Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভারত সঙ্গীত || Hemchandra Bandyopadhyay

ভারত সঙ্গীত || Hemchandra Bandyopadhyay

আর ঘুমাইও না, দেখ চক্ষু মেলি ;
দেখ দেখ চেয়ে অবনীমণ্ডলী
কিবা সুসজ্জিত, কিবা কুতূহলী,
বিবিধ মানবজাতিরে লয়ে |
মনের উল্লাসে, প্রবল আশ্বাসে,
প্রচণ্ড বেগেতে, গভীর বিশ্বাসে,
বিজয়ী পতাকা উড়িয়ে আকাশে,
দেখ হে ধাইছে আকুতোভয় |—
হোথা আমেরিকা নয়া অভ্যুদয়,
পৃথিবী গ্রাসিতে করিছে আশয়,
হয়েছে অধৈর্য নিজ বীর্যবলে,
ছাড়ে হুহুঙ্কার, ভূমণ্ডল টলে,
যেন বা টানিয়া ছিঁড়িয়া ভূতলে
নূতন করিয়া গড়িতে চায় |
মধ্যস্থলে হেথা আজন্মপূজিতা
চিরবীর্যবতী, বীর-প্রসবিতা,
অনন্ত-যৌবনা যুনানীমণ্ডলী,
মহিমা-ছটাতে জগত্ উজলি,
সাগর ছেঁচিয়া, মরু গিরি দলি,
কৌতুকে ভাসিয়া চলিয়া যায় ||
আরব্য, মিশর, পারস্য, তুরকী,
তাতার, তিব্বত — অন্য কব কি?
চীন, ব্রহ্মদেশ, অসভ্য জাপান,
তারাও স্বাধীন, তারাও প্রধান,
দাসত্ব করিতে করে হেয়জ্ঞান,
ভারত শুধুই ঘুমায়ে রয় |
বাজ্ রে শিঙ্গা, বাজ্ এই রবে,
সবাই স্বাধীন এ বিপুল ভবে,
সবাই জাগ্রত মানের গৌরবে,
ভারত শুধুই ঘুমায়ে রয় |
এই কথা বলি মুখে শিঙ্গা তুলি
শিখরে দাঁড়ায়ে গায়ে নামাবলি,
নয়ন-জ্যোতিতে হানিয়ে বিজলী
গায়িতে লাগিল জনৈক যুবা |
আয়ত লোচন, উন্নত ললাট,
সুগৌরাঙ্গ তনু, সন্ন্যাসীর ঠাট,
শিখরে দাঁড়ায়ে, গায়ে নামাবলি,
নয়ন-জ্যোতিতে হানিল বিজলী,
বদনে ভাতিল অতুল আভা | —
নিনাদিল শৃঙ্গ করিয়া উচ্ছাস,
বিংশতি কোটি মানবের বাস
এ ভারতভূমি যবনের দাস ?
রয়েছে পড়িয়া শৃঙ্খলে বাঁধা !
আর্যাবর্ত জয়ী পুরুষ যাহারা,
সেই বংশোদ্ভব জাতি কি ইহারা ?
জন কত শুধু প্রহরী পাহারা,
দেখিয়া নয়নে লেগেছে ধাঁধা ?
ধিক হিন্দুকুলে ! বীরধর্ম ভুলে,
আত্ম-অভিমান ডুবায়ে সলিলে,
দিয়াছে সঁপিয়া শত্রু-করতলে,
সোনার ভারত করিতে ছার !
হীনবীর্যসম হয়ে কৃতাঞ্জলি,
মস্তকে ধরিতে বৈরি-পদধূলি,
হ্যাদে দেখ ধায় মহাকুতূহলী,
ভারতনিবাসী যত কুলাঙ্গার |
এসেছিল যবে আর্যাবর্তভূমে,
দিক্ অন্ধকার করি তেজোধূমে,
রণ-রঙ্গ-মত্ত পূর্ব-পিতৃগণ,
যখন তাহারা করেছিল রণ,
করেছিল জয় পঞ্চনদগণ,
তখন তাহারা ক’জন ছিল ?
আবার যখন জাহ্নবীর কুলে
এসেছিল তারা জয়ডঙ্কা তুলে,
যমুনা, কাবেরী, নর্মদা পুলিনে,
দ্রাবিড়, তৈলঙ্গ, দক্ষিণাত্যবনে ;
অসংখ্য বিপক্ষ পরাজয়ি রণে,
তখন তাহারা ক’জন ছিল ?
এখন তোরা যে শত কোটি তার,
স্বদেশ-উদ্ধার করা কোন্ ছার,
পারিস্ শাসিতে হাসিতে হাসিতে,
সুমেরু অবধি কুমেরু হইতে,
বিজয়ী পতাকা ধরায় তুলিতে,
বারেক জাগিয়া করিলে পণ |
তবে ভিন্ন জাতি শত্রু-পদতলে,
কেন রে পড়িয়া থাকিস সকলে ?
কেন না ছিঁড়িয়া বন্ধন-শৃঙ্খলে,
স্বাধীন হইতে করিস মন ?
এই দেখ সেই মাথার উপরে,
রবি, শশী, তারা, দিন দিন ঘোরে,
ঘুরিত যেরূপ দিক শোভা করে
ভারত যখন স্বাধীন ছিল !
সেই আর্যাবর্ত এখন (ও) বিস্তৃত,
সেই বিন্ধ্যগিরি এখন (ও) উন্নত,
সেই ভাগীরথী এখন (ও) ধাবিত,
পুরাকালে তারা যেরূপ ছিল |
কোথা সে উজ্জ্বল হুতাশন-সম
হিন্দু বীর দর্প, বুদ্ধি, পরাক্রম,
কাঁপিত যাহাতে স্থাবর জঙ্গম,
গান্ধার অবধি জলধি-সীমা ?
সকলি ত আছে সে সাহস কই ?
সে গম্ভীর জ্ঞান, নিপুণতা কই ?
প্রবল তরঙ্গ সে উন্নতি কই ?
কোথারে আজি সে জাতি-মহিমা !
হয়েছে শ্মশান এ ভারতভূমি !
কারে উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতেছি আমি ?
গোলামের জাতি শিখিছে গোলামি ! —
আর কি ভারত সজীব আছে ?
সজীব থাকিলে এখনি উঠিত,
বীর-পদ-ভরে মেদিনী দুলিত,
ভরতের নিশি প্রভাত হইত,
হায় রে সেদিন ঘুচিয়া গেছে !
এই কথা বলি অশ্রুবিন্দু ফেলি,
ক্ষণমাত্র যুবা শৃঙ্গনাদ ভুলি,
পুনর্বার শৃঙ্গ মুখে নিল তুলি,
গর্জিয়া উঠিল গম্ভীর স্বরে —
এখন (ও) জাগিয়া উঠরে সবে,
এখন (ও) সৌভাগ্য উদয় হবে,
রবি-কর-সম দ্বিগুণ প্রভাবে,
ভারতের মুখ উজ্জ্বল ক’রে |
একবার শুধু জাতিভেদ ভুলে,
ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণ বৈশ্ব শূদ্র মিলে,
করি দৃঢ় পণ এ মহীমণ্ডলে
তুলিতে আপন মহিমা-ধ্বজা |
জপ, তপ আর যোগ আরাধনা,
পূজা, হোম, যাগ, প্রতিমা-অর্চনা,
এ সকলে এবে কিছুই হবে না,
তূণীর কৃপাণে কর্ রে পূজা |
যাও সিন্ধুনীরে, ভূধর-শিখরে,
গগনের গ্রহ তন্ন তন্ন ক’রে,
বায়ু, উল্কাপাত, বজ্রশিখা ধরে’
স্বকার্য-সাধনে প্রবৃত্ত হও !
তবে সে পারিবে বিপক্ষে নাশিতে,
প্রতিদ্বন্দ্বী সহ সমকক্ষ হতে,
স্বাধীনতারূপ রতনে মণ্ডিতে,
যে শিরে এখনে পাদুকা বও |
ছিল বটে আগে তপস্যার বলে
কার্যসিদ্ধি হ’ত এ মহীমণ্ডলে,
আপনি আসিয়া ভক্ত-রণস্থলে,
সংগ্রাম করিত অমরগণ |
এখন সে দিন না হ’ক রে আর,
দেব-আরাধনে ভারত উদ্ধার
হবে না, —হবে না —খোল্ তরবার ;
এ সব দৈত্য মহে তেমন |
অস্ত্র পরাক্রমে হও বিশারদ,
রণ-রঙ্গ-রসে হওরে উন্মাদ,—
তবে সে বাঁচিবে, ঘুচিবে বিপদ,
জগতে যদ্যপি থাকিতে চাও |
কিসের লাগিয়া হলি দিশেহারা,
সেই হিন্দুজাতি, সেই বসুন্ধরা,
জ্ঞান-বুদ্ধিজ্যোতিঃ তেমতি প্রখরা,
তবে কেন ভূমে পড়ে লুটাও ?
ওই দেখ সেই মাথার উপরে,
রবি, শশী, তারা দিনদিন ঘোরে,
ঘুরিত যেরূপে দিক্ শোভা করে,
ভারত যখন স্বাধীন ছিল ;
সেই আর্যাবর্ত এখন (ও) বিস্তৃত,
সেই বিন্ধ্যগিরি এখন (ও) উন্নত,
সেই ভাগীরথী এখন (ও) ধাবিত,
কেন সে মহত্ত্ব হবে না উজ্জ্বল ?
বাজরে শিঙ্গা বাজ্ এই রবে,
শুনিয়া ভারতে জাগুক সবে,
সবাই স্বাধীন এ বিপুল ভবে,
সবাই জাগ্রত মানের গৌরবে,
ভারত শুধু কি ঘুমায়ে রবে ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *