Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ক্ষেপিটা || Rana Chatterjee

ক্ষেপিটা || Rana Chatterjee

ক্ষেপিটা

“ক্ষেপি টা তখনও হেসে চলেছে “, -হন্ত দন্ত হয়ে 9:10 এর বামদেব লোকাল টা কোনমতে চেপেই ঘাম মুছতে মুছতে এদিক ওদিক সিট খোঁজার ব্যর্থ প্রচেষ্টা হটাত্ থমকে গেল ভিড়ে ঠাসা তিল ধারনের জায়গা না হওয়া ট্রেনটার টু সিটারে বসা অনর্গল বক বক করা আর মাঝে মাঝে হলদে বত্রিশ দাঁতে বিশ্ব দেখানো ক্ষেপিটার দিকে ।

দরজায় উপচে পড়া ছেলে ছোকরার দল, মধ্যে দাঁড়ানো অসংখ্য রোগা, মোটা, পাতলা, ভুঁড়ি ওয়ালাদের ভিড়ের মাঝে অবিরাম হকার দের চিল চিত্কারে আনাগোনা, কিন্তু প্রায় সবার ই নজর আর হিংসা, “ইশ ক্ষেপিটার ভাগ্য দেখো, কি সুন্দর জানালার ধারের সিট !”

প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্রে উজাড় হওয়া ছোটো ছোটো লালমাটির এক একটা স্টেশন পেরুচ্ছে আমাদের ট্রেন । অন্যদিন আমি জানলার ধারে বসে বাইরের রূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে গেলেও আজ আমার চোখ বারে বারেই এক জনের দিকে চলে যাচ্ছে । হটাত্ দেখি, একি, আসন যে শূন্য, তবে কি চলেই গেলো সে ? অজান্তেই হটাত্ আপন জনের মতোই উত্কণ্ঠায় দেখি, স্টেশনে সিমেন্টের সান বাধাঁনো চেয়ারে বসে, ওরে বাবা, এ যে এক মস্ত থান ইঁট হাতে, ইতি উতি চাইছো গো ! ওর হাতে ইঁট আর আমার কিনা ভয়ে অষ্টাগত প্রাণ । না, আমার ভয়, ক্ষেপিটা কে নিয়ে নয় মোটেই । আমার মন বলছে, মানুষের দুনিয়া থেকে সে অন্য কল্পনার দুনিয়ায় বিচরণ করার ফলে, মানুষের খারাপ গুণাবলী, উগ্র রাগ, ক্ষোভ এগুলো থেকে সে মুক্ত ।আমার ভয় হচ্ছিল, পাছে কেউ ওকে ভুল বুঝে আঘাত করে বসে, ও যদি এখুনি ট্রেন মিস করে, না জানি কি হবে ওর ! এই সভ্য দুনিয়াতে, এমন জন শূন্য হয়ে যাওয়া স্টেশনে, সে যে কোনো নারী শরীরই, ক্ষেপি ই হোক আর ভালো, কি অবলা শিশু কন্যা কেউই নিরাপদ নয় ।

সেই বিশেষ পুণ্য তিথির “কৌশিকী অমাবস্যাতে সিদ্ধ পিঠ “তারাপিঠ “গামী ভক্ত কুলের হাজার ভিড়ে, অফিস গামী আমি ঘাম মুছতে মুছতে এটাই ভেবে চলেছি, যাক সময় বিশেষে নিঃস্ব কেও মানুষ হিংসা করে তবে ! অনেক কথা, ভাবনা গুলোকে ঠেলা দিয়ে গলার কাছে পাঠিয়ে মন অনর্গল প্রশ্রয় দিয়ে বলছে, “বেশ হযেছে খারাপ কী, একটু নাহয় ভীড় ট্রেনে জানলার হাওয়া তে আরাম করছে আজ ও, আহারে শীর্ণকায়, ক্লান্ত অবসন্ন, বেচারী অভাগী, অনেক অবহেলা, বঞ্চনা, কষ্টের মূর্ত প্রতীক আজকের এই ক্ষেপি হয়ে ওঠা বছর কুড়ির এই মেয়েটি, হয়তো সামান্যই চাহিদা ছিলো তার, সে ও একসময় ক্লাসের রচনায় “বড়ো হয়ে কী হতে চাও “এ নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসাবে দেখতে চেয়েছিলো !

পুরো সিট জুড়ে সামনের প্যাসেঞ্জার দের বিরক্তি, নাক চাপা উপেক্ষা করে তখনও খেপিটা এক নাগাড়ে হেসেই চলেছে-যেনো আজ দারুণ খুশি সে, ট্রেনের ঝাঁকুনি আর বাইরের চলন্ত প্রকৃতি তাকে উজ্জীবিত করে তুলেছে । আর আমি দেড় ঘণ্টার সফরে এই সব ভাবনার মাঝে কখন যে গন্তব্যে হাজির, ক্ষেপিটার ঠিক পাশের আসন টা তে বসে, বুঝতেই পারি নি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *