Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হলদে পাখির পালক || Lila Majumdar » Page 13

হলদে পাখির পালক || Lila Majumdar

চাঁদনি রাতে দুঃখী কুকুররা সত্যি ঘুমোয় না, সারা রাত চাঁদের দিকে মুখ তুলে হু-হুঁ করে কাঁদে। তাই শুনে রুমুরও কান্না পায়, বোগির খাটে উঠে এসে শোয়।

ঝগড়ু এসে বলে, শুনবে নাকি আমার বাবার বর্মা যাওয়ার গল্প?

হা, ঝগড়ু শুনব।

বুঝলে, আমার ঠাকুরদার তখন খুব ভালো অবস্থা। আমার বাবা আর কাকা রাজার হালে থাকে, কাজকর্ম বিশেষ করতে হয় না, সারাদিন হরিণ শিকার করে, বাঁশি বাজিয়ে, মাছ ধরে ঘরে ফিরে মাংস-ভাত খেতে পায়। রাতে বিছানায় নরম তোশক পায়, কম্বল পায়। সোনার আংটিও হল দু জনার, যার যা শখ ছিল মিটে গেল! তখন তারা আর সইতে না পেরে একদিন ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেল।

কেন, ঝগড়ু, ভালো ছিল তো, পালাল কেন?

শখ মিটে যাওয়া ভালো নয়, দিদি, তখন পালানো ছাড়া আর উপায় থাকে না।

ঝগডু!

কী, বোগিদাদা?

তোমার কী মনে হয় ভুলোর সব শখ মিটে গেছিল?

তা কী করে মিটবে, বোগিদাদা? কয়েকটা শখ তো মেটেনি জানি। যেমন আমার পায়ের গুলি কেটে নেবার শখ। রেবতীবাবুদের বেড়াল খাবার শখ। তোমার দাদুর ইজিচেয়ারে বসবার শখ। না, দাদা, ভুলোর শখ মিটতে দেরি আছে।

আচ্ছা, তোমার বাবার কথাই বলো। কোথায় গেল তারা?

কাঠের আড়তে লোক নিচ্ছিল, বর্মায় কাঠ কাটতে যেতে হবে। বাবা আর কাকা সেইখেনে গিয়ে নাম লিখিয়ে, সেই রাত্রের গাড়িতেই এক দলের সঙ্গে রওনা হয়ে গেল। গাঁয়ের কেউ জানতে পারল না। ঠাকুমা কেঁদে কেঁদে সারা।

তারপর বর্মা গেল বাবা আর কাকা। জাহাজ করে সমুদ্র পার হয়ে। সমুদুর জান দাদা?

বাঃ সমুদুর জানি না? পৃথিবীর তিন ভাগই তো সমুদ্র, আর শুধু এক ভাগ ড্যাঙা!

ঝগড়ু তাই শুনে কিছুতেই বিশ্বাস করেনা। হ্যাঁ, জীবনের বেশিটাই কেটে গেল, একবারও সমুদুর দেখলাম না, বললেই হল তিন ভাগ সমুদ্র! যদি জানতে, ওই সমুদ্র পৌঁছোতে আমার বাবা কাকাকে কত কষ্ট করতে হয়েছিল, তাহলে আর ওকথা বলতে না, দাদা।

রুমু বলল, আচ্ছা, দাদা, তুমি থামোনা। হ্যাঁ, ঝগড়ু, তারপর।

তারপর বর্মায় পৌঁছে দেখে সে কী দেশ গো! ছেলেদের ভারি মজা, মেয়েরাই সব কাজ করে। দেয়। বাবাদের দেখে দেখে হিংসে হয়–

এই-না বললে, সুখে থেকে আর সইতে পারছিল না ওরা, তবে আবার হিংসে কেন?

নাঃ, তোমরা বড়ো বোকা, সুখী লোকেরা হিংসুটে হবে না তো কারা হিংসুটে হবে? দুঃখীরা? দুঃখীরা তো সুখ কী তাই জানে না, তবে আর হিংসে করবে কেন? এখন গল্পটা শোনো তো!

বাবাদের পাঠিয়ে দিল একেবারে ঘোর জঙ্গলে, সেগুন গাছের ঘন বনে। সেখানে একটা ছোট্ট ডেরা ছিল। দারুণ বেঘো জঙ্গল, ডেরার চারদিক ঘিরে পনেরো হাত উঁচু করে শক্ত কাঠের দেয়াল করা। তার গায়ে একটা মজবুত দরজা। বাঘ নাকি পনেরো হাত লাফাতে পারে না। ডেরাতে বিশেষ কিছু নেই, ওরা বারোটা লোক সারা দিন কাঠ কাটে, সূর্য ডোবার আগে ডেরায় ফিরে আসে। একটা বড়ো ঘর, তাতে বারোটা খাঁটিয়া আর বারোটা পিঁড়ে, পাশে রান্নাঘর, ছোট্ট কুয়ো। আর কীই-বা লাগে? সারা রাত দরজা এঁটে ঘুমিয়ে থাকে সকলে, সকালে কাজে বেরোয়।

একদিন কাকার দারুণ জ্বর এল। জ্বরের হাত থেকে কোথাও নিস্তার নেই, দাদা। সবাই কাজে চলে গেল। কাকা একলা কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপটি করে পড়ে আছে। পায়ের কাছে দরজা খোলা।

এমনি সময় একটা শব্দ শুনে চোখ খুলে দেখে কিনা একটা এই বড়ো বাঘ বেড়া টপকে ভিতরে এল। কাকা তো কাঠ!

বাঘটা ঘরে ঢুকে একটু ঘুরঘুর ছোঁকছোঁক করে বেড়াল, চারধারে মানুষের গন্ধ বোধ হয় তাই কাকাকে অতটা লক্ষ করল না। কিন্তু কাকা স্পষ্ট দেখলেন বাঘ শুকে শুকে পিঁড়েগুলোকে গুনে। গেল। তারপর আবার যেমন এসেছিল লাফ দিয়ে বেড়া টপকে চলে গেল।

বিকেলে সবাই ফিরলে পর কাকা বাবাকে ডেকে সব কথা বলল। বলল, সবাইকে বলো। বাবা বলল, যাঃ, বাঘ কখনো অত উঁচুতে লাফাতে পারে না। আর এলই যদি, তোকে কিছু বলল না? তুই জ্বরের ঘোরে স্বপ্ন দেখে থাকবি।

কী করে কাকা! সবাই ঘুমিয়ে পড়লে, কাকা দেখল প্রথম রাত্রে বাঘটা এসে একটা লোককে তুলে নিয়ে গেল। খানিক বাদে এসে আর একটাকেও নিয়ে গেল। তখন বাবা সবাইকে বলল, কিন্তু কেউ বেরুতে রাজি হল না, বলল, বাঘ কখনো মানুষ মুখে করে অতটা লাফাতে পারে? ওরা দু-জনে আছে কোথাও এইখানে।

শুধু বাবা কাকাকে বলল, চল, কোথায় যাবি।

একটু দূরে নদী, তার জলে কাঠ কেটে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সেইখানে নৌকো বাঁধা থাকে। কাকা বলল, ওইখানে চলো নৌকা করে গাঁয়ে চলে যাই।

নদীর ধারে গিয়ে ওরা দা দিয়ে কাঠ ছুলে কয়েকটা বল্লম বানিয়ে নিল। তারপর যেইনা নৌকোয় চড়েছে, বাঘও এসে হাজির। ততক্ষণে ওরা মাঝনদীতে। বাবা নৌকোর উপর উঠে দাঁড়িয়ে বাঘের বুক লক্ষ্য করে একটা বল্লম ছুঁড়ল। দুমকার ছেলের হাত ফসকায় না, বোগিদাদা, বল্লম গিয়ে বাঘের বুকে বিঁধল। বাঘও অমনি মানুষের মতো চিৎকার করে উঠল। আর বাবা টাল সামলাতে না পেরে জলে পড়ল। কাকা তাকে টেনে নৌকোয় তুলে, দাঁড় বেয়ে, যত তাড়াতাড়ি পরে সেখান থেকে চলে গেল। নদীর বাঁকে ফিরে চেয়ে দেখেছিল, মনে হল, বুকে বল্লম বিঁধে পড়ে আছে ওটা হয়তো বাঘ নয়, বাঘের ছাল-পরা মানুষ।

তার মানে, ঝগড়ু?

কে জানে, সত্যি কোথায় শেষ হয়, স্বপ্ন কোথায় শুরু হয়? আর যায়নি ওরা ডেরায় ফিরে। গাঁ থেকে পালিয়ে চলে এল দেশে।

বোগি বলল, না ঝগড়ু, তোমার বর্মার গল্প ভালো না।

অমনি রুমুও কান্না ধরল, মরে গেল কেন? ও বিশ্রী গল্প। দাদা, ভুলো কেন আসছে না?

ঝগড়ু বলল, আসবে দিদি, আসবে। সময় হলে সব.এসে তোমার হাতের কাছে জড়ো হবে। আজ গুণমণিকে দেখেছ নাকি? লক্লক করে ছাদ ছোঁয় ছোঁয়। কুঁড়ি ধরেছে গুণমণির। আর তিনটে দিন সবুর করো না। আচ্ছা, যাবে আজ সন্ধ্যা বেলায় ম্যাজিক দেখতে? খেলার মাঠে এত বড়ো কানাত পড়েছে। চোখের সামনে যা হয় না তাই হচ্ছে। হাজার লোক অবাক হয়ে যাচ্ছে। চোখ মোছো দিকিনি। দিদিমাকে বলে চলো যাই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *