শোকাগ্ৰস্ত লঙ্কাপতি বীরবাহু তরে
বিষাদে নিঃশ্বাস ছাড়ে বলে ক্ষীণ স্বরে
হে বীর লঙ্কার তুমি কুলের প্রবর
রাক্ষস কুলেতে জন্ম প্রতাপ প্রখর।
স্তম্ভিত হয়েছে রাম মনে খুশি তাই,
তোমার মতন বীর বুঝি দেখে নাই।
হায় পুত্র বীরবাহু বাহুবলি কত
হৃদয়েতে বজ্র যেন হানে ব্যথা শত।
ওরে ভগ্নী সূর্পনখা! তোর অপমানে
ক্রোধান্বিত হয়ে কেন, গেলাম সে স্থানে!
মতিভ্রম হলো শেষে ছদ্মবেশ ধরে
রাম লক্ষ্মী হরণের পাপ স্পর্শ করে।
অন্তরেতে হাহাকার নেই পরিসীমা
হৃদি বৃন্তে ফোটা ফুল স্নেহ মধুরিমা,
কেউ যদি নেয় ছিঁড়ে রক্ত ক্ষরণেতে
নিস্তেজ হয় যে দেহ শোক আবহেতে।
যন্ত্রণা অনলে পুড়ে মরি আমি। যাও
মন্দোদরী, চিত্রাঙ্গদা কে সান্ত্বনা দাও।
বাক্যহীনা চিত্রাঙ্গদা বসে পুত্র ধরে
মন্দোদরী গেলে কাছে বলে সকাতরে,
দিয়েছি সন্তান যবে লঙ্কেশের কাছে
মনে মনে জানি পুত্র সুরক্ষিত আছে।
মেনে নিতে পারিনা যে এই অঘটন,
হৈমপুরী রক্ষা হেতু বধ মম ধন।
ততক্ষণে সভা মধ্যে প্রজাদের ভীড়
বীরবাহু বধে সব বিষণ্ণ গম্ভীর।
লঙ্কাপতি এসেছেন ধীর পদে অতি,
চিত্রাঙ্গদাকে বলেন শান্ত রাখো মতি।
বিভীষণ করেছে যে, মৈত্রী বৈরী সাথে
লঙ্কা রক্ষা ভার দিই বীরবাহু হাতে।
মোক্ষম সমরে রক্ষে প্রাসাদ লঙ্কার
কুলরত্ন বীরবাহু রাজ্য অলঙ্কার।
ক্রন্দন করোনা প্রিয়ে হৈমপুরী ধনি,
সমরেতে জিতেছে সে বীর চূড়ামণি।
ক্ষিপ্ত কণ্ঠে চিত্রাঙ্গদা বলেন, রতন
দিয়েছিল দেব মোরে, রক্ষার্থে যতন
আপনাকে দিই, পাখি যেমন শাবকে
রাখে লুকিয়ে কোটরে, বলুন পুত্রকে
রেখেছেন কোন্ খানে? প্রজাগনে রক্ষা
নৃপ ধর্ম। তবে কেন পেলোনা সুরক্ষা!
পুত্র আমার হায় রে! বিধির কেমন
বিচার! রাঘব ক্ষুদ্র নয় বলে মন,
যাঁর নামে শিলা ভাসে সমুদ্র মাঝার
ঈশ্বরীয় হবে কেউ ঐশ্বর্য অপার।
বশিভূত কপি জাতি করছে সমর,
মানুষ নয় দেব সে, নিশ্চিত অমর।
হয় যদি দেবতা সে ভাগ্যবান মানি,
ভগবান হস্তে বধ সদা শুভ জানি।