আমিও তোমারই মতো রাত্রি জাগি, করি পায়চারি
ঘরময় প্রায়শই, জানালার বাইরে তাকাই,
হাওয়ায় হাওয়ায় কান পাতি, অদূরে গাছের পাতা
মর্মরিত হ’লে ফের অত্যন্ত উৎকর্ণ হই, দেখি
রাত্রির ভেতরে অন্য রাত্রি, তোমার মতোই হু হু
সত্তা জুড়ে তৃষ্ণা জাগে কেবলি শব্দের জন্যে আর
মাঝে মাঝে নেশাগ্রস্ত লিখে ফেলি চতুর্দশপদী,
শেষ করি অসমাপ্ত কবিতা কখনো ক্ষিপ্র ঝোঁকে।
কোনো কোনোদিন বন্ধ্যা প্রহরের তুমুল ব্লিজার্ডে
ভুরুতে তুষার জমে, হয়ে যাই নিষ্প্রাণ, জমাট
রাজহাঁস যেন, দিকগুলি আর হয় না সঙগীত।
অবশ্য তোমার তটে উজ্জ্বল জোয়ার রেখে গেছে
রত্নাবলী বারবার। যখনই তোমার কথা ভাবি,
প্রাচীন রাজার সুবিশাল তৈলচিত্র মনে পড়ে।
তোমার অমিত্রাক্ষর হিরন্ময় উদার প্রান্তর,
তোমার অমিত্রাক্ষর সমুদ্রের সুনীল কল্লোল,
তোমার অমিত্রাক্ষর ফসলের তরঙ্ঘিত মাঠ,
তোমার অমিত্রাক্ষর ধাবমান স্বপ্ন-অশ্বদল,
তোমার অমিত্রাক্ষর উন্মথিত ঊনিশ শতক,
তোমার অমিত্রাক্ষর নব্যতন্ত্রী দীপ্র বঙ্ঘভূমি।
হেনরিয়েটার চোখে দেখেছিলে কবিতার শিখা?
না কি কবিতাই প্রিয়তমা হেনরিয়েটার চোখ?
হাসপাতালের বেডে শুয়ে সে চোখের অস্তরাগে
তুমি কি খুঁজেছো কোনো ট্রাজেডীর মেঘ? হয়তোবা
অভ্যাসবশত বেডে অসুস্থ আঙুল ঠুকে ঠুকে
আস্তেসুস্থে বাজিয়েছো ছন্দ মাঝে-মাঝে বাষ্পাকুল
চোখে ভেসে উঠেছিলো বুঝি দূর কাব্যের কানন।
কখনো দেয়ালে ক্লান্ত চোখ রেখে হয়তো ভেবেছো-
কি কাজ বাজায়ে বীণা? এ আঁধারে কিবা মাইকেল
কি মধুসুদন কার প্রকৃত অস্তিত্ব অনন্তের
নিরুদ্দেশে রেণু হ’য়ে ঝরে, কে বলে দেবে, হায়?
আমিও তোমারই মতো প্রাদেশিক জলাভূমি ছেড়ে
দূর সমুদ্রের দিকে যাত্রা করি, যদিও হোঁচট
খেয়ে পড়ি বারংবার। রক্তে নাচে মায়াবী য়ূরোপ,
ইতালি ভ্রমণ ক’রে, সুদূর গ্রীসের জলপাই
পল্লবে বুলিয়ে চোখ, বুলেভার ছেড়ে ফিরে আসি
সতত আপন নদে তোমার মতোই কী ব্যাকুল-
আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত কপোতাক্ষ আছে।