Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মরীচিকা || Samarpita Raha

মরীচিকা || Samarpita Raha

মাঝরাতে বিলাসপুরের কিছু আগে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে রইল! মনে মনে ভাবছি সিগন্যাল পায় নি।তারপর শুনি কে যেন কাটা পড়েছে।মধ্যরাতে কে কাটা পড়তে পারে! ব্যস ট্রেন যাবে না, পাশেই জঙ্গলে নানান পশুর ডাক। ক্যামরার সবাই নেমে যাচ্ছে। আমি যেন চোখে মরীচিকা দেখছি। বিয়ের দু বছর পর আমি শ্বশুরবাড়ি চলেছি,আসলে বৌয়ের এতদিনে শখ হয়েছে বরের সঙ্গে ঘর করার।সে তার রুগ্ন বাবা ও মা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ট্রেনের মধ্যে চিৎকার করে বলি “আপলোক কিধার যা রাহা হেই”।কহি তো বাতাও,আপলোক চুপ কিউ হেই।
অগত্যা আমি ও নামতে যাব,এক দানব আকারের বীভৎস পশুর মতো লোক এই–” where are you going”?
মাত উতরো!
কেউ নেই ট্রেনে,ট্রেন ছুটতে শুরু করল। আমি চোখ রগড়ে দেখি সামনে আমার বৌ দাঁড়িয়ে। আমি থতমত খেয়ে বলি, তুমি!স্টেশন আসতেই গাড়িতে উঠে , বৌকে আলতো করে আদর করতে যেতেই,বৌ বলে বাড়িতে যায়,তারপর! বৌয়ের শরীরের থেকে ঠান্ডা হাওয়া বার হচ্ছে।চোখকান বুজে নানান গল্প করতে করতে শ্বশুরবাড়ি নামি।থমথমে…. শ্বশুর শাশুড়ি ও বৌয়ের গলায় মালা,দুদিন আগেই!!!

পাড়া পড়শী জামাইকে দেখেই এগিয়ে আসে। ঠিক দুদিন আগেই তিনজনকে মৃত অবস্থায় সবাই দেখে।কারর হাত নেই,কারর পা ছিল না কারর ধড়টা মোছড়ানো।বীভৎস সব রূপ! কিন্তু আমি বলেই ফেলি আমায় তো প্রশাসন থেকে কেউ জানালেন না। আবার নিজের মনে ভাবি,সত্যি’তো পুলিশ আমার ঠিকানা কোথায় পাবেন! কার কাছের থেকে বা পাবেন। আমি চিৎকার করে বলি, গত পরশু বৌয়ের কান্না জড়ানো গলায় ফোন পেয়ে ছুটে এসেছি।এমন কি ট্রেন থেকে বৌয়ের সাথেই শ্বশুর বাড়িতে এসেছি। দেখুন সবাই ট্রেন থেকে নামার পর ওই দূরের গাড়িতে করেই এসেছি। আপনারা গাড়ির চালককে একটু অনুগ্রহ করে জিজ্ঞেস করুন। পাড়া পড়শী আমায় থানায় নিয়ে গেলেন। আমি পুলিশের সামনে আসতেই, উনি আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বললেন, আপনি নয় তো! আমাকে তাচ্ছিল্য করে বলেন,আপনার আজগুবি গল্প অন্য জায়গায় রাখবেন। আমি ভয়ে বলি এই দেখুন আমার ট্রেনের টিকিট। আমাকে কি নরপিশাচ লাগছে! আপনারা একটু আমার কথা মন দিয়ে শুনুন,একটু চোখ কান খুলে রাখুন, আমি ট্রেনের মধ্যে সত্যি সত্যি এক ভয়ঙ্কর চেহারার নরপিশাচ দেখেছি! তারপর হঠাৎ করে চলন্ত ট্রেনে আমার বৌকে দেখেছি। এক কনস্টেবল এসে জানায়,সত্যি এক নরপিশাচ বার হয়েছে। পুলিশ আমাকে মুক্তি দেন। তিনজনের শ্রাদ্ধ করতে হবে, অপঘাতে মৃত্যু বলে কথা। পাশের বাড়িতে রাত কাটিয়ে পরদিন পাড়ার লোকের সহায়তায় তিন জনের আত্মার মুক্তির জন্য সব কাজ করি। বাড়ি ঘর তন্ন তন্ন করে এক অ্যালব্যাম পাই।তাতে দেখি লম্বা চওড়া এক ছেলে, বিদঘুটে চেহারা। আমার মনে প্রশ্ন জাগে এই লোকটি কে? পাশের বাড়িতে ছবি দেখাতে বলে , উনি নাকি আমার শ্যালক! কিন্তু আশ্চর্য আমি জানতাম আমার বৌ, বাবা ও মার একমাত্র কন্যা।শ্যালক নাকি ত্যাজ্য ছিল।সে আদিবাসী মেয়ে নিয়ে থাকে, সারাদিন হাড়িয়া খায়। বাড়িতে কোনো যোগাযোগ নেই। তাহলে উনি হত্যা করেন নি তো! প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই শ্যালককে জেলে আনা হয়। নানান প্রশ্ন করে তার পেট থেকে কোনো কথা বার হয় না। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ফেরার দিন সন্ধ্যায় ট্রেন ছিল।ট্রেনে উঠতেই চতুর্দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার,লাইটার দিয়ে আলো জ্বালাচ্ছি আর নিভাচ্ছি। হঠাৎ ও..ই দানবাকৃতির মানুষ।আমায় জিজ্ঞেস করে একটা সিগারেট হবে, আমি থতমত খেয়ে সিগারেট প্যাকেটটা ধরে দিয়ে দিই।ভয়ে রাম রাম বলতে থাকি।এই বলে কদাকার মানুষ আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।প্রাণ যাচ্ছে ভেবে নিলাম। তারপর দেশলাই টা নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে উড়ে গেল। তারপর সম্বিত ফিরে পাই ট্রেন যাত্রীদের সহায়তায়।এক হকার বলল ওটা আত্মা।এক বছর আগে ট্রেনে কাটা পড়ে। তারপর থেকে প্রায় দেখা যায়।ও ধঞ্চে গ্রামের নরেনদার মেয়েকে ভালোবাসতো। মেয়েটি বাবা ও মার কথায় কোলকাতায় বিয়ে করে। শুনেছি বরের ঘর না করে বাবা ও মার কাছে থাকত। মেয়েটির দাদা ত্যাজ্য পুত্র ছিল,সে নাকি বোনের প্রেম সহ্য করতে না পেরে চলন্ত ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দেয় ।ধঞ্চে গ্রামের নরেনদার মেয়েকে তো আমি বিয়ে করেছিলাম।মনে মনে ভাবি এ যাত্রায় বেঁচে গেছি।ওই শালাবাবু আমাকেও কুচি কুচি করে কেটে জলে ভাসিয়ে দিত।ট্রেন ছুটছে প্রচণ্ড গতিতে।মনে একটু লোভ হয়েছিল , শ্বশুর বাড়িতে সব সম্পত্তি আমার হবে।পরে যখন জানতে পারলাম আমার শ্যালক আছে। যতই ত্যাজ্য সন্তান হোন, অধিকার তো তার। কোলকাতাতে ফিরে আসি। ভাবছি একটা সুন্দর সংসার করব। আপনাদের বাড়িতে মেয়ে থাকলে পাত্রস্থ করতে পারেন।না না শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি চাই না। সুন্দর একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন চাই।
তারপর!
আজগুবি গল্প ভাবলেন তো। কিন্তু এ ছিল আমার জীবনের বাস্তব গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *