Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

পর্ব- ৩

গঙ্গা চলে যাওয়ার পর শান্তনু গঙ্গার শোকে কাতর হয়ে পড়েছিলেন। এইভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিলো। শান্তনু আর বিবাহ করতে চান না। মন থেকে গঙ্গার স্মৃতি মুছে ফেলা তার পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু রাজার উত্তরাধিকার না থাকলে রাজ সিংহাসন রক্ষা হবে কিভাবে? তার সুদূরপ্রসারী সাম্রাজ্য রক্ষা করবে কে? কিন্তু শান্তনুর সে’দিকে মন নেই। তিনি দান-ধ্যান-ধর্ম-কর্ম এই নিয়েই গঙ্গাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমনই একদিন শান্তনু মৃগয়ায় গিয়ে গঙ্গা তীরে বসে আছেন, হঠাৎ তিনি দেখলেন একজন দিব্যকান্তি কুমারকে সঙ্গে নিয়ে শুভ্রবসনা দেবী গঙ্গা তার সামনে উপস্থিত হলেন। তিনি শান্তনুকে বললেন এই আমার অষ্টমগর্ভজাত পুত্র দেবব্রত। এর সব শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এই মহাধনুর্ধর রাজধর্মজ্ঞ পুত্রকে তুমি রাজগৃহে নিয়ে যাও।

শান্তনু, পুত্র দেবব্রতকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এলেন, এবং তাকে যুবরাজ অভিষিক্ত করলেন। যুবরাজ খুব সহজেই রাজকার্যের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিলেন। মহরাজ শান্তনুও দেবব্রতর রাজকার্য, রাজনীতি, সমাজনীতি, প্রজাপালন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান দেখে মহানন্দে দিন কাটাতে লাগলেন। এর চার বৎসর পর শান্তনু একদিন যমুনা নদীতীরে ভ্রমন করা কালীন তাঁর সাথে দেখা হয় এক ধীবরকন্যার। কন্যার রূপে মুগ্ধ হয়ে শান্তনু ধীবররাজের কাছে ওই কন্যার পাণিপ্রার্থনা করেন। কিন্তু ধীবররাজ শান্তনুর কাছে প্রতিশ্রুতি চায় যে, তার কন্যার গর্ভজাত পুত্রই রাজা হবে। শান্তনু জানেন যুবরাজ দেবব্রত হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসবেন। তাই তিনি ধীবররাজকে এই প্রতিশ্রুতি দিতে অপারগ হন। অপরিসীম মনকষ্ট নিয়ে শান্তনু প্রাসাদে ফিরে আসেন। কিন্তু তিনি ওই ধীবরকন্যাকে কিছুতেই ভুলতে পারছিলেন না। পিতাকে অতিশয় চিন্তান্বিত দেখে তরুণ দেবব্রত পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘পিতা আপনাকে এতো চিন্তিত দেখাবার কারণ কি? যদি আমাকে বলেন, আমি সাধ্যমতো প্রতিকার করবার চেষ্টা করবো।’ কিন্তু শান্তনু দেবব্রতকে সঠিক কোনো কারণ বললেন না। দেবব্রত বৃদ্ধ অমাত্যের কাছে জানতে পারলেন যে, পিতা ধীবরকন্যাকে বিবাহ করতে চান। দেবব্রত তখন দাশ রাজার সাথে দেখা করেন। দাশ রাজা যুবরাজ দেবব্রতকে সসম্মানে নিজ গৃহে আসন গ্রহণ করতে বললেন। সত্যি, ভাগ্য বটে যুবরাজ দেবব্রতর! যেখানে মহারাজ শান্তনুর পুত্র দেবব্রতর বিবাহের জন্য পাত্রী নির্বাচন করা উচিত ছিল, সেখানে পুত্র এসেছে প্রায় তারই সমবয়সী কন্যার পিতার নিকট, পিতার বিবাহের বার্তা নিয়ে! হায় বিধাতা, ভাগ্যের কি পরিহাস! যাইহোক, দাশরাজা যুবরাজ দেবব্রতকে বললেন, – সত্যবতীকে শান্তনু বিবাহ করলে, তার গর্ভস্থ পুত্র যদি রাজা হয়, তবেই তিনি এই বিবাহে সম্মতি দেবেন। গঙ্গাপুত্র দেবব্রত তখন পিতার সুখের জন্য মরিয়া, তিনি সঙ্গে সঙ্গে দাশ রাজাকে আশ্বস্ত করে বললেন, – আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমি কোনদিন হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসবো না। আপনার কন্যার গর্ভে যে পুত্র হবে সেই-ই রাজত্ব পাবে।

দাশ রাজা বেশ পোড়খাওয়া মানুষ, তিনি বুঝে গেলেন এই সুযোগে দেবব্রতর থেকে আরো কথা আদায় করে নিয়ে সত্যবতী ও তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে হবে। তখন তিনি আরো বললেন- ‘বেশ, বুঝলাম, আপনি কোনোদিন হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসবেন না; কিন্তু আপনার বিবাহের পর আপনার যে পুত্র হবে, সে যদি সিংহাসনের অধিকার চায়? না, না, আমার এই বিবাহে সম্মতি নেই।’ গঙ্গাপুত্র দেবব্রতর দাশ রাজার এই কথা শুনে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কিন্তু তিনি মনের কষ্ট চেপে রেখে দাশ-রাজের কাছে এক ভীষণ প্রতিজ্ঞা করে বসলেন; ‘শুনুন দাশরাজ, আমি গঙ্গাপুত্র, আজ প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমি কোনদিন বিবাহ করবো না; বা আমি কোনো সন্তান উৎপাদন করবো না। আজ থেকে আমি ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বন করবো।’

দেবব্রতের এই ভীষণ প্রতিজ্ঞা শুনে দাশরাজ ধন্য ধন্য করতে লাগলেন, এবং তিনি সত্যবতীকে কন্যাদান করতে সম্মত হলেন। তখন আকাশ থেকে দেবগণ ও পিতৃগণ পুষ্পবৃষ্টি করে বললেন, আজ থেকে দেবব্রত পৃথিবীর ইতিহাসে ‘ভীষ্ম’ নামে পরিচিত হবে। বস্তুত দাশ রাজাকে এই ভীষণ প্রতিজ্ঞা করার মুহূর্ত থেকেই ভীষ্মের জীবনে কুরুবংশের সমিধ হয়ে জ্বলে থাকার অধ্যায় শুরু হলো। ভীষ্ম সত্যবতীকে নিয়ে হস্তিনাপুর ফিরে এসে সমস্ত বৃত্তান্ত শান্তনুকে জানালে শান্তনু অতিশয় আনন্দিত হলেন। এবং পুত্রের এই বলিদানের জন্য পুত্রকে ইচ্ছামৃত্যুর বর দিলেন। আরো বললেন, যতদিন কুরুবংশ থাকবে- ততদিন ভীষ্ম যেন কুরুবংশের দায়ভার গ্রহণ করে এবং হস্তিনাপুরের সিংহাসনকে আমৃত্যু রক্ষা করে। কোনো অবস্থাতেই যেন কুরুবংশ ত্যাগ না করে। ভীষ্ম পিতার আদেশ শিরোধার্য করে আমৃত্যু কৌরবদের পাশে রয়ে গেলেন। আজ শরশয্যায় শুয়ে ভীষ্মের মনে কেবলই সেই সব স্মৃতি আন্দোলিত হচ্ছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress