Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মৎস্য পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 4

মৎস্য পুরাণ || Prithviraj Sen

পুষ্কর দ্বীপের অধিপতি পুষ্পবাহনের তপস্যায় ব্রহ্মা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে একটি বিশাল স্বর্ণকমল দিয়ে বললেন–তুমি এই পদ্মেই বাস করবে। এই পদ্মকে যেমন তুমি নির্দেশ করবে, সেখানে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ এই পদ্মাই তোমার বাস ও বাহনের কাজ করবে। এবার পুস্কর দ্বীপ তোমারই শাসনে থাকবে।

ব্রহ্মার কাছে এই বর লাভ করার জন্য তার নাম হল পুষ্পবাহন। ধর্মানুসারে প্রজাপালন করলেন। লীলাবতাঁকে বিয়ে করলেন। আর সেই পুষ্পবিমান চড়ে আত্মীয়-স্বজন ও মহিষীকে নিয়ে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে, এক লোক থেকে অন্য লোকে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। মর্তবাসীরা আশ্চর্য হয়ে সোনার রঙের বিশাল পদ্মফুলের মত বিমানটিকে দেখত।

পুষ্পবাহন মাঝে মাঝে চিন্তা করেন জগতে কত মুনি-ঋষি, যোগী, রাজা, দৈত্য-দানবেরা তপস্যা করছেন কিন্তু তেমন কঠোর তপস্যা তিনি করেননি। তবুও ব্রহ্মা তাঁকে এমন দুর্লভ বিমান কেন দিলেন? এর মধ্যে কোন রহস্য কি থাকতে পারে?

তার কিছুতেই এই বিস্ময় দূর হয় না। একদিন তার রাজসভায় প্রচেতা মুনি এলেন। রাজা পুষ্পবাহন তাঁকে খুব খাতির করার পর বললেন–মুনিবর, ত্রিকালদর্শী আপনি, আপনার অজানা কিছুই নেই। একটি বড় বিস্ময় আমার মনে, সেটা জানার জন্য আমার মতো, সেটি জানার জন্য কৌতূহলী হয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি–কঠোর তপস্যা না করেও আমি কেমন করে এমন সৌভাগ্যবান হলাম? দয়া করে আপনি আমায় বলুন।

প্রচেতা মুনি কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে তারপর চোখ খুলে বললেন–হে রাজন, আপনি পূর্বজন্মে বহু সাধনা করেছিলেন, তাই এ জন্মে অল্পতেই সমস্ত তপস্যার ফল পেয়ে গেলেন। মুনির কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে রাজা বললেন–মুনিবর, এত সৌভাগ্য আমি কিন্তু চাইনি। আমার এতে কোনো মোহ নেই। আমার পূর্বজন্মের ইতিহাস জানতে ইচ্ছা করছে।

তখন প্রচেতা মুনি বললেন–এত সব লাভ করেও আপনি যে মোহগ্রস্ত হননি তা আমি জানি। পূর্বজন্মে আপনি ছিলেন এক ব্যাধ। বড় নিষ্ঠুর ছিলেন আপনি। নির্বিচারে পশু হত্যা করতেন। দেহের দিকে কোনো নজর নেই। দেহে ময়লা জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তাতেও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। শিকারের নেশা প্রবল থাকার অন্য কোন দিকে আপনি লক্ষ্য রাখতেন না।

একসময় সারাদেশ অনাবৃষ্টি দেখা দিল। খাদ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। ক্ষুধার জ্বালায় খাদ্যের জন্য বন থেকে বনান্তরে ছুটে বেড়াল সেই ব্যাধ। সঙ্গে ছিল তার বউ। একটু এগোতেই তারা একটি সুন্দর সরোবর দেখতে পেল। তাতে এখনও অনেক জল আছে। সেই সরোবরে ব্যাধ ও ব্যাধিনী স্নান করল ও সেই জল পান করল। সেই সরোবরে অনেক সুন্দর সুন্দর পদ্মফুল ফুটে আছে। ব্যাধ চিন্তা করল–যখন সর্বত্রই অনাবৃষ্টি তখন শহরেও ফুলের আকাল হবে। যদি আমি এই সরোবরের পদ্মফুল নিয়ে শহরে যাই নিশ্চয় লোকে তা কিনবে। আর সেই পয়সায় আমরা খাবার কিনে খেতে পারব।

এই চিন্তা করে ব্যাধ ও ব্যাধিনী পদ্মফুল তুলে নিয়ে বিদিশা নামে নগরে চলল। নগরের পথে পথে তারা ফুল নিয়ে ঘুরল কিন্তু কেউ কিনল না সেই ফুল। ক্রমে সন্ধ্যা নামলে তারা শহরের এক প্রান্তে ফিরে এল। একটা গাছতলায় বসে রইল তারা। অনাহারে কেটেছে সারাটা দিন। অনেক রাত্রি হয়েছে, এমন সময় তারা কাসর ঘন্টার শব্দ শুনতে পেল।

তারা ভাবল–নিশ্চয় কোথাও কোন দেবতার পূজা হচ্ছে। যাই গিয়ে দেখি। তখন তারা সেই শব্দ অনুসরণ করে গিয়ে একটি বিষ্ণুমন্দিরে উপস্থিত হয়ে দেখল-ভগবান বিষ্ণুর পূজা হচ্ছে সেখানে।

বিদিশা শহরের অনঙ্গবতী নামে এক বেশ্যা, বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে ব্রত করে সে রাতে এসেছিল বিষ্ণুর পূজা দিতে ঐ মন্দিরে। বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে দামী দামী জিনিস, এমনকি বিছানাপত্রও দেওয়া হয়েছিল। বিষ্ণু বিগ্রহকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল।

ব্যাধ ও ব্যাধিনী একটু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে সেই বিষ্ণুমূর্তি দর্শন করছিল। তারপর অনঙ্গবতাঁকে ডেকে বলল–পূজার জন্য আমি এই পদ্মগুলো নিয়ে এসেছি, তুমি নাও। অনঙ্গবতী সেগুলো নিয়ে তার পূর্বের সংগৃহীত ফুলের সঙ্গে মিশিয়ে দিল।

ব্যাধ মনে মনে বলল–হে ঠাকুর, ফুলগুলো তুলেছিলাম আমি, বিক্রি করে কিছু কিনে খাব বলে। কিন্তু যখন কেউ এই ফুল কিনল না, তখন তোমাকেই দিচ্ছি, তুমিই নাও। আমার তো আর দেবার মত কিছুই নেই।

সারারাত ধরে মহা ধুমধামে পূজা করে অনঙ্গবতীর ব্রত শেষ হল। সেই নগরে যত ব্রাহ্মণ ছিল তাদের সবাইকে অনঙ্গবতী প্রসাদী খাবার আর শয্যাদান করে দক্ষিণা দিল। ব্যাধ ও ব্যাধিনীকে দিল বিষ্ণুর প্রসাদ। সারাদিন ও রাত্রি উপবাস করার পর তারা প্রসাদ খেল।

রাজা পুষ্পবাহনের স্ত্রী লীলাবতী কৌতূহলী হয়ে মুনিকে জিজ্ঞাসা করলেন-হে মুনিবর, বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে অনঙ্গবতী যে ব্রত করেছিল, সেই ব্রতের নাম কি?

প্রচেতা মুনি বললেন–সেই ব্রতের নাম বিভূতি দ্বাদশী। শ্রীবিষ্ণুর প্রিয় এই ব্রত যে পালন করবে, তার পরম সৌভাগ্য লাভ হবে। অনঙ্গবতী যথাযথভাবে সেই ব্রত পালন করেছিল তাই তার সকল অভীষ্ট পূর্ণ হল। সেই ব্যাধ দম্পতি সারাদিন সারারাত্রি উপবাস করে কেবলমাত্র পদ্মফুল দিয়ে মনে মনে শ্রীবিষ্ণুর পূজা করেছিল বলে, তাদেরও ব্রত পালন হল। তার ফলও তারা লাভ করল।

হে রাজন, সেই ব্যাধই এই জন্মে পুষ্কর–দ্বীপের রাজা, আর তার ব্যাধিনী বর্তমানে আপনার রানি লীলাবতী। মুনিবরকে রাজা পুষ্পবাহন ও রানি লীলাবতী প্রণাম জানালে তিনি তাদের আশীর্বাদ করে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

Pages: 1 2 3 4 5

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *