মানুষের হাহাকার – তিন
বিকেল মরে আসছে। গাছপালা থেকে রোদ ক্রমে সরে যাচ্ছিল। পার্কের বড় পুকুরে একদল মানুষ ডুবছে ভাসছে। কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে বুড়ো মানুষের জটলা। তারা সবাই মুখোমুখি বসে। কী কথা বলছে নানু শুনতে পাচ্ছে না। সে বলেছিল একটা বেঞ্চিতে। মাথায় কাকেরা উড়ছে। শিরিষের লম্বা একটা ডাল নেমে এসেছে তার মাথার ওপর। ও—পাশটায় কিছু ছেলের পায়ে একটা লাল বল। এবং যেখানে যেমন সুবিধা জোড়ায় জোড়ায় যুবক যুবতী। তার মনে হল বাবা মাকে নিয়ে বিশ বছর আগে এমনি কোনো নিরিবিলি জায়গায় বসত। তারপর তাদের বিয়ে হয়েছিল। স্মৃতির মধ্যে ডুবে গেলে, সে সব দেখতে পায়। জীবনের প্রথম কোনো স্মৃতি তার পেছনে, আরও পেছনে যেতে যেতে মনে হয় তার, সে সেই যখন মাতৃজঠরে অথবা তারও আগে শরীরের রক্ত কণিকার সামান্য ডি এন এ—তার আরও আগে যখন অপার্থিব কিছু মনের মধ্যে পাখা বিস্তার করতে থাকে, তখন তার মনে হয় সে সূদুর অতীতে চলে গেছে। সেখানে একজন বুড়ো মানুষ চোখে হাই পাওয়ারের চশমা, হাত ধরে আছে এক ছোট্ট শিশু—সাদা কেডস জুতো পায় লাফিয়ে লাফিয়ে এটা কী ওটা কী বলছে। এমন কেন মনে হয়, কিংবা কোনো গাছপালা মাঠ পার হয়ে তার নীল কুটির—পাশে একটা বড় দীঘি তাতে অজস্র পদ্মফুল ফুটে আছে। কিছু পদ্মফুল আর এক যুবতীকে সে দেখতে পায়—স্নান করায় শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ছবির মতো স্পষ্ট। আকাশটা সেখানে থমকে দাঁড়িয়ে আছে।
বুড়ো মানুষগুলো আরও ঘন হয়ে বসেছে। সে তাদের একটা কথাও শুনতে পাচ্ছে না। সে নড়ে চড়ে বসল। তারপর উঠে দাঁড়াল। হেঁটে গেল কিছুটা। পায়চারি করার মতো। সে পাশ দিয়ে হেঁটে গেল। বুড়ো মানুষদের—মুখগুলি আবছা—যেন মৃত্যুর কাছাকাছি এই মানুষগুলি। আজ শেষ কিছু সত্য কথা বলার জন্য এক ঠাঁই হয়েছে। সে কাছে গেল। আর মনে হল একটা বুড়োও আর কথা বলছে না। এরা যেন সব বুড়ো মানুষের ডামি! এরা পরস্পরের দিকে ভারি সংশয়ের চোখে তাকিয়ে আছে। নানু বুঝতে পারল সব বুড়োরাই তাকে দেখে আর একটাও কথা বলছে না; তার মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল—এবং এটা হয়েছে—সেইদিন থেকে—যেদিন মেসো এবং মাকে ভয়ংকর একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থায় দেখে চোখ তার জ্বলে উঠেছিল, পায়ের রক্ত ঝা করে মাথায় উঠে গিয়েছিল—হাতে কিছু একটা থাকলে কী করত বলা যায় না—বুড়ো মানুষরাও কী সেটা টের পায়। মার ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক, মা সিল্কের শাড়ি পরতে ভালোবাসে। মা, তার মা বাবার কোনো স্মৃতিই আজ শরীরে ধরে রাখেনি। সে বাবার একটি ছবি বুকের মধ্যে রেখে দিয়েছে। সে ছবিটাও ক্রমে অস্পষ্ট হয়ে আসছে।
সে আবার এসে বেঞ্চিটাতে বসল। বেশ বাতাস দিচ্ছে! গরমকাল। গতকাল সন্ধ্যায় ঝড় হয়ে গেছে শহরে। বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখন এই বিকেলে ঠান্ডা বাতাসে শরীরে ঘেমো গন্ধ নেই। তার চুল বড়, তার চোখে হাই পাওয়ারের চশমা এবং মাঝে মাঝে মানুষের মুখ সেই চশমার ভেতর কঠিন রুক্ষ এবং ইতরের মতো দেখায়। অবনীশ নামে একটা লোকের চোখ চশমার কাচে ধরা পড়লেই সে বুঝতে পারে—লোকটা এখন পেছনে হেঁটে যাচ্ছে। তাকে দেখলেই পায়ে পায়ে পেছনে হেঁটে সরে যেতে থাকে।
আজ একবার অবশ্য সে গিয়েছিল মানুর কাছে। এখানে আসার পর কেন জানি কলেজে এই মানুকে ভারি ভালো লেগেছিল। গিয়ে দেখেছে মানু বাড়ি নেই। বাড়ি থাকলে সে এখানে হয়তো আসতই না। অথচ মাথার ভিতরে যে কখন কী হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই মনে হয়, হত্যাকারী কে, একবার তদন্ত করে দেখলে হয়। আবার কখনও মনে হয় সে কিছুই আর ফিরে পাবে না। মানুষ যা হারায় সে আর তা ফিরে পায় না।
আর তখনই নানু দেখল, পায়ের কাছে একটা লাল বল। ছোট ছোট শিশুরা সেই লাল বল পায়ের কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেল। মাথার ভিতর সঙ্গে সঙ্গে শৈশবের নানা স্মৃতি ভেসে ওঠে। একটা লাল বল জেঠু হাতে দিয়ে বলেছিলেন কবে যেন, এটা তোমার। সেই লাল বলটা সে হারিয়েছে। তখনই নানুর কান্না পায়। বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। এক আশ্চর্য নিঃসঙ্গতায় সে ডুবে যেতে থাকে। মনে করতে পারে না তখন, কেন এই পার্কটায় সে এসে বসে থাকে। সেই দুপুর থেকে এখানে—একা। কলেজ যাবার নাম করে সোজা চলে এসেছে এখানে—এবং এসেই মনে হয়েছে, খুব অসময়ে এসে গেছে। সুনীল কাকা এখন অফিসে। তাঁকে পাওয়া যাবে না। সন্ধ্যা না হলে বাড়িতে সে ফিরবে না। অকারণ আগে থেকে গিয়ে দরজায় খুট খুট করে লাভ নেই। অথচ সে সারাটা বিকেল আসল কথাটা একবারও মনে করতে পারেনি। স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা চালিয়েছিল আজ। ওর মনে হয়েছিল এই পার্কটায় সে শৈশবে এসেছে। দৌড়ে বেড়িয়েছে। লাল বল নিয়ে খেলা করছে। অবনীশ নামক এক অবিবাহিত যুবক ছিল তার বন্ধুর মতো—যা সে চেয়েছিল, তা যত দুর্লভই হোক এনে দিয়েছে। এখন মানুষটাকে বললে কেমন হয়, তুমি তো আমার শৈশবে সব দুর্লভ বস্তু সংগ্রহের জন্য প্রাণপাত করেছ, এখন এনে দিতে পারো না বাবার একটা ছবি। তোমার বউ তোমার মেয়ে আমাদের সব বন্ধুত্ব মুছে দিল। তুমি ভুলে গেলে আমার সামান্য অসুখে তোমার চোখে ঘুম থাকত না। তোমরা এখন এত স্বার্থপর হয়ে গেছ।
সে উঠে দাঁড়াল। একা বসে থাকলে হিজিবিজি চিন্তা মাথায় ঝপাৎ করে ঢুকে যায়।
সে হাঁটছিল পার্কের এখানে সেখানে। আলোর ডুম জোনাকির মতো স্থির হয়ে আছে। পার্কটা শেষ হলে একটা কাঁটাতারের বেড়া এবং গেট। সে গেট পার হয়ে ডান দিকে দেখল, দুজন মাঝবয়সি লোক অন্ধকার রাস্তাটায় হেঁটে যাচ্ছে। পাশে গাছপালা নিবিড় এবং কেমন এক অরণ্যের গন্ধ। কোনো মেয়ে খিল খিল করে হাসছে। তার মনে হল, সে কতদিন হাসে না। সেই ভয়ংকর দৃশ্যটা তার মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। তার মা, মা না ভদ্রমহিলা, না পড়ন্ত বয়সের যুবতী মাকে কেন সে যে আর কতদিন থেকে মার মতো ভাবতে পারে না, আর তার তখনও একটা ভীষণ কষ্ট হয়—ষড়যন্ত্র করে শেষ পর্যন্ত এই শহরটায় তার নির্বাসন হয়েছে। এবং তখনই মনে হল, সামনে সেই বাড়িটা। সে খুট খুট করে দরজায় কড়া নাড়বে ভাবল, কিন্তু পাশের জানালায় দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। কোনো বনভূমির জ্যোৎস্নার মতো চোখ তুলে তাকে দেখছে।
সে বলল, এটা সুনীল বসুর বাড়ি?
হ্যাঁ।
তিনি আছেন?
এখনও ফেরেননি।
সে আবার সিঁড়ি থেকে নেমে এল। আর একটু ঘুরে আবার আসবে ভাবল। তখনই সেই তরুণী, তাকে বলল, বসুন, বাবা এক্ষুণি এসে যাবে, বলে দরজা খুলে দিল। দরজায় আরও দুটি সুন্দর শিশুর মুখ—তারাও তাকে দেখছে। নবনীতার কেউ হয়। ছোট ভাইবোন থাকলে মেয়েরা আরও সুন্দর হয়ে যায় নবনীতাকে দেখে এটাও টের পেল নানু।
নানুর চোখ এখন অন্য দিকে। সে দেয়াল দেখতে দেখতে ঘরে ঢুকে গেল। চোখে মুখে অতীব এক উদাসীনতা। সে যেন ঘুরতে ঘুরতে এখানে চলে এসেছে। তার কিছু জরুরি কাজটাজ আছে, অন্তত বসার ভঙ্গি দেখে তা বোঝা গেল না। বরং মনে হচ্ছিল, নানু শেষ পর্যন্ত সঠিক জায়গার খোঁজ পেয়ে গেছে। অথবা বহু দূরের পথ অতিক্রম করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছে। কোথাও আর যাবার কথা নেই, কোথাও আর ফেরার কথাও নেই। সে বসেই জানালার দিকে তাকিয়ে বলল, এক গ্লাস জল দেবেন? খাব। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে চোখ তুলে তাকাতেই বুঝল মেয়েটি ঘরে নেই।
এবার সে কেন জানি কিছুটা স্বস্তি বোধ করল।
বসার ঘরটা সে দেখছে। ঠিক আগের মতো নেই। নতুন চুনকামের গন্ধ। সামনে সেন্টার টেবিল। দু’দিকে দুটো লম্বা সোফা, একটা বেতের চেয়ার নীল রঙের, একটা টেলিভিশন সেট, দেয়ালের র্যাকে অনেক বই, গ্রন্থাবলী নতুন নতুন, একটা মাটির ঘোড়া এক কোণায়—খুব ছিমছাম, নীল রঙের পর্দায় লেসের কাজ। সে এবার মনে করার চেষ্টা করল, প্রথম যেদিন অবনীশের সঙ্গে এখানে এসেছিল—তখন ঘরটায় এ—সব ছিল কিনা! অনেক কিছুই ছিল না। অথবা আগে যা ছিল এখন আর কিছু নেই।
কেবল মনে হল সুনীলকাকার মেয়ে নবনীতা কুট করে তার হাত কামড়ে দিয়েছিল।
নানু সব স্পষ্ট মনে করতে পারছে। স্মৃতির এই খেলায় একমাত্র সে দেখেছে কখনও হেরে যায় না। যে দরজা খুলে দিয়েছিল, তার মুখ সে দেখেনি। আর দেখার সময়ও নয় এটা। তার এখন কত সব জরুরি কাজ, কারণ, সুনীলকাকা আর বাবা একসঙ্গে এক সময় এক অফিসে কাজ করত। সুনীলকাকা বাবার অধীনে কাজ করত এবং খুবই সমীহ করত বাবাকে। মেয়েটা কুট করে কামড়ে দিয়েছিল বলে, কাকা নবনীতাকে সেদিন মারবে বলে শাসিয়েছিল। তার সবই মনে পড়ছে।
সে ভীষণ একটা জরুরি কাজে এসেছে। এসেই তার নানারকম চিন্তা—ভাবনা—কীভাবে যে আরম্ভ করবে কথাটা? কারণ, সাত আট বছর আগেকার কথা সুনীল কাকা ভুলেও যেতে পারে। তবু সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে একের পর এক জেরা করে যাবে। প্রথম প্রশ্নটা সে কী করবে ভাবল। যেমন এলে পরে পায়ে টুক করে একটা প্রণাম ঠুকতে হবে। প্রণাম ঠুকলে সে দেখেছে, গুরুজনেরা খুব সদাশয় হয়ে যান। প্রণাম ঠুকে কাজ উদ্ধার করা খুব সহজ হবে ভাবল। তারপর পরিচয় দেবে। সে এখন যাদবপুরের দিকে আছে বলবে। মার কথা জানতে চাইলে বলবে, ভালো আছে, আসলে ভালো নেই বললে নানারকম সংশয় দেখা দেবে।
সে এক গ্লাস জল চেয়েছিল, কেউ নেই, অথচ জল খেতে হবে। সে এবার ঘড়ি দেখল। সাতটা বেজে গেছে। তার বাড়িফেরার কথা চারটের মধ্যে—দাদু বারান্দায় পায়চারি শুরু করে দিয়েছেন। বারান্দায় বুড়ো মানুষটার মুখ বড়ই দুঃখী। বুড়ো মানুষটার বড় আশ্রয় ছিল একটা—যা হোক নানু অন্তত জানে না, তার বাবা আত্মহত্যা করেছে। এখন আর তার সেই আশ্রয়টুকুও নেই। তখনই মনে হল কেউ ঢুকছে বাড়িতে। সিঁড়িতে জুতোর শব্দ। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কেউ এ—বাড়িতে উঠে আসছে।
সে দরজার কাছে সরে দাঁড়াতেই দেখল, তিনি ঢুকছেন। হাতে ব্রিফকেস। কালো প্যান্ট পরা, সাদা শার্ট এবং কালো রঙের কোট। মাথার সামনেটায় কিছু কাঁচা—পাকা চুল। আগে গোঁফ রাখতেন, এখন মসৃণ মুখ। সে টুক করে প্রণাম করতেই সুনীলকাকা সামান্য ইতস্তত করে বলল, ‘আরে থাক থাক।’ আজকালকার উঠতি বয়সের ছেলেরা এতটা বিনয়ী হয়, সুনীলকাকার বোধহয় জানা ছিল না। ভালো করে মুখটা দেখছিল নানুর। নানু ভাবছে দেখি চিনতে পারে কী না। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলল, তুমি প্রীতিশদার ছেলে?
যাক মনে রেখেছে। সে বলল, হ্যাঁ।
কত বড় হয়ে গেছ।
সে কিছু বলল না।
বোস। তারপরই হাঁক দিল, নবনীতা দেখ কে এসেছে। তোমার মাকে ডাক। সুনীলকাকা গলার টাই আলগা করে প্যান্ট টেনে বসে পড়ল। বলল, কতক্ষণ?
সে বলতে পারত, অনেকক্ষণ। সেই দুপুরে বের হয়েছে। এখন বাজে সাতটা। সে তার কিছু না বলে বলল, এই মাত্র।
তোমরা সবাই ভালো আছ?
ভালো নেই বলতে পারত, সেটা ঠিক হবে না ভেবে বলল—ভালো। সবাই ভালো।
বউদি একটা কী কাজ নিয়েছে শুনলাম।
ঠিকই শুনেছেন। গলাটা আবার শুকনো লাগছে নানুর। সে বলল, এক গ্লাস জল। খুব তেষ্টা পেয়েছে।
আরতি এক গ্লাস জল।
আরতি এ—বাড়ির কাজের মেয়ে। এক ডাকেই হাজির। জল রেখে গেল। কিন্তু নবনীতা অথবা আর কেউ এল না। এখন তার মনে পড়েছে, কাকিমার ঠোঁটের নীচে একটা বড় তিল আছে। মুখটা মনে নেই—তিলটার কথা মনে আছে।
তখন সুনীলকাকা বলল, তুমি বস, আমি আসছি।
সুনীলকাকা ভিতরে ঢুকে গেল। এবং পরক্ষণেই নাটকের পাত্র—পাত্রীরা যেভাবে মঞ্চে ঢোকে—ঠিক সেভাবে প্রথমে কাকিমা, পরে নবনীতা। সে ভালো ছেলের মতো কাকিমাকেও টুক করে প্রণাম করে ফেলল। তার যা কাজ তাতে খুব ঘনিষ্ঠতার দরকার হবে। যেন সে এ—বাড়িরই ছেলে।
সুনীলকাকার স্ত্রীর নামটা সে মনে করার চেষ্টা করল। না, পারছে না। আপাতত এটার খুব প্রয়োজন নেই। তবু কেন যে মাথার মধ্যে কারা টরেটককা বাজায়—বাজাবার সময় সে শুনতে পেল, তুমি বড় হয়ে গেছ। নবনীতা, তোর নানুকে মনে পড়ে?
নবনীতা বলল, আমাদের বাড়ি খুব আসতে তুমি?
খুব মিথ্যে কথা। সে সুনীলকাকার বাড়িতে কখনও—সখনও বাবার সঙ্গে অথবা বাবার দাদার সঙ্গে আসত। খুব বেশি না। যাতায়াতের পথে বাড়িটা ছিল বলে মাঝে মাঝেই দেখা হয়ে যেত। এবং নবনীতার একটা ডল পুতুল ছিল। ভেতরটা ফাঁকা। তাতে নবনীতা চকলেট ভরে রাখত। মাথায় টুপি ছিল পুতুলটার।
তখনই নবনীতা বলল, চিনে আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি? কত দিন পর!
নানু হেসে দিল। বলতে পারত, তুমি মেয়ে কথা না খুঁজে পেয়ে যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছ। শৈশবের কথা কেউ ভুলে যায়! কেউ পারে ভুলতে।
সে বলল, দোতলায় নতুন ঘর হয়েছে দেখছি।
নবনীতা লম্বা ফ্রক পরেছে। ফাঁপানো চুল ঘাড় পর্যন্ত। এবং ডিমের মতো মসৃণ মুখ। যেন এই মাত্র ঘুম থেকে উঠে আসছে। আড় চোখে সে নানুকে দেখছে সেটাও সে টের পেল। যুবতী হবার মুখে এই মেয়ের চোখ টল টল করছে।
নবনীতার মা বলল, তুমি দেখনি ঘরটা?
আমাদের সময়ে ছিল না।
সহসা নবনীতা বলল, এত ঘামছেন কেন নানুদা?
নানু সত্যি ঘামছিল। নবনীতা উঠে পাখা ফুল স্পিডে চালিয়ে দিয়ে আবার বসল। তার কথাবার্তায় কোনো সংকোচ ছিল না। নানু যেন কিছুই লক্ষ্য করছে না, এমনকি নবনীতাকেও দেখছে না,—কেউ বসে আছে সামনে তাও তার যেন খেয়াল নেই—এমন চোখমুখ করে রেখেছে। অধিকাংশ সময় সে মুখ না তুলেই কথা বলছিল। সে একটি ভালো ছেলের মুখোশ পরে আছে এখন। এই যে কাকিমা, মারই বয়সি—শরীরে যৌবন ধরে রাখার কী প্রাণান্তকর চেষ্টা তার। কথাবার্তায় মনে হচ্ছিল মা আর মেয়ে যেন দু বোন। একবার বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, আচ্ছা কাকিমা, আপনার আর কেউ আছে? কাকা মরে গেলে কারও সঙ্গে প্রেম করতে পারেন। তারপরই তার মনে হল প্রীতিশ নামক যুবক পাশের গলিটা পার হয়ে বড় একতলা বাড়ির নীচে আজ থেকে আট বছর আগে আত্মহত্যা করেছিল। সে এখানে জানতে এসেছে তার বাবা কেন আত্মহত্যা করলেন।
তখন কাকিমা বলল, তোমার বাবা বড় ভালোমানুষ ছিলেন।
সে বলল, ভালোমানুষ ছিলেন বুঝি! তারপর বলার ইচ্ছে হয়েছিল, আপনি জানলেন কী করে! বাবা ভালোমানুষ কী খারাপ মানুষ সেটা তো আমার মা—ই একমাত্র বলতে পারে। আপনি কি…।
তখনই কাকিমা বলল, তোমার বাবাকে মনে পড়ে? তখন তো তুমি খুবই ছোট ছিলে।
সে কী ভেবে বলল, না। তারপর কেমন অতলে ডুবে যাচ্ছিল। কীভাবে যে বলবে, আমার বাবা আত্মহত্যা করেছিল কেন জানেন—কিন্তু বলতে পারল না।
নবনীতার মনে হল মার যে কী স্বভাব! নানুদাকে এ—সময় তার বাবার কথা মনে করিয়ে দিয়ে কী লাভ। কেমন দুঃখী মুখ এবং কাতর দেখাচ্ছে। সে বলল, নানুদা শোলে দেখেছ?
নানু যেন শুনতেই পায়নি। সে দুজনের দিকে তাকিয়েই যেন প্রশ্ন করল, বাবার ছবি আছে এ বাড়িতে?
ছবি। দাঁড়াও। হ্যাঁরে নবি, প্রীতিশকাকার কোনো ছবি আছে? অ্যালবাম খুলে দেখবি।
নবনীতা বলল, না নেই।
নানু কেমন শক্ত গলায় বলল, থাকতেও তো পারে। খুঁজে দেখ না।
তখন সুনীলকাকা বেশ সাফসোফ হয়ে বসার ঘরে ঢুকে গেল। লম্বা পাজামা পাঞ্জাবি পরেছে। স্নান করায় শরীরে দামি সাবানের গন্ধ। মুখে পাইপ। বেশ কম বয়সে সুনীলকাকা খুব উঁচুতে উঠে গেছে। প্রায় আত্মস্থ এক মানুষ, সুখী এবং জীবনে যা যা দরকার সবই হাতের নাগালে। অনেকদিন পর তার বসের ছেলে এই বাড়িতে—সে কেমন আছে এটা দেখুক—এমনই স্মিত হাসিতে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, তোমাদের ডিস্টার্ব করলাম না তো।
নানু এখন কিছুই শুনতে চায় না। সে আরও শক্ত হয়ে গেল। বলল, সুনীলকাকা, তোমার কাছে বাবার ফোটো আছে?
সুনীল কথাটার খুব গুরুত্ব দিতে চাইল না।—আছে বোধ হয় দেখতে হবে।
নানু বলল, এখন একবার দেখবে। বাবার একটা ফোটো আমার খুব দরকার।
কেন বাড়িতে নেই?
না।
সে কী! নবনীতা প্রায় চিৎকার করে উঠল।—বাড়িতে বাবার ছবি থাকে না সে কী করে হয়!
কখন যে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে এদিকটায়। সামান্য ঝড়ও। নানুর ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেছে। রাস্তাটা এদিকের কতদিন মেরামত হয়নি। হবে কী না কেউ বলতেও পারে না। উঁচু নিচু খানাখন্দ—কোথাও বসে গেছে অনেকটা। ইঁট বের হয়ে পড়েছে—ফলে নানু যতটা দ্রুত হেঁটে রাস্তা অতিক্রম করবে ভেবেছিল, ঠিক ততটা জোরে হাঁটতে পারছে না। পা উঁচু নিচুতে পড়ে যে—কোনো সময় মচকাতে পারে। সে ঘড়িতে দেখল এগারোটা বেজে গেছে।
সুনীলকাকার বাড়ি থেকে বের হয়ে—সোজা রাস্তায় দাঁড়িয়ে জানালায় কারও মুখ দেখার চেষ্টা করছিল নানু। তাদের বাড়িটাতে অন্য কেউ থাকে এখন। বাবার মতো সেই মানুষটা সকাল সন্ধ্যায় এসে জানালায় হয়তো দাঁড়ায়। সে খুব বায়না করলে—বাবা কখনও ওকেও তুলে দাঁড় করিয়ে দিতেন জানালায়। তার মনে হয়েছিল, কেউ তেমন এখনও এসে এই জানালাটায় দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িতে তার মতো কেউ হয়তো জেদ ধরলে জানালাটায় তুলে দেওয়া হয়। সেই ঘরটা এবং জানালাটা তাকে ভীষণভাবে কেমন এক আকর্ষণে ফেলে দিয়েছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে কুজনে মন্দ কথা ভাবতে পারে—সেজন্য নানু, কিছুক্ষণ পার্কের বেঞ্চিতে বসে থেকে আবার রাস্তাটায় গেছে—জানালাটার কাছে গেছে। ঘণ্টাখানেক এরকম টানাপোড়েনের মধ্যে সহসা মনে হয়েছিল রেলিং—এ কেউ ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে—তার যাওয়া আসা লক্ষ্য করছে। ফলে সে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। এসব কারণে ফিরতে তার এত রাত। কাল একবার নবনীতাকে গিয়ে সে বলবে, আমাদের আগের বাসাটায় এখন কে থাকে? ওখানে যাব। তুমি আমাকে নিয়ে চল।
তারপরই মনে হয়েছে নবনীতাদের সঙ্গে আলাপ নাও থাকতে পারে। নবনীতা নাও যেতে পারে। নবনীতা না গেলে, বাড়িটায় তার যাওয়া মুশকিল। সোজাসুজি যদি চলে যায়, গিয়ে বলে এ—ঘরটাতেই আমার বাবা মা থাকতেন, এ—ঘরটাতেই আমি অনেকদিন থেকেছি—ওই রেলিংটা দেখছেন, সেখানে থাকত আমার কাঠের ঘোড়া। ঘোড়ার পিঠে বসে আমি দোল খেতাম। আমার বারবারই এখানে চলে আসতে ইচ্ছে করে।
রাস্তার অন্ধকারে নানু ফিরছে। পাশাপাশি বাড়িগুলোতেও কেউ জেগে নেই, কেবল দোতলায় রেলিং—এ দাদু এক অতিকায় জড়দগবের মতো। সে একটা ক্যালভার্ট পার হয়ে বাড়িটার গেটের কাছে ঢুকে গেল। দাদু ঝুঁকে অন্ধকারে কিছু আঁচ করলেন, তারপর নিঃশব্দে নেমে আসতে থাকলেন। নীচের একটা আলো জ্বেলে দিলেন তিনি। নিঃশব্দে লোহার গেট খুলে দিলেন। নানুর কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সে সোজা সিঁড়ি ধরে উঠে গেল। ছোট মাসি এবং দিদিমা শুয়ে পড়েছে। এদিকের ঘরবাড়ি মাঠ গাছপালা এখন কেমন নিশুতি রাতের মতো।
নানু এখন চায় চুপচাপ শুয়ে পড়তে। তার খেতে পর্যন্ত ভালো লাগছে না। বাবার মুখটা কেমন, বাবার মুখ, সেই হিজিবিজি আঁকা মানুষের ছবির মতো, কোনো একটা ছবি—সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে যেন ভেসে যায়। সে কেমন অসহায় বোধ করতে থাকল। মনে হয় তার শেষ অবলম্বনও চলে যাচ্ছে। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য তার দরকার বাবার পাশাপাশি থাকা। তিনিও কেমন স্মৃতি থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছেন।
এইসব ইচ্ছের কথা মাঝে মাঝে আর কাউকে বলতে পারলে ভালো লাগত। অথচ সে দাদুর বাড়ি চলে আসার পর এমন কাউকে পেল না যাকে বলতে পারে, জানো আমার বাবা কুড়িটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছেন। জানো আমার মা আর আমাকে আগের মতো ভালোবাসে না। তার কোনো টান নেই—সংসারে আমি বড় একা। মাঝে মাঝে এও মনে হয় সে তার একমাত্র কাছের মানুষ মানুকে বলতে পারে। সে তার আগের জীবনের অনেক কথাই মানুকে বলেছে। ক্লাসের অফ পিরিয়ডে ওরা লাইব্রেরির মাঠে চলে গেছে এবং কত কথা—কিন্তু মানুষের সংগোপনে এমন কিছু কথা থাকে যা বুঝি কাউকে বলা যায় না। এই যে সে হত্যাকারীর খোঁজে বের হয়েছিল, মানুর সঙ্গে দেখা হলে হয়তো তার সে ইচ্ছাটা এত প্রবল হত না আজ।
দাদু ঘরে এসে বলল, চল খাবি।
নানু বলল, চল।
নীচের তলায় সে ভেবেছিল সবাই শুয়ে পড়েছে। এখন দেখছে সবাই জেগে! দাদু, দিদিমা, মাসি এবং সে। টেবিলে বসে সবাই একসঙ্গে খাবে। রান্নার মেয়েটা টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছিল আগেই—ওরা বসলে ঢাকনা খুলে দিল, প্লেট সাজিয়ে গেল। হাতে মুখে জল দেওয়ায় নানুর চোখ মুখ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিল।
দাদুর দিকে তাকিয়ে নানু বলল, তোমরা খেয়ে নিলেই পারতে।
দিদিমা বলল, তুমি না এলে খাই কী করে?
ছোট মাসি বলল, তুই কোথায় গেছিলি? এত কী কাজ! দিদিকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেব। তুই আমাদের খুব জ্বালাচ্ছিস।
নানু খুব স্পষ্ট গলায় বলল, বাবার ফোটোর খোঁজে গেছিলাম।
কোথায়? দাদু উঠে দাঁড়ালেন।
তুমি অত উত্তেজিত হচ্ছ কেন দাদু?
না, মানে তুই ফোটো খুঁজতে কোথায় গেছিলি? ফোটো তো বাড়িতেই অনেক আছে। কত লাগবে?
কোথায়? তোমরা তো এতদিন বলেছ, ফোটো নেই।
তখন তুমি ছোট ছিলে, বাবার কথা মনে হলেই কষ্ট পাবে ভেবে তুলে রাখা হয়েছিল।
নানু বলল, অঃ। তারপর আর কিছু বলল না। তার মনে পড়ল, সেই অনেক আগে একবার বাবার ফোটো চেয়ে পায়নি। কোথাও পায়নি। তার মনে হয়েছিল, কোথাও নেই—বাবার ছবিটা বাড়িতে ভারি বিপজ্জনক। নানু এখন বড় হয়ে গেছে। নানু এখন বাবার সেই স্মৃতি বুকে বয়ে বেড়ায় না। সহজেই দেওয়া যেতে পারে ভেবেই হয়তো দাদু সেই স্মৃতি স্বীকার করলেন, আছে। তিনি দেবেন।
নানু খেয়ে উঠে ওপরে চলে গেল। সে এখন আর মনে করতে পারছে না, কেন সে সুনীল কাকার বাড়ি গিয়েছিল। ফোটোর জন্য না অন্য কিছু জানতে—আসলে কী সে মনের মধ্যে একটা তুমুল প্রতিহিংসার ঝড় নিয়ে বড় হচ্ছে। যার জন্য মাঝে মাঝেই মনে হয়, সে একটা কিছু ঠিক করবে। সেটা কী। সেটা কী কোনো শূন্যতা, জীবনে বিশ্বাসের অভাব। না অন্য কিছু!
তারপরই সে দরজা বন্ধ করে দিল। সে চিৎকার করে বলল, আমার কোনো পরিচয় নেই—আমি বাস্টার্ড। আমার মাকেই আমি পৃথিবীতে একমাত্র চিনি, চিনতে পারি, বলতে পারি তিনি আমার মা, তিনিও আমার প্রতি বিরূপ। কাছে রাখতে ভয় পেয়েছেন। ‘জননী আমার ধাত্রী আমার’—কবিতার লাইন সে বলে গেল, জননীগো—তুমি আমায় এক আশ্চর্য শূন্যতায় ভাসিয়ে দিলে? নানু শেষে কী ভেবে হেসে দিল, বলল, ধেড়ে খোকা, ধাতস্থ হও। সংসারে কেউ কারও নয়। ভেউ ভেউ করে এত কাঁদছ কেন? সে জানালা খুলে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবার চেষ্টা করল।
তখনই নানু দেখল বনভূমিতে জ্যোৎস্না। অপার্থিব এক ঈশ্বরের পৃথিবী সামনে। জ্যোৎস্নায় যেন কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সহসা তার নবনীতার কথা মনে পড়ে গেল। ন—ব—নী—তা বলে সে টেনে টেনে দেখল কতটা লম্বা করে কথাটা বলা যায়।
নবনীতা বলেছিল, শোলে দেখেছেন? কতদিন সে কোনো সিনেমা দেখেনি। সেই বিতকিচ্ছিরি ঘটনাটা দেখার পর থেকেই সে গুম মেরে গিয়েছিল। মা অর্থাৎ শ্রীমতী রানু মানে রানুবালা, তার সঙ্গে কথা বলতে সাহস পায় না। নানুর মনে হয়েছিল শ্রীমতী রানুবালার এটা কলঙ্ক। কলঙ্ক মাথায় করে শেষ পর্যন্ত রানুবালা কতদিন বাঁচবে, না মরে যাবে। একদিন রানুবালাকে কাঁদতে দেখে তার মুখ কুঁচকে গেছিল। সে বলেছিল, লোকটা এ—বাড়িতে এলে অনর্থ ঘটবে।
রানু চিৎকার করে উঠেছিল, তুই কী বলতে চাস?
সেই উল্লুকের বাচ্চা এখানে আসবে না। এলেই খুন করব।
কী বলতে চাস তুই!
খুন করব বললাম। দরকার হলে তোমাকেও।
রানুবালার মুখ ভীষণ শুকিয়ে গেছিল। ক’দিন থেকে গুম মেরে আছে নানু। মনীশদার সঙ্গে সেদিন খারাপ ব্যবহার করেছে। নানু কী সব টের পেয়ে গেছে….
রানুবালা তারপর ঘরের সেই জায়গাটা বাইরের কোনো ফুটো দিয়ে দেখা যায় কিনা, তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে। খুঁজতে গিয়েই মনে হয়েছে, ছেলে তার বড় হয়ে গেছে। আর একসঙ্গে থাকা যায় না। বাবাকে লিখেছে নানুকে পাঠিয়ে দেব। এখানে পড়াশোনা একদম করে না। দিনকে দিন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।
কতক্ষণ নানু জানালায় দাঁড়িয়ে আছে, টের পায়নি। মানুষের যে কী হয়! আজ সকালে এক রকম, বিকেলে এক রকম। সন্ধ্যায় সে যা ছিল, এখন আর তা নেই। আকাশ এবং এই পরিব্যাপ্ত জীবনে কী আছে কী নেই সে এখনও জানে না। তবু এক সুদূর থেকে মাঝে মাঝে এই পৃথিবীতে কেউ টরেটক্কা শব্দ পাঠায়। নানু আজ প্রথমে বুঝতে পারছে, সে তার বাবার জন্য কিছুই করতে পারে না। কারণ বনভূমিতে আজ সন্ধ্যায় জীবনে প্রথম জ্যোৎস্না দেখেছে।
ঘুমোবার আগে সে বিছানায় চুপচাপ বসে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর বলল, আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। সে আলো নিভিয়ে দিল তারপর। শুয়ে কপালে হাত রাখল। এবং চোখে সেই লাবণ্যভরা মুখ। নবনীতা ভারি বিস্ময়ে ওর দিকে তাকিয়েছিল। ক্রমে সেই চোখ নরম হতে হতে এক সময় ভারি অন্তরঙ্গ হয়ে গেলে, নবনীতা চোখ নামিয়ে নেয়। পৃথিবীতে সে এমন সুন্দর লজ্জার চোখ কেউ নামিয়ে নিয়েছে, জীবনে দেখেনি। সিনেমায় দেখেছে, বন্ধুদের কাছে সে গল্প শুনেছে, কিন্তু জীবন দিয়ে প্রত্যক্ষ করেনি। সে বলল, নবনীতা। সে বলল, ন….ব…নী….তা। সে বলল, ন…ব…নী…তা।