Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নারদীয় পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 8

নারদীয় পুরাণ || Prithviraj Sen

শ্রীহরি আর তার নাম একমাত্র পারে কর্মপাশ ছেদন করতে। হরির পূজা যারা করেন না তারা শবের সমান। ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণ বিদ্বেষী কিন্তু হরির পূজা করেন এমন লোকের পূজা বৃথা। যারা পরের সুখে বাধা দেবার জন্য হরিপূজা করে, কখনো তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় না।

পাপ কাজে লিপ্ত হয়েও যদি কেউ হরিপূজা করে, তবে তাতে কোনো সুফল পাওয়া যায় না। কোটি কোটি জন্মে পুণ্য সঞ্চয় করলে, তবেই হৃদয়ে বিষ্ণুভক্তির উদয় হয়। বিষ্ণুভক্তিহীন চণ্ডাল যারা, তারাও হরিসেবা করে উদ্ধার পেতে পারে। শ্রীহরির পাপোদক অর্থাৎ পদধৌত জল যদি মাথায় কেউ ধারণ করে তাতে তার সর্ব তীর্থ জলে স্নানের ফল লাভ হয়।

এ বিষয়ে একটি কাহিনী আছে–সত্যযুগে কণিক নামে এক ব্যাধ ছিল। চুরি করা, পরস্ত্রীগমন ইত্যাদি নানা পাপ কাজে সে লিপ্ত ছিল।

একদিন সেই দুষ্ট ব্যাধ শুনল যে, সৌবীর রাজার রাজ্যে বহু সুন্দরী রমণী বাস করে। সেই রাজ্যে সকলে প্রচুর সম্পদের মালিক। কণিক মনে মনে ভাবল যে, ওখানে গিয়ে একবার দেখা যাক।

তারপর সৌবীর রাজার রাজ্যে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে একটি বিষ্ণুমন্দির দেখতে পেল। মন্দিরটির চূড়ায় সোনার কলস। নানান রত্নের কারুকার্য গায়ে।

কণিক মনে মনে ভাবল–এত যখন সোনা দানা হীরা মুক্তা, তাহলে দিনের বেলায় দেখে নিই, কোথায় কি কি আছে। রাতের বেলায় এসে চুরি করব।

এই চিন্তা করে মন্দিরের মধ্যে গিয়ে কণিক দেখতে পেল, একজন সাধু চুপচাপ বসে আছেন। আর কেউ কোথাও নেই। ওই সাধু যাতে তাকে দেখতে না পান, তাই সে কয়েক পা পিছিয়ে এসে আড়ালে দাঁড়াল। দেখল আর কেউ সেই মন্দিরে যাতায়াত করছে না। মনে মনে ভাবল ভালই হল। ওই সন্ন্যাসীকে মেরে মন্দিরের সব সোনা-দানা চুরি করে নিয়ে যাব। এখন যদি মারতে যাই তাহলে কেউ দেখে ফেলবে। এখন এখানে চুপচাপ বসে থাকি।

দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল। বেশ অন্ধকার। এমন সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য, কোমরে গোঁজা ধারাল অস্ত্রটাকে নিয়ে ব্যাধ মন্দিরের ভেতর চলল।

মুনিবর উতঙ্ক পূজার আসনে বসেছিলেন। সামনে প্রদীপের ক্ষীণ আলোক ভয়ঙ্কররূপী সেই ব্যাধকে তিনি দেখতে পেলেন।

মহাজ্ঞানী মুনি-ঋষিরা জানেন যে জগতে যা কিছু ঘটছে, সবই বিষ্ণুর ইচ্ছাতেই হচ্ছে। যেভাবে তিনি মুনির মৃত্যু নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, তেমন ভাবেই হবে তার মৃত্যু। কাজেই একে দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

এমন ভয়ঙ্কর মূর্তির হাতে ধারালো অস্ত্র দেখেও তিনি বললেন–এসো, এসো ভাই।

ব্যাধ অবাক হয়ে গেল মুনির এই আপ্যায়ন দেখে। তারপর ভাবল–আমার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এই মুনি এমন ব্যবহার করছে, কিন্তু আমি ওর কথায় ভুলছি না।

সে বলল–মুনি, তুমি ভেবেছ আমাকে এভাবে খাতির করলে আমি তোমায় ছেড়ে দেব? কখনই তা হবে না। আজ আমার হাত থেকে তোমার রেহাই নেই। আগে তোমাকে শেষ করব, তারপর এই মন্দিরের সোনাদানা সব চুরি করে নিয়ে যাব।

মুনি নির্ভয়ে বললেন–ভাই, ভগবান যার হাতে যার মৃত্যুর ব্যবস্থা করে রেখেছে, সে তো তারই হাতে মরবে। ভগবানের হিসাব কখনো নড়চড় হয় না। তোমার হাতে যদি আমার মৃত্যু লেখা থাকে, তবে নিশ্চয় মরব। আমি বৃদ্ধ। আমার কাছে কোনো অস্ত্র নেই। তোমার মত বলবান যুবকের সঙ্গে লড়বার ক্ষমতা আমার নেই। এখানে আমাকে রক্ষা করবার মতও কেউ নেই। নিশ্চিন্তে তুমি তোমার কাজ হাসিল করতে পারবে। তবে ভাই, মরবার আগে, আমি দুটো কথা বলে যেতে চাই তোমাকে। যদি শুনতে চাও তো বলি। আর যদি তা শুনতে না চাও, তবে এখুনিই আমাকে মেরে তুমি তোমার কাজ হাসিল করে নাও। কোন প্রতিবাদ করবো না।

তপস্বীর কথায় কণিকের মনটা দুলে উঠল। ভাবল–এখনো রাত অনেক বাকি আছে। প্রভাত হতে অনেকটা সময় আছে আর এখন এখানে কেউ আসবে বলে মনে হয় না। মুনি কি বলতে চায় একবার শুনেই দেখি না। তারপর যা হয় হবে।

এই চিন্তা করে কণিক বলল–আচ্ছা, বল, তুমি কি বলতে চাও। বেশি সময় দিতে পারব না। যা বলার তাড়াতাড়ি বল।

মুনি বললেন–এখানকার দামী দামী জিনিস নিয়ে যাবে বলে যখন এসেছ, তখন আমি বাধা দেব না। কারণ এসব আমার জিনিস নয়, আর এতে আমার কোনও লোভও নেই। অযথা আমাকে মারার দরকার কি? তবে একটা কথা তোমাকে জিজ্ঞাসা করি–এভাবে তুমি চুরি-ডাকাতি কেন কর? তোমার স্বাস্থ্য ভাল, কাজেই পরিশ্রম করে রোজগার করতে পার।

কণিক বলল–পেটের জ্বালায় আমি চুরি করি। আর আমি একা নই, ঘরে আমার বউ আছে, ছেলেপুলেও আছে। চুরি করে অল্প সময়ের মধ্যে আমি অনেক পাই, তাতেই আমার অনেকদিন চলে যায়। গায়ে গতরে খেটে রোজগার করতে হলে, প্রতিদিনই তা করতে হবে। তাই, আমি এই পথ বেছে নিয়েছি।

মুনি বললেন, না ভাই, তোমার হিসাবে একটু ভুল হয়ে যাচ্ছে। দশদিন চুরি করলে একদিন ধরা পড়বে। রাজার বিচারে তোমার শাস্তি হবে। কয়েদখানায় রাখবে, তখন তোমার ছেলে-বউকে কে দেখবে? তাদের কি হবে?

জীবন দিলেন যিনি, আহার দেবেন তিনি। ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রাখ, দেখবে ঠিক চলে যাবে, আহারও জুটবে। কোনদিন কোন বিপদও আসবে না।

এই দেখ, এই মন্দিরে বসে তারই পূজায় আমার সময় কেটে যায়। বনের ফলমূল হরিকে নিবেদন করে তারপর আমি খাই। আমার কোনদিন অভাব হয় না। এত সোনা-দানার মধ্যে বসে থেকেও কোন কিছুর প্রতি আমার একটুও লোভ জাগেনি। কি হবে ওসবে?

তুমি নিজের কথা একবার ভেবে দেখ। চুরি করে পাপ করছ কিন্তু সেই পাপের ভাগী কেউ হবে না। মানুষ হয়ে যখন জন্মেছি, তখন একদিন মরতে হবে। মৃত্যুর পর আমাদের পাপ-পুণ্যের বিচার হবে। যে পুণ্য করেছে, সে বহু সুখ ভোগ করবে। আর যে পাপ করেছে, সে নরক যন্ত্রণা ভোগ করবে। হয়তো তুমি বলবে-নরক কে দেখেছে? আমি ওসব বিশ্বাস করিনা। ঠিক আছে, বিশ্বাস করার দরকার নেই। এই সংসারেই দেখ–কত লোক সুখে-শান্তিতে আছে, আবার কত লোক সারা জীবনই দুঃখ ভোগ করছে। সবই এই পাপ-পুণ্য কর্মের ফল।

তাই বলছিলাম, এসব জিনিস চুরি করে নিয়ে যাবার আগে একবার ভেবে দেখ।

তপস্বীর কথা শুনে ব্যাধের শরীরটা যেন অবশ হয়ে গেল। হাত থেকে অস্ত্রটা পড়ে গেল। মনে মনে ভাবল–সারা জীবনে আমি কত পাপ করেছি! কত লোকের উপর নির্যাতন করেছি। তার মনে হল, যাদের উপর সে নির্যাতন করেছে, তারা সকলেই যেন তাকে মারতে আসছে। ভয় কাঁপতে কাঁপতে সে মুনির চরণে পড়ে গিয়ে বলল–ঠাকুর, জীবনে আমি বহু পাপ করেছি। তার ফলে আমাকে নরক-যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। হে গুরুদেব, আমাকে বাঁচান আপনি।

এই কথা বলার পর কণিক চুপ করল। তখন মুনি তাকে তুলবার চেষ্টা করে বুঝতে পারলেন যে ব্যাধ মারা গেছে।

তপস্বী তখন দুই হাত জোড় করে সামনের বিষ্ণু মূর্তির দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা জানালেন–হে প্রভু, এই ব্যাধ এ জীবনে কোন প্রায়শ্চিত্ত করবার সুযোগ পেল না। তোমার পাদোদক আমি এর মাথায় দিচ্ছি, একে তুমি ক্ষমা কর।

এই বলে তপস্বী ব্যাধের মাথায় বিষ্ণু পাদোদক ছড়িয়ে দিলেন।

সহসা তপস্বী দেখলেন–ব্যাধের দেহ থেকে এক দিব্যমূর্তি বেরিয়ে এসে মুনিকে বলল–হে তাপসবর, তোমার চরণে কোটি কোটি নমস্কার জানাই। বিষ্ণু-পাদোদক দিলে বলে আমি বিষ্ণুপদ লাভ করলাম। জন্মে জন্মে আমি যেন তোমার দাস হয়ে থাকতে পারি। তুমি আমার যমবদ্ধ-পাশ ছিন্ন করলে।

তারপর সেই ব্যাধের দিব্যমূর্তি মুনিকে প্রণাম করে, শ্রীহরির নামগান করতে করতে বিষ্ণুলোক চলে গেল।

একদৃষ্টে উতঙ্ক মুনি তাকিয়ে রইলেন। আশ্চর্য হয়ে ভাবলেন, সারা জীবনভোর পাপ কর্ম করে, এক বিন্দু পাদোদকে সব স্খলন হয়ে গেল! দিব্যগতিও লাভ করল।

মুনি উতঙ্ক আর কিছু ভাবতে পারছেন না, দুই চোখে জল ভরে আসে। তারপর, ধ্যানে বসে বহু স্তব করে হরিকে তুষ্ট করলেন। শ্রীহরি বললেন–তোমার স্তব-স্তুতিতে আমি প্রীত হয়েছি। বল, তোমার কি অভিলাষ।

কাঁদতে কাঁদতে মুনি বললেন–আমাকে কর্মফলের জন্য যেখানেই আমার জন্ম হোক–মানুষ, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, তোমাতে যেন আমার মতি থাকে। তোমাতেই যেন আমার ভক্তি অটুট থাকে, যদি কোনদিন অভিমান আসে আমার, তা যেন হয় প্রভু দাস অভিমান।

সে এক অপূর্ব দৃশ্য, ভক্ত কাঁদে–ভগবানও কাঁদেন।

ভগবান বললেন–যুগে যুগে তুমি আমার দাস হবে, এখন আমার সঙ্গে আমারই লোকে চল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8
Pages ( 8 of 8 ): « পূর্ববর্তী1 ... 67 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *