Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নাস্তিকের ঈশ্বর দর্শন || Abhijit Chatterjee

নাস্তিকের ঈশ্বর দর্শন || Abhijit Chatterjee

নাস্তিকের ঈশ্বর দর্শন -1 (Nastiker Ishwar Darshan)

আজ একটু নিজের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলি। প্রথমেই বলি আমি ঘোরতর নাস্তিক না হলেও নাস্তিক বটে।ঠাকুর দেবতা তত পছন্দ করিনা।আর মন্দিরে যাওয়া তো নৈব নৈব চঃ।আমার মনোভাবের জন্য বন্ধুরা প্রকাশ্যেই আমাকে যবন বা বিধর্মীদের সঙ্গে তুলনা করে বা নিষিদ্ধ মাংসখোর বামুন বলেও ডাকে।তা এ হেন যবন বামুনের কিছু মন্দিরে অলৌকিক (?) ভাবে প্রবেশের কথাই বলবো আজ। প্রথম ঘটনাটি হলো বিখ্যাত তারাপীঠ মন্দিরে।বন্ধুরা ঠিক করছিলাম রাজস্থান যাবো। হলো না,তারপর পুরী , সে’ও বাতিল,অগত্যা।তিন বন্ধু সপরিবারে আর আমি ওদের বাচ্চা কাচ্চা পাহারাদার কাকু।গিয়ে পৌঁছলাম কৌশিকী অমাবস্যার আগের দিন রাতে।বন্ধুদের স্ত্রী’রা আমার এই যবনপনা পছন্দ না করলেও বাচ্চাদের নিপুণ ভাবে সামলাতাম বলেই আমাকে দলে রাখতো। তা পৌঁছে হোটেলে উঠে একটু চক্কর খেলাম শ্মশানে। জায়গাটা না’কি তান্ত্রিকদের চারণভূমি !যা দেখলাম তা’তে মূহুর্তে পরিস্কার হলো চিটিংবাজদের রাজ্য।দু এক জন আমার দিকে হাত বাড়িয়েছিল,তবে সুবিধে করতে পারেনি।তিন তিনটে খুচরো পয়সা আমার জিম্মায়,ওদের বাবা-মা’রা পেছনেই আছে।থেমে থেমে দেখছি বন্ধুদের আর ওদের স্ত্রীদের কাজ কারবার। ভক্তিতে গদগদ হয়ে একে তাকে পেন্নাম ঠুকছে আর দশ টাকা বিশ টাকা বের করে দিচ্ছে।সবাই খালি পায়ে শুধু আমি আর ঐ তিনজন খুচরো পয়সা জুতো পায়ে। বন্ধুদের নিষেধবাণী ফুৎকারে উড়িয়ে বলেছিলাম- রাত বিরেতে পায়ে কিছু ফুটলে কে বাঁচাবে শুনি।শ্মশানের মধ্যে চলছে প্রকাশ্যে মদ্যপান ও গঞ্জিকা সেবন।লাল চেলীর পোষাকের ভীড়।এক ব্যাটা আমার পায়ে জুতো দেখে রেগে ব্যোম।আমাকে গালাগাল দিতেই আমারও মাথা গরম ,লেগে গেল নারদ – নারদ।বন্ধুরা এসে সামাল দেয়,রাতে শুনি আমার কৃতকর্মের জন্য ওদের একশ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে;লেগে গেল আমাদের মধ্যে। তারপর …..হোটেলের ম্যানেজার এসে আমাদের সামলায়।আমাদের দলনেতা আটঘাট বেঁধেই এসেছে।সে পান্ডাদের সভাপতির সঙ্গে দেখাও করেছে। উনি আমাদের বেলাইনে মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকিয়ে পুজো করিয়ে দেবেন। আমার যাওয়ার ইচ্ছে নেই।সবার চাপ প্রবল।তীব্র বিরোধীতায় আমার মনোবাসনার জলাঞ্জলি হলো।পরেরদিন স্নান সেরে ন”জনের ( তিন খুচরো পয়সা ধরে) ব্যাটেলিয়ান চললাম মন্দিরে।পথে ঐ সভাপতিকে ওনার ঠেক থেকে নেওয়া হলো। মন্দিরের কাছে পৌঁছতেই আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া।এত্ত ধার্মিক মানুষ আছে?ভীড়ে হাঁটাই দায়।টিভিতে পুরীর রথের ভীড় দেখেছি ,এখানেও তো একই হাল। ঐ সভাপতি মারাদোনার মত পাঁকাল মাছ হয়ে ভীড় ঠেলে এগোতে লাগলেন আর মাথার উপর হাত তুলে ডাকতে লাগলেন।আমি রোগা প্যাংলা আমিও ঠিক এগিয়ে যেতে লাগলাম।হাতে একটা ছোট্ট ঘটি,তা’তে গঙ্গাজল আছে।এক বৌদি বয়ে এনেছেন কলকাতা থেকে,মায়ের পা ধোয়াবেন বলে ( বলিহারি শখ – নিজের মায়ের চরণ কতদিন যে ধুইয়ে দেয়নি…), আমার ওপর ভার মন্দিরের ভেতর অবধি বয়ে নিয়ে যাওয়া,পূণ্যটা উনি একটি কামাবেন ( ভক্ত না স্বার্থপর)।এদিকে ঐ সভাপতি মশাই হাঁটতে হাঁটতে এক মিষ্টির দোকান থেকে প্যাঁড়া নিলেন আর একটা দোকানে খামচা মেরে মালা তুলে নিলেন,এইভাবে পৌঁছে গেলাম গর্ভগৃহের দরজায়।তখন সেখানে দক্ষযজ্ঞ চলছে।সংকীর্ণ দরজা এ তাকে ঠেলছে ও তাকে।ভক্তির বারোটা বাজিয়ে যেন সবাই একটাই কথা মনে মনে আওড়াচ্ছে – কে’বা আগে প্রাণ করিবেক দান ” গোছের।সভাপতি হল্ট বলাতে থামলাম।তারপর দুজনে আগমন পথের দিকে তাকিয়ে বেকুব।বাকি আটজনের টিকিও দেখা যাচ্ছে না।কয়েক সেকেন্ড – সভাপতি বাবু ট্যাঁক থেকে ফোন বের করে বললেন – ফোন নম্বর বলুন কারুর ….আমরা তো কেউ ফোন আনিনি ,আপনি না কি মানা করেছিলেন ! হতাশ হয়ে বললেন -যত্তোসব,আপনি এখানেই দাঁড়ান কোত্থাও যাবেন না,বলেই পাঁকাল মাছের মত মন্দিরের ভেতরে ঢুকে গেলেন।প্রায় চার মিনিট হয়ে গেল, ব্যাটেলিয়ানের দেখাই যাচ্ছে না,আর যা ভীড়, যতটা দেখা সম্ভব চেনা মুখ কেউ নেই। উনি একই কসরৎ করে বেরিয়ে এলেন ..পেলেন..না..দেখুন,আমার অনেক কাজ আছে , আপনিই ভেতরে চলুন..কিন্তু ওরা.. না এলে আমি কি করবো,আপনি কি করে ভীড় ঠেলে এলেন,আসলে কি জানেন মা আপনাকে ডেকেছে। আর কথা নেই,সোজা আমাকে একপ্রকার ঘাড় ধরে ঠেসে ঠুসে মন্দিরের ভেতর ঢুকিয়ে দিল..হাতে ওটা কি..আজ্ঞে এক বৌদি গঙ্গাজল এনেছিলেন মায়ের পা ধুইয়ে দেবে বলে..থাক,ওনার আর এসে কাজ নেই,মা আপনার কাছেই পুজো চাইছেন..নাম গোত্র বলুন।পাঁচ মিনিট –সব শেষ –আমি ওনার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে যথাবিহিত কর্ম সম্পাদন করে নেপোলিয়ন হয়ে ফের বাইরে এলাম।তখনও তেনাদের পাত্তাই নেই -আমি রাতে আপনাদের হোটেলে যাবো।আপনি ফিরে যান-এই প্রসাদ খেয়ে জল খাবেন-বলেই ভ্যানিস।ফের ভীড় ঠেলে..হাজার মানুষের কনুই-এর গুঁতো হজম,ল্যাং খেতে খেতে মেন রোডে এসে দেখি পুরো ব্যাটেলিয়ন বাংলার পাঁচের মত মুখ করে একটা চায়ের দোকানে বসে আছে।আমাকে দেখেই সবাই হাঁ হাঁ করে উঠলো।বন্ধুরা যৎপরোনস্তি গালাগাল করতে শুরু করতেই সেই গঙ্গাজল বৌদি ধমক দিয়ে সবাইকে থামিয়ে আমাকে ঢিপ করে একটা পেন্নাম ঠুকে বললেন-বলছিলাম না,মা আমাদের ডাকেন নি।রাতে হোটেলে এসে পান্ডাটিও একই কথা বলতে আমাদের সন্ধি। আজও এই “মা , আপনার কাছেই পুজো চেয়েছে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। তোমরাই বলো। আগামী দিন বেনারস।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7
Pages ( 1 of 7 ): 1 23 ... 7পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *