বিষাদ আমার প্রতি প্রবল আকৃষ্ট ব’লে তাকে
আমার নিকট দেখা যায় ঘন ঘন, তার সাথে
বড়ো বেশি মেশামেশি হয়। বিষাদ আমার হাতে
মধ্যরাতে অশ্রুপাত করে অবিরত, মুখ ঢাকে
আমার বুকের অভ্যন্তরে; মাঝে-মাঝে খুনসুটি
করে, যেন বিষণ্নতা ব’লে কিছু নেই, নেই কিছু
চোখের পানির মতো ব্যথাময়। কখনো বা ঘুঁটি
চেলে ব’সে থাকে সতরঞ্জে, আমি খুব মাথা নীচু
ক’রে ভাবি, এ কেমন খেলার পদ্ধতি? প্রতিদ্বন্দ্বী
স্বেচ্ছায় হারার ছলে আমাকে হারিয়ে দেয় শুধু।
বিষাদ চৌদিকে গন্ডি এঁকে আমাকে করেছে বন্দী,
হরিণের চোখ হ’য়ে ঘোরায়, প্রান্তর রুক্ষ, ধুধু।
বিষাদ আমার জন্যে পারস্য গালিচা কিনে আনে,
কিনে আনে বাঘছাল, সোনার গেলাশ, হাতপাখা
এবং গোলাপ-পাশ। বিষাদ আমাকে কাছে টানে,
সস্নেহে আমার মুখে কেমন আপেল দেয় পুরে,
নাইয়ে বিজন হ্রদে পরায় জরির আঙরাখা।
অথচ নিজেকে দেখি নগ্ন, পোশাক গিয়েছে উড়ে
কখন কোথায় কোন্ ঝড়ে। মুখে জ্বলে ধূলিরেখা।
বিষাদ আমাকে পোষে দীর্ঘকাল ধ’রে, কতকাল
একান্ত বাহন হ’য়ে তার ঘুরেছি ভীষণ একা।
বিষাদ আমাকে ব’লে, ‘তোমাকে দিয়েছি তাল তাল
স্বপ্ন, তুমি আড়ালে নির্মাণ করো অজর প্রতিমা।
বিষাদ আমাকে রাখে প্রহরায়, যেমন ড্রাগন
তার খুব জ্বলজ্বলে গোপন সম্পদ। চতুঃসীমা
গ’লে যায়, বিষাদ নিঃশব্দে হয় শিল্পের চবন।
বিষাদ আমাকে পোষে নাকি আমি বিষাদকে পুষি-
বিষাদই বলুক আজ স্পষ্ট ভাষায় তার যা’ খুশি।