Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » লোকহিতৈষী প্রফুল্লচন্দ্র || Rajshekhar Basu

লোকহিতৈষী প্রফুল্লচন্দ্র || Rajshekhar Basu

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে আপনারা যত জানতেন, অন্য অল্প লোকেই তাঁকে। ততটা জানত, এজন্য তার সম্বন্ধে নূতন বেশী কিছু বলার নেই। কোনও লোক যখন নানা কারণে বিখ্যাত হন তখন অনেক ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় গুণটি অন্যান্য গুণের আড়ালে পড়ে যায়। আমার মনে হয়, প্রফুল্লচন্দ্রের বেলা তাই হয়েছে। তিনি বিখ্যাত বিজ্ঞানী, বিখ্যাত শিল্প প্রতিষ্ঠাতা–এই কথাই লোকে বেশী বলে। এদেশে অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী আর শিল্পকর্তা আছেন, সুতরাং এই দুই দলে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে ফেললে তার গৌরব বাড়ে না। তার মহত্ত্বের সবচেয়ে বড় পরিচয়–তিনি নিঃস্বার্থ লোকহিতৈষী। এই গুণে তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর বৈজ্ঞানিক আর সাহিত্যিক বিদ্যা, শিল্পপ্রসারের জন্য তার আগ্রহ–এসব তিনি শিক্ষা বা চর্চার দ্বারা পেয়েছিলেন। কিন্তু লোকহিতের প্রবৃত্তি তার স্বভাবসিদ্ধ ছিল। তিনি বেশী রোজগার করেননি, সেজন্য তার দানের পরিমাণ ধনকুবেরদের তুল্য নয়। তথাপি তিনি দাতাদের অগ্রগণ্য, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মহাশয় তাকে দধীচির সঙ্গে সার্থক তুলনা করেছেন। সংসারচিন্তা এবং সব রকম বিলাসিতা ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজের সমস্ত ক্ষমতা ভাবনা আর অর্থ জনহিতে লাগিয়েছিলেন। দেশে দুর্ভিক্ষ বা বন্যা হয়েছে, আচার্য তৎক্ষণাৎ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। কোনও হাসপাতাল বা অনাথ আশ্রম বা স্কুল বা কলেজে টাকার অভাব, আচার্য তার নিজের পুঁজি নিঃশেষ করে দান করলেন। কোনও ছোকরা এসে বললে, আমার মাথায় একটা ভাল মতলব এসেছে, ময়রার দোকান খুলব কিংবা ট্যানারি করব কিংবা কাপড়ের ব্যবসা করব, কিন্তু হাতে টাকা নেই। আচার্য তখনই মুক্তহস্ত হলেন। নূতন শিল্প স্থাপনের জন্য, তিনি অনেক লিমিটেড কম্পানিতে টাকা দিয়েছিলেন ডিরেক্টারও হয়েছিলেন। অনেক কোম্পানী ফেল হওয়ায় বিস্তর টাকা খুইয়েছেন, সময়ে সময়ে বদনামও পেয়েছেন, কিন্তু ভূক্ষেপ করেননি। কোনও কম্পানি টাকা ধার করবে, উনি অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে জামিন হয়ে দাঁড়ালেন। তারপর কম্পানি ফেল হলে অম্লানবদনে দণ্ড দিলেন। অনেকক্ষেত্রে আইন অনুসারে তিনি টাকা দিতে বাধ্য ছিলেন না, তার হিতার্থীরাও তাকে বারণ করেছিলেন, তবু তিনি টাকা দিয়েছিলেন–পাছে তার সাধুতায় কলঙ্ক হয়। মহাভারতে আছে–সকল শৌচের মধ্যে অর্থশৌচ শ্রেষ্ঠ। একথা তার চেয়ে কেউ বেশী বুঝত না, টাকাকড়ির দায়িত্ব সম্বন্ধে তিনি শুচিবায়ুগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু তার কাছে টাকা ধার নিয়ে গাপ করবার লোকের অভাব হয়নি।

বেঙ্গল ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফেল হওয়ায় আমাদের কম্পানির অনেক টাকা মারা যায়। শেয়ারহোল্ডার মিটিংএ একজন বলেছিলেন–দেশী ব্যাঙ্কে বিশ্বাস নেই, সেখানে আর যেন টাকা না রাখা হয়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র উত্তর দিলেন–অবশ্যই রাখা হবে, দশবার টাকা মারা গেলেও রাখা হবে; আমাদের এই দেশী কারবারকে লোকে বিশ্বাস করে, আমাদেরও অন্য দেশী কারবারকে বার বার বিশ্বাস করতে হবে।

তাঁর স্মৃতিরক্ষা বা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার জন্য আমরা কি করতে পারি? এই কারখানায় তার মূর্তি প্রতিষ্ঠা বা চিতাভস্ম রক্ষার জন্য চৈত্যস্থাপন বেশী কিছু নয়। কিন্তু মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার শ্রেষ্ঠ উপায় তার প্রিয়কার্যসাধন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের অনেক ইচ্ছার মধ্যে একটি ছিল–এই কম্পানি বড় থেকে আরও বড় হবে, এতে নানা রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি হবে, এতে বহু লোক শিক্ষিত উৎসাহিত পুরস্কৃত প্রতিপালিত হবে। এই ইচ্ছার পূরণ কেবল ডিরেক্টারদের চেষ্টায় হবে না, শেয়ারহোল্ডাররা লাখ লাখ টাকা মঞ্জুর করলেও হবে না, আপনাদের সকলের সমবেত চেষ্টাতেই তা হতে পারবে।

[আচার্য রায়ের মৃতুর (১৬.০৬.১৯৪৪) পর বেঙ্গল কেমিক্যালে শোকসভায় পঠিত।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *