Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জঙ্গলগড়ের চাবি (১৯৮৭) || Sunil Gangopadhyay » Page 19

জঙ্গলগড়ের চাবি (১৯৮৭) || Sunil Gangopadhyay

রাজকুমার বজ্রমুষ্টিতে সন্তুর ঘাড় চেপে ধরে প্রায় ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে টেনে এনে তুলল একটা জিপ গাড়িতে। নিজে ড্রাইভারের সিটে বসে মাঝখানে বসাল সন্তুকে। আর পাশে খোলা রিভলভার হাতে নিয়ে বসল কর্নেল।

গাড়িতে স্টার্ট দেবার পর রাজকুমার বলল, কেউ আমাদের ফলো করলে সোজা গুলি চালাবে। আমরা কিছুতেই ধরা দেব না।

তারপর সন্তুর দিকে ফিরে চিবিয়ে-চিবিয়ে বলল, কোনও রকম চালাকির চেষ্টা কোরো না, খোকা। প্রথমেই প্রাণে মারব না তোমায়! আমার লোকদের বলা আছে, তুমি পালাবার চেষ্টা করলেই তোমার একটা পা খোঁড়া করে দেবে, দ্বিতীয়বারে একটা হাত কেটে দেবে। সারা জীবন ল্যাংড়া আর নুলো হয়ে থাকতে হবে, মনে রেখো?

সন্তু কোনও কথা বলল না। কাকাবাবু যে পাগল হয়ে যাননি, এমনকী তাঁর যে পক্ষাঘাতও হয়নি, এই আনন্দেই সে আর কোনও বিপদের গুরুত্ব বুঝতে পারছে না। এই ডাকাতরা কাকাবাবুর কোনও ক্ষতি করতে পারেনি, শেষ পর্যন্ত পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। এরা যে সন্তুকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, সেজন্য সন্তুর একটুও ভয় নেই।

অন্য লোকগুলো আসছে পেছনের একটা গাড়িতে। হেডলাইটের আলোয় সন্তু দেখতে পাচ্ছে, সামনে কোনও রাস্তা নেই। এখানে জঙ্গল সেরকম ঘন নয়। আলাদা আলাদা বড় বড় গাছ, জিপটা চলছে এরই ফাঁক দিয়ে এঁকে বেঁকে।

আন্দাজ প্রায় আধঘণ্টা চলার পর সন্তু দেখল সামনে একটা নদী। প্রথমে মনে হয়েছিল জিপটা একেবারে নদীতেই নেমে পড়বে। কিন্তু খ্যাঁচ করে ব্রেক কষে রাজকুমার সেটা থামাল একেবারে জলের কিনারে।

রাজকুমার বলল, কর্নেল, ওকে তোমার ঘোড়ায় তোলো!

সত্যি সেখানে গোটা পাঁচেক ঘোড়া বাঁধা আছে। বড় ঘোড়া নয়, ছোট ছোট পাহাড়ি টাটুঘোড়ার মতন। সন্তু দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে এই রকম ঘোড়া দেখেছে।

কর্নেল প্রথমে সন্তুকে একটা ঘোড়ার পিঠে চাপাল। তারপর নিজেও সেই ঘোড়াটায় চেপে বসল। রাজকুমার বসল তার পাশের ঘোড়ায়। তারপর অন্য লোকদের দিকে তাকিয়ে হুকুম দিল, তোমাদের মধ্যে দুজন জিপ নিয়ে চলে যাও। বাকিরা এসো আমাদের সঙ্গে।

সন্তুদের ঘোড়াটা প্রথমে কিছুতেই জলে নামতে চায় না। কর্নেল তার দুপায়ের গোড়ালি দিয়ে বারবার খোঁচা মারতে লাগল তার তলপেটে। তারপর ঘোড়াটা হঠাৎ হুড়মুড় করে ঝাঁপিয়ে পড়ল নদীতে।

সন্তু আগে কখনও এভাবে নদী পার হয়নি। সিনেমাতে সে এরকম দৃশ্য কয়েকবার দেখেছে। সে সব ওয়েস্টার্ন ছবি। এই দেশেও যে কেউ ঘোড়ার পিঠে নদী পার হয়, তা তার ধারণাতেই ছিল না। তার দারুণ উত্তেজনা লাগছে।

নদীটাতে জল বেশি নয়, তবে বেশ স্রোত আছে। সন্তুর কোমর পর্যন্ত জলে ভিজে গেল। সন্তু খুব ভাল সাঁতার জানে। একবার তার লোভ হল কর্নেল-কে এক ধাক্কা দিয়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়তে। ড়ুব সাঁতার দিয়ে সে অনেকটা দূরে চলে যেতে পারবে। জলের মধ্যে ওরা গুলি করলেও তার গায়ে লাগবে না।

কিন্তু সন্তু সেই লোভ সংবরণ করল। সে ভাবল, দেখাই যাক না এরা কোথায় তাকে নিয়ে যায়। এদের আস্তানাটা তার চেনা দরকার।

নদী পেরিয়ে অন্য পারে পৌছবার পর ঘোড়া চলতে লাগল দুলকি চালে। মাঝে-মাঝে ঘোড়াটা গা ঝাড়া দিচ্ছে আর তখন তার গা থেকে বৃষ্টির মতন জলের কণা উড়ছে। সেই সময় ঘোড়ার পিঠে বসে থাকাই মুশকিল!

সন্তুর সারা শরীর জবজবে ভিজে। তার একটু-একটু শীত করছে। আকাশে এখন পরিষ্কার চাঁদ উঠেছে, তাতে চারদিকটা বেশ দেখা যায়। এদিকে আর জঙ্গল প্রায় নেই। উঁচু নিচু পাহাড়ি জায়গা। সন্তুর মনে হল, ঠিক যেন টেক্সাস কিংবা আরিজোনার কোনও প্রান্তর দিয়ে চলেছে তাদের ঘোড়া।

একটা ছোট টিলার ওপর উঠে একটা পাথরের বাড়ির সামনে থামল ঘোড়াগুলো। টপাটপ নেমে পড়ল সবাই। রাজকুমার সেই বাড়িটার সামনের লোহার গেট ধরে ঝাঁকুনি দিতেই ভেতর থেকে কেউ একজন বলল, আসছি, আসছি।

বাড়িটা ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার, এবারে তার একটা ঘরে জ্বলে উঠল একটা লণ্ঠনের আলো। তারপর সেই লণ্ঠনটা উঁচু করতেই দেখা গেল তার মুখ। ঠিক যেন একটা গেরিলা।

লোকটি বলল,এত তাড়াতাড়ি চলে এলেন?

রাজকুমার বলল, মেজর, এই একটা ছোঁড়াকে এনেছি, একে কিছুদিন তোমার জিম্মায় রাখতে হবে।

মেজর লণ্ঠনটা সন্তুর মুখের কাছে এনে বলল, এ তো দেখছি একটা দুধের ছেলে। একে এনে কী লাভ হল? ধাড়িটা কোথায়?

রাজকুমার বলল, আসবে, আসবে, সেও আসবে। কান টানলেই মাথা আসে। এই ছোঁড়াটাকে এখন দোতলার কোণের ঘরে রাখো। দুধের ছেলে বলে হেলাফেলা কোরো না। এ মহা বিচ্ছু। একটু আলগা দিলেই পালাবার চেষ্টা করবে।

কর্নেল বলল, রাজকুমার, এবার তা হলে আমি যাই?

রাজকুমার অবাক হয়ে বলল, যাবে মানে? কোথায় যাবে?

কর্নেল বলল, আমি আর থেকে কী করব? আমার তো এক রাত্তির ফ্রি সার্ভিস দেবার কথা ছিল। হাওয়া খুব গরম, আমি আর ত্রিপুরায় থাকতে চাই না।

রাজকুমার কর্নেলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কটমট করে তাকাল। তারপর বলল, তোমার নামে যে কেস ঝুলছে, তাতে তোমার নির্ঘাত ফাঁসি হবে তা জানো?

কর্নেল বলল, সেইজন্যই তো আর আমি একদিনও ত্রিপুরায় থাকতে চাই না।

রাজকুমার বলল, তুমি না চাইলেই কি ত্রিপুরা ছেড়ে যেতে পারবে? তা ছাড়া যাবেই বা কোথায়? অসম, পশ্চিম বাংলা এই দু জায়গাতেই তোমার নামে হুলিয়া ঝুলছে।

কর্নেল বলল, সে কোথায় যাব, তা আমি ঠিক বুঝে নেব।

রাজকুমার বলল, তোমার মাথায় যা ঘিলু আছে, তাতে তুমি কিছুই বুঝবে না।

কর্নেল এবার রেগে উঠে বলল, কেন আমায় আবার এসব ঝুটঝামেলায় জড়াচ্ছেন? এমনিতেই আমি মরছি নিজের জ্বালায়…আজ রাত্তিরে আমি সার্ভিস দিয়েছি, আর কিছু পারব না!

রাজকুমার বলল, ওরে গাধা! একমাত্র ত্রিপুরাতেই তুই নিরাপদ। এখানে আর কেউ তোর টিকি ছুঁতে পারবে না। তোর নামে এখানে যে কেস ছিল, তা আমি তুলে নেবার ব্যবস্থা করেছি।

কর্নেল খানিকটা অবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, সত্যি বলছেন? নাকি আমায় চুপকি দিচ্ছেন?

মেজর এবার বলল, ও কর্নেলদাদা, রাজকুমারের সঙ্গে তর্ক কোরো না, উনি যা বলছেন, মেনে নাও! ত্রিপুরা পুলিশ তোমায় আর কিছু বলবে না।

রাজকুমার এবার মেজরের দিকে ফিরে বলল, এ কী, তুমি এখনও যাওনি? ছোঁড়াটাকে নিয়ে এখানেই দাঁড়িয়ে আছ, ও সব শুনছে? যাও!

মেজর এবার সন্তুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। যেতে যেতে সন্তু শুনল, কর্নেলের একজন সঙ্গী বলছে, রাজকুমার, তা হলে আমার কেসটাও তুলে নেওয়া হবে তো?

সন্তু অবশ্য এই সব কথার মানে ঠিক বুঝতে পারল না। কেস কী? এদের নামে কিসের কেস? রাজকুমার নিজেই তো একটা ডাকাত, সে ওদের নামে পুলিশ কে তুলে নেবে কী করে?

ঘোরানো একটা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে এসে মেজর থামল একটা। ঘরের সামনে। দরজাটা খুলে সে সন্তুকে জিজ্ঞেস করল, কিছু খেয়ে-টেয়ে এসেছ তো, নাকি এত রাত্তিরে খাবার দিতে হবে?

সন্তু বলল, না, খাবার চাই না। একটা কথা জিজ্ঞেস করব? তোমার নাম মেজর কেন? তুমি কি মিলিটারির লোক?

লোকটি হা-হা করে হেসে উঠে বলল, ওসব কথা জিজ্ঞেস করতে নেই, বুঝলে খোকা? সাধ করে এই বিপদের মধ্যে এসেছ কেন?

সন্তু বেশ স্মার্টলি বলল, আর বেশিদিন থাকব না, কাল-পরশু ফিরে যাব ভাবছি!

মেজর ভুরু তুলে বলল, তাই নাকি? কাল-পরশু? এত তাড়াতাড়ি? হা-হা-হা-হা!

লোকটির মুখের চেহারা গেরিলার মতন হলেও কথাবার্তা কিংবা হাসিটা তেমন নিষ্ঠুর নয়। বরং বেশ যেন মজাদার লোক বলে মনে হয়। হাসির সময় তার মস্ত গোঁফটা নাচে।

ঘরের মধ্যে এক পা দিয়ে সে বলল, এসো খোকাবাবু, দ্যাখো, আমাদের অতিথিশালাটি তোমার পছন্দ হয় কি না! এসো, এসো, বাইরে দাঁড়িয়ে থেকো না।

লোকটি সন্তুর হাত ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগেই। ওর হাতে কোনও অস্ত্রও নেই। গোটা বাড়িটা অন্ধকার, এখন ইচ্ছে করলেই সন্তু এক ছুটে কোথাও লুকিয়ে পড়তে পারে। কিন্তু সন্তু বুঝতে পারল, সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। নীচে অন্য সবাই রয়েছে, শিকারি কুকুরের মতন তাড়া করে ওকে ঠিক খুঁজে বার করবে।

সন্তু ঘরের মধ্যে ঢুকে এল। এ ঘরে কোনও খাট, চেয়ার, টেবিল নেই। মেঝেতে একটা বিছানা পাতা। বিছানা মানে শুধু একটা কম্বল আর বালিশ। আর একটা জলের কুঁজো।

মেজর বলল, কাল সকালে তোমায় গরম দুধ খাওয়াব। দেখো, এখানকার দুধের স্বাদ কত ভাল। তুমি খরগোশ খেতে ভালবাসো? আজ একটা খরগোশ ধরেছি, সেটাকে রান্না করব কাল। তুমি রুটি খাও, না ভাত খাও?

সন্তু জিজ্ঞেস করল, এটা কি হোটেল?

মেজর অকারণে আবার হেসে উঠল। তারপর গোঁফ মুছে বলল, শোনো ছেলে। একে এনে কী লাভ হল? ধাড়িটা কোথায়?

রাজকুমার বলল, আসবে, আসবে, সেও আসবে। কান টানলেই মাথা আসে। এই ছোঁড়াটাকে এখন দোতলার কোণের ঘরে রাখো। দুধের ছেলে বলে হেলাফেলা কোরো না। এ মহা বিচ্ছু। একটু আলগা দিলেই পালাবার চেষ্টা করবে।

কর্নেল বলল, রাজকুমার, এবার তা হলে আমি যাই?

রাজকুমার অবাক হয়ে বলল, যাবে মানে? কোথায় যাবে?

কর্নেল বলল, আমি আর থেকে কী করব? আমার তো এক রাত্তির ফ্রি সার্ভিস দেবার কথা ছিল। হাওয়া খুব গরম, আমি আর ত্রিপুরায় থাকতে চাই না।

রাজকুমার কর্নেলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কটমট করে তাকাল। তারপর বলল, তোমার নামে যে কেস ঝুলছে, তাতে তোমার নিঘাত ফাঁসি হবে তা জানো?

কর্নেল বলল, সেইজন্যই তো আর আমি একদিনও ত্রিপুরায় থাকতে চাই না।

রাজকুমার বলল, তুমি না চাইলেই কি ত্রিপুরা ছেড়ে যেতে পারবে? তা ছাড়া যাবেই বা কোথায়? অসম, পশ্চিম বাংলা এই দু জায়গাতেই তোমার নামে হুলিয়া ঝুলছে।

কর্নেল বলল, সে কোথায় যাব, তা আমি ঠিক বুঝে নেব।

রাজকুমার বলল, তোমার মাথায় যা ঘিলু আছে, তাতে তুমি কিছুই বুঝবে না।

কর্নেল এবার রেগে উঠে বলল, কেন আমায় আবার এসব ঝুট ঝামেলায়। জড়াচ্ছেন? এমনিতেই আমি মরছি নিজের জ্বালায়…আজ রাত্তিরে আমি সার্ভিস দিয়েছি, আর কিছু পারব না!

রাজকুমার বলল, ওরে গাধা! একমাত্র ত্রিপুরাতেই তুই নিরাপদ। এখানে আর কেউ তোর টিকি ছুঁতে পারবে না। তোর নামে এখানে যে কেস ছিল, তা আমি তুলে নেবার ব্যবস্থা করেছি।

কর্নেল খানিকটা অবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, সত্যি বলছেন? নাকি আমায় চুপকি দিচ্ছেন?

মেজর এবার বলল, ও কর্নেলদাদা, রাজকুমারের সঙ্গে তর্ক কোরো না,

উনি যা বলছেন, মেনে নাও! ত্রিপুরা পুলিশ তোমায় আর কিছু বলবে না।

রাজকুমার এবার মেজরের দিকে ফিরে বলল, এ কী, তুমি এখনও যাওনি? ছোঁড়াটাকে নিয়ে এখানেই দাঁড়িয়ে আছ, ও সব শুনছে? যাও!

মেজর এবার সন্তুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। যেতে যেতে সন্তু শুনল, কর্নেলের একজন সঙ্গী বলছে, রাজকুমার, তা হলে আমার কেসটাও তুলে নেওয়া হবে তো?

সন্তু অবশ্য এই সব কথার মানে ঠিক বুঝতে পারল না। কেস কী? এদের নামে কিসের কে? রাজকুমার নিজেই তো একটা ডাকাত, সে ওদের নামে পুলিশ কে তুলে নেবে কী করে?

ঘোরানো একটা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে এসে মেজর থামল একটা ঘরের সামনে। দরজাটা খুলে সে সন্তুকে জিজ্ঞেস করল, কিছু খেয়ে-টেয়ে এসেছ তো, নাকি এত রাত্তিরে খাবার দিতে হবে?

সন্তু বলল, না, খাবার চাই না। একটা কথা জিজ্ঞেস করব? তোমার নাম মেজর কেন? তুমি কি মিলিটারির লোক?

লোকটি হা-হা করে হেসে উঠে বলল, ওসব কথা জিজ্ঞেস করতে নেই, বুঝলে খোকা? সাধ করে এই বিপদের মধ্যে এসেছ কেন?

সন্তু বেশ স্মার্টলি বলল, আর বেশিদিন থাকব না, কাল-পরশু ফিরে যাব ভাবছি!

মেজর ভুরু তুলে বলল, তাই নাকি? কাল-পরশু? এত তাড়াতাড়ি? হা-হা-হা-হা!

লোকটির মুখের চেহারা গেরিলার মতন হলেও কথাবার্তা কিংবা হাসিটা তেমন নিষ্ঠুর নয়। বরং বেশ যেন মজাদার লোক বলে মনে হয়। হাসির সময় তার মস্ত গোঁফটা নাচে।

ঘরের মধ্যে এক পা দিয়ে সে বলল, এসো খোকাবাবু, দ্যাখো, আমাদের অতিথিশালাটি তোমার পছন্দ হয় কি না! এসো, এসো, বাইরে দাঁড়িয়ে থেকো না।

লোকটি সন্তুর হাত ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগেই। ওর হাতে কোনও অস্ত্রও নেই। গোটা বাড়িটা অন্ধকার, এখন ইচ্ছে করলেই সন্তু এক ছুটে কোথাও লুকিয়ে পড়তে পারে। কিন্তু সন্তু বুঝতে পারল, সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। নীচে অন্য সবাই রয়েছে, শিকারি কুকুরের মতন তাড়া করে ওকে ঠিক খুঁজে বার করবে।

সন্তু ঘরের মধ্যে ঢুকে এল। এ ঘরে কোনও খাট, চেয়ার, টেবিল নেই। মেঝেতে একটা বিছানা পাতা। বিছানা মানে শুধু একটা কম্বল আর বালিশ। আর একটা জলের কুঁজো।

মেজর বলল, কাল সকালে তোমায় গরম দুধ খাওয়াব। দেখো, এখানকার দুধের স্বাদ কত ভাল। তুমি খরগোশ খেতে ভালবাসো? আজ একটা খরগোশ ধরেছি, সেটাকে রান্না করব কাল। তুমি রুটি খাও, না ভাত খাও?

সন্তু জিজ্ঞেস করল, এটা কি হোটেল?

মেজর অকারণে আবার হেসে উঠল। তারপর গোঁফ মুছে বলল, শোনো বাপু, আগেভাগে তোমায় একটা কথা বলে রাখি। তুমি অনেক অ্যাডভেঞ্চারের বই পড়েছ নিশ্চয়ই? আমিও অনেক পড়েছি। সব বইতেই দেখেছি, তোমার বয়েসি ছেলেরা একবার না একবার পালাবার চেষ্টা করেই। তুমিও করবে নিশ্চয়ই। তোমার সবে ডানা গজাচ্ছে, এই তো পালাবার বয়েস! কিন্তু তুমি যদি পালাও, তাহলে আমার যে গদান যাবে! সুতরাং তুমি পালাবার চেষ্টা করলে আমিও তোমাকে ধরতে বাধ্য। তারপর ধরা যখন পড়বে, তখন তোমায় শাস্তিও দিতে হবে। প্রথম শাস্তি হচ্ছে খেতে না দেওয়া। তুমি যদি কাল। দুপুরের মধ্যে পালাবার চেষ্টা করো, তা হলে কিন্তু খরগোশের মাংস তোমায় দেব না, বুঝলে?

সন্তু বলল, আমি খরগোশের মাংস খেতে চাই না।

মেজর বলল, যাক গে, ওসব কথা পরে হবে। আজ রাতে অনেক ধকল গেছে, এখন লক্ষ্মী ছেলের মতন ঘুমিয়ে পড়ো!

দরজার সামনে থেকে রাজকুমার ঠিক তক্ষুনি বলল, দাঁড়াও, এখন ঘুমোবে কী, ওকে এখন চিঠি লিখতে হবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *