Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

পর্ব- ৬

কুরুক্ষেত্র প্রাঙ্গণে যুদ্ধ আরম্ভ হ’লো প্রথম দিনের। যুদ্ধে কৌরবসেনা ভীষ্মকে, এবং পাণ্ডবসেনা ভীমকে অগ্রবর্তী করে পরস্পরের প্রতি ধাবিত হ’লো। দুই পক্ষই মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কৌরবগণ ভাবছে মহারথী অপরাজেয় ভীষ্ম আমাদের সাথে আছেন, এই যুদ্ধে আমাদেরই জয় হবে। পাণ্ডবগণ ভাবছে বাসুদেব কৃষ্ণ আমাদের পক্ষে আছেন, জয় আমাদের নিশ্চিত। তাছাড়া পিতামহ ভীষ্ম বলেছেন তিনি শত্রুপক্ষে যুদ্ধ করলেও পাণ্ডবদের হিতের জন্য মন্ত্রণা দেবেন। এইভাবে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের অষ্টম দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। অষ্টম দিনের যুদ্ধ শেষে দুর্যোধন পিতামহ ভীষ্মকে বললেন,
– ‘আপনার মতো মহাধনুর্ধর আমাদের পক্ষে থাকতেও আমরা এখনো ওই পাণ্ডবদের পরাজিত করতে পারলাম না! আপনি আসলে চান না আমরা এই যুদ্ধে জয়লাভ করি। তাই আপনি আমাদের সেনাপতি হয়েও ওই পাণ্ডবদের প্রতিহত করার পরিবর্তে ওদের রক্ষা করছেন।’
ভীষ্ম বললেন- ‘কাল নবম দিন। কালকের যুদ্ধে আমি যে ভয়ানক যুদ্ধ করবো তেমন যুদ্ধ আগে কেউ কখনও দেখেনি।’
নবম দিনের যুদ্ধ আরম্ভ হলো। ভীষ্ম এমনভাবে সেনা সাজালেন যাতে সবদিক থেকে প্রতিপক্ষ পাণ্ডবদের পরাজিত করা যায়। ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চললো দু’পক্ষে। অর্জুন যথেষ্ট রণকৌশল দেখিয়েও কিছুতেই পিতামহ ভীষ্মের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছিলেন না। তখন বাসুদেব কৃষ্ণ নিজের ক্রোধ সম্বরণ করতে না পেরে রথের থেকে লাফিয়ে পড়ে ভীষ্মের দিকে ছুটে গেলেন। কৃষ্ণের প্রতি ভীষ্মের ছিলো অগাধ ভক্তি। তিনি কৃৃষ্ণকে স্বয়ং নারায়ণ জ্ঞানে ভক্তি করতেন। ভীষ্ম অস্ত্র ত্যাগ করে কৃষ্ণকে বলেন,- ‘এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধে তুমিই আমাকে বধ করো প্রভু, তাহলেই আমার মঙ্গল হবে।’ কৃষ্ণের এই আচরণে অর্জুন ছুটে এসে কৃষ্ণকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে বললেন
– ‘সখা তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে এই যুদ্ধে অস্ত্র ধরবে না। ক্রোধ সম্বরণ করো সখা, রথে ফিরে চলো।’
কৃষ্ণ থামলেন, রথে ফিরে এলেন। অর্জুন কৃষ্ণকে কথা দিলেন- ভীষ্মকে তিনিই বধ করবেন। যুদ্ধের নবম দিনও অতিবাহিত হয়ে গেল। দু’পক্ষের অগণিত রাজা এবং সেনা হতাহত হয়েছে। কিন্তু ভীষ্মকে পর্যুদস্ত করা যায়নি। নবম দিন যুদ্ধশেষে যুধিষ্ঠির মিত্রদের সাথে পরামর্শ করতে লাগলেন, কি উপায়ে ভীষ্মকে পরাজিত করা যায়। যুদ্ধের প্রাক্কালে পিতামহের বলা কথাগুলো তিনি কৃষ্ণ এবং পাণ্ডবদের জানালেন। তখন পাণ্ডবগণ এবং কৃষ্ণ, কবচ ও অস্ত্র ত্যাগ করে ভীষ্মের শিবিরে এসে নতমস্তকে মহামতিকে প্রণাম জানালেন। ভীষ্ম তাঁদের স্বাগত জানিয়ে বললেন- ‘তোমাদের হিতের জন্য আমি কি করতে পারি বলো।’ যুধিষ্ঠির অত্যন্ত কুণ্ঠিত হয়ে বললেন- ‘হে সর্বজ্ঞ, যতদিন আপনি জীবিত থাকবেন ততদিন পাণ্ডবগণের বিজয় অসম্ভব। আপনাকে আমরা কি উপায়ে পরাজিত করতে পারব তা বলে দিন।’ ভীষ্ম বললেন- ‘তুমি ঠিকই বলেছ, আমি জীবিত থাকতে তোমাদের জয় অসম্ভব। আমি সশস্ত্র হয়ে যুদ্ধ করলে সুরাসুরেরও অজেয়। কিন্তু আমাকে যদি কোনকারণে অস্ত্রত্যাগ করতে হয়, তা হলেই একমাত্র আমাকে পরাজিত করা সম্ভব। আমি কোনো শরণাপন্ন, ভীত, অথবা স্ত্রীলোকের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করি না। তোমাদের সেনাবাহিনীতে দ্রুপদপুত্র মহারথ শিখণ্ডী আছেন। তিনি পূর্বে স্ত্রীলোক ছিলেন। শিখণ্ডীকে সম্মুখে রেখে অর্জুন আমার উপর শর নিক্ষেপ করবে। আমি শিখণ্ডীকে দেখে অস্ত্র ত্যাগ করবো। অর্জুন তখন আমাকে বধ করবে।’ সব শুনে কৃষ্ণ ও পাণ্ডবগণ পিতামহ ভীষ্মকে অভিবাদন করে নিজ নিজ শিবিরে ফিরে এলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress