পবিত্র নদীর বাঁকে একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি হ্রদ।
এককালে তার শিরায় শিরায় বয়ে যেত পবিত্রতার স্রোত।
কিন্তু, কি অদ্ভুত, সময়চক্রে সেই পবিত্র স্রোতের আঘাতেই
ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে তার বুকের বামপাশ!
দিক বদলেছে স্রোতের।
সে নদী নিজেকেই খুঁজে নিয়েছে নতুনভাবে।
ভুলে গেছে তার পুরোনো রাস্তা,
মুছে ফেলেছে চলার পথের একটি ছোট্ট অংশ,
ফেলে গেছে তার দেহের একটুকরো মাংস।
বিষাক্ত আশীর্বাদে পচন ধরেছে তাতে, মজে যাচ্ছে সে হ্রদ।
রোজ উড়ে উড়ে আসছে কত মশা মাছি,
ভিনভিন করছে সে মাংসপিন্ডের উপর,
মিটিয়ে যাচ্ছে তাদের ক্ষুধা।
দিনশেষে ঘরে ফেরার আগে তাদের কলঙ্কিত হাতমুখ
ধুয়ে নিচ্ছে ওই পবিত্র নদীর জলে।
আড়ালে, হ্যাঁ, আজও তারা একটু আড়ালে আড়ালেই বাঁচে।
যারা আসে, তারাও আড়ালে আড়ালেই আসে।
কিন্তু কাদের থেকে আড়াল হতে চায় তারা?
আপনজন, আত্মীয়স্বজন , নাকি সমাজ?
কিসের ভয় তাদের?
পতিত গলির অন্ধকারে, ওই মানুষগুলোও তো
তাদেরই কারোর রক্ত, অচেনা কিন্তু আপনজন,
হয়তো তাদেরই কারোর বোন।
কোনো এক রাতের আঁধারে,
ওই পতিত জলাশয়ে ফোটা কোনো শালুক ফুলের গর্ভে
তারাই তো বুনে যায় আরেক পতিতার বীজ।
তারা কি তবে তদেরই কোনো অপরিচিত সন্তান?
হয়তো বা তাই।
সে জলাভূমি আজ বিচ্ছিন্ন, কিন্তু সে মজা জলাশয়ে তো
পবিত্র নদীর জলই আবদ্ধ হয়ে আছে।
অচ্ছুত পাঁকেই যেমন জন্ম নেয় পদ্ম,
তেমনি, শালুকের অপবিত্র গর্ভে
আজ জন্ম নিয়েছে একটি কচুরিপানা।
সে কলঙ্কিত না, সে কলুষিত না,
হতে পারে তার শিকড়ে জড়িয়ে আছে জলঢোঁড়া,
তবু সে বিষাক্ত না।
তার পবিত্র ফুলে মাছি বসেনি একটাও।
তার নীলাভ বেগুনি পাপড়িতে হলুদ রঙের ময়ূর-পালক আঁকা।
স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ যেন তার মাথা থেকে সে পালকখানি
উপহার দিয়েছেন তার অপেক্ষমান রাধিকাকে।
একদিন প্রজাপতি আসবে।
শুধু ওই কচুরিপানার জন্যই আসবে।
নিয়ে আসবে ওলি আর ভ্রমরের সৈন্য।
পতিতালয়ের অন্ধকার থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাবে
নিজের আলোকিত কক্ষে।
মাছি-মশা ভিনভিনে মজা জলাভূমি থেকে
তাকে আবার নিয়ে যাবে ওই পবিত্র নদীর তীরে।
পবিত্র স্রোতে ভাসিয়ে দেবে
অপবিত্র পাঁকে ফুটে ওঠা আরও একটি পদ্ম।
ধুয়ে দেবে তার শিকড়ের কলঙ্ক।
শুধু কচুরিপানা কেন, সব শালুক-ই ধুয়ে নিতে চায়
তার শিকড়ের কলঙ্ক।
