Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

পর্ব- ৯

রাজা হওয়ার পর যুধিষ্ঠিরের বেশ কিছুদিন কেটে গেল রাজ্যের প্রাথমিক সমস্যা সামলাতে। এরপর একদিন যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের গৃহে গিয়ে দেখলেন কৃষ্ণ ধ্যানস্থ হয়ে বসে আছেন, তাঁকে খুবই চিন্তান্বিত দেখাচ্ছে। যুধিষ্ঠির জিজ্ঞেস করলেন,
– ‘মাধব, আপনাকে এত চিন্তান্বিত দেখাচ্ছে কেন? সবকিছু কুশল-মঙ্গল তো?’
কৃষ্ণ বললেন,- ‘মহামতি ভীষ্ম শরশয্যায় একাগ্রভাবে আমার কথা স্মরণ করছেন। তাই আমি তাঁর কাছে না গিয়ে থাকি কি করে! আমি মনে মনে তাঁর কাছেই গিয়েছিলাম। ভীষ্মের অন্তিম সময় উপস্থিত হতে আর বেশিদিন বাকি নেই।ধর্মরাজ, তিনি হলেন সমস্ত বিদ্যার আধার।ভূত, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান তিনি সব জানেন, তোমার তাঁর কাছে যাওয়া দরকার। তোমার যা যা জিজ্ঞাসা আছে তাঁর কাছ থেকে জেনে নাও। তিনি বেদ-বেদাঙ্গ, যুক্তিতর্ক, দর্শন, অর্থনীতি, রাজনীতি সব জানেন। এবং জানেন এই সমাজকে, যে সমাজ চতুর্বণ এবং চতুরাশ্রমের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। মহামতি ভীষ্ম এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত বিদ্যা এই পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে যাবে। তুমি এখন সিংহাসনে বসেছো, অতএব তার কাছ থেকে এই নিখিল রাজধর্ম তুমি জেনে নাও।’
কৃষ্ণের মুখে ভীষ্মের কথা শুনে যুধিষ্ঠিরের হৃদয় ব্যথিত হ’লো। কুরুক্ষেত্রের সেই নিদারুণ দৃশ্যটা তাঁর চোখের সামনে আর একবার দৃশ্যমান হলো,- কীভাবে একজন বীর নিজের মৃত্যুর উপায় নিজেই তাঁদের জানিয়ে দিলেন, এবং নিরস্ত্র অবস্থায় শিখণ্ডী তথা অর্জুনের বাণে তাঁকে শরশয্যায় শায়িত হতে হয়েছিলো। যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে বললেন, – ‘পিতামহ যে কত বড় মনের মানুষ, এবং তাঁর যে কত প্রভাব তা আমি জানি। সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।’

কৃষ্ণের সাথে ভীষ্মের সম্পর্ক এবং হৃদ্যতা কী প্রকার ছিলো তা মহাভারতে আমরা বিলক্ষণ জানতে পারি। শরশয্যায় শুয়ে তাঁর অন্তিমকালে ভীষ্ম তাই নিবিষ্টমনে বাসুদেব কৃষ্ণকেই স্মরণ করছেন। মাধবও তাই ভীষ্মের ডাকে সাড়া দিয়ে সূক্ষ্ম শরীরে তাঁর কাছে পৌঁছে গেছেন।
মহাভারতে আমরা দেখতে পাই- গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম, শ্রীকৃষ্ণকে সম্পূর্ণ ভগবত্তায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কৃষ্ণকে তিনিই প্রথম পুরুষোত্তম বলে সম্বোধন করেছিলেন। তাঁর কথাতেই যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের প্রথম পূজার অর্ঘ্যটি বাসুদেব কৃষ্ণকে নিবেদন করা হয়। কেন’না কৃষ্ণের মধ্যে যে অলৌকিক ক্ষমতা আছে, এবং বুদ্ধিমত্তায়, রাজনীতিতে, কূটনীতিতে, তিনি যে সবার থেকে এগিয়ে সে বিষয়ে ভীষ্ম তাকে প্রথমেই চিনতে পেরেছিলেন। সে’দিক থেকে দেখতে গেলে ভীষ্মের মানুষ চেনার ক্ষমতাটাও আমরা এর দ্বারা বুঝতে পারি। শ্রীকৃষ্ণকে উদ্ধৃতি করে ভীষ্ম যে স্তব করেছেন তাতে কৃষ্ণ একাত্ম হয়ে গেছেন নারায়ণ-শ্রীবিষ্ণুর সাথে। বাসুদেব কৃষ্ণ হলেন অনন্তকর্মা, মহাশক্তিমান, সর্বব্যাপ্ত এক পুরুষ। তিনি শুধু পুরুষ নন, তিনি হলেন পুরুষোত্তম। কৃষ্ণকে প্রশস্তি করে ভীষ্মের স্তবরাশি মহাভারতে ‘ভীষ্মস্তবরাজ’ নামে চিহ্নিত হয়েছে। সেই স্তবগান আজও শত সহস্র ভারতবাসীর মুখে মুখে শোনা যায়।
“নমো ব্রাহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ।
জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress