Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রেলগাড়ী || Hemchandra Bandyopadhyay

রেলগাড়ী || Hemchandra Bandyopadhyay

অই শুন টিকিটের ঘরে কিবা গোল!—
মানুষের গাঁদি যেন — ঠেকাঠেকি কোল!
টকস্ টকস্ নাদে
বাবুর টিকির ছাঁদে,
হাঁপায়ে হাঁপায় ছোটে,
সাড়ী, ধূতী, হ্যাট, কোটে
ঠেকা ঠেকি — ছুটে যায়
কেহ কারে না সুধায়,
গ্যালো গ্যালো মুখে বোল,
আয়, নে রে, খোল্, তোল্
হের চলে কাণাকাণি
কিবা লাট্, রাজা, রাণী!
এই ফুকারিল বাঁশী,
ঠং – ঠং শেষ কাঁসী,
গাড়িতে পড়িল চাবি — আর নাহি গোল,
দুলিল সবুজ-রাঙা পতাকর দোল্।

চলিল পুষ্পকরথ ফু’কারে ফু’কারে,
এখন নিঃশ্বাস ছাড়ি দেখ হে দু’ধারে—
হরিত বরণ মাঠ,
ধান্য, নীল, ইক্ষু, পাট,
আকাশ ঢেকে যেথা
দিগন্তে বিস্তৃত সেথা!
দেখ হে দুধারে চেয়ে
পশ্চাতে চলিছে ধেয়ে
সারি সারি নারিকেল,
আর, বট, আম, বেল,
জাঙাল, পগাক, বাঁধ,
বেড়, বাড়ী, নানা ছাদ,
সৌদামিনী-বাঁধা হার
ছুটেছে চামার তার,
উড়িয়া চলেছে রথ
বেগেতে কাঁপিছে পথ—
পক্ষী মৃগ দূরে পড়ি মানিতেছে লাজ—
ধরাতে পুষ্পকরথ এনেছে ইংরাজ!

চলুক্ চলুক্ রথ — যে যার ভাবনা
ভাবো বসে নিরুদ্বেগে ছুটায়ে কল্পনা ;
স্বভাবের প্রিয় যারা
হের গিরি বারিধারা,
নিবিড় ভূধর গায়
গের খেলা কুয়াসায়,
নিশিথে নক্ষত্র পাতি
হের চন্দ্রমার ভাতি,
দেখ হে অনন্ত দৃশ্য ছড়ান মাথায়—
দেখ দিগন্তের কোলে কি দৃশ্য খেলায়।

হের হের তীর্থ মনে চলেছে যাহারা
পথের দু’ধারে তীর্থ — শীঘ্র নামো তারা,
গেলো চলে — গেলো রথ,
অই বৈদ্যনাথ পথ,
গুছাতে সবে না দেরি,
কাজ নাই সঙ্গি হেরি,
দেখিতে দেখিতে যাবে
সীতাকুণ্ড আগে পাবে,
কিছু দূর আগে তার
বাকিপুর গয়া দ্বার,
দণ্ড কত যাক্ যান
পাবে কাশীতার্থ স্থান,
প্রয়াগ অযোধ্যা ছাড়ি পাবে অগ্রবন—
মথুরা তাহার পরে হের বৃনিদাবন!

মানব জনম, হায়, সার্থক হে আজ—
সাবাস্ বাষ্পীয় রথ — সাবাস্ ইংরাজ!
আরো দূরে যাবে যারা
শীঘ্র রথে উঠ তারা
হরিদ্বার, গঙ্গাঝরি,
পুষ্কর, দ্বারকাপুরী,
নর্ম্মদা, কাবেরী নদ,
কৃষ্ণা গোদাবরী পদ,
ঈলোরা বৌদ্ধ-গহ্বর,
সেতুবন্ধ-রামেশ্বর,
ভ্রমিবে নক্ষত্র-গতি,
পর্ব্বত শৃঙ্গেতে পথি
হেরিবে বিমানে চড়ি — ত্রেতায় যেমন
সীতারামে ইন্দ্ররথে সিন্ধু-দরশন!

এসো হে কে যাবে, চল ভারত-ভ্রমণে
দুয়ারে পুষ্পক রথ ছাড়িছে নিস্বনে!—
আর কেন বঙ্গবাসী
পায়ে বেঁধে রাখ ফাঁসী,—
বাঙ্গালীর যে দুর্নাম
ঘুচায়ে, সাধ হে কাম,
আর যেন স্ত্রৈণ ব’লে
বাঙ্গালীরে নাহি বলে,
এবে পরিষ্কার পথ,
যাও যথা মনোরথ,
বোম্বাই কিম্বা কলিঙ্গ
সিলং দুর্জয়লিঙ্গ,
সিমলা পাহাড় পাট,
কাশ্মীর, মারহাট্টা ঘাট,
যেখানে করে, গমন,
সাধিতে পার হে পণ
পুষ্পক বিমানে চ’ড়ে সেইখানে যাও—
বাঙ্গালীর লজ্জাকর দুর্নাম ঘুচাও!

ভারত-ভ্রমণে চলো শীঘ্র কর সাজ্
দুয়ারে পুষ্পকরথ বেঁধেছে ইংরাজ!
ধন্য রে বিমান ধন্য!
ধন্য রে ইংরাজ ধন্য!—
কলে জিনিয়াছে কাল,
অঙ্গারে জ্বালায়ে জ্বাল,
বহ্নিরে বেঁধেছ রথে,
পবনের মনোরথে
তুচ্ছ করি, কর খেলা
কি নিশি মধ্যাহ্ন বেলা,
বেঁধেছ ভারত অঙ্গ
লৌহ জালে, করি রঙ্গ,
অসুর অসাধ্য কাজ সাধিতেছ জগতে!—
জড়ে প্রাণ দিতে পার দেবের দর্পেতে,
পার না কি বাঁচাইতে নির্জ্জীব ভারতে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *