Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অথ শুকসারি কথা || Sankar Brahma

অথ শুকসারি কথা || Sankar Brahma

অথ শুকসারি কথা

বাড়ির উঠোনে একটা মহুয়া গাছ। রোজ ভোরে উঠে ফুল কুড়ানো নেশা আমার।
কোনদিন চন্দ্রা এসে বিরক্ত করে আবার কখনো মর্জি হলে সাহায্য করে আমাকে।
আজও ভোরে উঠে ফুল কুড়াচ্ছি, এমন সময় সে এলো হেলতে দুলতে। একটু পরে পা দিয়ে, ফুলগুলো এক জায়গায় জড়ো করতে লাগল।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম , এ কি করছ তুমি?
— কি করছি দেখতে পাচ্ছ না ?
— পা দিয়ে ?
— তবে কি করব ? হাত কোথায় পাব?
আমি তাকিয়ে দেখি, তাই তো!আশ্চর্য!
ওর হাত দুটো কখন ডানা হয়ে গেছে। ও কেমন বদলে গেছে। ওর কোঁকড়া চুলগুলো পালক হয়ে সারা গায়ে লেপটে গেছে। মুখটা ছুঁচোলো হয়ে একটা শালিক পাখির মতো হয়ে গেছে। ঠোঁট দুটো হলুদ। আমি হাসব না কাঁদব বুঝে উঠতে পারলাম না। আমি বিস্ময়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
— কি দেখছো অমন করে?
— তোমাকে।
— কেন, আমাকে কি আজ নতুন দেখছো নাকি?
— হ্যাঁ, তুমি আর সেই চন্দ্রা নেই। একটা শালিক পাখি হয়ে গেছো।
— আর তুমি?
— আমি কি?
— তুমিও তো একটা টিয়া পাখি হয়ে গেছো
— যাহ্ •••
— ঠোঁট দুটো সুচলো, লাল। সারা গায়ে পালক।দুটো সবুজ ডানা।
এবার আমি টের পেলাম। সত্যি-ই তো!
পা দুটো সরু লিকলিকে,পায়ের পাতা যেন একদম পাখির মতো হয়ে গেছে, একি হল আমার ?
— তুমিই তো আমার শুকপাখি।
আমার চারপাশে জোড়া পায়ে আনন্দে
লাফাতে লাগল সে, থুরি শালিক পাখিটা |
এ আমাদের কি হল? ভয়ে আমি ভিতরে ভিতরে শঙ্কিত হলাম। আমরা কি তাহলে আর কখনও মানুষ হতে পারব না?
যে আমি কোনদিন ঠাকুর দেবতায় বিশ্বাস
করতাম না। বিপদে পড়ে বলে উঠলাম ,
হে ঈশ্বর, আমাদের মানুষ করে দাও। এটা যেন সত্যি না হয়। এটা যেন স্বপ্ন হয়।
এটাই যদি সত্যি হয়, তা হলে কি হবে?
চন্দ্রা আমার কথা শুনে, জানতে চাইল।থুরি, শালিক পাখিটা কিচির মিচির করে জানতে চাইল। আর আশ্চর্য, আমি তার কিচির মিচির ভাষা অনায়াসে বুঝতে পারছি। সে হাসতে হাসতে আমাকে ঘিরে নাচতে নাচতে বলল, আর মজার সুরে বলতে লাগল, এটা স্বপ্ন নয় মোটেও , এটাই বাস্তব , এটাই সত্যি।
ভাল করে তাকিয়ে দেখ , আমি তোমার সেই সারি (চন্দ্রা নয় )।

নিকুচি করেছে সারির | স্বপ্নটা কখন শেষ হয়, আমি তার প্রতীক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু স্বপ্নটা যে কিছুতেই ভাঙছে না। কি করি এবার আমি? কি করে স্বপ্নটা ভাঙি? খুব চিন্তায় পড়লাম আমি।
— না,স্বপ্ন নয়,স্বপ্ন নয়, এটা একেবার বাস্তব সত্যি। কিচি কিচি মিচি মিচি করে হাসতে হাসতে
সে, মানে শালিক পাখিটা।
শালিকটা খুব বিরক্ত করতে লাগল, আমাকে ঘিরে নাচতে লাগল। যেন তার আনন্দ ধরে না আর।
মহুয়া গাছটা তো সত্যি। জ্যান্ত বাস্তব। তা হলে এটাও কি সত্যি?
আমাদের আর মানুষ হওয়া হবে না কোনদিনও? আমি আর ভাবতে পারলাম না।
‘এমন মানব জনমে আর হবে না
আবাদ করলে ফলত সোনা।’
কোন আবাদ করা হল না তাহলে আর? মনটা আমার মুষড়ে পড়ল, হায় হায় করতে লাগল দুঃখে বিষাদে।
সাড়ি বলল, তুমি এত মুষড়ে পড়ছো কেন?
এটাই তো আমি মনে মনে চেয়ে ছিলাম শুক।এখন থেকে আমরা পাখির জীবন যাপন করব।
খারাপ কি পাখির জীবন?
মানুষের মতো দায় দায়িত্বের নিগড়ে বাঁধা নয়।মুক্ত স্বাধীন জীবন।
খাও দাও, যেখানে খুশি উড়ে বেড়াও।
শুক বলল (মানে আমি বললাম), তুমি থামো তো! যা বোঝ না তা নিয়ে কথা বোলো না।
সাড়ি আমার কথা শুনে, অভিমানে উড়ে গিয়ে মহুয়া গাছটার মগডালে গিয়ে বসল। আমিও তার পাশে গিয়ে উড়ে বসব কিনা ভাবছি।
এটা স্বপ্ন হলে তো , ভাঙবেই একসময়।ততক্ষণ, ওর পাশে বসেই না হয় অপেক্ষা করি?আমি উড়ান দিলাম।
উড়তে গিয়েই খাট থেকে নীচে পড়ে, কোমড়ে খুব জোর ব্যথা পেয়ে ঘুমটা আমার ভেঙে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress