Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নারদীয় পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 4

নারদীয় পুরাণ || Prithviraj Sen

দেবমালির দুই পুত্র যজ্ঞমালি ও সুমালি উভয়ই বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন।

যজ্ঞমালি ছিলেন পরম ধার্মিক। বাবার কাছ থেকে তিনি যে অর্থ পেয়েছিলেন তাতেই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। শাস্ত্র পাঠ করে সম্ভাবে জীবনযাপন করে আনন্দেই দিন কেটে যায় তার। কিন্তু সুমালির বিপরীত মতি ধরল। অপকর্ম দোষে তার মুখে চুনকালি পড়ল। দুষ্টলোকের সঙ্গে মেলামেশা, নেশা করা, চুরি করা তার কাজ হয়ে উঠল। পিতার সঞ্চিত অর্থ যা পেয়েছিল সব কিছু সে অপকর্ম করে শেষ করে দিল। এখন সংসার চালানোর জন্য চুরি করার পথই সে বেছে নিল। তার জ্বালায় দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো।

নিজের ভাই এভাবে অধার্মিক হয়েছে দেখে যজ্ঞমালির খুব খারাপ লাগে। একদিন ভাইকে ডেকে সৎ উপদেশ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করাতে ফল হল উল্টো। দাদাকেই মারতে উঠল সে। সুমালির স্ত্রীও স্বামীকে বোঝাতে গিয়ে তার হাতে প্রহৃত হল।

যজ্ঞমালির মন খারাপ। কিভাবে ভাইকে সদ জীবনে ফিরিয়ে আনবে, ভাবতে পারছে না। একদিন গ্রামের বহু লোকজন সুমালির বাড়িতে এল তাকে শায়েস্তা করবার জন্য। হাত দিয়ে ও লাঠি দিয়ে তাকে সবাই মারতে লাগল। গালাগালিও দিল প্রচুর। যজ্ঞমালি ভাইয়ের হয়ে তাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন।

সবাই যজ্ঞমালির গুণের কথা জানে, তাই তার কথায় সে যাত্রায় সুমালি রক্ষা পেল। সবাই চলে গেলে ভাইকে পুনর্বার বোঝানোর চেষ্টা করলেন যজ্ঞমালি। বললেন–ব্রাহ্মণের সন্তান আমরা। বাবা আমাদের জন্য যে সম্পদ রেখে গেছেন, ঠিকমত চালালে তা কোনদিনই নিঃশেষিত না। কিন্তু তুই অসভাবে ব্যয় করে সব শেষ করে দিয়েছিস। বদমাইশিও তো অনেক করলি কিন্তু তাতে কি তুই শান্তি পেয়েছিস? যদি আজ তোকে আমি রক্ষা না করতাম, তাহলে হয়তো মরেই যেতিস।

এবার থেকে তুই সদ্ভাবে জীবনযাপন কর। বাবার দেওয়া সম্পদ আমি তো ঠিক রেখেছি। আমার সম্পদের থেকে অর্ধেক আমি তোকে দিচ্ছি। তাই দিয়ে তুই সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকার চেষ্টা কর। মন্দ কর্ম আর কখনো করিস না।

দাদার কথায় সুমালি কিছুটা শান্ত হল। বহু লোকের মারের চোটে গায়ে খুব ব্যাথা। তাই চুপচাপ কয়েকটা দিন কাটাল। কিন্তু চুরি করা যার স্বভাব, যে কি কোনদিন সকথা শুনবে? ‘চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। তাই দাদার দেওয়া অর্থে সে যেন শান্তি পেল না। কয়েক দিন পরে সে আবার রাতে বেরিয়ে পড়ল চুরি করার জন্য। পুরানো বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আবার মিশে জুয়া খেলে নেশা করে যজ্ঞমালির দেওয়া সকল অর্থ শেষ করে ফেলল। তারপর সে ডাকাতি করা শুরু করল। একদিন রাজার প্রহরীদের হাতে ধরা পড়ল। বিচারে তার দেশান্তরের হুকুম হল। দেশ ছাড়ার হুকুম পেয়ে সুমালি তার দুষ্ট বন্ধুদের কাছে গেল, কিন্তু কেউ তাকে একদিনের জন্যও আশ্রয় দিল না। এখন কেউ তারা কেউ সুমালির বন্ধু নয়, সবাই শত্রু। মনের দুঃখে সুমালি বনে চলে গেল। শুরু করল বন্য-জীবনযাপন। যজ্ঞমালির প্রাণ ভাই-এর দুঃখে কেঁদে উঠল। কিন্তু তার আর কিছুই করার ছিল না।

এই ভাবে বহুকাল কেটে গেল। এখন বৃদ্ধ হয়েছেন যজ্ঞমালি। একদিন বিষ্ণুধ্যান করবার সময়ে তার মৃত্যু হল। বিষ্ণু দূতদের সঙ্গে তিনি বিষ্ণুলোকে চলেছেন।

বিধাতার লীলা বোঝা ভার। ঠিক সেই একই দিনে মৃত্যু হল সুমালির। তার মহা পাপের জন্য যমদূতেরা তাকে শাসন করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে। চিৎকার করে কাঁদছে সে।

বিষ্ণুলোকে যেতে যেতে যজ্ঞমালি ভাই-এর সেই আর্তনাদ শুনলেন। সেই আর্তনাদে যজ্ঞমালির মন অস্থির হয়ে উঠল। তিনি বিষ্ণুদূতের জিজ্ঞাসা করলেন –এমনভাবে কষ্টে কে কাঁদছে? কারা তাকে কষ্ট দিচ্ছে?

বিষ্ণুর দূতগণ বললেন–তোমার ভাই সুমালি যমদূতের তাড়নায় এইভাবে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে যমালয়ে যাচ্ছে।

যজ্ঞমালি চমকে উঠলেন, হায়! ভগবান, এ কি কষ্ট? ভাই সুমালির এই কষ্ট আমি চোখে না দেখতে পেলেও কানে শুনে আর সহ্য করতে পারছি না। হে ভগবান, এই যন্ত্রণা থেকে আমার ভাইকে রক্ষা করবার কি কোন উপায় নেই?

বিষ্ণুদূতেরা বললেন–যাঁরা পুণ্যাত্মা হন, অপরের দুঃখে তাদের প্রাণ এইভাবেই কেঁদে ওঠে। তাই তোমার এই অবস্থা। কিন্তু তোমার ভাই সুমালি জীবনে কখনও কোন পুণ্যকাজ করেনি, উপরন্তু যতরকমের পাপ কাজ হয়, করেছে, তাই এখন তার ফল ভোগ করছে। পুণ্যের ফল যেমন সুখ ভোগ, পাপের ফল তেমন কষ্ট লোগ। তোমার ভাই সুমালি এখন যে কষ্ট পাচ্ছে, সে আর কতটুকু! নরকে গিয়ে আরো কষ্ট পাবে। সে দৃশ্য পুণ্যাত্মারা কখনও দেখতে পান না। পাপের ফল ভোগ করে শাস্তি পেলেই হবে প্রায়শ্চিত্ত। তাই নরককে সংযমনী পুরী বলা হয়। কষ্ট ভোগে পাপ নাশ হবে।

যজ্ঞমালি বললেন–আমি জানি সুমালি জীবনে পাপ ছাড়া কোন পুণ্য কাজ করেনি, কিন্তু সে যে আমার ভাই। সে নরকে গিয়ে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করবে, আর আমি বিষ্ণুলোকে গিয়ে সুখ ভোগ করব–সে কি কখনও হয়, আমার জন্য বিষ্ণুলোকে সকল সুখের ব্যবস্থাই আমার কাছে কাটার মত লাগবে। মোটেই আমি শান্তি পাব না। ওকে যদি মুক্ত করবার কোন উপায় থাকে, তাহলে আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলুন। আমি একবার চেষ্টা করে দেখি, আমাকে দেখলে সুমালি যদি একটুও শান্তি পায়, তাই ভাল।

বিষ্ণুদূতেরা বললেন–তা হয় না যজ্ঞমালি, পুণ্যাত্মাদের নরকে যাওয়া হবে না। একটা উপায় আছে–যদি তুমি তোমার পুণ্যের এক কণা তোমার ভাইকে দান করো, তাহলে তার নরক থেকে মুক্তি লাভ হবে।

তাদের কথা শুনে যজ্ঞমালি আর এক মুহূর্তও দেরী করলেন না। বললেন, আমি এখুনিই সেই পুণ্য দিচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে আর্তনাদ থেমে গেল। যমদূতেরা সুমালিকে ছেড়ে দিল। তখন সুমালিকে নিয়ে বিষ্ণুদূতগণ বিষ্ণুলোকে চলল। তখন দুই ভাই এক সাথে বিষ্ণুলোকে থাকল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *