Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য || Sankar Brahma

প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য || Sankar Brahma

প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য

মিশরে প্রথম লেখার উদ্ভব হয়েছিল হায়ারোগ্লাফিক ও হায়রাটিক উভয় পদ্ধতির মাধ্যমেই।
মিশরীয় চিত্রলিপির গোটা গোটা হাতের সরলীকৃত লিখিত রূপ হল হায়রাটিক। গোটা গোটা হাতের লেখাবিশিষ্ট হায়রাটিক দ্রুত লিখে ফেলা যেত। সেজন্য লিপিকারদের নথি-লিখনের কাজে এর ব্যবহার ছিল অনেক সহজ। প্রাথমিক ভাবে ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, আইন-সংক্রান্ত নথিপত্র, রাজস্বের তথ্যাদি, চিকিৎসা-সংক্রান্থ গ্রন্থাবলি, গাণিতিক গবেষণামূলক আলোচনা গ্রন্থ ও নির্দেশনামূলক সহায়িকার মতো অ-রাজকীয়, অ-স্মারকীয় ও অপেক্ষাকৃত কম আনুষ্ঠানিক লেখালিখির জন্য শর্টহ্যান্ড লিপি হিসেবে ব্যবহৃত হত। হায়রাটিক লেখা হত দু’টি পৃথক শৈলীতে। একটি ছিল অধিকতর পরিমাণে চারুলিপিতে এবং সাধারণত সরকারি নথি ও সাহিত্যিক পাণ্ডুলিপি রচনার জন্য সংরক্ষিত। অন্যটি ব্যবহৃত হত অপ্রাতিষ্ঠানিক বিবরণ ও চিঠিপত্র লেখার কাজে। হায়রাটিক চিত্রলিপির মতোই ব্যবহৃত হত পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থাবলিতে।
পুরাকালে (খ্রীষ্টপূর্ব ষড়বিংশ থেকে দ্বাবিংশ শতাব্দী) সাহিত্য বলতে ছিল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত গ্রন্থাবলি, সাধারণ চিঠিপত্র, স্তোত্র ও স্মৃতি-কাব্য এবং প্রশাসনিক ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণামূলক আত্মজৈবনিক রচনাবলি।
চারুলিপিতে (খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে) হায়রাটিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত প্যাপিরাই ও মন্দিরের গোল করে পাকানো বস্ত্রের প্রধান লিপি ছিল। চিত্রলিপিগুলির লেখার জন্য শুদ্ধতা ও যত্নের প্রয়োজন হত।
চিত্রলিপি ও হায়রাটিক লিপিগুলি রাজকার্যে, স্মারকের গায়ে, ধর্মীয় ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত লেখালিখিতে ব্যবহৃত হত (খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যভাগেও)। কিন্তু সেই সময় একটি নতুন এবং আরও অধিকতর পরিমাণে গোটা গোটা হাতের লেখাবিশিষ্ট লিপি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও দৈনন্দিন লেখালিখির কাজে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। সেটি হল ডিমোটিক। প্রাচীন মিশরীয়দের শেষ লিপিটি হল কপটিক বর্ণমালা, যা ছিল গ্রিক বর্ণমালার একটি সংশোধিত রূপ। খ্রীষ্টিয় চতুর্থ শতাব্দীতে খ্রিস্টধর্ম সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষিত হলে কপটিক লিপিটিই স্বীকৃতি অর্জন করে। চিত্রলিপিগুলি পৌত্তলিকতাবাদী ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকায়,তা পৌত্তলিক চিত্র এবং বাইবেলীয় শাস্ত্র লিখনের কাজে অযোগ্য বলে, ঘোষণা করে বাতিল করে দেওয়া হয়।
সপ্তদশ শতাব্দীর আগে মিশরে, আখ্যানমূলক সাহিত্যের সৃষ্টি হয়নি। রবার্ট বি. পার্কিনসনের মতে, মিশরে আখ্যানমূলক সাহিত্যের উৎপত্তি ছিল একটি “গণমাধ্যম বিপ্লব” যা ছিল বুদ্ধিজীবী লেখক শ্রেণীর উত্থান, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বিষয়ে সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা, সাক্ষরতার বিকাশ ও লেখার উপকরণগুলি সাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়ে ওঠার ফল। তার আগে সম্ভবত সাক্ষরতার হার ছিল এক শতাংশ। তাই সাহিত্য রচনা ছিল অভিজাত শ্রেণীর কুক্ষিগত। এই কাজে একচেটিয়া অধিকার ছিল সরকারি কার্যালয় ও ফ্যারাওয়ের সঙ্গে যুক্ত লেখকদের। অবশ্য প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য রাজসভার সামাজিক-রাজনৈতিক বিন্যাসের উপর নির্ভরশীল ছিল কিনা সে বিষয়ে আধুনিক গবেষকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
প্রাচীনতম মিশরীয় সাহিত্য ফ্যারাওদের রাজত্বকাল থেকে রোমান আধিপত্যের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ধরা হয়ে থাকে।
খ্রীষ্টপূর্ব ষোড়শ থেকে একাদশ শতাব্দীর কথ্য ভাষা মধ্য মিশরীয় সময়কালে ধ্রুপদি ভাষায় পরিণত হয়। তৎকালীন স্থানীয় ভাষা পরবর্তী মিশরীয় সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়। তখন মধ্য মিশরীয় ভাষা পবিত্র চিত্রিলিপিতে লিখিত গ্রন্থাবলির মৌখিক পাঠের ভাষা হিসেবে থেকে গেছিল। নতুন রাজ্যের লেখকরা সেই ভাষায় লিখিত অনেক সাহিত্যকীর্তি অনুলিপি করেন। মধ্য রাজ্যের সাহিত্যের “উপদেশ” ও আখ্যায়িকা নতুন রাজ্যেও জনপ্রিয় থাকে। খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ থেকে প্রথম শতাব্দীর আগে টলেমীয় যুগে ভবিষ্যদ্বাণী-সংক্রান্ত ধারাটি পুনরুজ্জীবিত হয়নি। জনপ্রিয় অন্যতম কাহিনি হল সিনুহের গল্প ও বাকপটু কৃষক আর উপদেশগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল আমেনেমহাতের শিক্ষা ও আনুগত্যবাদী শিক্ষা। নতুন যুগে মন্দির ও সমাধি লিখন সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে বিকশিত হয়। অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে লেখকের সঠিক নাম উল্লেখ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছদ্মনামে লেখা “উপদেশ”গুলিকে ভুলভাবে বিশিষ্ট ঐতিহাসিকের বলে চালানো হত।

বিভিন্ন ধরনের লিখন-মাধ্যমে প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য রক্ষিত আছে। তার মধ্যে প্যাপিরাস পট ও মোড়ক যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে চুনাপাথর বা চীনামাটির মৃৎপাত্র, কাঠের বোর্ড, পাথুরে স্মারক সৌধ ও শবাধারও। প্রত্নতত্ত্ববিদরা যে সকল গ্রন্থ উদ্ধার করেছেন তা প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্যের ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সহস্রাধিক বছর ধরে ভূগর্ভে প্রোথিত সাহিত্যের ভাণ্ডার আবিষ্কৃত হয়েছে শুষ্ক মরুভূমির প্রান্তবর্তী জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। নীল নদের প্লাবন ও আর্দ্র জলবায়ুর করণে প্যাপিরাই ও কালিতে লিখিত লেখমালা সংরক্ষণের উপযুক্ত নয়। তাই প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্যের একটি বৃহৎ অংশ নষ্ট হয়ে গেছে।
মিশরের পুরনো রাজ্যের রাজকুমারী নেফারেতিয়াবেতের সমাধিক্ষেত্র, গাজা থেকে প্রাপ্ত (খ্রীষ্টপূর্ব ২৫৯০) চুনাপাথরে চিত্রিত এবং চিত্রলিপি রূপ হায়রাটিক লিখিত লিপি সুপ্রচলিত ছিল। চিত্রলিপিগুলি ছিল বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তুর ছোটো ছোটো শিল্পগুণসমৃদ্ধ ছবি যেমন দরজার হুড়কার চিত্রলিপিটির উচ্চারণ, অন্য এক বা একাধিক চিত্রলিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ধ্বনি সৃষ্টি করত, যেগুলির অর্থ ছিল দুঃখ, আনন্দ, সৌন্দর্য ও অমঙ্গলের মতো নানা বিমূর্ত ধারণা। আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ৩১০০ খোদিতপ্যালিটে মাগুর মাছ ও বাটালি বোঝাতে ব্যবহৃত চিত্রলিপিগুলি যুক্ত করে রাজা নারমারের নাম লেখা হয়েছিল।
মিশরীয়রা চিত্রলিপিকে বলত “দেবতার শব্দাবলি”। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত গ্রন্থের মাধ্যমে দেবতা ও মৃতের আত্মার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যেই এই চিত্রলিপির ব্যবহার ছিল। প্রতিটি চিত্রলিপিগত শব্দ ছিল একাধারে একটি করে নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতীক এবং সেই বস্তুর সারবত্তার সঙ্গে যুক্ত। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে সেই শব্দটিকে দৈব উপায়ে সৃষ্ট এবং বৃহত্তর ব্রহ্মাণ্ডের অংশ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হত। মনে করা হত, পুরোহিত ধূপ প্রজ্বালনের মতো আচারগুলি পালন করলে মৃতের আত্মা ও দেবতারা মন্দিরের গায়ে খোদিত চিত্রলিপিগুলি পড়তে পারেন। দ্বাদশ রাজবংশে অনুসৃত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত গ্রন্থগুলিতে দেখা যায়, মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন যে কোনও কোনও চিত্রলিপির বিকৃতি এমনকি সম্পূর্ণ মুছে দেওয়া ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। কারণ, সমাধিস্থ মৃতের আত্মার কাছে লিপিগুলি পরলোকে পুষ্টির অন্যতম উপায়। আবার একটি বিষধর সাপ বা অন্য কোনও বিপজ্জনক প্রাণীর চিত্রলিপি বিকৃত করলে সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যদিও মৃত ব্যক্তির নাম-পরিচায়ক চিত্রলিপির নিদর্শন মুছে দেওয়ার অর্থ ছিল মৃতের আত্মার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত লিপিগুলি পাঠের ক্ষমতা হারানো ফলে সেই আত্মা জড় বস্তুতে পরিণত হয়।
শিলালিপি খোদাই করার কাজে দরকারি একটি উপাদান ছিল বাটালি। তার সঙ্গে প্রাচীন মিশরে তুলি-লাগানো এক ধরনের শরের কলম দিয়ে পাকানো প্যাপিরাসে কালো কার্বন ও লাল গিরিমাটির রঙে লেখা হতো ।
সাইপেরাস প্যাপিরাস নামক গাছের শাঁসের চ্যাপ্টা ফালি দিয়ে পাতলা করে বানানো হতো প্যাপিরাস। গোল করে পাকানো প্যাপিরাস ছিল দামি বাণিজ্যিক পণ্য। তাই চীনামাটির ছোটো পাত্র বা চুনাপাথরের ভাঙা টুকরোর উপরেও এই কলম দিয়ে লেখা হত। তাছাড়া লেখার উপকরণ ছিল কাঠ, হাতির দাঁত ও পলেস্তারা।
মিশরীয় শরের কলমের বদলে (রোমান শাসনকালে) গ্রিকো-রোমান জগতের লিখনযন্ত্রের প্রচলন ঘটে। সেটি ছিল অপেক্ষাকৃত ছোটো ও মোটা এবং কাটা নিব-যুক্ত একটি শরের কলম। ফলে আদি মিশরীয় রঙগুলি বাতিল হয়ে, এলো গ্রিক সিসা-ভিত্তিক কালি। এর ফলে মিশরীয় হাতের লেখাও প্রভাবিত হয়েছিল। হায়রাটিক চিহ্নগুলি অধিকতর স্থান জুড়ে লেখা হতে লাগল এবং সেই সঙ্গে অধিকতর বৃত্তাকার রূপ নিলো এবং সেগুলির কৌণিক নির্ভুলতাও বাড়ল।

মরুভূমি অঞ্চলে নির্মিত ভূগর্ভস্থ মিশরীয় সমাধিস্থলগুলিই সম্ভবত প্যাপিরাস নথি সংরক্ষণের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, অসংখ্য সুসংরক্ষিত মৃতের বই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত প্যাপিরাই সমাধিস্থলগুলিতে রাখা হয়েছিল যাতে তা সংশ্লিষ্ট সমাধিতে সমাধিস্থ মৃতের আত্মাকে পরলোকে সহায়তা করতে পারে। যদিও সমাধিকক্ষে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন প্যাপিরাই রাখার প্রথা শুধুমাত্র ছিল মধ্য রাজ্যের শেষ পর্যায়ে এবং নতুন রাজ্যের প্রথম ভাগে। এই কারণে অধুনা-লভ্য অধিকাংশ সুসংরক্ষিত সাহিত্য-সংক্রান্ত প্যাপিরাইই এই সময়কালের।
দেইর এল-মদিনার একটি সমাধিস্থলের প্রাচীরচিত্রে (ঊনবিংশ রাজবংশ) মিশরীয় কৃষকেরা প্যাপিরাস চাষ করছেন পাওয়া গেছে।
নীল নদের পলিগঠিত সমভূমিতে মিশরের জনবসতিই গড়ে উঠেছিল। সে অঞ্চলের আর্দ্র জলবায়ু প্যাপিরাস নথিপত্রের সংরক্ষণের অনুপযুক্ত ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদরা উঁচুতে অবস্থিত এলিফ্যান্টাইন, এল-লাহুন ও এল-হিবার মতো মরু অঞ্চল থেকে (যেখানে সেচব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল না) অনেক বেশি সংখ্যক প্যাপিরাস নথি আবিষ্কার করেছেন।
—————————————————————-
[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া। ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *