরেছিলাম, আমার কথা তার স্নায়ুর উপর এতোটা চাপ সৃষ্টি করবে?
তাহলে কি আমি পরােক্ষ ভাবে দায়ী নয় তার মৃত্যুর জন্য ? নিজের কাছে প্রশ্ন করে, যেন তার কোন সদুত্তর খুঁজে পাই না আমি।

তার মৃত্যুর জন্য একমাত্র আমিই দায়ী, এই কথাটাও আমি মন থেকে মেনে নিতে পারি না। তার প্রকৃতি সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তাই আতঙ্কে এমন কাণ্ড করেছে বলেই আমার বিশ্বাস।
টেস্ট পরীক্ষায় কয়েক নম্বর কম পাওয়ার জন্য লিস্টে তার নাম ওঠেনি। তার জন্য কেউ মেট্রো রেলের লাইনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে? করে না নিশ্চয়ই?
নিশ্চয়ই এটা জীবনকে লাইনে ছুঁড়ে ফেলে দেবার মতো কোন সঙ্গত কারণ হতে পারে না।

হয়তো সে কিছু জানতে চেয়েছিল। বুঝতে চেয়েছিল। তার আকাঙ্খার সীমাহীন একগুঁয়েমির জন্য, সে তার মন কিছুতেই স্থির করে রাখতে পারেনি। ওটাই ছিল তার স্বভাব।
ছােট বেলা থেকেই সে ছিল ওই রকমের। কি যেন খুঁজে বেড়াত। কে আর তাকে আমার চেয়ে ভাল করে বুঝতে পারবে? সে ছিল আমার একমাত্র পুত্র সন্তান। ওর জীবনের সতেরোটা বছর এভাবেই কেটে গেছে। ওর প্রকৃতি ওকে বদলাতে পারেনি।
কোন ব্যাপারে, কখনােই সে গভীর ভাবে মনােনিবেশ করতে পারতো না । ও ছিল খুব খামখেয়ালি স্বভাবের, অস্থির প্রকৃতির । শৈশব থেকেই ওইরকম প্রকৃতির ছিল বলে সে কত কথা শুনেছে আমার কাছে । কদাচিত তাকে হাসতে দেখা যেত। কোন বিশেষ বন্ধু ছিল না তার। কারও সঙ্গে তেমন ভাবে মিশতে পারত না।
আমার মনে হত সে যেন ফড়িংয়ের জীবন কাটাচ্ছিল। অবশ্য সে যদি খুব স্থিরতার সঙ্গে কাজগুলি করত, তাহলেও আমি ভাবনায় পড়তাম। এতে আমি হতাম আরও চিন্তিত আর সে হতো তাতে বিচলিত।
কি যেন খুঁজে বেড়াত সে অস্থিরভাবে, বহুদিন আমি তা বুঝতেই পারিনি। কোন ইঙ্গিত পাইনি তার সেই অনুসন্ধিৎসার ।
মাঝে মাঝে বেড়াতে নিয়ে গেলে সে খুব খুশি হতো। তখন তার বয়স পনেরো হবে, একদিন দক্ষিণেশ্বর বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির থেকে বেরিয়ে এসে, সে তার মাকে বলল, মা আমি একদিন মরে যেতে পারি অনায়াসে।
সে’কথা শুনে, আমি হতবুদ্ধি হয়ে গিয়ে, চমকে উঠেছিলাম।
কিন্তু সেটা তাকে বুঝতে না দিয়ে, তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম।
এতটুকু উত্তেজনা না দেখিয়ে সে বলল, হেসো না, হেসো না। আমি সত্যিই আমার জীবন দিয়ে দিতে পারি সহজে।
এতে আমি আরও বিচলিত হলাম। সম্ভবতঃ আমার মুখ বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল, সে কথা শুনে।
তবুও আমি শান্ত ভাবে বললাল, কেন? কী এমন কারণ আছে তার?
সে আমার দিকে তাকিয়েছিল একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো, গম্ভীর স্বরে বলেছিল, ঈশ্বরকে খুঁজে বের করার জন্য।
সে কথা শুনে তার মা, তাকে প্রশ্ন করেছিল।
– কেন? এ রকম ভাবিস কেন তুই? ঈশ্বরের দেখা পেতে গেলে, মরে যেতে হবে কেন?
সে তার প্রতি-উত্তরে দার্শনিকের মতো বলেছিল, ঈশ্বর স্বর্গে থাকে। মরে, স্বর্গে না গেলে, তাঁর দেখা পাওয়া যাবে না।
এ রকম যুক্তির কোন রকম উত্তর সে সময় আমার মাথায় আসেনি। আমি চুপ করেছিলাম।
পরে অবশ্য মনে এসেছে, আমি তাকে বলতে পারতাম, কেন যুধিষ্ঠির তো বেঁচেই সশরীরে স্বর্গে গেছিলেন। তা আর তাকে বলা হয়ে ওঠেনি ।
এ’সব জিনিস জোর করে পাওয়া যায় না, তার মা তাকে অনেকবার বুঝিয়েছিল। কিন্তু তার তাতে কোন আস্থা ছিল না।
কেন, তা আমি জানি না?
এতদিন এই ব্যাপারটা আমি ভুলে গেছিলাম। এখনও যেন তাকে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আমার সামনে দাঁড়িয়ে ওই কথাগুলিই আবার বলছে সে । তা স্পষ্ট কানের পর্দায় ধ্বনি তরঙ্গ তুলে থেমে যাচ্ছে না মোটেও। বাজতেই থাকছে। অস্থির লাগছে আমার।
সে বোধহয়, কঠিন ও দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে সমস্ত জীবন ধরে, ঈশ্বরকে খুঁজে ছিল তার ।
তার কবিতায়, তার আঁকা ছবিতে, রূপকথায়, তার বাঁশির সুরে, লজ্জাবতী লতায়, মাছের একোরিয়ামের জীবনে, আকাশের নক্ষত্র-পুঞ্জে, ক্রিকেট ম্যাচের উত্তেজনায়, এমন কি মেয়েদের সঙ্গে মেলা-মেশার মধ্যেও। শুধু খোঁজ আর খোঁজ। ক্ষ্যাপার পরশ পাথর খোঁজার মতো, একটা ধরেছে আর ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
এই জন্যই, সে এক একটা আকর্ষণের বস্তু চট করে ধরেই আবার অনায়াসে ছুঁড়ে ফেলে দিতো। কারণ তার মধ্যে সে তার প্রার্থিত বস্তু খুঁজে পেতো না।
যদিও সে জানত না , যে সব জিনিষ তাকে আকর্ষণ করে, তার কোনটার মধ্যে, সে যা খুঁজে পেতে চাইছে , তা সে পাবে না, তার সেই ঈস্পিত বস্তু নেই সে সব জিনিষের মধ্যে, এ ধারণা তার ছিল না।

তার সেই বাক্যটি এখনও আমার কানে অনুরণিত হচ্ছে,’ ঈশ্বর কে? তা খুঁজে বের করার জন্য।’
এই রকম করে যে ভাবতে পারে , তার কাছে কিছু কম নম্বর পাওয়া কোন ধর্তব্যের বিষয়ই নয়।
অংকের মাস্টার তাকে কয়েকদিন আগেই বুঝিয়ে বলেছিলেন, ‘জীবন সম্পর্কে’ আইনস্টাইনের দৃষ্টিভঙ্গি কি, এবং বলেছিলেন, পৃথিবী অনন্ত বটে, কিন্তু সীমাহীন নয় কিংবা ওই ধরণের কিছু একটা , সে তা মনােযোগ দিয়ে তা শুনছিল, তখন তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, সে যেন নতুন কিছু শুনছে তার কাছে ।
তারপর সে শান্ত স্বরে তাকে প্রশ্ন করেছিল,তাহলে পৃথিবীতে ঈশ্বরের অবস্থান কোথায়?
অংক শিক্ষক সেকথা শুনে হেসে ফেলেছিলেন এবং বলেছিলেন তাকে, কোন ধর্মগুরুর কাছে গিয়ে এ প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে।

আমি লক্ষ্য করেছিলাম, মেয়েদের সঙ্গে মেলা-মেশা করার পর থেকেই, সে চমৎকার সাবালক হয়ে উঠতে শুরু করেছিল।
মেয়েদের ভালবাসা যে কী বস্তু, তা অনেকেই জানে না। সেও তেমনি জানত না।
যখন সে দেখল মাধ্যমিক টেষ্ট লিষ্টে তার নাম নেই , তখন তার এক সহপাঠিনী তাকে দেখে ঠোঁট টিপে হেসেছিল। সেই হাসিই কি, তার এই চরম পরিণতির কারণ হলো? এমন দুর্ঘটনা ডেকে আনল?
ছােটখাটো ব্যাপারে আমরা তেমন দৃষ্টি দিই না।
একটু চোরা চাউনি, একটু নিবিড় হাসি, সামান্য শরীরী ভঙ্গী, বিশেষ করে এই বয়সের ছেলেদের বিচলিত করতে পারে। মেয়েটি হয়তো তার বিচার বুদ্ধি অনুযায়ী চপল ব্যবহার করেছে, যদিও সে তা না বুঝেই করেছে। আমার বিশ্বাস।মেয়েটি হয়তাে নিরীহ প্রাণীর মতােই নিষ্পাপ।
রাবিশ! এ’সব কি ভাবছি আমি !
সামন্য ঠোঁট-টেপা হাসিতে সে এতোটা বিচলিত বা বিভ্রান্ত হয়নি। যাতে সে এমন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েনি, যে তাকে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিতে হয়েছে।
জীবনের সাফল্য তাকে, তেমন ভাবে কোন আনন্দ দিত না। আমি তা লক্ষ্য করে দেখেছি।তা’হলে সে একটি মেয়ের ঠোঁট টেপা হাসির জন্য কিংবা সামান্য কয়েকটা নম্বর কম পাওয়ার জন্য, এমন কাজ করেছে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। তা আমি মানতে পারি না।
তবুও, আমার কাছে একদা যা কল্পনা করাও ছিল অসম্ভব , আজ তাই বাস্তবিক সত্যে পরিণত হয়েছে।
মনে প্রাণে সে যা খুঁজছিল , তা কি এখন পেয়ে গেছে ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress