Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শজারুর কাঁটা – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 4

শজারুর কাঁটা – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

বিকেল পাঁচটার সময় দেবাশিস ফ্যাক্টরি থেকে ফিরে এল। নকুল দোর খুলে দিল। দীপা ওপর থেকে ঘন্টির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল‌, সে উৎকৰ্ণ হয়ে রইল।

দেবাশিস ওপরে উঠে এসে দেখল‌, দীপা নীরব রেডিওগ্রামের সামনে বসে আছে। সে ঢুকতেই দীপা চকিতে একবার তার দিকে চেয়ে উঠে দাঁড়াল। দেবাশিস দ্বিধামন্থর পায়ে তার সামনে এল। কারুর মুখে কথা নেই। কিন্তু শুধু মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা কতক্ষণ চলে! শেষে দেবাশিস বলল—’নকুল তোমার দেখাশুনো করেছিল তো?’

দীপা ঘাড় নেড়ে বলল–’হ্যাঁ।’

দেবাশিস প্রশ্ন করল–’চা খেয়েছ?’

দীপা মাথা নাড়ল–’না।’

অতঃপর আর কি বলা যেতে পারে‌, দেবাশিস ভেবে পেল না। ওদিকে দীপা প্ৰাণপণে চেষ্টা করছে সহজভাবে যা হোক একটা কিছু বলতে। কিন্তু কী বলবে? বক্তব্য কী আছে? শেষ পর্যন্ত একটা কথা মনে এল‌, সে ঘাড় তুলে বলল—’আপনি দুপুরবেলা কোথায় খাওয়া-দাওয়া করেন?’

দেবাশিস বলল—’আমার ফ্যাক্টরিতে খাওয়ার ভাল ব্যবস্থা আছে। ফ্যাক্টরিতে যারা কাজ করে সকলেই দুপুরবেলা ক্যানটিনে খায়। আমিও খাই।’

দীপা শুধু বলল–’ও।’

দেবাশিস বলল–’আচ্ছা‌, আমি কাপড়-চোপড় বদলে নিই‌, তারপর নীচে গিয়ে চা খাওয়া যাবে।’

সংশয়স্খলিত স্বরে দীপা বলল–’আচ্ছা।’

দেবাশিস দীপার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল–’আমি তাহলে তোমার বাথরুমেই ব্যবহার করছি।’

দোর পর্যন্ত গিয়ে দেবাশিস থমকে দাঁড়াল‌, তারপর আস্তে আস্তে দীপার সামনে ফিরে এসে গলা খাটো করে বলল—‘একটা কথা। তুমি আমাকে ‘আপনি বললে ভাল শোনায় না। অবশ্য আড়ালে তা বলতে পোর‌, কিন্তু নকুল কিংবা অন্য কারুর সামনে ‘তুমি বলাই স্বাভাবিক। নইলে ওদের খটকা লাগতে পারে।’

দীপা মুখ নীচু করে নীরব রইল।

দেবাশিস প্রশ্ন করল–’কি বলো?’

দীপা অনিচ্ছাভিরা ক্ষীণ স্বরে বলল–’আচ্ছা।’

দেবাশিস বাথরুমে চলে গেল। দীপা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল‌, প্রকাশ্যে ‘তুমি বলা এবং আড়ালে ‘আপনি বলা কি খুব সহজ কাজ? রঙ্গালয়ের নটনটীরা বোধহয় পারে। তার মনে হল সে আস্তে আস্তে অতলস্পর্শ চোরাবালির মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে।

দশ মিনিট পরে দেবাশিস পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে বেরিয়ে এল‌, বলল–’চল‌, নীচে যাই।’

দেবাশিসের পিছু পিছু দীপা নীচে নেমে গেল‌, দু’জনে টেবিলের দু’প্রান্তে বসল। নকুল তাদের সামনে রেকাবি-ভরা লুচি তরকারি রাখল। দেবাশিস খেতে আরম্ভ করল। কিন্তু দীপা হাত গুটিয়ে বসে রইল।

নকুল জিজ্ঞেস করল-‘দাদাবাবু্‌, ডিম ভেজে দেব?’

দেবাশিস দীপার পানে চাইল। দীপা একটু মাথা নাড়ল; বাপের বাড়িতে তার ডিম খাওয়া বারণ ছিল। আইবুড়ো মেয়েদের ডিম খেতে নেই।

দেবাশিস বলল–’থাক‌, দরকার নেই।’

চায়ের পেয়ালা টেবিলে রাখতে এসে নকুল বলল–’ও কি বউদি‌, তুমি খাচ্ছ না?’

দীপা মাথা হেঁট করল‌, তারপর কাতর দৃষ্টিতে দেবাশিসের পানে তাকাল। দেবাশিস বুঝতে পারল দীপার সংকোচের কারণ কি। সে একটু হেসে বলল—’নকুল‌, ওর বোধহয় পুরুষের সামনে খাওয়া অভ্যোস নেই।’

দেবাশিস তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ল। সে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর নকুল দীপার কাছে এসে বলল–’বউদি‌, এ সংসারে মেয়ে-পুরুষ সবাই একসঙ্গে খায়‌, কতর্বিাবুর আমল থেকে এই রেওয়াজ দেখে আসছি। তুমি যখন এ বাড়ির বউ হয়ে এসেছি তখন তোমাকেও তোক এ বাড়ির রেওয়াজ মেনে চলতে হবে। ভাবনা নেই‌, আস্তে আস্তে অভ্যোস হয়ে যাবে। নাও‌, খেতে আরম্ভ কর। তোমার বাপের বাড়িতে কি ডিমের চলন নেই?

দীপা বলল—’পুরুষেরা হাঁসের ডিম খান। মুরগির ডিমের চলন নেই।‘

নকুল বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে বলল-’হাঁসের ডিমও যা মুরগির ডিমও তাই‌, সব ডিমই সমান।’

দীপা নকুলের তদারকিতে চা-জলখাবার খেয়ে ঘরের বাইরে এসে দেখল‌, দেবাশিস সিঁড়ির হাতলের ওপর কনুই রেখে দাঁড়িয়ে আছে। দীপকে দেখে সে বলল–’বেড়াতে যাবে? সারা দিন তো বাড়িতে বন্ধ আছে‌, চল না মোটরে খানিক বেড়িয়ে আসবে।’

অভিনয় চলছে চলুক‌, কিন্তু কোথাও একটা সীমারেখা টানা দরকার। দীপা সোজা দৃষ্টিতে দেবাশিসের পানে চেয়ে দৃঢ় স্বরে বলল—’না।’

দেবাশিসের মুখ দেখে মনে হল না যে সে মনঃক্ষুন্ন হয়েছে‌, সে সহজভাবে বলল—’আচ্ছা‌, আমি তাহলে একটু ঘুরে আসি। বেশিদূর নয়‌, নৃপতিদার আড্ডা পর্যন্ত।’

সে বেরিয়ে পড়ল। অর্ধেক পথ গিয়েছে‌, দেখল কপিল বোস পায়ে হেঁটে তার দিকেই আসছে। কপিলের একটি ছোট মোটর আছে‌, বেশির ভাগ তাতেই সে ঘুরে বেড়ায়। মুখোমুখি হলে দেবাশিস বলল–’এদিকে কোথায় চলেছেন?’

কপিল একটু অপ্রতিভ হয়ে পড়ল—’আপনার দিকেই যাচ্ছিলাম।’

মনে মনে বিস্মিত হলেও দেবাশিস মুখে বলল–’আমার দিকে? তা—চলুন‌, ফেরা যাক।’

কপিল তাড়াতাড়ি বলল—’না না‌, তার দরকার নেই। আপনি আড়ায় যাচ্ছেন তো? চলুন‌, আমারও শেষ গন্তব্যস্থান সেখানেই। আপনার কাছে যাচ্ছিলাম একটা জিনিসের খোঁজে।’

দু’জনে নৃপতির বাড়ির দিকে চলল। দেবাশিস জিজ্ঞেস করল–’কিসের খোঁজে?’

কপিল দ্বিধাভরে বলল–’আমার সিগারেট-কেসটা আজ সকাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। যতদূর মনে পড়ে কাল বিকেল পর্যন্ত ছিল; তারপর আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনার সিগারেটই খেয়েছি‌, আমার পকেটে সিগারেট-কেস আছে কিনা খেয়াল করিনি। আজ সকালবেলা দেখি নেই। বাড়িতে খুঁজলাম‌, পাওয়া গেল না। তা ভাবলাম‌, খোঁজ নিয়ে আসি আপনার বাড়িতেই পকেট থেকে পড়ে গেছে কিনা।’

দেবাশিস বলল—’আমার বাড়িতে যদি পড়ে থাকে এবং কেউ তুলে না নিয়ে থাকে তাহলে নকুল নিশ্চয় সরিয়ে রেখেছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করব। কিসের সিগারেট-কেস–সোনার?’

কপিল তাড়াতাড়ি বলল-‘হ্যাঁ। কিন্তু আপনি ভাববেন না‌, আমি প্রায়ই জিনিস হারিয়ে ফেলি‌, তবে বেশির ভাগ সময়েই পাওয়া যায়। হয়তো বাড়িতেই আছে‌, কিংবা নৃপতিদার আড্ডায়।’

নৃপতির আডাঘরে তখন আলো জ্বলছে; ঘরে কেবল নৃপতি আর প্রবাল বসে গল্প করছে। এরা ঘরে ঢুকলে নৃপতি সমাদ্দারের সুরে বলে উঠল—’আরে‌, এস এস।’

দু’জনে নৃপতির কাছে বসল। নৃপতি দেবাশিসকে নিবিষ্ট চোখে দেখতে দেখতে চাপা কৌতুকের সুরে বলল–’আমি তো ভেবেছিলাম‌, এখন কিছু দিন তুমি বাড়ি থেকে বেরুবেই না। যাহোক‌, দাম্পত্য-জীবন কেমন লাগছে?’

প্রশ্নের জন্যে দেবাশিস তৈরি ছিল না‌, একটু দম নিয়ে মুখে সলজ্জ হাসি এনে বলল–’মন্দ কি‌, ভালই লাগছে।’

প্রবালের গলার মধ্যে হাসির মত একটা শব্দ হল‌, সে বলল–’প্রথম প্রথম ভালই লাগে। তারপর–সে উঠে গিয়ে পিয়ানোর সামনে বসিল‌, টুং টাং শব্দে একটা বিষাদের সুর বাজতে লাগল।

কপিল ভ্রূকুটি করে কিছুক্ষণ তার পানে চেয়ে রইল‌, তারপর বিস্বাদসূচক মুখভঙ্গী করে দেবাশিসকে বলল–’এক জাতের লোক আছে তারা শুধু চাঁদের কলঙ্কই দেখে‌, চাঁদ দেখতে পায় না। নৃপতিদা‌, একটা সিগারেট দিন‌, আমার সিগারেট-কেসটা হারিয়ে ফেলেছি।’

কপিল সিগারেট ধরিয়েছে এমন সময় চিত্রনক্ষত্র সুজন মিত্র প্রবেশ করল। বোধহয় সোজা ফিল্ম স্টুডিও থেকে আসছে‌, পরনে করতুরয়ের লম্বা প্যান্ট এবং টকটকে লাল রঙের সিল্কের শার্ট। দেবাশিসকে দেখে চোখ বড় করে কৌতুকের ভঙ্গীতে হাসল‌, তারপর বলল–’নৃপতিদা‌, আজ কাগজে খবর দেখেছেন?’

সকলেই উৎসুক চোখে তার পানে চাইল‌, প্রবালের পিয়ানো বন্ধ হল। নৃপতি বলল–’কি খবর? কাগজ। অবশ্য পড়েছি‌, কিন্তু গুরুতর কোনো খবর দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।’

সুজন পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে বলল—’গুরুতর খবর না হতে পারে। কিন্তু ঘরোয়া খবর। আমাদের পাড়ার খবর। খবরের কাগজের এক কোণে ছোট্ট একটি খবর। গোল পার্কের কাছে কাল ভোরবেলা একজন ভিখিরি মারা গেছে।’ এই বলে সুজন নাটকীয় ভঙ্গীতে চুপ করল। সবাই অবাক হয়ে তার মুখের পানে চেয়ে রইল।

সুজন তখন আবার আরম্ভ করল–’ভাবছেন‌, একটা ভিখিরির মৃত্যু এমন কী চাঞ্চল্যকর খবর। কিন্তু ভিখিরির মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয়‌, কোনো অজ্ঞাত ঘাতক তাকে খুন করেছে। এবং তার চেয়েও বিস্ময়কর খবর‌, অজ্ঞাত আততায়ী ভিখিরির পিঠের দিক থেকে তার বুকের মধ্যে একটা শজারুর কাঁটা ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে বধ করেছে।’

সুজনের বক্তৃতার মাঝখানে প্রবালও পিয়ানো থেকে উঠে কাছে এসে বসেছিল। শ্রোতারা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। শেষে নৃপতি বলল–’ছোট খবর বলেই বোধহয় চোখে পড়েনি। তোমরা কেউ পড়েছ?’

কেউ পড়েনি। দেবাশিস এবং প্রবাল খবরের কাগজ পড়ে না। নতুন খবরের প্রতি তাদের আসক্তি নেই। কপিল কেবল খেলাধুলোর পাতাটা পড়ে।

প্রবাল বলল–’শজারুর কাঁটা কি মানুষের শরীরে বিঁধিয়ে দেওয়া যায়-ভেঙে যাবে না?’

নৃপতি পণ্ডিত ব্যক্তি‌, সে বলল—’না‌, ভাঙবে না। নরম কাঁটা হলে দুমড়ে যেতে পারে। কিন্তু ভাঙবে না। শক্ত কাঁটা লোহার শলার মত সটান মাংসের মধ্যে ঢুকে যাবে।’

প্রবাল জিজ্ঞেস করল–’শজারুর কাঁটা কোথায় পাওয়া যায়? বাজারে বিক্রি হয় নাকি?’

নৃপতি বলল—সব জায়গায় পাওয়া যায় না। শুনেছি নিউ মার্কেটে দুএকটা দোকানে পাওয়া যায়। তাছাড়া বেদেরা গড়ের মাঠে বিক্রি করতে আসে।’

দেবাশিস বলল–’কিন্তু ছোরাজুরি থাকতে শজারুর কাঁটা দিয়ে মানুষ খুন করবার মানে কি?’

কেউ সদুত্তর দিতে পারল না। কপিল নতুন প্রশ্ন করল—’কিন্তু ভিখিরিকে কে খুন করবে? কেন খুন করবে?’

নৃপতি একটু ভেবে বলল–’ভিখিরিদের মধ্যেও কৃপণ ও সঞ্চয়ী লোক থাকে। এমন শোনা গেছে‌, ভিখিরি মারা যাবার পর তার কাঁথা-কানির ভেতর থেকে দু’শো চারশো টাকা বেরিয়েছে। এই লোকটিও হয়তো সঞ্চয়ী ছিল‌, তার টাকার লোভে কেউ তাকে খুন করেছে।’

কপিল বলল–’আমার মনে হয় এ একটা উন্মাদ পাগলের কাজ। নইলে শজারুর কাঁটার কোনো মানে হয় না।’

সুজন বলল—’তা বটে‌, প্রকৃতিস্থ মানুষ শজারুর কাঁটা দিয়ে খুন করবে। কেন? প্রবাল‌, তোমার কি মনে হয়?’

প্রবাল অবহেলাভরে বলল—’যে-ই খুন করুক সে সাধু ব্যক্তি‌, ভিখিরি মেরে সমাজের উপকার করেছে। যারা কাজ করে না তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।’ সে উঠে গিয়ে আবার পিয়ানোর সামনে বসিল।

তারপর খড়্গ বাহাদুর এল। তার আজ মাঠে খেলা ছিল; সে খেলার কথা তুলল‌, আলোচনার প্রসঙ্গ বিষয়াস্তরে সঞ্চারিত হল। কিছুক্ষণ পরে কফি এল। কফি খেয়ে আরো কিছুক্ষণ গল্পগুজবের পর দেবাশিস বাড়ি ফিরল।

দেবাশিসের জীবনযাত্ৰা বিয়ের আগে যেমন ছিল বিয়ের পরেও প্ৰায় তেমনি রয়ে গেল। বাড়িতে একজন লোক বেড়েছে এই যা। কেবল নকুল এবং বাইরের অন্যান্যদের সামনে ভণ্ডামি করতে হয়। দেবাশিসের ভাল লাগে না!

আড়ালে দীপার সঙ্গে দেবাশিসের সম্পর্ক বড় বিচিত্র। ঘনিষ্ঠত না করে যতটা সহজভাবে একসঙ্গে বাস করা যায় দু’জনে সেই চেষ্টা করছে। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। দীপার মনের নিভৃত আতঙ্ক তার চোখের চাউনিতে হঠাৎ প্রকাশ হয়ে পড়ে। দেবাশিসের মন অশান্ত; সে জানে দীপা অন্যকে ভালবাসে‌, তবু দীপা তার মনকে দুৰ্নিবার বেগে আকর্ষণ করছে। বিজয় বলেছিল‌, দীপা ছেলেমানুষ‌, দুচার দিন স্বামীর ঘর করলেই আগের কথা ভুলে যাবে। কিন্তু দীপার ভাবভঙ্গী দেখে তা মনে হয় না। দীপা আর যাই হোক‌, তার মন চঞ্চল নয়।

এইরকম শঙ্কা-দ্বিধার মধ্য দিয়ে কিছুদিন কেটে যায়। একদিন বিকেলবেলা ফ্যাক্টরি থেকে ফিরে এসে দেবাশিস দীপকে বলল–’একটা কথা আছে। ফ্যাক্টরিতে যারা কাজ করে তাদের ইচ্ছে‌, তুমি একদিন ফ্যাক্টরিতে যাও‌, ওরা তোমাকে পার্টি দিতে চায়। যাবে?’

দীপার মন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল‌, এ আবার কি নতুন ঝঞ্ঝাট? সে একটু চুপ করে থেকে বলল-না গেলেই কি নয়?’

দেবাশিস বলল—’তুমি যদি না যেতে চাও আমি জোর করতে পারি না। তবে না গেলে খারাপ দেখায়।’

শুকনো মুখে দীপা বলল–’তাহলে যাব।’

দু’তিন দিন পরে দেবাশিস একটু সকাল সকাল বাড়ি ফিরল‌, তারপর কোট প্যান্ট ছেড়ে ধুতি পাঞ্জাবি পরে দীপাকে নিয়ে ফ্যাক্টরিতে ফিরে গেল।

প্রজাপতি প্রসাধন ফ্যাক্টরির কারখানাটি ব্যারাকের মত লম্বা্‌্‌, তাতে অসংখ্য ঘর‌, দু’ পাশে চওড়া বারান্দা। বাড়ির চার ধারে অনেকখানি খোলা জমিও আছে। কেমিস্ট এবং কমী মিলিয়ে আন্দাজ ষাটজন লোক এখানে কাজ করে। ফ্যাক্টরি হিসাবে বড় প্রতিষ্ঠান বলা যায় না; কিন্তু এখান থেকে যে শিল্পদ্রব্য তৈরি হয়ে বেরোয় তার চাহিদা সর্বত্র।

আজ ফ্যাক্টরির পুরোভূমিতে একটি ছোট মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। দেবাশিসের মোটর মণ্ডপের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ফ্যাক্টরির প্রবীণ কেমিস্ট ডক্টর রামপ্রসাদ দত্ত এসে দীপাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিলেন। ডক্টর দত্তর পিছনে আরো কয়েকজন কমী ছিল‌, সকলে হাসিমুখে দীপাকে অভ্যর্থনা করল।

ডক্টর দত্ত দীপাকে বললেন–’চল‌, আগে তোমাকে তোমার ফ্যাক্টরি দেখাই।’

ডক্টর দত্ত বয়সে দীপার পিতৃতুল্য‌, তাঁর সমেহ ঘনিষ্ঠ সম্বোধনে দীপার মনের আড়ষ্টতা অনেকটা কেটে গেল। দেবাশিস তাদের সঙ্গে গেল না; সে জানতো‌, সে সঙ্গে না থাকলে দীপা বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করবে।

ফ্যাক্টরির কাজের বেলা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে‌, তবু কয়েকটা ঘরে কয়েকজন লোক তখনো কাজ করছে। কোথাও সারি সারি জালার মত কাচের পাত্রে কেশতৈল রাখা রয়েছে‌, কোনো ঘরে মো ক্রিম‌, কোনো ঘরে ল্যাভেন্ডার অডিকলোন প্রভৃতি নানা জাতের তরল গন্ধদ্রব্য। সব মিশিয়ে একটি চমৎকার সুগন্ধে বাড়ি ম-ম করছে।

ডক্টর দত্ত ঘুরে ঘুরে দেখাতে লাগলেন। দেখতে দেখতে নিজের অজ্ঞাতসারেই দীপার মন প্রফুল্ল হয়ে উঠল। এটা কি‌, ওটা কেমন করে তৈরি হয়‌, ক্রিম স্নো ইত্যাদিতে কি কি উপকরণ লাগে এইসব প্রশ্নের উত্তর শুনতে শুনতে সে যেন একটা নতুন রাজ্যে প্রবেশ করল। নতুন তথ্য আবিষ্কারের একটা উত্তেজনা আছে‌, কৌতূহলী মন সহজেই মেতে ওঠে।

ফ্যাক্টরি পরিদর্শন শেষ করে ডক্টর দত্ত দীপাকে মণ্ডপে নিয়ে গেলেন। মণ্ডপের একপাশে অনুচ্চ মঞ্চ‌, তার ওপর কয়েকটি চেয়ার; মঞ্চের সামনে দর্শকদের চেয়ারের সারি। ফ্যাক্টরিতে যারা কাজ করে সকলেই মণ্ডপে উপস্থিত। ডক্টর দত্ত দীপাকে মঞ্চের ওপর একটি চেয়ারে বসালেন‌, দেবাশিস তার পাশে বসিল। ফাংশন আরম্ভ হল।

ফ্যাক্টরির কর্মীরা শুধু কাজই করে না‌, তাদের মধ্যে শিল্পী রসিক গুণিজনও আছে। একটি কোট-প্যান্ট পরা ছোকরা প্রেক্ষাভূমি থেকে উঠে এসে রবীন্দ্রনাথের গান ধরল–তোমরা সবাই ভাল‌, আমাদের এই আঁধার ঘরে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলো। ছোকরার গলা ভাল; গান শুনতে শুনতে শ্ৰোতাদের দন্ত বিকশিত হয়ে রইল। দীপার মুখেও একটি অরুণাভ হাসি আনাগোনা করতে লাগল। সে একবার আড়চোখে দেবাশিসের পানে তাকাল; দেখল‌, তার ঠোঁটে লোক-দেখানো নকল হাসি। দীপা এখন দেবাশিসের হাসি দেখে বুঝতে পারে আসল হাসি কি নকল হাসি। তার মন হোঁচটি খেয়ে শক্ত হয়ে বসল।

গানের পালা শেষ হলে আর একটি যুবক এসে গম্ভীর মুখে একটি হাসির গল্প শোনাল। সকলে খুব খানিকটা হাসল। তারপর ডক্টর দত্ত উঠে ছোট্ট একটি বক্তৃতা দিলেন। চা কেক দিয়ে সভা শেষ হল।

দেবাশিস দীপাকে নিয়ে নিজের মোটরের কাছে এসে দেখল‌, মোটরের পিছনের সীট একরাশ গোলাপফুল এবং আরো অনেক উপহারদ্রব্যে ভরা। দেবাশিস স্নিগ্ধকণ্ঠে সকলকে ধন্যবাদ দিল‌, তারপর দীপকে পাশে বসিয়ে মোটর চালিয়ে চলে গেল। সন্ধ্যে তখন উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

সাবধানে গাড়ি চালাতে চালাতে দেবাশিস বলল—’কেমন লাগল?’

পাশের আলো-আঁধারি থেকে দীপা বলল—’ভাল।’

গাড়ির দু’পাশের ফুটপাথ দিয়ে স্রোতের মত লোক চলেছে‌, তারা যেন অন্য জগতের মানুষ। গাড়ি চলতে চলতে কখনো চৌমাথার সামনে থামছে‌, আবার চলছে; এদিক ওদিক মোড় ঘুরে বাড়ির দিকে এগিয়ে চলেছে।

‘ডক্টর দত্তকে কেমন মনে হল?’

এবার দীপার মনে একটু আলো ফুটল–’খুব ভালো লোক‌, এত চমৎকার কথা বলেন। উনি কি অনেক দিন। এখানে‌, মানে ফ্যাক্টরিতে আছেন?’

দেবাশিস বলল–’বাবা যখন ফ্যাক্টরি পত্তন করেন তখন থেকে উনি আছেন। আমি ফ্যাক্টরির মালিক বটে‌, কিন্তু উনিই কর্তা।’

গাড়ির অভ্যন্তর গোলাপের গন্ধে পূর্ণ হয়ে আছে। দীপা দীর্ঘ আন্ত্রাণ নিয়ে বলল—’ফ্যাক্টরির অন্য সব লোকেরাও ভাল।’

দেবাশিস মনে মনে ভাবল‌, ফ্যাক্টরির সবাই ভাল‌, কেবল মালিক ছাড়া। মুখে বলল—‘ওরা সবাই আমাকে ভালবাসে।’ একটু থেমে বলল–’ফ্যাক্টরি থেকে বার্ষিক যে লাভ হয় তার থেকে আমি নিজের জন্যে বারো হাজারা টাকা রেখে বাকি সব টাকা কর্মীদের মধ্যে মাইনের অনুপাতে ভাগ করে দিই।’

‘ও—’ দীপার মনে একটা কৌতূহল উঁকি মারল‌, সে একবার একটু দ্বিধা করে শেষে প্রশ্ন করল–’ফ্যাক্টরি থেকে কত লাভ হয়?’

দেবাশিস উৎসুকভাবে একবার দীপার পানে চাইল‌, তারপর বলল–’খরচ-খরচা বাদ দিয়ে ইনকাম ট্যাক্স শোধ করে এ বছর আন্দাজ দেড় লাখ টাকা বেঁচেছে। আশা হচ্ছে‌, আসছে বছর আরো বেশি লাভ হবে।’

আর কোনো কথা হবার আগেই মোটর বাড়ির ফটকে প্রবেশ করল। বাড়ির সদরে মোটর দাঁড় করিয়ে দেবাশিস বলল-‘গোলাপফুলগুলোর একটা ব্যবস্থা করা দরকার।’

দীপা বলল–’আমি করছি।’

নকুল এসে দাঁড়িয়েছিল‌, দীপা তাকে প্রশ্ন করল–’নকুল‌, বাড়িতে ফুলদানি আছে?’

নকুল বলল–’আছে। বইকি বউদি‌, ওপরের বসবার ঘরে দেয়াল-আলমারিতে আছে। চাবি তো তোমারই কাছে।’

‘আচ্ছা। আমি ওপরে যাচ্ছি‌, তুমি গাড়ি থেকে ফুল আর যা যা আছে নিয়ে এস।’ দীপা ওপরে চলে গেল।

ওপরের বসবার ঘরে কাবার্ডে অনেক শৌখিন বাসন-কোসন ছিল‌, তার মধ্যে কয়েকটা রূপের ফুলদানি। কিন্তু বহুকাল অব্যবহারে রূপোর গায়ে কলঙ্ক ধরেছে। দীপা ফুলদানিগুলোকে বের করে টেবিলের ওপর রাখল। তারপর নকুল এক বোঝা গোলাপ নিয়ে উপস্থিত হলে তাকে প্রশ্ন করল-নকুল‌, ব্ৰাসো আছে?’

নকুল বলল–’বাসন পরিষ্কার করার মলম? না বউদি‌, ছিল‌, শেষ হয়ে গেছে। কে আর রূপের বাসন মাজাঘষা করছে! আমি তেঁতুল দিয়েই কাজ চালিয়ে নিই।’

দীপা বলল—’তেঁতুল হলেও চলবে। এখন চল‌, ফুলগুলোকে বাথরুমের টবে রেখে ফুলদানি পরিষ্কার করতে হবে।’

দীপার শয়নঘরের সংলগ্ন বাথরুমে জলভরা টবে লম্বা ডাঁটিসুদ্ধ গোলাপ ফুলগুলোকে আপাতত রেখে দীপা তেঁতুল দিয়ে ফুলদানি সাফ করতে বসল। এতদিন পরে সে একটা কাজ পেয়েছে যাতে অন্তত কিছুক্ষণের জন্যেও ভুলে থাকা যায়।

দেবাশিস একবার নিঃশব্দে ওপরে এসে দেখল‌, দীপা ভারি ব্যস্ত। আচলটা গাছ-কোেমর করে। জড়িয়েছে‌, মাথার চুল একটু এলোমেলো হয়েছে; ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। দেবাশিস দোরের কাছে দাঁড়িয়ে নিবিষ্ট চোখে দেখল‌, কিন্তু দীপা তাকে লক্ষ্যই করল না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেবাশিস আস্তে আস্তে নীচে নামল‌, তারপর নৃপতির বাড়িতে চলে গেল।

কিন্তু আজ আর তার আড্ডায় মন বসল না! ঘণ্টাখানেক সেখানে কাটিয়ে সে বাড়ি ফিরে এল। ওপরের বসবার ঘরে দীপা রেডিও চালিয়ে বসে ছিল‌, দেবাশিসকে দেখে তার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে রেডিও নিবিয়ে উঠে দাঁড়াল‌, বলল–’ফুলগুলোকে ফুলদানিতে সাজিয়ে ঘরে ঘরে রেখেছি। দেখবে?’

দেবাশিসের মনের ভিতর দিয়ে বিস্ময়ানন্দের বিদ্যুৎ খেলে গেল। দীপা এতদিন তাকে প্রকাশ্যে ‘তুমি এবং জনাস্তিকে ‘আপনি বলেছে‌, আজ হঠাৎ নিজের অজান্তে জনান্তিকেও ‘তুমি বলে ফেলেছে।

দেবাশিস মুচকি হেসে বলল–’চল‌, দেখি।’

দীপা তার হাসি লক্ষ্য করল; হাসিটা যেন গোপন অর্থবহ। সে কিছু বুঝতে পারল না‌, বলল—‘এস।‘

নিজের শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে আলো জ্বেলে দীপা দেবাশিসের মুখের পানে চাইল; দেবাশিস দেখল‌, ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে ঝকঝকে রূপের ফুলদানিতে দীৰ্ঘবৃন্ত একগুচ্ছ গোলাপ শোভা পাচ্ছে। লাল‌, গোলাপী এবং সাদা‌, তিন রঙের গোলাপ‌, তার সঙ্গে মেডেন হেয়ার ফানের জালিদার পাতা।

ফুলদানিতে ফুল সাজানোর কলাকৌশল আছে‌, যেমন-তেমন করে সাজালেই হয় না। দেবাশিস খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে বলে উঠল–’বাঃ‌, ভারি চমৎকার সাজিয়েছ! মনে হচ্ছে যেন ফুলের ফোয়ারা।’

ঘর থেকে বেরিয়ে বসবার ঘরে এসে দেবাশিসের নজর পড়ল রেডিওগ্রামের ওপরে একটা ফুলদানিতে গোলাপ সাজানো রয়েছে। এর সাজ অন্য রকম; চরকি ফুলঝুরির মত ফুলগুলি গোল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সেদিকে আঙুল দেখিয়ে দেবাশিস বলল–’এটাও ভারি সুন্দর। আগে চোখে পড়েনি।’

এই সময় নকুল নীচে থেকে হাঁক দিল—’বউদিদি‌, তোমরা এস; ভাত বেড়েছি।’

দু’জনে নীচে নেমে গেল। রান্নাঘরের টেবিলেও গোলাপগুচ্ছ। দেবাশিস দীপার পানে প্রশংসাপূর্ণ চোখে চেয়ে একটু হাসল।

সে-রাত্রে নিজের ঘরে শুতে গিয়ে দেবাশিস দেখল‌, তার ড্রেসিং টেবিলের ওপরেও আলাপের ফেয়ার। দীপা তার ঘরে ফুল রাখতে ভোলেনি। দেবাশিসের মন মাধুৰ্যপূর্ণ হয়ে দীপা নিজের ঘরে গিয়ে নৈশদীপ জ্বেলে শুয়েছিল। কিন্তু ঘুম সহজে এল না। মনের মধ্যে একটি আলোর চারপাশে বাদলা পোকার মত অনেকগুলো ছোট ছোট চিস্তার টুকরো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আলোটি স্নিগ্ধ তৃপ্তির আলো। আজকের দিনটা যেন গোলাপ-জলের ছড়া দিয়ে এসেছিল…ফ্যাক্টরিতে অনুষ্ঠান.ডক্টর দত্ত্‌্‌, সভামণ্ডপে গান…তোমরা সবাই ভাল…ফ্যাক্টরির সবাই যেন প্ৰাণপণে চেষ্টা করেছে তাকে খুশি করতে…রাশি রাশি গোলাপফুল…ঘরে সাজিয়ে রাখতে কী ভালই লাগে…দেবাশিসের ভাল লেগেছে.সে অমন মুখ টিপে হাসল কেন?…যেন হাসির আড়ালে কিছু মানে ছিল-ওঃ!

শুয়ে শুয়ে দীপার মুখ উত্তপ্ত হয়ে উঠল। সে মনের ভুলে দেবাশিসকে আড়ালে ‘তুমি বলে ফেলেছিল‌, তখন বুঝতে পারেনি। দেবাশিস তাই শুনে হেসেছিল।

দীপা বিছানা থেকে উঠে খোলা জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সামনে দিয়ে ডাইনে বাঁয়ে রাস্তা চলে গেছে; রাস্তার ওপারের তিন চারটে বাড়ির সদর এই জানলা থেকে দেখা যায়। বাড়িগুলির আলো নিবে গেছে। রাস্তায় দুসারি আলো নিষ্পলক জ্বলছে। রাস্তা দিয়ে দু’একটি লোক কদাচিৎ চলে যাচ্ছে‌, পঁচিশ গজ দূর থেকে তাদের জুতোর খট্‌খটু শব্দ শোনা যাচ্ছে। আধ-ঘুমন্ত রাত্রি।

ভণ্ডামি করা‌, মিথ্যে অভিনয় করে মানুষকে ঠকানো‌, এসব দীপার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। তবু ঘটনাচক্রে সে দেবাশিসের সঙ্গে লোক ঠকানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে খানিকটা মানসিক ঘনিষ্ঠতা অনিবার্য। সেজন্য দেবাশিসের কোনো দোষ নেই; সে স্বভাব-ভদ্রলোক‌, তার প্রকৃতি মধুর। কিন্তু সান্নিধ্য যতাই ঘনিষ্ঠ হোক‌, দীপা তাকে ভালবাসে না‌, অন্য একজনকে ভালবাসে। কতকগুলো অভাবনীয় ঘটনা-সমাবেশের ফলে দীপা আর দেবাশিস একত্র নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এ অবস্থায় দীপা যদি দেবাশিসের সঙ্গে সহজ সম্বন্ধে বাস করে তাতে দোষ কি? তাকে আড়ালে ‘তুমি বললে অন্যায় হবে কেন? কাউকে ‘তুমি বললেই কি তার সঙ্গে ভালবাসার সম্বন্ধ বোঝায়?

মনের অস্বস্তি অনেকটা কমলো। সে আবার গিয়ে বিছানায় শুল এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল। সে লক্ষ্য করেনি যে‌, যতক্ষণ সে জানলায় দাঁড়িয়ে ছিল ততক্ষণ একটি লোক রাস্তার ল্যাম্প-পোস্টে ঠেস দিয়ে একদৃষ্টি তার পানে তাকিয়ে ছিল। লক্ষ্য করলে এত সহজে ঘুম আসত না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *