Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়ের কান্না || Samarpita Raha

মায়ের কান্না || Samarpita Raha

আজ মৌমিতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।মৌমিতার এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি তে অকাল মৃত্যু হয়েছিল লন্ডনে।
একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনে মৌমিতার বাবা দমদমের বাড়িতে স্ট্রোক হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন।আর মেয়ে আসার দিন গুনছেন।
ঐ চিৎকার করছেন …মিতা এলি মা।
একটু কাছে আয় মা…কতদিন তোকে যে দেখি নি।

মা আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে মেয়ের বাৎসরিক কাজ করছে।মেয়েকে শেষ দেখা দেখেন নি।কারণ মিতার বাবা অসুস্হ।তাছাড়া লন্ডনে একা কোথায় যাবেন!!!

শেষ তিনমাস মেয়ের কোনো ফোন পাইনি বলে মিতার বাবার স্ট্রোক ।
মেয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে…বাড়িতে ক্যুরিয়ার আসে।মিতার মা বাক্সটা খোলেন।তাতে একটা লাল ডায়েরি।

মা তুমি এটা কি করলে?
আমি বিয়ে করতে একদম চাই নি।এখনকার দিনে বাইশে কেউ বিয়ে করেনা।তুমি তোমার বন্ধুর ভায়ের সঙ্গে প্রায় জোর করে বিয়ে দিলে।মেয়ের বর লন্ডন থাকে।সব বন্ধুদের কাছে গর্ব করে বলতে পারবে।বাবা তো আমায় ছেড়ে থাকতে পারে না।তবুও তুমি এতদূরে বিয়ে দিলে!!!
আমায় যে নাচ,গান শিখিয়েছ…তোমার জামাই কোনোদিন শুনতে ও দেখতেও চাইনি।উল্টে বলে গান ,নাচ বাঈজি রা করে।
জান মা তোমার জামাই বিয়ের পর থেকে কোনদিন স্পর্শ করে নি।সেই সকালে যায় অফিস আর ফেরে শেষ রাতে।
আমাকে সুখ দিতে চেয়েছিলে ..হ‍্যাঁ মা আমি আজ সুখেই আছি।

সারাদিন সব কাজ করেও অফুরন্ত সময়।নাচ ও গান কিছুই করি না।ওগুলো মনের ব্যাপার।
তোমার কাছে যখন ছিলাম,পড়া কর,নাচ,গান ছবি নিয়ে অত্যাচার করতে।হয়ত আমার ভালর জন্য শিখিয়েছিলে।

ফোন করলে অনেক টাকা বিল ওঠে..তাই সব ফোন কেড়ে নিয়েছে….আজ তিনমাস হল আমি গৃহবন্দি।

বাইরে তালা ঝুলিয়ে অফিস যায়।কারণটা শুনবে না মা,আমি যে দেখে ফেলেছি আমার বর নপুংসক।প্রায় তিনমাস ধরে এই ডায়েরি লুকিয়ে লিখছি।
জানি না কখনো তুমি পাবে কিনা।আমার কষ্টের কথা জানতে পারবে কিনা!!

হঠাৎ আমাদের ফ্ল্যাটের এক তলার অফিস ঘরে আগুন লাগে।আমার বর আর আমি নিচে নেমে যায়।আগুন আয়ত্তে আসে।একজন অসুস্হ হয়,ওনাকে নিয়ে বর হাসপাতালে যায়।

এই সুযোগে নিচের দারোয়ানকে আমার একজোড়া কানের দুল ও এই ডায়েরীটা দিয়ে বলি …কাকু তুমি তো কোলকাতার লোক …এই ঠিকানায় পারলে পাঠিয়ে দিও।ডায়েরিটা লেখার ঠিক এক বছর বাদে আসে।তাতে শেষ পাতায় লেখা মা আমি চললাম।
বাড়িতে মেয়ের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ হচ্ছে…তখন মা জানতে পারে… মেয়ের মৃত্যু গলায়দড়ি দিয়ে।মায়ের প্রতি অভিমান করে চলে গেছে।জামাই তো জানিয়েছিল এক্টোপিক প্রেগন‍্যান্সি।
মা কি করবে।মায়ের হাত পা বাঁধা।এইভাবে কত মৌমিতা হারিয়ে যায় বরের অত‍্যাচারে বা শ্বশুরবাড়ির মানসিক অত্যাচারে।

হঠাৎ যেন মোবাইলে মেয়ের গানের রিং টোন বেজে ওঠে _আমার বেলা যে যায়….।মৌমিতার বাবা বলছে মিতা এলি মা।মৌমিতার মা এতদিনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে…বলে না গো তোমার মিতা আর আসবে না…সে যে এক বছর আগে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুুলেছে।হঠাৎ মা শুনতে পাই মৌমিতা বলছে মা আমি বাবাকে নিয়ে গেলাম।ঘরে গিয়ে দেখে মৌমিতার বাবার দেহে প্রাণ নেই।
পঞ্চাশ বছরের মহিলা আজ সব হারিয়ে মানসিক হাসপাতালে আছে।সারাদিন ঐ একটা কথা বলে জানো তোমরা আমার মেয়ে গলায় দড়ি দিয়েছে..ওর বাবা ও চলে গেছে।জান তোমরা “আমি আজ সুখেই আছি”।তারপর হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে মৌ ফিরে আয় মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress