Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » দ্বিধা || Soma Bhattacharyya

দ্বিধা || Soma Bhattacharyya

পর্ব ১

বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে আছে সেঁজুতি, ইউনিভার্সিটির ক্লাস দশটা থেকে,৯:১৫ ঘড়িতে, একটু অধৈর্য্য হয়ে উঠে ভিতরে ভিতরে,স্যার ভীষণ স্ট্রিক্ট, এখনোও বাস এলো না কেন? মায়ের শরীরটা আজ একটু খারাপ সকাল থেকেই, লো প্রেসার, মাথা ঘুরছে, রান্না কিছুটা এগিয়ে দিয়ে বেরোতে একটু দেরি,তার ওপর বাস নেই, বিরক্তির সুরে নিজের মনে বলে ওঠে, ভালো লাগে না… হঠাৎ একটা পরিচিত কন্ঠস্বর, কি হয়েছে? এমন সুন্দর সকাল, দেখো পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছে কত ফুল ধরেছে , সপ্তাহের প্রথম দিনে কোথায় উৎসাহে পড়াশোনা করবে,বিরক্ত কেন শুনি? একটু অপ্রভিত ভাবে সেঁজুতি তাকিয়ে দেখে স্বয়ম্ভূ বাইকে বসে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। সেঁজুতি একটু আড়ষ্ট ভঙ্গিতে অল্প হেসে বলে না মানে বাস আসতে দেরি করছে, ক্লাসের জন্য দেরি হলে স্যারের বকা খেতে হবে, তাই মুখ থেকে কথাগুলো বেরিয়ে….স্বয়ম্ভূ: বাইকে উঠে পড়ো, তোমায় পৌঁছে দিয়ে অফিসে যাবো। সেঁজুতি: একটু আশপাশে তাকিয়ে বলে না বাস এখনি এসে যাবে, আপনার ও দেরি হয়ে যাবে , আমার লেট এটেনডেন্স বাঁচাতে গিয়ে শেষে নিজের দেরি হয়ে যাবে।স্বয়ম্ভূ (একটু গম্ভীরভাবে): আমি তোমাকে মতামত দিতে বলিনি, বাইকে উঠে বসতে বলেছি, বাজে কথা না বলে উঠে পড়ো। সেঁজুতি একটু ইতস্তত করলেও বাইকে উঠে বসে। বাইকে উঠে বসতেই গাড়ি স্টার্ট করে দেয়, সেঁজুতি সাবধানে ধরে বসে,যাতে অস্বস্তিতে না পড়তে হয়।স্বয়ম্ভূরা বছর দুয়েক আগে এসেছে খিদিরপুরে, ওদের দুটো স্টপেজ আগে, ওর বাবা গেজেটেড অফিসার, চাকরির সুত্রে সেঁজুতির বাবার পরিচিত,ফ্ল্যাট কেনার পর আইনগত কিছু সমস্যার কারণে বেশ কয়েকবার সেঁজুতিদের বাড়িতে এসেছেন পরামর্শ করেছেন, সেই সুত্রে আলাপ স্বয়ম্ভূর সঙ্গে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন ইউনিভার্সিটির সামনে এসে গেছে খেয়াল করে নি সেঁজুতি, রাস্তায় সাবধানে বাইক চালানোর সময় কোনো কথা না বললেও স্বয়ম্ভূ একটু কৌতুকের ছলে বলে এবার নামতে পারো, না হলে সত্যি আমি অফিসে লেট খাবো, অবশ্য তোমার জন্য একদিন লেট হলে মন্দ হবে না,কি বলো? সেঁজুতি তাড়াতাড়ি নেমে বলে এমা, সেকি কথা,আসি এখন, সাবধানে যাবে।ক্লাস শুরু হতে মিনিট পাঁচেক বাকি, তাড়াতাড়ি ক্লাসরুমে ঢুকে বসে পড়ে,তনুকা পাশ থেকে বলে প্র্যাকটিকালের ডকুমেন্ট এনেছিস? সেঁজুতি,হ্যাঁ,আজ সাবমিট করে দেবো।বিহান পাশ থেকে আস্তে করে বলে,কার ঘাড়ে চেপে এলি কলেজে,বেশ স্মার্ট চেহারা,কে? সেঁজুতি: সবদিকে নজর রাখতে হবে তোকে? বাস পাচ্ছিলাম না তাই,স্বয়ম্ভূ দা একরকম জোর করেই পৌঁছে দিয়ে গেছে।বিহান: আমাদের তো কোন সময় পাত্তা দিলি না তোরা,যাক শুনে খুশি হলাম তোর ওপর জোর করা যায়। প্রফেসর ঠিক সেই সময় ক্লাসে আসেন, সেঁজুতি মন দিয়ে শুনে লিখতে থাকে…

পর্ব ২

ইউনিভার্সিটি থেকে ফেরার পথে মায়ের জন্য কিছু ফল কিনে নেয় সেঁজুতি, বাড়িতে ফিরে কলিং বেলে চাপ দেয়,মা এসে দরজা খুলে দেয়, সেঁজুতি: কেমন আছো এখন? মাথা ঘুরছে এখন? বাসবী দেবী: না, ওষুধ,ORS সব নেওয়ার পর ভালো হয়ে গেছি, সকালে কি যে হলো, তোর কলেজে যাওয়ার সময়, একটু থেমে তুই ভাত ঠিক করে খেয়েছিলি? ঠিক সময়ে পৌঁছতে পেরেছিলিস? সেঁজুতি: হ্যাঁ,ভাত খেয়ে বেরোলাম তো, তবে বাস আসছিল না, ঠিক সেই সময় স্বয়ম্ভূ দা বাইকে আসে,আমায় ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দিয়ে অফিসে যাবে বলতে,(একটু থেমে) তখন দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে একপ্রকার বাধ্য হয়ে ওর বাইকে চেপে গেছি আজ।
বাসবী দেবী: ছেলেটা খুব ভালো, কোনো অহংকার নেই, খুব সাধারণ থাকতে পছন্দ করে, এখনকার দেখনধারী সমাজে বিরল, ভালোই করেছিস, কিন্তু ওর অফিসে যেতে দেরি হয়ে গেছে হয়তো। সেঁজুতি: হুম, হতে পারে..
বাসবী দেবী: তোর জন্য চাউমিন বানিয়ে রেখেছি, খেতে খেতে একবার বরং ফোন করে নিস, এটাই ভদ্রতা,বুঝেছিস। সেঁজুতি: তুমি কেন রান্নাঘরে গিয়ে কাজ করেছ, আমরা কেউ বাড়িতে নেই, তোমায় বোঝানোর সাধ্য কার আছে!! বাসবী দেবী: মা হলে বুঝতে পারবি, এখন হাতমুখ ধুয়ে আয়। সেঁজুতি বেসিনে মুখ হাত ধুয়ে চাউমিন নিয়ে নিজের ঘরে বসে,খেতে খেতে ফোন করবে কি না ভাবছে এমন সময় মোবাইল বেজে ওঠে,স্বয়ম্ভূর ফোন। ফোনটা রিসিভ করতে জিজ্ঞেস করে কাকীমা কেমন আছেন এখন? কোনো প্রয়োজন হলে জানাবে অবশ্যই, তোমার বাবা ফিরেছেন? সেঁজুতি: মায়ের শরীর এখন ঠিক আছে, বাবা ফোন করেছিল, একটু দেরি হবে ফিরতে, তুমি ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছেছিলে? স্বয়ম্ভূ: না একটু জ্যাম ছিল, ঠিক আছে, কোনো অসুবিধা নেই। সেঁজুতি: আমার জন্য লেট হয়ে গেছে,ঐ জন্য উঠতে চাইছিলাম না , খুব খারাপ লাগছে আমার।স্বয়ম্ভূ: তোমার জন্য এইটুকু করতে যদি না পারি, তবে মান আর হুঁশ, মানুষ শব্দের ভূল ব্যাখ্যা হবে যে..
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর সেঁজুতির ফোনে তনুকার ফোন আসছে দেখে, সেঁজুতি বলে আরেকটা ফোন আসছে এখন রাখছি তবে, এরপর তনুকার ফোন ধরতে তনুকা বলে কি ব্যাপার কার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত তুই? বলতে গিয়ে বলে না সেঁজুতি, কিছু সময় কথা বলার পর ফোন রেখে দেয়। এরপর রাতের রান্না সারে মায়ের সঙ্গে, মনে মনে বলে, রান্নার পিসিরো এই সময়ে শরীর খারাপ হতে হলো, ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে, সেঁজুতি দরজা খুললে, বাবা বলেন কিরে তোর মা ঠিক আছে? সেঁজুতি বলে হ্যাঁ, ভালো আছে, তবে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভালো। বাসবী দেবী বলেন না, রিনা আসছে না, কাজের চাপে, গরমে হয়তো প্রেসারের গন্ডগোল হয়েছে, তোমরা ঐ নিয়ে চিন্তা করো না,মেয়ের পরীক্ষা হয়ে যাক, তারপর কোথাও একটু ঘুরে আসবো।

পর্ব ৩

পড়াশোনা করে ঘুমাতে বেশ রাত হয়ে যায়, আজকের দিনটা যেন অন্য রকম,এই প্রথম কারো বাইকে এতটা জার্নি করলো সেঁজুতি, একটা অদ্ভুত আবেশ যেন ছড়িয়ে আছে, হঠাৎ মোবাইলটা বেজে ওঠে, একটা অজানা নাম্বার, রিসিভ করে হ্যালো, কে বলছেন বললেও অপরপ্রান্ত থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে কেটে দেয় ফোনটা। সকালের অ্যালার্ম সেট করে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়, একটা পাখি যেন আলতো সুরে শিস দিচ্ছে, বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় এগিয়ে গিয়ে দেখে দূরের আমি গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে, একটু কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে একটা পাখি বাসা বেঁধেছে , মনটা বেশ ভালো হয়ে যায়, রান্নাঘরে গিয়ে চা বানিয়ে নিজের কাপে চা ভালে,মা বাবার চা ফ্লাস্কে রেখে দেয়।চা খেতে খেতে পড়তে বসে, মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে, রান্নার পিসি জানায় আজ কাজে আসছে, সেঁজুতি বলে, তোমার শরীর ঠিক আছে তো? রান্নার পিসি: হ্যাঁ, আজ ভালো আছি,এই বেরোচ্ছি বাড়ি থেকে। একবার দালানে উঁকি দিয়ে মা উঠেছে দেখে বলে রান্নার পিসি আসছে মা, তোমার চিন্তা নেই। আধঘন্টার মধ্যে রান্নার পিসি এসে যায়, ইউনিভার্সিটি যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেয়, কোনোরকমে ভাত খেয়ে নিয়ে মাকে ওষুধের প্যাকেট দিয়ে বলে মনে করে ওষুধগুলো খাবে। আজকে বাসস্ট্যান্ডে গিয়েই বাস পেয়ে যায়, বাসে জানলার পাশে বসতে পেয়ে যায়, গতকালের কথা ভেবে নিজের মনে হেসে ওঠে, অনলাইনে কিছু ডকুমেন্ট অর্ডার দিয়ে দেয়।

পর্ব ৪

সপ্তাহের মাঝে নতুনভাবে কোনো সমস্যার উৎপত্তি ঘটে নি, ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন নিয়ে সেঁজুতি,ওর বন্ধুরা একটু টেনশনে করতে থাকে,ক্যান্টিনে বিহান ইয়ার্কি ছলে বলে রেজাল্ট ভালো করতেই হবে, তারপর ভালো চাকরি খোঁজার দরকার, তবেতো তনুকা আজীবন আমার ঘাড়ে বসে খাবে।তনুকা রাগ দেখিয়ে বলে, কোনো দরকার নেই, আমি যথেষ্ট সুন্দরী, কোনো ভালো পাত্র বাবা নিশ্চিত জুটিয়ে দিতে পারবে। সেঁজুতি: তোরা থামবি, প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন, আবার বড়ো বড়ো কথা, ঠিক বিয়ে হবে তোদের,সবুরে মেওয়া ফলে …. এমন সময় মোবাইলটা বেজে ওঠে, মোবাইল রিসিভ করে সেঁজুতি : হ্যাঁ মা বলো, শরীর ঠিক আছে? বাসবী দেবী: তুই এখনি একবার নার্সিংহোমে যা, তোর বাবার শরীরটা অফিসে হঠাৎ খারাপ হয়েছে,মেডিক্লেম কার্ড আমি একজনকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি, সাবধানে যাবি, সেঁজুতি: সেকি,কি হলো হঠাৎ, সকালে তো শরীরের কোনো অস্বস্তি বোধ আছে বলে মনে হয় নি, ঠিক আছে আমি এখনি যাচ্ছি। ফোন রেখে বন্ধুদের বলে,আমায় নার্সিংহোমে যেতে হবে বাবার শরীরটা হঠাৎ খারাপ হয়েছে।বিহান: আমি,তনু যাবো তোর সঙ্গে, সেঁজুতি: কিন্তু, এখনও ক্লাস বাকি আছে! বিহান: কারোর থেকে জেনে নেব,চল আর দেরি করা ঠিক হবে না। ওরা একসাথে বেরিয়ে পড়ে, নার্সিংহোমে পৌঁছে দেখে সাত্যকি বাবু বসে আছেন, সেঁজুতিকে দেখে উঠে এগিয়ে এসে বলেন, উৎসব বাবু নিজের টেবিলে কাজ করতে করতে হঠাৎ এসির মধ্যেও ঘেমে ওঠেন, চেয়ারে অল্প এলিয়ে পড়েন, বেয়ারা এসে খবর দিতে ছুটে তাই,অথচ তার আধাঘন্টা আগেই আমার সঙ্গে কথা হয়েছে, দেরি না করে তৎক্ষণাৎ নার্সিংহোমে নিয়ে আসি,ডাক্তারবাবু কিছু টেস্ট করিয়েছেন, এখন অনেকটাই স্বাভাবিক,একটু পরে দেখা করা যাবে। সেঁজুতি: গতকাল মায়ের শরীরটা খারাপ হয়েছিল, কিন্তু বাবার সঙ্গে সকালবেলা কথা হলো, কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি।সাত্যকি বাবু: চিন্তা করো না,সব ঠিক হয়ে যাবে।
ডাক্তারবাবু রাউন্ডে এলে সেঁজুতি কথা বলে ,ডাক্তারবাবু বলেন হালকা স্ট্রোক,ভয়ের কিছু নেই, একটু সাবধানে রাখতে হবে, কালকের দিনটা অবসার্ভ করে,সব ঠিক থাকলে তারপর রিলিজ করে দেবো।বিহান,তনুকাকে সেঁজুতি বলে তোরা বাড়িতে ফিরে যা, কাল ক্লাসে যেতে পারবো না , একপ্রকার জোর করেই ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। মাকে ফোন করে বলে বাবা ভালো আছে এখন, আমি খানিকটা থেকে চলে যাবো, ফোনে কথা বলতে বলতে দেখে স্বয়ম্ভূ এসে দাঁড়িয়েছে, সেঁজুতি মাকে বলে এখন রাখছি ফোন।স্বয়ম্ভূ : চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে, বাবা ফোন করেছিল আমায়, অফিস থেকে বেরিয়ে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল, আমি একবার গিয়ে কথা বলে আসছি। সেঁজুতি: আমার সঙ্গে কথা হয়েছে ডাক্তারবাবুর, বাবার মাইনর স্ট্রোক হয়েছে।স্বয়ম্ভূ: তবু,যদি কোন ওষুধ বা কোন কিছু কিনে দিতে হয়, একবার দেখে নিচ্ছি,যদি কাকুর সঙ্গে দেখা করতে দেয়। তুমি একটু অপেক্ষা কর আমি ঘুরে আসছি,স্বয়ম্ভূ এগিয়ে যায় কেবিনের দিকে, সেঁজুতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে পড়ে, মনে মনে বলে হা ঈশ্বর সহায় হোন। একটু পরে স্বয়ম্ভূ ফিরে এসে বলে দেখা করতে দেয় নি, তবে দেখতে পেলাম কাকুকে।চলো এখানে ক্যান্টিনে একটু কিছু খেয়ে তোমায় বাড়িতে পৌঁছে দেবো। সেঁজুতি: না, আমি কিছু খাব না, আমি চলে যেতে পারবো।স্বয়ম্ভূ: বিপদের সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হবে, বাবা ফেরবার সময় আমাকে বলেছেন তোমায় বাড়িতে পৌঁছে দিতে, ঠিক আছে চলো একটু চা খেয়ে বেরিয়ে যাবো। চায়ের দোকানে চায়ের সঙ্গে দুটো অমলেট অর্ডার দিয়ে, বলে আমার খিদে পেয়ে গেছে, বেশি সময় লাগবে না।
সেঁজুতি: না অসুবিধা নেই.. দুজনে টুকরো কথা বলতে বলতে,চা পান করে উঠে পড়ে। বাইক খুব সাবধানে চালিয়ে নিয়ে যায় স্বয়ম্ভূ,যাতে সেঁজুতির কোনো অস্বস্তি বোধ না হয়। সেঁজুতির মনে স্বয়ম্ভূর প্রতি শ্রদ্ধা জন্মে, বাড়িতে পৌঁছে রেবতী দেবীর সঙ্গে আলোচনা করে ওরা দুজন, স্বয়ম্ভূ: যদি কাল সেকেন্ড হাফে কাকুর রিলিজ হয়ে যায় তো ভালো, আপনি চিন্তা করবেন না, নিজের খেয়াল রাখবেন। বাসবী দেবী: কি বলে তোমাদের ধন্যবাদ দেবো বাবা, তোমার বাবা আজকে যে তৎপরতা দেখিয়েছেন,তাই মানুষটা কিছুটা হলেও সুস্থ হয়ে উঠছেন, ভগবান তোমার মঙ্গল করুন। স্বয়ম্ভূ: এটুকু আমাদের কর্তব্য কাকিমা,আজ আসছি, কাল অফিস থেকে নার্সিংহোমে যাবো, সেঁজুতির দিকে তাকিয়ে, টেনশন করবে না,আসি এখন।

পর্ব ৫

রাতে খাওয়ার সময় মাকে বলে তুমি ওষুধ খেয়েছ, বাসবী দেবী: হ্যাঁ, সামনে তোর পরীক্ষা তোর, বাবা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলে বাঁচি, সেঁজুতি: চিন্তা করো না মা,ডাক্তারবাবু বলেছেন ভয়ের মতো কিছু ঘটে নি, তবে কয়েকদিন বাবাকে রেস্টে থাকতে হবে। রাতে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারে না সেঁজুতি, বাবার জন্য একটা অজানা টেনশন কাজ করে, সেই সময়ে তনুকা ফোন করে খবর নেয়,তনুকার বলে সত্যি তোর বাবার অফিসে লোকজন আজ খুব তৎপরতা দেখিয়েছেন, বড়ো বিপদ হতে পারতো, সত্যি এখনো বোধহয় ভালো মানুষের সংখ্যাটাই বেশি, তুই টেনশন করিস না,তনুকার সাথে কথা বলার পর অনেকটা হালকা লাগে, একবার নার্সিংহোমে ফোন করে খোঁজ নেয়, তারপর আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন বাসবী দেবী নার্সিংহোমে যেতে চাইলেও সেঁজুতি বলে স্বয়ম্ভূ দা,ওর বাবা নিশ্চিত আসবেন, তুমি বরং বাড়িতে থাকো,যদি বাবাকে আজ রিলিজ করে তখন সুবিধা হবে। বাসবী দেবী: আমি ভাত করেছি, দুটো খেয়ে যা,এই সময়ে শরীর সুস্থ রাখার সবচেয়ে বেশি দরকার। সেঁজুতি কথা না বাড়িয়ে স্নান সেরে ভাত খেয়ে মেডিক্লেমের ডকুমেন্ট , কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। নার্সিংহোমে ১২টাতে ডাক্তারবাবু রাউন্ডে এসে বলেন তোমার বাবা বিপদ কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন আশা করছি eco cardiogram এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দুপুরে আমরা কিছু টেস্ট করাবো, রিপোর্ট ভালো হলে আজ রাতে রিলিজ করে দেয়া হবে। মনটা ভালো হয়ে যায় সেঁজুতির, চায়ের স্টলে বসে মা,তনুকাকে ফোন করে খবর দেয়, ঠিক সেই সময়ে স্বয়ম্ভূ ওর বাবার সঙ্গে ঢোকে। সেঁজুতির টেবিলের দিকে এগিয়ে এলে সেঁজুতি উঠে দাঁড়িয়ে বলে চা খাবেন তো, দুটো অর্ডার করে দি?সাত্যকি বাবু: তোমায় কি না বলা যায় মা,অর্ডার দিয়ে দাও,ডাক্তার বাবু কি বললেন? সেঁজুতি: দুটো চা অর্ডার দিয়ে বলে আজকে রাতে মনে হয় রিলিজ করবে,আর একটা রিপোর্ট দেখে নিয়ে,আমায় মেডিক্লেম জোনে ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে।সাত্যকি বাবু স্বয়ম্ভূর দিকে তাকিয়ে, তুই যা সেঁজুতির সাথে, অনেক ফরম্যালিটিস থাকে, দুজন থাকলে সুবিধা হবে।চা পান করে সেঁজুতি, স্বয়ম্ভূ একসাথে পেমেন্ট করে দেয়। বিহান ভিজিটিং আওয়ারে দেখা করতে আসে।ঘন্টা খানেক অপেক্ষার পর ওদের জানানো হয় উৎসব বাবুকে রিলিজ করা হবে।সাত্যকি বাবু বলেন আমি গাড়ি এনেছি, কোনো অসুবিধা হবে না, বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে সেঁজুতি বলে বাড়িতে চলো বাবা। রাস্তায় একটু জ্যাম থাকায় প্রায় রাত দশটায় ওরা একসাথে বাড়িতে পৌঁছাতে পারে,সাত্যকি বাবু বলেন এই সপ্তাহে রেস্ট নিন, অনেক ভাগ্য করে এরকম মেয়ে পেয়েছেন। বাসবী দেবী: আপনার ছেলে খুব ভালো, আমাদের এই বিপদের সময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটার সামনে পরীক্ষা, বড়ো চিন্তা হয়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে তো হবেই।সাত্যকি বাবু: নিশ্চিত পারবে, উৎসব বাবুর মুখে শুনেছি ওর আগেরবার রেজাল্ট খুব ভালো হয়েছে, ওকে উৎসাহ দিতে হবে, আমার ছেলেকে বলতে থাকি, অফিসের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাগুলো দিয়ে প্রমোশনের চেষ্টা করতে থাক, গতিময়তাই জীবন…

পর্ব ৬

সেঁজুতি বাড়ির প্রয়োজন অনুযায়ী বাজার, বাবার ওষুধ আনতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, বান্ধবীদের দামি পোশাক ওর মনকে নাড়া দিতে অপারগ। উৎসব বাবু সুস্থ হয়ে উঠছেন, অফিসে যাতায়াত শুরু করেছেন। মাঝে মাঝে স্বয়ম্ভূ ফোন করে সেঁজুতিকে, খোঁজ খবর নেয়, পরীক্ষা কবে থেকে জানে,কোনো দরকার হলে যেন জানতে দ্বিধা করো না,ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতে সেঁজুতির মনে হয় স্বয়ম্ভূ ওকে পছন্দ করে , কিন্তু কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারে না। পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়, প্রশ্ন একটু নতুন ধরনের হওয়ায়, কনসেপ্ট বুঝে উত্তর দিলেও সম্পূর্ণ স্বস্তি হয় না। পরীক্ষার পর বাবাকে ডাক্তারের কাছে চেকআপ করে ফেরবার সময় স্বয়ম্ভূর সাথে দেখা হয়ে যায়, বাড়ি অবধি আসে স্বয়ম্ভূ, বাসবী দেবী বলেন আজ রাতে খেয়ে যাও, আমি তোমার মাকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি। সেঁজুতি বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে স্বয়ম্ভূ ফোনে কাজ করছে, সেঁজুতি মাকে রান্নাঘরে গিয়ে বলে কি বানাচ্ছো? বাসবী দেবী: লুচি, বেগুন ভাজা,আলুর দম , মিষ্টি আছে ফ্রিজে। রান্নার পিসি বলে তোমরা কথা বলো, আমরা সামলে নিচ্ছি। রাতে খাবার পর স্বয়ম্ভূ কিছুটা গল্প করে বেরিয়ে যায়। রাতে সেঁজুতির ফোনে ম্যাসেজ করে তোমায় আমার খুব ভালো লাগে, তোমায় ছাড়া জীবনের সবকিছু বৃথা মনে হয়,একসাথে অনেকগুলো বছর কাটাতে চাই, সেটা সম্ভব হতে পারে কি? কোনো উত্তর দিতে পারে না সেঁজুতি,ম্যাসেজটা ডিলিট করে দেয়। নেট অফ করে ঘুমিয়ে পড়ে।রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে মনে হয় স্বয়ম্ভূ দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে, ঘুমটা ভেঙে যায়, একটা অস্বস্তি বোধ হয়, মনে মনে বলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে আমায়,এই সময়ে নিজেকে দুর্বল হতে দিলে চলবে না, একটু জল খেয়ে, বসে নিজের বায়োডেটা রেডি করে, এখন রেজাল্ট এর অপেক্ষা, একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তারপর আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম ভাঙার পর চা করে সামনের বাগানে পায়চারি করতে থাকে, ইচ্ছে করে ফোনটাকে দূরে সরিয়ে রাখে। মায়ের কথায় বাজারে টুকিটাকি জিনিষ নিতে বেরোয়, হঠাৎ স্বয়ম্ভূ সামনে এসে দাঁড়ায়, গম্ভীর হয়ে কানের কাছে বলে যদি আমার প্রতি একটু সহানুভূতি থেকে থাকে,আজ পাঁচটায় ক্যাফেটেরিয়ায় আসবে,আসতে তোমায় হবেই, বলে বেরিয়ে যায়। সেঁজুতি আশপাশে তাকিয়ে দেখে কোনো পরিচিত মুখ আছে কি না, না কেউ নেই,হাঁফ ছেড়ে বাঁচে যেন….


পর্ব ৭

তিতিরের ফোন আসে একটু রাতে ,তিতিন বলে আগামীকাল নেহাকে ইউনিভার্সিটি নিয়ে যাবো,ওর সার্টিফিকেটগুলো উদ্ধার করতে হবে, বীথি: তোমার শরীর ঠিক আছে? তিতিন: হ্যাঁ কাল ডাক্তার দেখিয়েছি, স্পন্ডিলাইটিস বলছে, রেগুলার ব্যায়াম দিয়েছে। বীথি: হুম ব্যায়াম ঠিক ভাবে করবে, নেহার সার্টিফিকেট পেলে কোন জায়গায় ইনভলভ করাতে হবে, আমি যেমন কিছু সময় ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে থাকি, জীবন তো কারও জন্য থেমে থাকবে না।তিতিন: ঠিক বলেছিস। ওর সঙ্গে যাচ্ছি ওর হারানো কনফিডেন্স ফিরে পাবে। বিথী: খুব ভালো।আগামী সপ্তাহে একদিন NGO তে যাবো। ফোন রেখে বাড়িতে বিশালের অগোছালো জামা কাপড় এক জায়গায় রাখার সময় ওষুধের ব্যাগ টেবিলে তুলে রাখে।
রাতে বাবা ছেলে গল্প করছে দেখে বারান্দায় চেয়ারে আলতো হেলান দিয়ে গান শুনতে থাকে, কলরব শোয়ার আগে বলে কাল পড়ার ছুটি সকালে তাড়াতাড়ি ডাকবে না। বিথী চুপচাপ তাকিয়ে মুচকি হেসে গান শুনতে থাকে।বেশ কিছু সময় পর হঠাৎ বিশাল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে দেখে বিথী মুখটা তুলে উঠে দাঁড়ায়, কিন্তু অবাক হয়ে যায় বিশালের মুখচোখ যেন উদভ্রান্তের মত, বিথী: কি হয়েছে? কিছু বলবে? বিশাল বিথীর কাঁধ চেপে ধরে বলে বলো তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না,বলো তুমি নিজের যত্ন নেবে। বিথী খুব অবাক হয়ে বলে কোথায় যাবো? তোমার ছেলে, সংসার ছেড়ে যাওয়ার জায়গাই বা কোথায়? বিশাল: নিজের যত্ন নিতে হবে, আমি আর তোমাকে কোনদিন কষ্ট দেবো না, কিন্তু মনে রাগ চেপে ধরে রেখো না। বিথী: কি হয়েছে বলোতো? ঝগড়া অশান্তি সব পরিবারে হয় তাই বলে কি কেউ ছেড়ে চলে যায়? মাথা খারাপ! এই বয়সে কে নেবে আমায়! এটা খুব রূঢ় সত্য। বিশাল: স্যারের স্ত্রী আজ আত্মহত্যা করেছে, এইমাত্র খবর পেলাম, সন্দেহের বশে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন! জানি না কতটা সত্য কতটা মিথ্যা, কিন্তু আমি, আমরা তোমাকে ছাড়া বাঁচব না,আমায় ক্ষমা করে দাও, বিশাল বিথীকে শিশুর মতো জড়িয়ে ধরে ,আজ অনেক বছর পর যেন বিথী পুরানো বিশালকে খুঁজে পায়। জীবন বোধ এইরকমই,সুপ্ত ভালোবাসা যেন প্লাবিত আজ দুজনকে ভাসিয়ে নিয়ে এগিয়ে চলে পুরাতন প্রেম নতুন আবেশে…

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8
Pages ( 1 of 8 ): 1 23 ... 8পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *