মাহাত্ম্য
কার্তিকদা একদিন সন্ধ্যাবেলা এক নির্জন নদীর তীরে একা বসেছিল। কিছুক্ষণ পরপর একজন দুজন লোক হাট থেকে ঘরে ফিরবার জন্য আসছিল। সবাই কার্তিকদাকে চেনে তাই কেউ এই মাতালকে ঘাঁটাতে চায় না বলে সবাই দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিল। কার্তিকদা একা একাই নদীর পাড়ে পা ছড়িয়ে বসে বসে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।
নদীতে কখন যে জোয়ার চলে এসেছে কার্তিকদা বুঝতেই পারে নি। জোয়ারের জল বাড়তে বাড়তে একসময় কার্তিকদার পা ছুঁয়ে পরনের প্যান্টটার নীচটা ভিজিয়ে দিলো।
প্যান্ট ভিজে যেতেই কার্তিকদা জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো “এই হতচ্ছাড়া দিলি তো প্যান্টটা ভিজিয়ে। আমার নেশাটা কাটিয়ে দিস না বলে দিলাম। নেশা কেটে গেলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। “
আসলে নদীর পাড়ে কিন্তু কার্তিকদা একা বসে ছিল না। সাথে ওর অভিন্নহৃদয় বন্ধু চোলাই ছিল। কার্তিকদা বছরে দুদিনই মদ স্পর্শ করে একদিন বৃষ্টি হলে আর একদিন বৃষ্টি না হলে। কিন্তু আজ একটি বিশেষ কারনে চোলাই নিয়ে বসেছে।একটু পর পর একটা করে ঢোঁক তুলছিল। সাথে পয়সার অভাবে কোন চাট ছিল না। তাই শুধুমাত্র চোলাইটাই সম্বল। সেটাই একটু পর পর গলায় ঢালছিল। গলায় ঢালতেই জ্বলে যাচ্ছিল। তবুও ঢেলে যাচ্ছিল।
কথা জিভে জড়িয়ে যাচ্ছে তবুও জড়িয়ে জড়িয়ে অনেক আবোলতাবোল কথা বলছিল। সেইসব কথা শুনবার মতো কেউ ছিল না। তবে দু’তিনজনের একটা দল পথ দিয়ে যেতে কার্তিকদার জড়ানো কথা শুনে একটু মস্করা করবার জন্য দাঁড়িয়ে গেল।
নিজেরা নিজেদের মধ্যে চোখ চাওয়াচায়ি করে পরের পদক্ষেপ ঠিক করে নিলো।
ওদের থেকে একজন এগিয়ে এসে কার্তিকদার কাঁধে হাত রেখে বললো “এইভাবে বসে আছ কেন বন্ধু। আকাশের দিকে তাকিয়ে কি চিন্তা করছো? “
সব শুনে কার্তিকদা ঢুলুঢুলু চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো “আরে, আমি কি আজ এমনি এমনি মদ খাচ্ছি নাকি? “
“তাহলে কি হয়েছে খুলে বলো না, বন্ধু। “
“তাহলে শোন আমাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গেলো তো। কি যেন নাম ছিল তার। আমি তাকেই তো ভুলবার জন্য মদ খাচ্ছিলাম কিন্তু পুরো একটা বোতল গলায় ঢেলে ফেলবার পরেও কিছুতেই সেই নামটা মনেই করতে পারছি না । কি করি বলো তো!”
“সত্যি খুব কষ্ট গো তোমার। তুমি মনে করতে থাকো। আমরা এগোই গো ঘরের দিকে………….।।”