Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মহিলা মুখ রূপান্তর কেন্দ্র ও পুরুষদের স্নান || Pallav Sanyal

মহিলা মুখ রূপান্তর কেন্দ্র ও পুরুষদের স্নান || Pallav Sanyal

গ্রামের মোড়ে এক পুরনো সৌন্দর্যকেন্দ্র ছিল, যার নাম ছিল ‘মহিলা সৌন্দর্য কেন্দ্র’। তবে গ্রামের লোকেরা মজা করে একে বলত ‘মহিলা মুখ রূপান্তর কেন্দ্র’। রঙিন দেয়াল, উজ্জ্বল লাল পর্দা আর গোলাপজলের মিষ্টি গন্ধে মোড়া এই পার্লারটি গ্রামের নারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে রবিবারের দিন এটি জমজমাট হয়ে উঠত। নতুন সাজে নিজেকে দেখার উত্তেজনা আর আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল মুখগুলোর এক মেলবন্ধন দেখা যেত এখানে।

পার্লারের ঠিক বিপরীতে ছিল মোহনের সেলুন, ‘গুপ্ত সেলুন’। পুরুষেরা চুল কাটতে, দাড়ি বানাতে আর মাথার মালিশ করাতে এখানে আসত। মোহন দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করত, তার সেলুন থেকে বেরিয়ে পুরুষেরা সোজা বাড়ি গিয়ে স্নান করত। অথচ ‘মহিলা মুখ রূপান্তর কেন্দ্র’ থেকে বেরোনো কোনো নারীকে কখনো স্নান করতে যেতে দেখেনি সে।

রবিবারের এক সকালে সুজাতা তার বান্ধবী রমার সঙ্গে পার্লারে এল। বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা তার উদ্দেশ্য। পার্লারের মালকিন দীপ্তি সুজাতার চুল ধুয়ে কেটে দিলেন, তারপরে স্ট্রেটেনিং। এরপর ফেশিয়াল করালেন, যা তার মুখে এক নতুন দীপ্তি এনে দিল। আয়নায় নিজেকে দেখে সুজাতা বিস্মিত হয়ে বলল, “দিদি, আপনার হাতে যেন জাদু!”

দীপ্তি হাসি মুখে উত্তর দিলেন, “সৌন্দর্য তো তোমার মধ্যেই ছিল, আমি শুধু তাকে ফুটিয়ে তুলেছি।”

পাশেই রমা মজা করে বলল, “তবে বাড়ি গিয়ে স্নান কোরো না, নইলে সব সাজ নষ্ট হয়ে যাবে!” সুজাতা হাসতে হাসতে পার্লার থেকে বেরোল।

ওদিকে মোহনের সেলুনে এক যুবক, রমেশ, চুল কাটিয়ে দাড়ি বানাল। কিছুক্ষণ মালিশ নেওয়ার পর সে উঠে বলল, “ভাই, এখন বাড়ি গিয়ে স্নান করতে হবে। তেল আর চুলের কাটা টুকরো গায়ে লেগে গেছে।”

মোহন এই দৃশ্য দেখে প্রতিবারের মতো চিন্তায় পড়ে গেল। “কেন পুরুষেরা স্নানের জন্য এত ব্যস্ত হয় আর মহিলারা একবারও স্নানের কথা ভাবে না?”

একদিন দীপ্তি আর মোহনের দেখা হল। কথা প্রসঙ্গে মোহন হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল, “দিদি, বলুন তো, আপনার পার্লার থেকে বেরিয়ে মহিলারা স্নান করে না কেন? আর আমার সেলুন থেকে পুরুষেরা স্নান না করে থাকতে পারে না কেন?”

দীপ্তি মিষ্টি হেসে উত্তর দিলেন, “এটা সৌন্দর্য আর বাস্তবতার তফাৎ, মোহন। মহিলারা এখানে কেবল চুল কাটাতে আসে না, তারা এখানে এক নতুন আত্মবিশ্বাস, আনন্দ আর অনুপ্রেরণা নিয়ে বাড়ি ফেরে। স্নান করলে তাদের এই অভিজ্ঞতা যেন মলিন হয়ে যায়। আর পুরুষেরা আসে চুল-দাড়ি পরিষ্কার করতে। তাদের জন্য এটা শুধু শরীরের পরিচ্ছন্নতা।”

মোহন মুগ্ধ হয়ে বলল, “তাহলে বুঝলাম, সৌন্দর্য মহিলাদের কাছে এক শিল্প আর আমাদের কাছে এক প্রয়োজন।”

দীপ্তি মাথা নেড়ে বললেন, “ঠিক তাই। এই দু’টি ভাবনার মধ্যে ফারাক থাকলেও দু’টোরই নিজস্ব গুরুত্ব আছে।”

সেদিনের পর থেকে মোহন লক্ষ্য করল, পার্লার থেকে বেরিয়ে মহিলারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাড়ি ফেরে আর তার সেলুন থেকে পুরুষেরা স্নানের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়। দু’জনের অভিজ্ঞতা আলাদা হলেও দু’টোই সুন্দর।

মোহন হেসে ভাবল, “এটাই তো জীবনের সৌন্দর্য – প্রত্যেকের ভাবনা আর প্রয়োজনের ভিন্নতায় লুকিয়ে থাকা মিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *