Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কুরু সমিধ || Saswati Das

কুরু সমিধ || Saswati Das

পর্ব-১

তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার:-
মহাভারত- পণ্ডিত কাশীরাম দাস।
মহাভারত- রাজশেখর বসু।
মহাভারতের ছয় প্রবীণ- নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী।

পর্ব-১

দুর্যোধনের চক্রান্তে কুরুক্ষেত্র প্রাঙ্গণে কৌরব পাণ্ডব মুখোমুখি। যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে। কৌরবরা কৃষ্ণের নারায়ণী সেনা নিয়ে খুশি। তারা জানে এ যুদ্ধে জয় তাদের নিশ্চিত। আর পাণ্ডবের পক্ষে আছেন একা কৃষ্ণ। তাও তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই যুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না। এতো কিছুর মধ্যে পিতামহ ভীষ্ম নিজেকে কিছুতেই স্থির রাখতে পারছেন না। তিনি কখনোই চাননি এই যুদ্ধ হোক।কারণ, তিনি জানতেন এই যুদ্ধ হবে অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের লড়াই। এই যুদ্ধে অধর্ম কখনোই জয়লাভ করতে পারে না। কিন্তু তিনি সময়ের কাছে পরাভূত। পিতাকে দেওয়া কথা রাখতে গিয়ে তার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে, তা তো কেউ দেখতে পাচ্ছে না! ধৃতরাষ্ট্রের অন্ধ পুত্রস্নেহ দুর্যোধনকে করে তুলেছিল অবাধ্য, প্রতিহিংসা-পরায়ণ। শৈশব থেকেই পাণ্ডবদের সাথে ছিল তার চরম শত্রুতা। এ সবই ধৃতরাষ্ট্রের জানা ছিল। কিন্তু তিনি দুর্যোধন বা তাঁর শত পুত্রের কাউকেই এই শত্রুতা থেকে বিরত করেননি, বা কখনোই পুত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেননি, যে- পাণ্ডবরা তাদের পরমাত্মীয়, তাদের সঙ্গে শত্রুতা করা উচিত নয়। মহামহিম ভীষ্ম অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও ধৃতরাষ্ট্র বা তার শত পুত্রের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি। অধর্ম যেন তাদের মজ্জায় ঢুকে গেছে। পাপ কাজে লিপ্ত থাকতে তাদের কোনো অনুতাপ হয় না। ভীষ্ম এ সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেন, কারণ তিনি কুরুবংশের অন্নে প্রতিপালিত। এবং তিনি তার পিতা শান্তনুকে কথা দিয়েছিলেন, কুরুবংশ তথা হস্তিনাপুরের সিংহাসন তিনি বুক দিয়ে আগলে রাখবেন। তাই কৌরবদের শত অপরাধ দেখেও তিনি কৌরবদের পক্ষ ত্যাগ করতে পারেননি। যদিও অলক্ষ্যে তার হৃদয় থেকে নির্গত আত্মগ্লানি তাকে কিছুতেই স্বস্তি দিচ্ছে না।

একে একে মনে পড়ে যাচ্ছে, দুর্যোধন কিভাবে তার মাতুল গান্ধাররাজ শকুনির সহায়তায় কপটতার সাথে পাণ্ডবদের পরাভূত করে ছিল। অন্যায়ভাবে দ্যূত-ক্রীড়ায় পরাজিত করে পাণ্ডবদের হস্তিনাপুর থেকে বিতাড়িত করে ছিল। শুধুমাত্র ওই দুরাচারী দুর্যোধনের কপটতার কারণে পাণ্ডবদের বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসে কাটাতে হয়েছে। ভীষ্ম তখনও বাঁধা দিতে পারেননি। তিনি যে পিতার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, কোনো অবস্থাতেই তিনি কৌরবদের সঙ্গ ত্যাগ করবেন না।
যদিও মুখ বুজে এই অন্যায়কে সহ্য করা তাঁকে বারবার ক্ষতবিক্ষত করেছে। আর সেই দিনতো ঘটে গেলো চরম লজ্জাজনক ঘটনা! ভরা রাজসভায় রজঃস্বলা রাজ-কুলবধূকে দুঃশাসন চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে এসেছিল! দুর্যোধন তার বস্ত্র ধরে টেনে খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে ছিল! তখন তো আমি কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি! ক্লীবের ন্যায় মাথা নীচু করে বসেছিলাম। নীচ দুর্যোধনকে শাসন করার মতো স্পর্ধা দেখাতে তো পারিনি! ধিক আমার এই অক্ষমতা! উফ্ কি অসহ্য যন্ত্রণা বুকের মধ্যে শেলের মতো বিদ্ধ করছে! কুরুবংশের রক্ষক হয়েও এতো অনাচার আমি মুখ বুজে সহ্য করলাম! পিতার বরে আমার তো ইচ্ছামৃত্যু, আমি কেন সে’দিন ওই সভায় রাজ-কুলবধূর লাঞ্ছনা দেখেও প্রাণত্যাগ করলাম না! আমার পরমপ্রিয় অর্জুন, যুধিষ্ঠির, ভীম এরা সকলে একে একে দুর্যোধনের চক্রান্তের স্বীকার হ’লো, এতকিছু সব তো আমার সামনেই ঘটে গেলো, তাও আমি কি করে প্রাণধারণ করে এই কৌরবদের সঙ্গ দিয়ে চলেছি! আমি কি এ ভাবেই আমার পাপের বোঝা বাড়িয়ে চলেছি! এ’কি ঋষি বশিষ্ঠের অভিশাপের ফল! নাকি আমি সময়ের কাছে পরাজিত এক সৈনিক! যেদিন দুর্যোধনের অতি প্রশ্রয়ধন্য কর্ণ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল- ‘ইনি কুরুদের ঘরে খাদ্য গ্রহণ করেন, আর পাণ্ডবদের মঙ্গল কামনা করেন।’ সেদিনও কি আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে নি! তবু আমি সব সহ্য করে কুরুবংশ রক্ষা করে গেছি, হয়তো কোনোদিন ধৃতরাষ্ট্র আর তার পুত্রদের বোঝাতে পারবো এই সুপ্ত আশা নিয়ে!

ভীষ্মর মনে নানা প্রশ্নের ঝড়; পিতাকে দেওয়া কথা রাখতেই আজ অসহায়ভাবে এই দুঃসময়ের সাক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে। শরশয্যায় শুয়ে মহামতি ভেবে চলেছেন- পিতৃআজ্ঞা রক্ষার পেছনে তারও কি কিছুটা সুপ্ত বাসনা ছিলো! যে সিংহাসনে পিতা একদিন তাকে যুবরাজ করে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, সেই সিংহাসনে রাজার মতো সুখ ভোগ করতে না পারলেও, তিনিই যে এই হস্তিনাপুরের চালিকাশক্তি- এই কথা তো তিনি খুব ভালভাবেই জানতেন। কিন্তু সেই কুরুবংশের ধার্তরাষ্ট্রদের পাপের ফলেই কৌরবদের পতন ঘটলো। আচ্ছা, সেই পাপের ছিটে কি তার গায়েও লাগেনি! হে মাধব, তুমি তো সব জানতে, তবে তুমি কেন এই যুদ্ধ রোধ করোনি? মা জাহ্নবী, আমি তোমার প্রতীক্ষা করছি মা, আমি তোমার কাছে ফিরে যেতে চাই। আমি যে ক্রমাগত কৌরবদের পাপের নাগপাশে জড়িয়ে পড়েছি।

এখন সূর্যের দক্ষিণায়ন চলছে। উত্তরায়ণ হতে আর কিঞ্চিৎকাল বিলম্ব আছে। উত্তরায়ণ হলেই অষ্টবসুর এই বসু তার মনুষ্যজীবন থেকে অব্যাহতি পাবেন। ঋষি বশিষ্ঠর দেওয়া শাপ মুক্ত হবেন। রাত গভীর হচ্ছে, আকাশের অসংখ্য নক্ষত্র তাঁর দিকে চেয়ে আছে, অষ্টম বসুর শেষ পরিণতি দেখার জন্য।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
Pages ( 1 of 11 ): 1 23 ... 11পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress